পাঠক! বাংলা ভাষায় সুবৃহৎ বিশুদ্ধ ইসলামী সাইটে আপনাকে স্বাগতম। সহীহ কুরআন, সুন্নাহনির্ভর রেফারেন্স ও গবেষণাধর্মী প্রায় ২০০এর অধিক বিষয়ের অনন্য সমাহার। আমাদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ও অনুদান দিয়ে সাহায্য করতে পড়ুন এখানে

তাওহীদ ও ঈমান বিষয়ক ৫০টি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর

আল্লাহ

তাওহীদঃ বিশ্বাস করা যে, আল্লাহ তায়ালা স্বীয় এবং রাজত্বে একক, উপাস্য হিসেবে একক, কোনো অংশীদার নেই তাঁর

ইসলামঃ তাওহীদের স্বীকৃতি দিয়ে আল্লাহর আদেশের সামনে মাথা নত
করা অনুগত্যের মাধ্যমে পূর্ণ আত্মসমর্পন করা শিরক এবং শিরক সংশিষ্ট ব্যক্তি ও বস্তু থেকে মুক্ত ঘোষণা করা

ঈমানের মূলভিত্তিঃ আল্লাহর উপর পূর্ণ বিশ্বাস করা, তেমনিভাবে তাঁর ফেরেশতাদের উপর, তাঁর ফেরেশতাকুলের উপর, তাঁর অবতরণকৃত গ্রন্থাদির উপর, তাঁর রাসূলগণের উপর, বিচারদিবসের উপর এবং তকদিরের ভালো মন্দের উপর (বুখারী-মুসলিম)


তাওহিদের প্রকারভেদ

-কর্তৃত্ব ও রাজত্বে একত্ববাদ : অর্থাৎ আল্লাহর সকল কাজ ও ক্ষমতা কেবল তাঁর দিকেই সম্বন্ধযুক্ত করা। নবী করীম সা. এর আবির্ভাবের পূর্বে আরবের কাফেররাও বিষয়টি অকপটে স্বীকার করত। যেমন, কুরআনের বাণী : সকল প্রশংসা ওই আল্লাহর জন্য, যিনি সমগ্র বিশ্বের প্রতিপালক (সূরা ফাতিহা : ১)

-উপাসনার ক্ষেত্রে একত্ববাদ : অর্থাৎ নামায, রোযা, সাদাকা, মানত ইত্যাদি ইবাদাতসমূহ কেবল আল্লাহর উদ্দেশ্যেই সম্পাদন করা। আল্লাহ বলেন, আপনার প্রতিপালক আদেশ করেছেন যে একমাত্র তাঁরই ইবাদাত কর এবং পিতামাতার প্রতি সদ্ব্যবহার কর (সূরা ইসরা : ২৩)

-আল্লাহর নাম ও গুণাবলীর ক্ষেত্রে একত্ববাদ : আল্লাহ তালা নিজের জন্য এবং নবী করীম সা. আল্লাহর জন্য যতগুলো নাম ও গুণের কথা বর্ণনা করেছেন, কোনোরূপ আকৃতিদান, সমতুল্য সাব্যস্তকরণ ও বিভক্তিকরণ ব্যতীত এগুলোর ওপর ঈমান আনা। আল্লাহ বলেন, তাঁর সমতুল্য কেউ নেই; তিনিই সর্বশ্রোতা সর্বদ্রষ্টা। (সূরা শূরা : ১১)


একত্ববাদ বিনষ্টকারী কাজ

(এ বিষয়ে বিস্তারিত পড়তে পারেন, ঈমান ভঙ্গের ১০টি কারণ-এখানে)

বড় শিরক : কোনো ইবাদাত আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো উদ্দেশ্যে সম্পাদন করা। এটা চার ধরনের হতে পারে :
১) দোয়া বা প্রার্থনায় শিরক
২) নিয়ত বা অন্তরিচ্ছায় শিরক
৩) আনুগত্যে শিরক : অর্থাৎ আল্লাহর হালালকৃত বস্তু হারাম ও আল্লাহর হারামকৃত বস্তু হালাল জ্ঞানকারী ব্যক্তিকে উক্ত বিষয়ে অনুসরণ করা
৪) শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় শিরক : অর্থাৎ আল্লাহকে যেমন ভালোবাসা উচিত, তেমন না বেসে অন্য কারো প্রতি সেরকম ভালোবাসা পোষণ করা। আল্লাহ বলেন, আর কোনো কোনো লোক আল্লাহর সমকক্ষ সাব্যস্ত করে এবং তাদের প্রতি তেমনি ভালোবাসা পোষণ করে, যেমন আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা হয়ে থাকে। (সূরা বাকারা : ১৬৫)

ছোট শিরক : ওই সকল গুনাহ, যা বড় শিরক পর্যন্ত নিয়ে ছাড়ে। যেমন ক্ষুদ্র রিয়া, গায়রুল্লাহর নামে শপথ করা, কুলক্ষণ ভাবা ও বিশ্বাস করা ইত্যাদি।

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ :

অর্থ : আল্লাহ ব্যতীত কোনো উপাস্য নেই। উপাসনা কেবল আল্লাহর উদ্দেশ্যেই নির্ধারিত। ইবাদাত গ্রহণের যোগ্যতা শুধুই আল্লাহর। তিনি ব্যতীত অন্য কেউ এর যোগ্য নয়। এ কালিমার রয়েছে কিছু শর্ত :
- উত্তমরূপে এর অর্থ অনুধাবন করা। অর্থাৎ উপাস্য একমাত্র আল্লাহ তালা।
- সন্দেহাতীতভাবে তার অর্থের ওপর বিশ্বাস করা।
- শিরকমুক্ত একনিষ্ঠতা অবলম্বন করা। অর্থাৎ তা বলার দ্বারা কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টিই উদ্দেশ্য করা।
- এর যথাযথ সত্যায়ন করা।
- এ কালিমার প্রতি পরম ভালোবাসা পোষণ করা। অর্থাৎ কালিমার যাবতীয় চাহিদা ও আমল বাস্তবায়ন করা। কালিমাওয়ালাদের প্রতি সম্প্রীতি পোষণ করা।
- পরিপূর্ণ আনুগত্য করা। অর্থাৎ আল্লাহর আদেশ-নিষেধগুলো পুরোমাত্রায় মেনে চলা।
- এ কালিমার আরোপিত সকল বিধান হৃষ্টচিত্তে মেনে নেয়া।

(প্রশ্ন : কেন আল্লাহ তালা আমাদের সৃষ্টি করলেন?

উত্তর : কাউকে তাঁর সাথে অংশীদার না করে একমাত্র তাঁর ইবাদাতের জন্য তিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন।
প্রমাণ : কুরআনুল কারীমে আল্লাহ বলেন, আমি মানব ও জিন জাতিকে সৃষ্টি করেছি কেবল আমার ইবাদাতের জন্য। (সূরা যারিয়াত : ৫৬)
হাদিছ শরীফে নবী করীম  সা. বলেন, বান্দাদের ওপর আল্লাহর অধিকার হলো যে, বান্দাগণ একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদাত করে যাবে; কাউকে তাঁর সাথে শরীক করবে না। (বুখারী-৫৯১২)


(প্রশ্ন : কীভাবে আমরা আল্লাহর ইবাদাত করব?

উত্তর : আল্লাহ ও রাসূলের নির্দেশিত পন্থায় একনিষ্ঠভাবে আমরা আল্লাহর ইবাদাত করব।
প্রমাণ : কুরআনুল কারীমে আল্লাহ বলেন, তারা খাঁটিমনে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদাত করে যাবে  এছাড়া তাদের আর কোনো নিদের্শ করা হয়নি। (সূরা আল-বাইয়িনাহ : ৫)
হাদিছ শরীফে নবী করীম  সা. বলেন, যে ব্যক্তি আমাদের পন্থা ব্যতীত ভিন্ন পন্থায় কোনো আমল করবে, তার সে আমল অগ্রাহ্য বিবেচিত হবে। (মুসলিম : ৪৫৯০)

(৩) প্রশ্ন : আমরা কি ভয় ও আশা নিয়ে আল্লাহর ইবাদাত করব?

উত্তর : হ্যাঁ.. ভয়, আশা ও ভালোবাসা নিয়ে আমরা তাঁর ইবাদাত করব।
প্রমাণ: কুরআনুল কারীমে আল্লাহ বলেন, আর তোমরা তাকে ডাক ভয় এবং আশা নিয়ে। (সূরা আরাফ : ৫৬) অর্থাৎ আল্লাহ ও তাঁর শাস্তির ভয় নিয়ে আমরা তাঁর ইবাদাত করব। তাঁর পক্ষ থেকে ক্ষমা ও প্রতিদানের আশা রাখব।
হাদিছ শরীফে নবী করীম  সা. বলেন, আমি আল্লাহর কাছে জান্নাত চাই এবং তাঁর কাছে জাহান্নাম থেকে আশ্রয় চাই। (আবু দাউদ : ৭৯৩)

(৪) প্রশ্ন : ইহসান কী?

উত্তর : সর্বদ্রষ্টা মহান আল্লাহ তালাকে সবসময় স্মরণ রাখা।
প্রমাণ : কুরআনুল কারীমে আল্লাহ বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের ব্যাপারে সচেতন রয়েছেন। (সূরা নিসা : ১) অন্য আয়াতে, যখন আপনি নামাযে দাঁড়ান তখন তিনি আপনাকে দেখেন। (সূরা শুআরা : ২১৮)
হাদিছ শরিফে নবী করীম  সা. বলেন, ইহসান হলো এমনভাবে ইবাদাত কর যেন তুমি আল্লাহকে দেখছ, যদি দেখতে না পাও তবে (এরূপ ধারণা কর যে) আল্লাহ আমাকে দেখছেন। (মুসলিম : ১০২)

(৫) প্রশ্ন : কেন আল্লাহ তালা অসংখ্য নবী প্রেরণ করলেন?

উত্তর : মানুষকে একত্ববাদের দিকে আহ্বান করতে, শিরক থেকে বারণ করতে এবং সৎকর্ম দিয়ে তাদের পরিশুদ্ধ করতে আল্লাহ পৃথিবীতে নবীদের প্রেরণ করেছিলেন।
প্রমাণ : কুরআনুল কারীমে আল্লাহ বলেন, আমি প্রত্যেক জাতির মধ্যেই রাসূল প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে, তোমরা ইবাদাত কর এবং তাগুত থেকে নিরাপদ থাক। (সূরা নাহল : ৩৬)
হাদিছ শরিফে নবী করীম  সা. বলেন, নবীগণ পরস্পর বৈমাত্রেয় ভাই। তাদের মাতা ভিন্ন, তবে সবার ধর্ম এক। (মুসলিম : ৬২৮১) অর্থাৎ শরিয়ত তাদের ভিন্ন ভিন্ন। কিন্তু ধর্ম সবার ইসলাম।

(৬) প্রশ্ন : উপাসনার ক্ষেত্রে একত্ববাদ বলতে কী বুঝায়?

উত্তর : অর্থাৎ নামায, রোযা, দোয়া, মানত, ভয় ইত্যাদি ইবাদাতগুলো কেবল আল্লাহর উদ্দেশ্যেই পালন করা।
প্রমাণ : কুরআনুল কারীমে আল্লাহ বলেন, আর আল্লাহ আদেশ করেছেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারো ইবাদাত করো না। (সূরা ইসরা : ২৩)
হাদীছ শরীফে নবী করীম  সা. বলেন, সর্বপ্রথম তাদের তোমরা দাওয়াত দেবে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ সাক্ষ্যদানের প্রতি। (বুখারী : ৬৯৩৭)

(৭) প্রশ্ন : লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর কী অর্থ?

উত্তর : অর্থাৎ প্রকৃত উপাস্য একমাত্র আল্লাহ তালা।
প্রমাণ : কুরআনুল কারীমে মহান আল্লাহ বলেন, এটা এ কারণে যে, আল্লাহই সত্য; আর তাঁর পরিবর্তে তারা যাকে ডাকে, তা অসত্য এবং আল্লাহই সবার উচ্চে, মহান। (সূরা লুকমান : ৩০)
হাদীছ শরীফে নবী করীম  সা. বলেন, যে ব্যক্তি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে এবং আল্লাহ ব্যতীত পূজ্য অন্যসব বস্তুর অস্বীকার করবে তার অর্থসম্পদ ও রক্তে (হস্তক্ষেপ) নিষিদ্ধ হয়ে যাবে। (মুসলিম : ১৩৯)  

(৮) প্রশ্ন : নাম ও গুণাবলিতে একত্ববাদের কী অর্থ?

উত্তর : কুরআন-হাদীছের বর্ণনাসুরে আল্লাহ তালার নাম ও গুণগুলো সাব্যস্ত করা।
প্রমাণ : কুরআনুল কারীমে আল্লাহ বলেন, কোনোকিছুই তাঁর অনুরূপ নয়। (সূরা শূরা : ১১)
হাদীছ শরীফে নবী করীম  সা. বলেন, (হে আল্লাহ) নিজের জন্য আপনি আপনার যতগুলো নাম ব্যবহার করেছেন ও আপনার কিতাবে যতগুলো অবতীর্ণ করেছেন সবগুলো নামের দোহাই দিয়ে আপনার কাছে প্রার্থনা করছি.. (মুসলিম)


(৯) প্রশ্ন : একজন মুসলিমের জন্য একত্ববাদে বিশ্বাসের প্রয়োজনীয়তা কতটুকু?

উত্তর : একত্ববাদ দুনিয়ায় হেদায়েত ও আখেরাতে নিরাপত্তা লাভের প্রধান মাধ্যম।
প্রমাণ : কুরআনুল কারীমে আল্লাহ বলেন, যারা ঈমান আনে এবং নিজের বিশ্বাসকে শিরকের সাথে মিশ্রিত করে না, তাদের জন্যেই শান্তি এবং তারা সুপথগামী। (সূরা আনআম : ৮২)
হাদীছ শরীফে নবী করীম  সা. বলেন, আল্লাহর ওপর বান্দাদের অধিকার হলো, তাদের মধ্যে শিরকবর্জনকারীদের কোনোরূপ শাস্তি না দেয়া। (বুখারী : ২৭০১)

(১০) প্রশ্ন : আমাদের সাথে আছেন স্বয়ং আল্লাহ নাকি তার দর্শন ও শ্রবণশক্তি?


উত্তর : আল্লাহর দর্শন ও শ্রবণশক্তিই আমাদের সাথে আছে।
প্রমাণ : কুরআনুল কারীমে আল্লাহ বলেন, আল্লাহ বললেন, তোমরা ভয় করো না, আমি তোমাদের সাথে আছি, আমি শুনি ও দেখি। (সূরা ত্বাহা : ৪৬)
হাদীছ শরীফে নবী করীম  সা. বলেন, তোমরা সর্বশ্রোতা সর্বনিকটবর্তী সত্তাকে ডেকে থাকো, অথচ তিনি তোমাদের সাথেই আছেন। (বুখারী : ৩৯৬৮)

(১১) প্রশ্ন : সবচেয়ে বড় অপরাধ কী?


উত্তর : সবেচেয়ে বড় অপরাধ হলো আল্লাহর সাথে অংশীদার সাব্যস্ত করা, শিরক করা।
প্রমাণ : কুরআনুল কারীমে ভ্রাতুষ্পুত্রের প্রতি লুকমান আ. এর উপদেশ বর্ণনা করতে গিয়ে আল্লাহ বলেন, হে পুত্র, আল্লাহর সাথে শরিক করো না। নিশ্চয় আল্লাহর সাথে শরিক করা মহা অন্যায়। (সূরা লুকমান : ১৩)
হাদীছ শরীফে নবী করীম  সা. বলেন, একদা নবী করীম  সা.কে জিজ্ঞেস করা হলো কোন অন্যায়টি সবচেড়ে বড়? উত্তরে তিনি বললেন, আল্লাহর সাথে কাউকে অংশীদার সাব্যস্ত করা, অথচ তিনিই তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। (বুখারী : ৪২০৭)

(১২) প্রশ্ন : সবচেড়ে বড় শিরক কী?

উত্তর : আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো উদ্দেশ্যে ইবাদাত সম্পাদন করা। যেমন, গায়রুল্লাহকে ডাকা, তার কাছে দোয়া করা।
প্রমাণ : কুরআনুল কারীমে আল্লাহ বলেন, বলুন  আমি তো আমার পালনকর্তাকেই ডাকি এবং তাঁর সাথে কাউকে শরিক করি না। (সূরা জিন : ২০)
হাদিছ শরিফে নবী করীম  সা. বলেন, সবচেয়ে বড় কবিরা গুনাহ হলো আল্লাহর সঙ্গে কাউকে অংশীদার সাব্যস্ত করা। (বুখারী : ৬৪৭৭)

(১৩) প্রশ্ন : বড় শিরকের পরিণতি কী?

উত্তর : বড় শিরকে লিপ্ত ব্যক্তি জান্নাত থেকে চিরবঞ্চিত হবে। অনন্তকালের জন্য জাহান্নামে প্রবেশ করবে।
প্রমাণ : কুরআনুল কারীমে আল্লাহ বলেন, নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অংশীদার স্থির করে, আল্লাহ তার জন্যে জান্নাত হারাম করে দেন। আর তার বাসস্থান হয় জাহান্নাম। (সূরা মায়িদা : ৭২)
হাদীছ শরীফে নবী করীম  সা. বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে অন্য কাউকে অংশীদার করে মৃত্যুবরণ করবে, সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। (মুসলিম : ২৭৮)

(১৪) প্রশ্ন : মুশরিক ব্যক্তির সৎকর্ম উপকারী বা ফলবাহক হবে কি?


উত্তর : মুশরিক ব্যক্তির কোনো পুণ্যকর্মই উপকার বয়ে আনবে না। কারণ শিরক সকল আমলকে বিনষ্ট করে দেয়।
প্রমাণ : কুরআনুল কারীমে আল্লাহ বলেন, যদি শিরকের কাজ করত, তবে তাদের কাজকর্ম তাদের জন্য ব্যর্থ হয়ে যেত। (সূরা আনআম : ৮৮)
হাদীছে কুদসীতে নবী করীম  সা. আল্লাহর এ পবিত্র উক্তির প্রতিবর্ণনা করেন, (আল্লাহ বলেন) আমার সাথে অন্য কাউকে অংশীদার করে যে সৎকর্ম করবে, আমি তাকে ও তার কৃত শিরককে চিরবর্জন করব। (মুসলিম : ৭৬৬৬)

(১৫) প্রশ্ন : বর্তমানে কোনো মুসলমানের মধ্যে শিরকী কার্যকলাপ রয়েছে কি?


উত্তর : হ্যাঁ.. দুঃখজনক হলেও এটাই সত্য!
প্রমাণ : কুরআনুল কারীমে আল্লাহ বলেন, অনেক মানুষ আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, কিন্তু সাথে সাথে শিরকও করে। (সূরা ইউসুফ : ১০৬)
হাদীছ শরীফে নবী করীম  সা. বলেন, কেয়ামত সংঘটিত হবে না, যতক্ষণ না আমার উম্মতের কিছু গোত্র মুশরিকদের সঙ্গে গিয়ে মিলিত হবে এবং মূর্তিপূজায় লিপ্ত হবে। (তিরমিযী : ২২১৯)

(১৬) প্রশ্ন : দোয়া কি আল্লাহর উদ্দেশ্যে কৃত একটি ইবাদাত?


উত্তর : হ্যাঁ.. দোয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত।
প্রমাণ : কুরআনুল কারীমে আল্লাহ বলেন, তোমাদের পালনকর্তা বলেন, তোমরা আমাকে ডাকো আমি সাড়া দেব। যারা আমার ইবাদাতে অহঙ্কার করে তারা সত্বরই জাহান্নামে প্রবেশ করবে লাঞ্ছিত হয়ে। (সূরা গাফির : ৬০)
হাদীছ শরীফে নবী করীম  সা. বলেন, দোয়া-ই হলো ইবাদাত। (তিরমিযী : ২৯৬৯)

(১৭) প্রশ্ন : আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে দোয়া করা কী?


উত্তর : গায়রুল্লাহর কাছে দোয়া করা অন্যতম একটি শিরক, যা ব্যক্তিকে জাহান্নামে প্রবেশ করিয়ে ছাড়বে।
প্রমাণ : কুরআনুল কারীমে আল্লাহ বলেন, তাই আপনি আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্যকে আহ্বান করবেন না। করলে নির্ঘাত শাস্তিতে পতিত হবেন। (সূরা শুআরা : ২১৩)
হাদীছ শরীফে নবী করীম  সা. বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো কাছে আহ্বান করে মৃত্যুবরণ করবে, সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। (বুখারী : ৪২২৭)

(১৮) প্রশ্ন : মৃতরা কি কারো দোয়া শুনতে পায়?


উত্তর : মৃতরা কারো কোনো দোয়া শুনতে পায় না।
প্রমাণ : কুরআনুল কারীমে আল্লাহ বলেন, আপনি কবরে শায়িতদের শোনাতে সক্ষম নন। (সূরা ফাতির : ২২) অন্য আয়াতে  আপনি আহ্বান শোনাতে পারবেন না মৃতদেরকে।
হাদীছ শরীফে নবী করীম  সা. বলেন, নিশ্চয় আল্লাহর কিছু ভ্রাম্যমান ফেরেশতা ভূপৃষ্ঠে সদা বিচরণ করে। উম্মতের সালামগুলো তারা আমার কাছে পৌঁছে দেয়। (নাসাঈ : ১২০৫)

(১৯) প্রশ্ন : মৃত বা অদৃশ্য কারো কাছে দোয়া প্রার্থনা করা যাবে কি?

উত্তর : না, কারো কাছে করুণাপ্রার্থনা করা যাবে না; বরং একমাত্র আল্লাহর কাছেই সাহায্যপ্রার্থনা করতে হবে।
প্রমাণ : কুরআনুল কারীমে আল্লাহ বলেন, তোমরা যখন সাহায্যপ্রার্থনা করলে আপন প্রতিপালকের কাছে, তখন তিনি তোমাদের প্রার্থনা গ্রহণ করে নিলেন। (সূরা আনফাল : ৯)
হাদীছ শরীফে এসেছে : বিষণ্ন বা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হলে নবী করীম  সা. বলতেন, হে চিরঞ্জীব চির প্রতিষ্ঠিত, আমি তোমার কাছেই দয়াপ্রার্থনা করছি। (নাসাঈ : ১০৪০৫)

(২০) প্রশ্ন : আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো কাছে সাহায্যপ্রার্থনা করা যাবে কি?


উত্তর : না, গায়রুল্লাহর কাছে কোনোধরনের সাহায্যপ্রার্থনা করা যাবে না।
প্রমাণ : কুরআনুল কারীমে আল্লাহ বলেন, আমরা আপনারই ইবাদাত করি, আপনার কাছেই সাহায্য চাই। (সূরা ফাতিহা : ৫)
হাদীছ শরীফে নবী করীম  সা. বলেন, যখন কিছু চাইবে, আল্লাহর কাছেই চাইবে। যখন সাহায্যপ্রার্থনা করবে, আল্লাহর কাছেই সাহায্যপ্রার্থনা করবে। (তিরমিযী : ২৫১৬)

(২১) প্রশ্ন : উপস্থিত জীবিত কারো কাছে কিছু চাওয়া যাবে কি?


উত্তর : হ্যাঁ.. যদি সামর্থ্যবান হয়।
প্রমাণ : কুরআনুল কারীমে আল্লাহ বলেন, সৎকর্ম ও আল্লাহভীতির ব্যাপারে একে অন্যের সাহায্য কর। পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা করো না। (সূরা মায়িদা : ২)
হাদীছ শরীফে নবী করীম  সা. বলেন, বান্দা যতক্ষণ অপর ভাইয়ের সেবায় থাকবে, ততক্ষণ স্বয়ং আল্লাহ তার সেবায় থাকবেন। (মুসলিম : ৭০২৮)

(২২) প্রশ্ন : গায়রুল্লাহর উদ্দেশ্যে কোনোকিছু মানত করা বৈধ কি?


উত্তর : আল্লাহ ছাড়া কারো উদ্দেশ্যে কিছু মানত করা বৈধ নয়।
প্রমাণ : কুরআনুল কারীমে ইমরানের স্ত্রীর উক্তি : হে আমার পালনকর্তা, আমার গর্ভে যা রয়েছে আমি তাকে তোমার নামে উৎসর্গ করলাম সবার কাছ থেকে মুক্ত রেখে। আমার পক্ষ থেকে তুমি তা কবুল করে নাও! (সূরা আলে ইমরান : ৩৫)
হাদীছ শরীফে নবী করীম  সা. বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর আনুগত্যে কিছু মানত করে সে যেন তা পূর্ণ করে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর অবাধ্যতাপূর্ণ কিছু মানত করে, সে যেন তা পূর্ণ না করে। (বুখারী : ৬৩১৮)

(২৩) প্রশ্ন : গায়রুল্লাহর উদ্দেশ্যে পশুজবাই বৈধ কি?


উত্তর : কখনো নয়! বরং তা বড় শিরকের অন্তর্ভুক্ত।
প্রমাণ : কুরআনুল কারীমে আল্লাহ বলেন, অতএব পালনকর্তার উদ্দেশ্যে নামায পড়ন এবং কুরবানি করুন। (সূরা কাউছার : ২)
হাদীছ শরীফে নবী করীম  সা. বলেন, আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো উদ্দেশ্যে যে পশুজবাই করবে, তার ওপর আল্লাহর অভিশাপ পতিত হবে। (মুসলিম : ৫২৪০)

(২৪) প্রশ্ন : কবরের চারপাশে তাওয়াফ (প্রদক্ষিণ) করা বৈধ কি?


উত্তর : কাবা ব্যতীত অন্য কোনোকিছুর তাওয়াফ করা বৈধ নয়।
প্রমাণ : কুরআনুল কারীমে আল্লাহ বলেন, এবং এই সুসংরক্ষিত (কাবা) গৃহের তাওয়াফ করে। (সূরা হজ : ২৯)
হাদীছ শরীফে নবী করীম  সা. বলেন, যে ব্যক্তি সাতবার বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করবে এবং দুরাকাত নামায আদায় করবে, তার জন্য একটি কৃতদাসীমুক্তির পুণ্য লেখা হবে। (ইবনে মাজা : ২৯৫৬)

 (২৫) প্রশ্ন : কোনো কবরকে সামনে রেখে নামায পড়া বৈধ কি?


উত্তর : কোনো কবরকে সামনে রেখে নামায আদায় করা বৈধ নয়।
প্রমাণ : কুরআনুল কারীমে আল্লাহ বলেন, নিজের মুখ মসজিদুল হারামের দিকে ফেরান। (সূরা বাকারা : ১৪৯)
হাদীছ শরীফে নবী করীম  সা. বলেন, তোমরা কোনো কবরের ওপর বসো না এবং তার দিকে ফিরে নামায আদায় করো না। (মুসলিম : ২২৯৪)


(২৬) প্রশ্ন : জাদুকর্মের বিধান কী?


উত্তর : জাদুকর্ম করা কুফুরি।
প্রমাণ : কুরআনুল কারীমে আল্লাহ বলেন, বরং শয়তানরাই কুফুরি করেছিল। তারা মানুষকে জাদুবিদ্যা শেখাত। (সূরা বাকারা : ১০২)
হাদীছ শরীফে নবী করীম  সা. বলেন, তোমরা সাতটি ধ্বংসাত্মক কা- থেকে বেঁচে থাকো : আল্লাহর সঙ্গে শিরক, জাদু.. (মুসলিম : ২৭২)


(২৭) প্রশ্ন : কোনো জ্যোতিষী বা গণকের শরণাপন্ন হওয়া বা তাদের সত্যায়ন করা বৈধ কি?


উত্তর : তাদের শরণাপন্ন হওয়া বা তাদের দেয়া অদৃশ্যের কোনো সংবাদে বিশ্বাস করা বৈধ নয়।
প্রমাণ : কুরআনুল কারীমে আল্লাহ বলেন, বলুন আল্লাহ ব্যতীত নভোম-ল ও ভূম-লে কেউ গায়বের খবর জানে না। (সূরা নামল: ৬৫)
হাদীছ শরীফে নবী করীম  সা. বলেন, যে ব্যক্তি কোনো গণক বা জ্যোতিষীর শরণাপন্ন হয়ে তার বক্তব্য বিশ্বাস করল, সে মুহাম্মাদের ওপর অবতীর্ণ বিষয় অস্বীকার করল। (মুসনাদে আহমদ : ৯৫৩২)

(২৮) প্রশ্ন : গায়বের খবর আল্লাহ ব্যতীত কেউ জানে কি?


উত্তর : আল্লাহ ব্যতীত অদৃশ্যের সংবাদ সম্পর্কে কেউ অবগত নয়।
প্রমাণ : কুরআনুল কারীমে আল্লাহ বলেন, বলুন আল্লাহ ব্যতীত নভোম-ল ও ভূম-লে কেউ গায়বের খবর জানে না। (সূরা নামল : ৬৫)
হাদীছ শরীফে নবী করীম  সা. বলেন, আল্লাহ ছাড়া অদৃশ্যসংবাদ সম্পর্কে কেউ অবগত নয়। (বুখারী : ৬৯৪৫)

 (২৯) প্রশ্ন : মুসলমানদের জন্য কোন শাসনবিধানমতে জীবনপরিচালনা করা ওয়াজিব?


উত্তর : মুসলমানদের জন্য কুরআন-সুন্নাহসিদ্ধ শরিয়া আইনমতে জীবনপরিচালনা করা ওয়াজিব।
প্রমাণ : কুরআনুল কারীমে আল্লাহ বলেন, আর তাদের মাঝে আপনি আল্লাহর অবতীর্ণ বিধাম অনুসারে মীমাংসা করুন। (সূরা মায়িদা : ৪৯)
হাদীছ শরীফে নবী করীম  সা. বলেন, আল্লাহই শ্রেষ্ঠ বিচারক; তিনিই একমাত্র বিধানদাতা। (আবু দাউদ : ৪৯৫৭)

(৩০) প্রশ্ন : ইসলামবিরোধী মানবরচিত সংবিধানমতে বিচারকার্য পরিচালনা বৈধ কি?


উত্তর : কখনো নয়।
প্রমাণ : কুরআনুল কারীমে আল্লাহ বলেন, আর যারা আল্লাহর অবতীর্ণ বিধানমতে মীমাংসা করে না, তারাই কাফের। (সূরা মায়িদা : ৪৪)
হাদীছ শরীফে নবী করীম  সা. বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের শাসকবর্গ আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী শাসন করবে না এবং ভিন্ন শাসনতন্ত্রকে আল্লাহর অবতীর্ণ শাসনব্যবস্থার ওপর প্রাধান্য দেবে, তাদের মাঝে আল্লাহ তুমুল বিশৃঙ্খলা ও অরাজকতা তৈরি করে দেবেন। (ইবনে মাজা : ৪০১৯)

(৩১) প্রশ্ন : গায়রুল্লাহর নামে শপথ করা বৈধ কি?


উত্তর : আল্লাহর ব্যতীত অন্য কারো নামে শপথ করা বৈধ নয়। কারণ তা অন্যতম শিরক-কা-।
প্রমাণ : কুরআনুল কারীমে আল্লাহ বলেন, বলুন অবশ্যই হবে, আমার পালনকর্তার শপথ, তোমরা নিশ্চয় পুনরুত্থিত হবে। এরপর তোমাদের কৃতকর্ম সম্পর্কে তোমাদের অবহিত করা হবে। (সূরা তাগাবুন : ৭)
হাদীছ শরীফে নবী করীম  সা. বলেন, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো নামে যে শপথ করল, সে শিরক করল। (মুসনাদে আহমদ : ৫৩৭৫)

(৩২) প্রশ্ন : তাবিজ-কবজ ঝুলানো বৈধ কি?


উত্তর : তাবিজ-কবজ ঝুলানো বৈধ নয়। কারণ তা শিরক-কা-।
প্রমাণ : কুরআনুল কারীমে আল্লাহ বলেন, আর আল্লাহ যদি তোমার ওপর কোনো কষ্ট অরোপ করেন তবে তিনি ছাড়া তা খাবার মতো কেউ নেই। (সূরা আনআম : ১৭)
হাদীছ শরীফে নবী করীম  সা. বলেন, যে ব্যক্তি তাবিজ ঝুলালো, সে শিরক করল। (মুসনাদে আহমদ : ১৭৪৫৮)

(৩৩) প্রশ্ন : কীসের দোহাই দিয়ে আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করব?


উত্তর : আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমানের দোহাই দিয়ে, আল্লাহর নাম ও গুণাবলির  দোহাই দিয়ে, সৎকর্মের দোহাই দিয়ে এবং সৎকর্মশীলদের দোয়ার দোহাই দিয়ে আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করব।
প্রমাণ : কুরআনুল কারীমে আল্লাহ বলেন, আর আল্লাহর জন্য রয়েছে সব উত্তম নাম। কাজেই সে নাম ধরেই তাঁকে ডাক। (সূরা আরাফ : ১৮০)
হাদীছ শরীফে নবী করীম  সা. বলেন, আপনার যত নাম আছে, যত নাম দিয়ে আপনি নিজেকে নামকরণ করেছেন সবগুলো নামের দোহাই দিয়ে আপনার কাছে প্রার্থনা করছি। (মুসনাদে আহমদ : ৩৭১২)


(৩৪) প্রশ্ন : দোয়ার জন্য কোনো সৃষ্টিকে ওছিলা ধরার প্রয়োজন আছে কি?


উত্তর : দোয়ার জন্য কোনো সৃষ্টিকে অছিলা ধরার প্রয়োজন নেই?
প্রমাণ : কুরআনুল কারীমে আল্লাহ বলেন, আর আমার বান্দারা যখন তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে আমার ব্যাপারে, বস্তুত আমি রয়েছি সন্নিকটে। যারা প্রার্থনা করে, তাদের প্রার্থনা কবুল করে নিই; যখন আমার কাছে প্রার্থনা করে। (সূরা বাকারা : ১৮৬)
হাদীছ শরীফে নবী করীম  সা. বলেন, তোমরা সর্বশ্রোতা সর্বনিকটবর্তী সত্তাকে ডেকে থাকো, অথচ তিনি তোমাদের সাথেই আছেন। (বুখারী : ৩৯৬৮)


(৩৫) প্রশ্ন : মহানবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের তরিকা কী?


উত্তর : মহানবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের তরিকা হলো দ্বীন প্রচার।
প্রমাণ : কুরআনুল কারীমে আল্লাহ বলেন, হে রাসূল, আপনার প্রতি আপনার প্রতিপালক যা অবতীর্ণ করেছেন, তার যথাযথ প্রচার করুন। (সূরা মায়িদা : ৬৭)
হাদীছ শরীফে এসেছে : আপনি আপনার দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করেছেন, দ্বীন প্রচার করেছেন, আমাদের উপদেশ করেছেন  সাহাবীদের থেকে এ কথা শুনার পর মহানবী বলেছিলেন, হে আল্লাহ তুমি সাক্ষী থেকো! (মুসলিম : ১৯০৭)


(৩৬) প্রশ্ন : কার কাছে আমরা মহানবীর শাফাআত প্রার্থনা করব?


উত্তর : মহানবীর জীবদ্দশায় তাঁর কাছে এবং তার মৃত্যুর পর আল্লাহর কাছে সুপারিশ প্রার্থনা করব।
প্রমাণ : কুরআনুল কারীমে আল্লাহ বলেন, বলুন  আল্লাহর জন্যই সকল শাফাআত। (সূরা যুমার : ৪৪)
হাদীছ শরীফে এসেছে : হে আল্লাহ আমার ব্যাপারে আল্লাহর রাসূলের সুপারিশ আপনি কবুল করুন। (মুসনাদে আহমদ : ১৭২৭৯)

(৩৭) প্রশ্ন : আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে আমরা কীভাবে ভালোবাসবো?


উত্তর : তাদের অনুসরণ ও নির্দেশ মান্য করার মধ্য দিয়ে আমরা তাদের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটাবো।
প্রমাণ : কুরআনুল কারীমে আল্লাহ বলেন, বলুন যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসো, তবে আমাকে অনুসরণ কর, যাতে আল্লাহও তোমাদেরকে ভালোবাসেন। (সূরা আলে ইমরান : ৩১)
হাদীছ শরীফে নবী করীম  সা. বলেন, ব্যক্তি ততক্ষণ পর্যন্ত পূর্ণ মুমিন হবে না যতক্ষণ না আমি তার কাছে তার পিতা, পুত্র এবং সকল মানুষ থেকে অধিক প্রিয় হবো। (বুখারী : ১৫)

(৩৮) প্রশ্ন : মহানবীর প্রশংসায় বাড়াবাড়ি করা বৈধ কি?


উত্তর : মহানবীর প্রশংসা করতে অত্যূক্তি বা বাড়াবাড়ি করা বৈধ নয়।
প্রমাণ : কুরআনুল কারীমে আল্লাহ বলেন, বলুন আমিও তোমাদের মতোই মানুষ, আমার প্রতি অহি আসে যে, তোমাদের মাবুদ একমাত্র মাবুদ। (সূরা কাহফ : ১১০)
হাদীছ শরীফে নবী করীম  সা. বলেন, খ্রিস্টানরা মরিয়ম-তনয়কে নিয়ে যেভাবে বাড়াবাড়ি করেছে, আমাকে নিয়ে তোমরা সেরকম বাড়াবাড়ি করো না। আমি তো একজন সাধারণ বান্দা। তাই (আমার ব্যাপারে তোমরা এতটুকুই) বলবে যে, আল্লাহর বান্দা ও রাসূল। (বুখারী : ৩২৬১)

 (৩৯) প্রশ্ন : মুমিনদের জন্য ওয়ালা বা বন্ধুত্বের মাপকাঠি কী?


উত্তর : তা হলো তাদের প্রতি সম্প্রীতি ও সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব পোষণ করা।
প্রমাণ : কুরআনুল কারীমে আল্লাহ বলেন, ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারী একে অপরের সহায়ক। (সূরা তাওবা : ৭১)
হাদীছ শরীফে নবী করীম  সা. বলেন, এক মুমিন অপর মুমিনের জন্য ওই প্রাসাদের মতো; যার একাংশ অপরাংশকে মজবুতভাবে ধরে রাখে। (মুসলিম : ৬৭৫০)

(৪০) প্রশ্ন : কাফেরদের সাথে বন্ধুত্ব বা তাদের সহায়তা করা বৈধ কি?


উত্তর : কাফেরদের সঙ্গে বন্ধুত্ব বা তাদের সহায়তা করা কিছুতেই বৈধ নয়।
প্রমাণ : কুরআনুল কারীমে আল্লাহ বলেন, আর তোমাদের মধ্যে যারা তাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করবে, তারা তাদেরই অন্তর্ভুক্ত বিবেচিত হবে। (সূরা তাওবা : ২৩) অর্থাৎ কাফেরদেরকে।
হাদীছ শরীফে নবী করীম  সা. কাফেরদের সাথে বন্ধুত্ব ছিন্ন করতে গিয়ে বলেন, নিশ্চয় অমুক ব্যক্তির পরিবার ও গোত্র আমার বন্ধু নয়। (বুখারী : ৫৪১)


(৪১) প্রশ্ন : প্রকৃত বন্ধু কে?


উত্তর : একমাত্র মুমিনই প্রকৃত বন্ধু।
প্রমাণ : কুরআনুল কারীমে আল্লাহ বলেন, মনে রেখো যারা আল্লাহর বন্ধু, তাদের না কোনো ভয়-ভীতি আছে, না তারা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হবে। (আল্লাহর বন্ধু হলো) যারা ঈমান এনেছে এবং আল্লাহকে ভয় করতে রয়েছে। (সূরা ইউনুস : ৬২, ৬৩)
হাদীছ শরীফে নবী করীম  সা. বলেন, নিশ্চয় আমার বন্ধু হলো আল্লাহ ও সৎকর্মশীল মুমিনগণ। (বুখারী : ৫৪১)

(৪২) প্রশ্ন : কেন আল্লাহ তালা কুরআন অবতীর্ণ করেছেন?


উত্তর : আমল করার জন্য, তিলাওয়াতের জন্য, তার আয়াতসমূহে গবেষণা ও সর্ববিষয়ের সমাধানরূপে গ্রহণ করার জন্যে আল্লাহ তালা কুরআনুল কারীম অবতীর্ণ করেছে।
প্রমাণ : কুরআনুল কারীমে আল্লাহ বলেন, এটি একটি বরকতময় কিতাব, যা আমি আপনার প্রতি বরকত হিসেবে অবতীর্ণ করেছি, যেন মানুষ এর আয়াতসমূহে চিন্তাভাবনা করে। (সূরা ছাদ : ২৯)
হাদীছ শরীফে নবী করীম  সা. বলেন, তোমরা কুরআন পড়, কুরআনের আয়াতসমূহের ওপর আমল কর। কুরআনকে পরিত্যাগ করো না। কুরআনের ব্যাখ্যায় বাড়াবাড়ি করো না। কুরআনকে জীবিকা নির্বাহের উপকরণ হিসেবে গ্রহণ করো না। কুরআনের মাধ্যমে অধিক বিনিময় প্রার্থনা করো না। (মুসনাদে আহমদ : ১৫৫৬৮)

(৪৩) প্রশ্ন : কুরআন পেয়ে কি আমরা রাসূলের হাদীস থেকে নির্মুখাপেক্ষী হয়ে যাব?


উত্তর : কখনো না।
প্রমাণ : কুরআনুল কারীমে আল্লাহ বলেন, এবং আমি আপনার প্রতি স্মরণিকা অবতীর্ণ করেছি, যেন লোকদের সামনে তাদের জন্য অবতীর্ণ বিষয়কে আপনি সুস্পষ্টরূপে বর্ণনা করেন। (সূরা নাহল : ৪৪)
হাদীছ শরীফে নবী করীম  সা. বলেন, জেনে রেখো, নিশ্চয় আমাকে আল-কুরআন ও তার সাথে তার মতো আরেকটি বিষয় দেয়া হয়েছে। (মুসনাদে আহমদ : ১৭২১৩)


(৪৪) প্রশ্ন : আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের কথার ওপর অন্য কারো কথা আমরা প্রধান্য দেব কি?


উত্তর : আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের কথার ওপর অন্য কারো কথা আমরা প্রধান্য দেব না।
প্রমাণ : কুরআনুল কারীমে আল্লাহ বলেন, হে মুমিনগণ তোমরা আল্লাহ ও রাসূলের অগ্রণী হয়ো না। (সূরা হুজুরাত : ১)
হাদীছ শরীফে নবী করীম  সা. বলেন, আল্লাহর অবাধ্যতায় কারো আনুগত্য চলবে না। আনুগত্য কেবল আল্লাহর নির্দেশিত পন্থায়ই হবে। (মুসলিম : ৪৮৭১)


(৪৫) প্রশ্ন : ইখতেলাফকালে আমরা কী করব?


উত্তর : তখন আমরা কুরআন ও সুন্নাহর শরণাপন্ন হবো।
প্রমাণ : কুরআনুল কারীমে আল্লাহ বলেন, তারপর যদি তোমরা কোনো বিষয়ে বিবাদে প্রবৃত্ত হয়ে পড়, তবে তা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি প্রত্যর্পণ কর। (সূরা নিসা : ৫৯)
হাদীছ শরীফে নবী করীম  সা. বলেন, আমি তোমাদের কাছে দুটি বিষয় রেখে গেলাম; যতদিন তোমরা এ দুটি আঁকড়ে ধরে থাকবে ততদিন কিছুতেই তোমরা বিপথগামী হবে না  আল্লাহর কিতাব ও তাঁর রাসূলের সুন্নাহ। (মুস্তাদরাকে হাকিম : ৩১৯)


(৪৬) প্রশ্ন : বিদআত কী?


উত্তর : যে কাজ শরিয়ানির্ভর নয়। কুরআন-হাদীস সুন্নাহ, ইজমা দ্বারা প্রমাণিত নয় কিন্তু শরীয়াতের কাজ বলে চালিয়ে দেয়া হয় নবউদ্ভাবিত দ্বীনী বিষয় যেমন: মীলাদ-কিয়াম
প্রমাণ : কুরআনুল কারীমে আল্লাহ বলেন, তাদের কি এমন শরীক দেবতা আছে, যারা তাদের জন্যে সে ধর্ম সিদ্ধ করেছে, যার অনুমতি আল্লাহ দেননি? (সূরা শূরা : ২১)
হাদীছ শরীফে নবী করীম  সা. বলেন, আমাদের এ ধর্মে যে নতুন কোনো রীতি উদ্ভাবন করবে, তার এ রীতি প্রত্যাখ্যাত হবে। (বুখারী : ২৫৫০)

(৪৭) প্রশ্ন : দ্বীনের মধ্যে উত্তম উদ্ভাবন’ বা বিদআতে হাসানা বলতে কিছু আছে কি?

উত্তর : দ্বীনের মধ্যে উত্তম উদ্ভাবন বা বিদআতে হাসানা বলতে কিছু নেই।
প্রমাণ : কুরআনুল কারীমে আল্লাহ বলেন, আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম। (সূরা মায়িদা : ৩)
হাদীছ শরীফে নবী করীম  সা. বলেন, তোমরা নবউদ্ভাবিত রীতিসমূহ থেকে বেঁচে থাকো। কারণ সকল উদ্ভাবিতই বিদআত। আর সকল বিদআতই ভ্রষ্টতা। (আবু দাউদ : ৪৬০৯)

(৪৮) প্রশ্ন : ইসলামে উত্তম রীতি বলতে কিছু আছে কি?


উত্তর : হ্যাঁ.. যেমন কেউ কল্যাণকাজে নতুন রীতি আবিষ্কার করল। মানুষের জন্য সহজপন্থা তৈরি করল।
প্রমাণ : কুরআনুল কারীমে মুমিনদের উক্তির বিবরণ দিতে গিয়ে আল্লাহ বলেন, এবং আমাদেরকে মুত্তাকীদের জন্যে আদর্শস্বরূপ কর। (সূরা ফুরকান : ৭৪)
হাদীছ শরীফে নবী করীম  সা. বলেন, যে ব্যক্তি ইসলামে নতুন কোনো সুন্নাত আবিষ্কার করবে, তাকে সেজন্যে পুরস্কৃত করা হবে এবং সেমতে আমলকারী সকলের পুরস্কারের অনুরূপও তাকে দেয়া হবে। (মুসলিম : ২৩৯৮)


(৪৯) প্রশ্ন : কেবল নিজকে সংশোধন করলেই কি যথেষ্ট হয়ে যাবে?


উত্তর : না, বরং পরিবারকেও সংশোধন করতে হবে।
প্রমাণ : কুরআনুল কারীমে আল্লাহ বলেন, হে মুমিনগণ তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবারসমূহকে জাহান্নাম থেকে বাঁচাও! (সূরা তাহরীম : ৬)
হাদীছ শরীফে নবী করীম  সা. বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ তালা দায়িত্বশীল প্রত্যেককেই তার দায়িত্বপ্রাপ্ত বিষয়ের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করবেন। (তিরমিযী : ১৭০৫)

(৫০) প্রশ্ন : কখন মুসলমানদের সাফল্য ও চূড়ান্ত বিজয় অর্জন হবে?


উত্তর : যখন তারা আপন প্রতিপালকের গ্রন্থ ও তাদের নবীর আদর্শের ওপর পূর্ণরূপে আমল করবে।
প্রমাণ : কুরআনুল কারীমে আল্লাহ বলেন, হে মুমিনগণ তোমরা যদি আল্লাহকে সাহায্য কর (আল্লাহর নির্দেশ মেনে চলো) তবে আল্লাহও তোমাদের সাহায্য করবেন এবং তোমাদের পদসমূহ দৃঢ় করবেন। (সূরা মুহাম্মাদ : ৭)
হাদীছ শরীফে নবী করীম  সা. বলেন, আমার উম্মতের একটি দল সর্বদা বিজয়ী থাকবে। (তিরমিযী : ২১৯২)

লেখাটি ভালো লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না। 
লেখাটির উন্নতগ্রাফিক্স ডিজাইনসমৃদ্ধ বই ডাউনলোড করুন-এখানে

আরো পড়ুনঃ আল্লাহর পরিচয়

একটি আবেদন

বাংলা ভাষায় একটি শক্তিশালী ও মানসম্মত রেডিও প্রতিষ্ঠার প্ল্যান নিয়ে সালাম মিডিয়া কাজ করছে। আপনি একাজানি। আমরাও একানিজ নিজ জায়গা আমরা সবাই একা; কিন্তু সবাই মিলেও কী একা?
আমাদের রয়েছে পর্যাপ্ত দক্ষ জনবলশুধু নেই প্রয়োজনীয় অর্থবল। তাই আপনি যদি একজন সচ্ছল মুসলিম হয়ে থাকেন তাহলে আপনার প্রতি আমাদের ছোট্ট আহ্বান। বিস্তারিত পড়ুনঃ  আমাদের কথা


ছবিটি জুম করে দেখুন