পাঠক! বাংলা ভাষায় সুবৃহৎ বিশুদ্ধ ইসলামী সাইটে আপনাকে স্বাগতম। সহীহ কুরআন, সুন্নাহনির্ভর রেফারেন্স ও গবেষণাধর্মী প্রায় ২০০এর অধিক বিষয়ের অনন্য সমাহার। আমাদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ও অনুদান দিয়ে সাহায্য করতে পড়ুন এখানে

প্রকাশ্য পাপ থেকে দূরে থাকুন

প্রকাশ্য পাপ থেকে দূরে থাকুন
আপনি কি দীনের সাথে সম্পৃক্ত মুসলিম যুবকদের সান্নিধ্য ছেড়ে খোলামেলা পাপকাজে জড়িয়ে যেতে চান? সম্পূর্ণরূপে পাপাচারে ডুবে থাকার ইচ্ছা পোষণ করেন? আপনি নিজ থেকে এই দাবি করেছিলেন যে, আমি মুনাফিক হতে চাই না। তার মানে আপনি সম্পূর্ণরূপে পাপ কাজে জড়িয়ে পড়তে আগ্রহী? মানুষ আপনার পাপ সম্পর্কে জানুক- এটা আপনি কামনা করেন?... 

না! ভাই আমার! এটা কখনো ঠিক হবে না। কখনো যদি পাপ করেও বসেন, তো আপনার করণীয় হচ্ছে- আল্লাহর কাছে দুআ করা যে,হে আল্লাহ! তুমি আমাকে ইহকাল-পরকালের অপমান-অপদস্থতা থেকে নিরাপদে রাখো। মানুষের সামনে আপনি আপনার পাপের কথা বলে বেড়াবেন এবং এ নিয়ে গর্ববোধ করবেন! আল্লাহ আকবার! এর পরিণতি তো ভয়ঙ্কর!
যদিও গুনাহের কারণে দুনিয়াতে তাকে কোন শাস্তি নাও দেয়া হয়, কিন্তু সে আল্লাহর বিশেষ ইবাদাত বন্দেগী হতে বঞ্চিত হবে। গুনাহকে ঘৃণা করা বা খারাপ জানার অনুভূতি হারিয়ে ফেলে। ফলে গুনাহের কাজে সে অভ্যস্ত হয়ে যায় এবং গুনাহ করতে কোন প্রকার কুন্ঠাবোধ করে না। এমনকি সমস্ত মানুষও যদি তাকে দেখে ফেলে বা তার সমালোচনা করে, তারপরও সে কোন অপরাধ বা অন্যায় করতে লজ্জাবোধ বা খারাপ মনে করে না। এ ধরনের মানুষকে আল্লাহ ক্ষমা করেন না এবং তাদের তওবার দরজাও বন্ধ হয়ে যায়। ফলে তারা বেঈমান হয়ে দুনিয়া থেকে চির বিদায় নেয়। রাসূল (সা.) বলেন-
كل أمتي معافى إلا المجاهرين وإن من الإجهار أن الله سترعلى العبد ثم يصبح يفضح نفسه ويقول يا فلان عملت اليوم كذا وكذا وكذا فيهتك نفسه يستره ربه

আমার সকল উম্মতকে ক্ষমা করা হবে একমাত্র প্রকাশ্য পাপী ছাড়া। আর প্রকাশ্যে পাপ করা হলো- আল্লাহ কোনো বান্দার অপকর্মকে গোপন রাখলো কিন্তু লোকটি তার নিজের অপকর্ম প্রকাশ করে নিজেকে অপমান করে এবং বলে থাকে, হে ভাই! আমি আজ অমুক অমুক কাজ করেছি- ইত্যাদি। এভাবে সে তার নিজের গোপনীয়তা প্রকাশ করে অথচ আল্লাহ তার গুনাহকে গোপন রাখে।

সুতরাং বুঝা গেলো- আল্লাহর কাছে প্রকাশ্য পাপ ক্ষমার যোগ্য নয়। প্রকাশ্য পাপ কী? উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ধরুন- গাড়িতে আপনি এতো উচ্চস্বরে গান শুনছেন যে, আশপাশের লোকজনও তা শুনছে। এতে করে আপনি মানুষের সামনে আপনার এই পাপের ঘোষণা দিয়ে দিলেন যে, আমি এই গান শুনবো, যদিও আল্লাহ তাআলা এটাকে হারাম সাব্যস্ত করেছেন।

এটাই হচ্ছে প্রকাশ্য পাপ। বন্ধু-বান্ধবদের আড্ডায় বসে নিজের অসৎকর্ম, অন্যায় ও পাপাচার নিয়ে মজা করা প্রকাশ্য পাপেরই অন্তর্ভুক্ত। যেমন- একটি মেয়েকে কীভাবে আপনি উত্তক্ত করলেন, কীভাবে মদের নেশায় আসক্ত হলেন, কীভাবে ব্যভিচারে জড়িয়ে পড়লেন, কেমন করে চুরি করলেন ইত্যাদি। এমতাবস্থায় বান্দা যদি তার পাপ কাজ থেকে ফিরে এসে তাওবাহ না করে, তাহলে আশঙ্কা আছে যে, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন না!
এর চেয়ে আরও মারাত্মক ও জঘন্য ব্যাপার হচ্ছে- কোনো তরুণ তার সঙ্গীর পাপাচার ও অন্যায় আচরণের কথা বিস্তারিতভাবে শোনা। এমতাবস্থায় সঙ্গী তরুণটি ঘটনাটিকে একটি বানোয়াট গল্পে রূপান্তর করে। অথচ সে এমনটি আদৌ করেনি। অহেতুক সে আপত্তিকর ভ্রমণ, অবৈধ সম্পর্ক ও নানাবিদ মন্দ কাজের কথা তার বন্ধুদের সাথে গল্পের ঢংয়ে বলতে আরম্ভ করে। মনে রাখবেন- যা কিছু আপনি বলছেন, সবকিছুই ফেরেশতারা নোট করে নিচ্ছে। কাল কিয়ামতের দিন আপনাকে এ গল্প-গুজবগুলোর হিসেব দিতে হবে। যদিও এটা ছিল মিথ্যা। জাহান্নাম ছাড়া তখন আর কোনো গত্যন্তর থাকবে না। আল্লাহ আমাদের রক্ষা করুন। আমীন ॥
বান্দা গুনাহ করতে করতে গুনাহ করা তার জন্য সহজ হয়ে যায়, অন্তরে সে গুনাহকে ছোটো মনে করতে থাকে। আর এটাই হল ধ্বংসের নিদর্শন। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ (রা.) হতে বর্ণিত তিনি বলেন-
أن المؤمن يرى ذنوبه كانه في أصل جبل يخاف أن يقع عليه وأن الفاجر يرى ذنوبه كذباب رفع على أنف فقال به هكذا فطار
একজন মুমিন সে গুনাহকে এমনভাবে ভয় করে যে, সে যেন একটি পাহাড়ের নিচে আছে, আর আশংকা করছে- পাহাড়টি তার ওপর ভেঙ্গে পড়বে। পক্ষান্তরে একজন বদকার ব্যক্তি সে তার গুনাহকে মনে করে তার নাকের ওপর একটি মাছি বসে আছে, হাত নাড়া দিল আর সে চলে গেল।

অনেকেই আগ্রহ ভরে হারাম জিনিস যেমন পত্র-পত্রিকার খারাপ দৃশ্য বা টিভি সিরিয়াল বা সিনেমার দিকে নজর দেয়, এমনকি এদের কেউ কেউ যখন জানতে পারে যে, এটি হারাম; তখন খুবই রসিকতা করে প্রশ্ন করে- এতে কতোটুকু গুনাহ রয়েছে? এটি কি কবীরা গুনাহ না সগীরা গুনাহ? আপনি যখন এটির বাস্তব অবস্থা জানবেন তখন তুলনা করে দেখুন হাদীসটির সাথে। হযরত আনাস (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন- তোমরা এমন সব কাজ করো- যা তোমাদের দৃষ্টিতে চুলের চেয়েও সূক্ষ্ম। কিন্তু আমরা রাসূলুল্লাহর যুগে এগুলোকে মনে করতাম ধ্বংসকারী।
আমরা এই পাপ কাজকে ছোটো মনে করি। অথচ আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
﴿وَلَا تَقْرَبُوا الزِّنَا إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَسَاءَ سَبِيلًا
তোমরা যিনা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়ো না, কেননা তা অত্যন্ত নির্লজ্জ কাজ এবং খুবই খারাপ পথ।
আমার ভাই!
আল্লাহর ওয়াস্তে আপনার কাছে আমি জানতে চাচ্ছি- এটা কি সম্ভব যে,যিনা হারাম এবং আল্লাহর অসন্তুষ্টির কারণ এ কথা জানা সত্ত্বেও এতে কেউ লিপ্ত হতে পারে? এটাও কি সম্ভব যে, কোনো মুমিন ব্যক্তি হাজার হাজার মানুষের সামনে এই মন্দ কাজের কথা গান-বাদ্যের মাধ্যমে ক্যাসেট বাজিয়ে ছড়াতে পারে? নিঃসন্ধেহে এমনটি কোনো ঈমানদারের কাজ হতে পারে না।
একজন মুমিন যদি কখনো এমন পাপ কাজে জড়িয়েও পড়ে অথবা কখনো সেদিকে তার পা চলে যায়, তাহলে তো আফসোস ও লজ্জায় তার অবস্থা হওয়া দরকার রাসূলের সাহাবী হযরত মায়িয বিন মালিক আসলামী (রা.)-এর মতো। ঘটনাটি হচ্ছে- হযরত মায়িয বিন মালিক (রা.) যখন রাসূল (সা.)-এর নিকট বার বার ব্যভিচারের স্বীকারোক্তি করছিলেন তখন রাসূল তার প্রতি এতটুকুও ভ্রƒক্ষেপ করেননি। চার বারের পর তিনি তাকে এও বলেন- হয়তো বা তুমি তাকে চুমু দিয়েছো, ধরেছো কিংবা তার প্রতি দৃষ্টিপাত করেছো। কারণ এতে করে তিনি তাকে ব্যক্তিগতভাবে আল্লাহ তাআলার নিকট খাঁটি তওবা করার সুযোগ করে দিতে চেয়েছিলেন।

এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ব্যভিচারের জন্য তওবা করায় যথেষ্ট। তবে যদি ব্যভিচার করার কথা প্রকাশিত হয়ে পড়ে তাহলে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে। এর অনেকগুলো কারণ রয়েছে। আমরা জানি, নামায পড়া অতি গুরুত্বপূর্ণ ফরয। তবে কেউ যদি নামায না পড়ে তাহলে এতে সে ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে, কিন্তু এতে অন্যের কিংবা সমাজের কোনো ক্ষতি হয় না। কিন্তু ব্যভিচার এমন একটি পাপ যা একা হয় না; অন্যে আর একজন পুরুষ কিংবা নারীর প্রয়োজন হয়। সামাজিক সম্পর্ক নষ্ট হয়। ডিভোর্স বৃদ্ধি পায়, সমাজে মর্যাদার হ্রাস ঘটে। বিভিন্ন যৌন রোগ সৃষ্টি হয়। যেমন- সিফিলিস, গনোরিয়া, এইডস ইত্যাদি। পাশাপাশি ব্যভিচারের প্রসারের ফলে এগুলো মহামারী আকার ধারণ করে। তাই ব্যভিচার বন্ধের জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির প্রয়োজন। কারণ যদি কোনো শাস্তির ব্যবস্থা না করা হয় তাহলে এটা ব্যপকভাবে প্রসার পেতো। তাই ব্যভিচারীর শাস্তির প্রয়োজন।

মুমিনের অন্তর গুনাহের কারণে জ্বলে উঠে। মুমিন গুনাহ করলে তৎক্ষণাত তাওবাহ করে নেয়। নিজের কৃত পাপের জন্য অনুশোচনায় দগ্ধ হয়। ভবিষ্যতে না করার দৃঢ় সংকল্প করে। এরপর সে আল্লাহর নৈকট্য সৃষ্টিকারী কাজ অধিক হারে করে। যেমন আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
وَالَّذِينَ إِذَا فَعَلُوا فَاحِشَةً أَوْ ظَلَمُوا أَنْفُسَهُمْ ذَكَرُوا اللَّهَ فَاسْتَغْفَرُوا لِذُنُوبِهِمْ وَمَنْ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا اللَّهُ وَلَمْ يُصِرُّوا عَلَى مَا فَعَلُوا وَهُمْ يَعْلَمُونَ
আর যারা কোনো অশ্লীল কাজ করলে অথবা নিজদের প্রতি যুলম করলে আল্লাহকে স্মরণ করে, অতঃপর তাদের গুনাহের জন্য ক্ষমা চায়। আর আল্লাহ ছাড়া কে গুনাহ ক্ষমা করবে? আর তারা যা করেছে, জেনে শুনে তা তারা বার বার করে না।

এরকম আরো লেখা পড়ুন-
আরো পড়ুনঃ তাওহীদের পরিচয়
আরো পড়ুনঃ আল্লাহর পরিচয়


একটি আবেদন


‘শান্তি ও মানবতার পথে’ শ্লোগানকে সামনে রেখে বাংলা ভাষায় অনলাইন রেডিও প্রতিষ্ঠাসহ মিডিয়ায় গবেষণা, প্রচার, দাওয়াহ প্রভৃতি কাজের আঞ্জাম দেয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে ‘সালাম মিডিয়া’। এজন্য বাৎসরিক প্রায় পাঁচলক্ষাধিক টাকার প্রয়োজন। আপনাদের সহযোগিতাই আমাদের পথচলার পাথেয়। আপনি প্রবাসী হলে মাসে অন্তত দশ ডলার বা বাৎসরিক হিসেবে দশ হাজার করে নূন্যতম হারে হলেও আমাদের এই অগ্রযাত্রায় শরীক হোন। 

আমাদের রয়েছে পর্যাপ্ত দক্ষ জনবলশুধু নেই প্রয়োজনীয় অর্থবল। আপনার প্রতি এই আমাদের ছোট্ট আহবান। ০১৯২২৭৩০০০১ (তথ্য ও বিকাশ) বিস্তারিত পড়ুনঃ  আমাদের কথা
ছবিটি জুম করে দেখুন

No comments: