পার্বত্য এলাকার দারিদ্র্যপীড়িত জনগোষ্ঠীকে ইউরোপীয় জীবনাচার ও দর্শনের দিকে আকৃষ্ট করার প্রয়াস চালাচ্ছে। মুঘল আমলেই এদেশের প্রতি এন জি ও এবং খ্রিষ্টান মিশনারীদের শ্যেন দৃষ্টি পতিত হয়।
ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর শাসনামলে মিশনারীগণ ভিন দেশী সংস্কৃতির বিকাশ ও ধর্মান্তরের যে প্রক্রিয়া আনুষ্ঠানিক ভাবে চালু করেন, পর্যায়ক্রমে পাকিস্তান ও বাংলাদেশ আমলে তার ক্রমবিকাশ সাফল্যের সাথে অব্যাহত থাকে। স্কুল প্রতিষ্ঠা, শিক্ষা উপকরণ বিতরণ, হাসপাতাল স্থাপন, ঋণ প্রদান, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ, দারিদ্র্য বিমোচন, কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট ও নারীর ক্ষমতায়ন প্রভৃতি মুখরোচক কর্মসূচীর আড়ালে রয়েছে এ দেশে ইউরোপীয় সংস্কৃতি ও খ্রিষ্টান ধর্ম প্রচার করার নীল নকশার বাস্তবায়ন। উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশের পার্বত্য এলাকায় প্রায় ৪৫টি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠীর অধিবাস। শত বছর ধরে বহুবিধ সমস্যায় জর্জরিত হয়ে ২০ লাখ আদিবাসী ক্রমাগত প্রান্তীয় পরিণতির দিকে ধাবিত হচ্ছে। রাজনৈতিক বিচ্ছিন্নতা, চরম দারিদ্র্য, ক্ষুধা, অনাহার, মৃত্যু, মহামারী, অপুষ্টি ও স্যানিটেশন সমস্যা তাদের নিত্যসঙ্গী। খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা, শিক্ষা ও বাসস্থান এই পাঁচটি মৌলিক মানবাধিকার থেকে তাঁরা বঞ্চিত। রাখাইন ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মি.উসিথ মং বলেন, রাখাইনরা ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী হিসেবে এই অঞ্চলে আদিম অধিবাসী। প্রায় ৩৩ শতাংশ রাখাইন এখন ভূমিহীন আর গত ৩৫ বছরে পটুয়াখালীতে প্রায় ৯০ শতাংশ রাখাইনকে নিজ ভূমি থেকে উচ্ছেদ হতে হয়েছে।১৯৯১ সালের আদম শুমারি অনুযায়ী কেবল পার্বত্য চট্টগ্রামের জন সংখ্যা ১০ লাখ ৫ হাজার ৩৬২ জন। অধিকাংশ চাকমা ও মারমা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী, টিপরা অধিবাসিরা হিন্দু ধর্মের আর মিজো বম ও থেয়াং খ্রিষ্টান। কিছু কিছু গোত্র আত্মা, প্রাণী ও উদ্ভিদের পূজারী। (বাংলাপিডিয়া, ৫খন্ড, পৃ.৩৭১-২)।
সাধারণভাবে এসব ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী এবং বিশেষভাবে পাহাড়িরা অত্যন্ত কষ্টে আছে, 'মানুষ’করার জন্য নানামুখী সহযোগিতা প্রয়োজন, তাদের পৃথক সত্তা ও নিজস্ব সংস্কৃতি রক্ষা নিশ্চিত করতে হবে ইত্যাদি বক্তব্য দেশের সীমানা পেরিয়ে বিদেশেও প্রচুর শোনা যায়। এর সূত্র ধরে বিদেশি ফান্ড দ্বারা পরিপুষ্ট ঝাঁকে ঝাঁকে এনজিও এখন তিন পার্বত্য জেলায় সক্রিয় আছে। কিন্তু এতদিনে পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, আর্ত-মানবতার সেবার নামে এসব এনজিও’র বেশিরভাগই আসলে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীকে ধর্মান্তরিত করার কাজে কোমর বেঁধে নেমেছে। এ কাজে তাদের সাফল্য রীতিমত চোখ ধাঁধানো। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তৈরি করা প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে আমার দেশ-এ প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয়েছে,গত ২০ বছরে সেখানে ১২ হাজার উপজাতীয় পরিবারকে ধর্মান্তরিত করে খ্রিস্টান বানানো হয়েছে। ওই রিপোর্টের তথ্য অনুযায়ী, তিন পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি, বান্দরবান ও রাঙামাটিতে বর্তমানে ১৯৪টি গির্জা উপজাতীয়দের ধর্মান্তরিত করে খ্রিস্টান বানানোর ক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করছে। খাগড়াছড়ি জেলায় আছে ৭৩টি গির্জা। ১৯৯২ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত এ জেলায় ৪ হাজার ৩১টি পরিবার খ্রিস্টান হয়েছে। বান্দরবান জেলায় গির্জা আছে ১১৭টি। এখানে একই সময়কালে খ্রিস্টান হয়েছে ৬ হাজার ৪৮০টি উপজাতীয় পরিবার। রাঙামাটিতে ৪টি চার্চ খ্রিস্টান বানিয়েছে ১ হাজার ৬৯০টি উপজাতীয় পরিবারকে। এগুলো তুলনামূলকভাবে হাল আমলের হিসাব। পাহাড়ি যেসব জনগোষ্ঠীর লোকসংখ্যা তুলনামূলকভাবে কম, তাদের প্রায় শতভাগ খ্রিস্টান হয়ে গেছে অনেক আগেই (এম. এ নোমান, আমার দেশ, ১২.০৮.২০১১)।
পাহাড়িদের নিজস্ব সংস্কৃতি অটুট রাখার জন্য কুম্ভীরাশ্রু বিসর্জনকারী পশ্চিমা গোষ্ঠীর প্রত্যক্ষ মদদে চলা ধর্মান্তকরণ সেখানে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে যে, উপজাতীয়দের নিজস্ব সংস্কৃতি, ধর্মীয় মূল্যবোধ আজ আক্ষরিক অর্থেই বিপন্ন। তাদের সামাজিক ও পারিবারিক বন্ধন শিথিল হয়ে যাচ্ছে দিন দিন। পার্বত্য চট্টগ্রামে খ্রিস্টান হয়ে যাওয়া পাহাড়িদের দ্রুত সংখ্যা বৃদ্ধি যারা ঘটাচ্ছে তারা যদি পাহাড়িদের রাষ্ট্রীয় আনুগত্যের শিকড় কেটে দিতে সক্ষম হয় তবে তা বাংলাদেশের অখন্ডতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য বড় ধরনের হুমকি হয়ে উঠবে। এভাবে দেশের একটি স্পর্শকাতর এলাকায় ডেমোগ্রাফির নাটকীয় পরিবর্তন স্বাভাবিকভাবে মেনে নেয়া যায় না। ত্রাণ ও সেবার নামে আসলে ওই অঞ্চলের দরিদ্র ও পিছিয়ে পড়া লোকজনকে ধর্মান্তরিত হতে প্রলুব্ধ করা হচ্ছে বলে জোরালো অভিযোগ রয়েছে। একথা সত্য যে, আমরা বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ সমতলবাসী বাঙালিরা পাহাড়িদের আর্থ-সামাজিক উন্নতির জন্য পর্যাপ্ত সহযোগিতা করিনি। পাশাপাশি এটাও সত্য যে, ব্রিটিশ রাজশক্তি ঔপনিবেশিক আমলে বিশেষ মতলব নিয়ে পাহাড়ি ও বাঙালিদের মধ্যে বিভাজন রেখা টেনে দিয়েছিল যাতে পরস্পরের মধ্যে সার্বিকভাবে দূরত্ব তৈরি হয়। তাদের সেই দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার ফল এখন পাকতে শুরু করেছে বলে মনে হয় (এম. এ নোমান, আমার দেশ, ১২.০৮.২০১১)।
ড. ঊইলিয়াম কেরি, ড.টমাস, রিচার্ড হলওয়ে, ফাদার ক্লাউজ বার্লার, টরবেন ভি পিটারসন, আলফ্রেড রবিন মন্ডল ও ড.অলসন এর মতো লোকেরা বাংলা ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর মধ্যে বাইবেলের শিক্ষা, কৃষ্টি ও আদর্শ প্রচারের জন্য বাংলা ভাষা রপ্ত করেন। ১৭৯৩ সালে মিশনারীদের একটি শক্তিশালী দল বাংলাদেশে আসেন। মি.কেরি ও মি. পাওয়েল মিলে দিনাজপুরে একটি ক্ষুদ্র চার্চ প্রতিষ্ঠা করেন যা বাংলাদেশে প্রথম ব্যাপ্টিস্ট ও প্রটেষ্ট্যান্ট চার্চ। মি.কেরি নতুন আঙ্গিকে বাংলা ব্যাকরণ সংশোধন করেন এবং ১৮০০ সালে ইংল্যান্ড থেকে বাংলা বর্ণ মালার ছক এনে কলকাতার শ্রীরামপূর মিশন থেকে বাংলায় বাইবেল মুদ্রন ও প্রচারের ব্যবস্থা করেন। ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের বাংলা বিভাগের প্রধান হিসেবে কর্মরত অবস্থায় ড. কেরি ‘কথোপকথন’ ও ‘ইতিহাসমালা’ নামক বাংলায় দু’টি গ্রন্থ রচনা করেন। ১৮৫৭ সালে সিপাহী বিপ্লবের সময় ভারতীয় উপমহাদেশে ৯০টি প্রটেস্ট্যান্ট খ্রিষ্টান মিশনারী সংস্থা কর্মরত ছিল। রোমান ক্যাথলিক চার্চের সংখ্যা এর বাইরে (মাসিক তরজমানুল কুরআন, লাহোর, মার্চ, ১৯৬১)।
এদেশে প্রতিকুল পরিবেশে খ্রিষ্ট ধর্ম-সংস্কৃতির প্রচার ও বিকাশে তাঁরা যে ত্যাগ ও সাধনা করেন তা রীতিমত বিস্ময়ের উদ্রেক করে। চন্দ্রঘোনা, মালুমঘাট, ময়মনসিংহ, রংপুর ও রাজশাহী সহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে হাসপাতাল ও মাতৃসদন প্রতিষ্ঠা করে কুষ্ঠ রোগ সহ জটিল ব্যাধির চিকিৎসা ও অস্ত্রোপচার চালিয়ে আসছে একটি মাত্র লক্ষ্যকে সামনে রেখে, তা হলো এ দেশে খ্রিষ্ট ধর্ম, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রচার ও প্রসার। এই সব হাসপাতাল হলো মূলতঃ মানুষ ধরার ফাঁদ ও ষড়যন্ত্রের নীল কুঠি। মিশনারীদের এই নিরন্তর সাধনা ব্যর্থ হয়নি। উপজাতীয় জন গোষ্ঠীর দরিদ্রতার সুযোগ নিয়ে তাদের শিক্ষা ও চিকিৎসার অভাবকে পুঁজি করে খ্রিষ্টান এনজিও কর্মি ও মিশনারী পাদ্রীরা দূর্গম পার্বত্য এলাকায় নীরবে-নিভৃতে ধর্মান্তরের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
বাংলাদেশে কর্মতৎপর এনজিও’র সংখ্যা ৩০ হাজার। এই দেশে বহুজাতিক কোম্পানির আর্থ-রাজনৈতিক স্বার্থে এবং অসহায়, নিঃস্ব, নিরক্ষর ও প্রপীড়িত মানুষকে সেবা করার নামে ইউরোপীয় সংস্কৃতির বিকাশ ও খ্রিষ্ট-ধর্মে দীক্ষিত করার অমানবিক তৎপরতায় যেসব এনজিও জড়িত রয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছে: ১.কারিতাস ২.এমসিসি (মেনোনাইট সেন্ট্রাল কমিটি) ৩.বাংলাদেশ লুতারান মিশন ৪.দীপ শিখা ৫.স্যালভেশন আর্মি ৬.ওয়ার্ল্ড ভিশন ৭.সিডিএস (সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট সার্ভিস) ৮.আরডিআরএস (রংপুর-দিনাজপুর রুরাল সার্ভিস) ৯.সিসিডিবি (খ্রিষ্টান কমিশন ফর ডেভেলপমেন্ট) ১০.হিড বাংলাদেশ ১১.সেভেনথ ডে এ্যডভেঞ্চারিষ্ট ১২.চার্চ অব বাংলাদেশ ১৩.প্লান ইন্টারন্যাশনাল ১৪. সুইডিস ফ্রি মিশন ১৫.কনসার্ণ ১৬.এডরা ১৭.অষ্ট্রেলিয়ান ব্যাপটিষ্ট সোসাইটি ১৭. ফ্যামেলিজ ফর চিলড্রেন ১৮. ফুড ফর হাংরী ইন্টারন্যাশনাল। এই সব সংস্থার বাজেটের শতকরা ৯০ ভাগ অর্থ খ্রিষ্টানদের বা খ্রিষ্টধর্মে দীক্ষিত হবার সম্ভাবনাময় ব্যক্তিদের স্বার্থে, নির্বাহী কর্মকর্তা ও বিদেশী কনসালটেন্টের পেছনে ব্যয়িত হয়।
চার্চ অব বাংলাদেশ নামে একটি খ্রিষ্টান মৌলবাদী এন, জি, ও সংস্থা ১৯৬৫ সালে কক্সবাজারের মালুমঘাটে খ্রিষ্টান মেমোরিয়াল হাসপাতাল স্থাপন করে। স্থানীয় জনসাধারণের দরিদ্রতা, অভাব ও নিরক্ষরতার সুযোগ নিয়ে হাসপাতালের পরিচালক ডা. ভিগা বি অলসন বিগত ৩৮ বছর যাবত খ্রিষ্ট ধর্ম প্রচারে তৎপর রয়েছেন। ১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দে অত্র এলাকায় যেখানে এক জন খ্রিষ্টানও ছিলনা সেখানে বর্তমানে দশ হাজার বয়স্ক নাগরিক খ্রিষ্টান হয়েছে এবং তাদের পরিবার সহ এই সংখ্যা বর্তমানে ৪০ হাজারে উন্নীত হয়েছে। মালুমঘাটের আশে পাশের জমি চড়া দামে উক্ত এনজিও কিনে নিচ্ছে ধর্মান্তরিতদের পুর্নবাসনের উদ্দেশ্যে। ইতোমধ্যে হায়দারের নাসি গ্রামের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে বিশাল গীর্জা গড়ে উঠেছে এবং অত্র এলাকায় ভিন দেশী সংস্কৃতির বিকাশ চোখে পড়ার মতো। কয়েক বছর আগে মালুমঘাট হাসপাতালের ডা. অলসন ১৩টি মুসলিম পরিবারের ২৫ জন গরীব মুসলমানকে ফুসলিয়ে খ্রিষ্ট ধর্মে দীক্ষিত করার অভিযোগে সংক্ষুব্ধ শত শত স্থানীয় মানুষ হাসপাতাল আক্রমন করে এবং যেসব ঘরে ধর্মান্তর করা হতো তা জালিয়ে দেয়। বিক্ষুব্ধ জনতাকে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করলে ২০ জন পুলিশ সহ ১০০ ব্যক্তি আহত হয় (দৈনিক সংগ্রাম, ২৪অক্টোবর, ১৯৯২)।
ফস্টার প্যারেন্টস ইন্টারন্যাশনাল নামক একটি এনজিও সংস্থা বাংলাদেশের ৯৬ হাজার পরিবারের একটি শিশুকে পোষ্য সন্তান হিসেবে গ্রহণ করে খ্রিষ্টান বানানোর এক জঘন্য পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। ইতঃপূর্বে ধর্মান্তরিতকরণের অভিযোগে উক্ত সংস্থাকে জাকার্তা, বালি ও সুদান থেকে বহিষ্কার করা হয়। সেভেনথ ডে এডভানচারিষ্ট চার্চ নামক একটি খ্রিষ্টান এনজিও ৮৫টি স্কুল পরিচালনা করে এবং মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল বা এতিমখানায় কোন মুসলমান ছেলেকে ভর্তি করা হয় না। ভারতেও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এই সংস্থাটির প্রতিষ্ঠান রয়েছে। উচ্চ শিক্ষা ও প্রশিক্ষনের জন্য খ্রিষ্টান কর্মচারী ও খ্রিষ্টান ছাত্রদেরকে সেখানে পাঠিয়ে থাকে। এই সংস্থাটি সেবার নামে বাংলাদেশের মানুষকে খ্রিষ্টান বানানোর জন্য ১৯৯০-৯১ এবং ১৯৯১-৯২ আর্থিক বছরে ২৩০ মিলিয়ন টাকা খরচ করেছে। হিড বাংলাদেশ নামের এনজিও মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে, ঢাকাস্থ বিহারী রিফিউজি ক্যাম্পে এবং সুন্দরবনে সেবার আড়ালে খ্রিষ্ট সংস্কৃতির প্রচার ও খ্রিষ্টান জনগনের উন্নয়নের জন্য বছরে ৬ লাখ মার্কিন ডলার ব্যয় করে। খ্রিষ্টান কমিশন ফর ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদেশ (CCDB) জেনেভা ভিত্তিক একটি খ্রিষ্টান মিশনারী প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশের পরিবার প্রথা, সামাজিক ব্যবস্থা, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও ধর্মীয় মূল্যবোধ ভেঙ্গে ইউরোপীয় আদলে নতুন সমাজ গড়ার কর্মসূচী বাস্তবায়নে লিপ্ত। সিসিডিবির বার্ষিক ৩.৫ মিলিয়ন মার্র্কিন ডলার বাজেট খেকে খ্রিষ্টান জনগণ এবং ভবিষ্যতে যারা খ্রিষ্টান হবে তারাই উপকৃত হয়। সিসিডিব’র বর্তমান মূল লক্ষ্য হচ্ছে উপজাতি ও আদিবাসীদের সকল জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়ন স্থিতিশীল ও অংশীদারিত্ব ভিত্তিক উন্নয়ন কর্মকান্ডে নারীদের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চত করার জন্য তাদের ছোট ছোট উদ্যোগকে সমর্থন দান, সকল পর্যায়ে লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণ ইত্যাদি। ইউরোপের কয়েকটি দেশ,অস্ট্রেলিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের দাতা সংস্থা ও খ্রিষ্টান মিশনারী সংগঠন বিশেষতঃ জেনেভার ওয়ার্ল্ড কাউন্সিল অব চার্চেস, ব্রাড ফর দি ওয়ার্ল্ড, ইংল্যান্ডের খ্রিষ্টান এইড, নিউজিল্যান্ডের চার্চ ওয়ার্ল্ড সার্ভিস এবং হল্যান্ডের ইন্টারন্যাশনাল চার্চ এইড ঢাকা সিসিডিবিকে অর্থ যোগান দেয়। ওয়ার্ল্ড কাউন্সিল অব চার্চেস বছরে একবার সিসিডিবি’র একটি গোল টেবিল বৈঠকের আয়োজন করে। (বাংলাপিডিয়া,১০ খন্ড,পৃ.১৯৮-৯)। লুথারান ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অব বাংলাদেশের কর্তৃত্বাধীনে পরিচালিত একটি শক্তিশালী এনজিও সংস্থার নাম রংপুর-দিনাজপুর রুরাল সার্ভিস (RDRS)। বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে থাকা ৬ লাখ লুথারেন বিশ্বাসী এই সংস্থার সাথে জড়িত। নরওয়ে, সুইডেন, ডেনমার্ক ও ফিনল্যান্ডের লুথারেন চার্চ এই সংস্থাকে অর্থের যোগান দেয়। মি. টরবেন ভি পিটারসনের নেতৃত্বে ১৯৮৬ সাল হতে এই সংস্থা নিরব-কৌশলে প্রায় ২১৮ কোটি ৬৯ লাখ ৯৮ হাজার ৪৭৬ টাকা ব্যয়ে বৃহত্তর দিনাজপুর ও রংপুর জেলার সীমান্ত অঞ্চলের আদিবাসী ও সাঁওতাল অধ্যুষিত এলাকায় ধর্ম প্রচারের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সীমান্ত এলাকার বদলে দেশের অভ্যন্তরে প্রকল্প এলাকা সম্প্রসারণে সংস্থা অনাগ্রহী। ১৯৮১ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী একমাত্র দিনাজপুরেই ৩৫ হাজার সাঁওতাল খ্রিষ্টান হয়ে গেছে। (মুহাম্মদ নূরুজ্জামান, বাংলাদেশ-এনজিও উপনিবেশবাদের দূর্ভেদ্য জালে, ঢাকা, ১৯৯৬, পৃ.৬১-৭৩; দৈনিক ইত্তেফাক, ৬ ডিসেম্বর, ১৯৮১)
বাংলাদেশে কর্মতৎপর এনজিও’র সংখ্যা ৩০ হাজার। এই দেশে বহুজাতিক কোম্পানির আর্থ-রাজনৈতিক স্বার্থে এবং অসহায়, নিঃস্ব, নিরক্ষর ও প্রপীড়িত মানুষকে সেবা করার নামে ইউরোপীয় সংস্কৃতির বিকাশ ও খ্রিষ্ট-ধর্মে দীক্ষিত করার অমানবিক তৎপরতায় যেসব এনজিও জড়িত রয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছে: ১.কারিতাস ২.এমসিসি (মেনোনাইট সেন্ট্রাল কমিটি) ৩.বাংলাদেশ লুতারান মিশন ৪.দীপ শিখা ৫.স্যালভেশন আর্মি ৬.ওয়ার্ল্ড ভিশন ৭.সিডিএস (সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট সার্ভিস) ৮.আরডিআরএস (রংপুর-দিনাজপুর রুরাল সার্ভিস) ৯.সিসিডিবি (খ্রিষ্টান কমিশন ফর ডেভেলপমেন্ট) ১০.হিড বাংলাদেশ ১১.সেভেনথ ডে এ্যডভেঞ্চারিষ্ট ১২.চার্চ অব বাংলাদেশ ১৩.প্লান ইন্টারন্যাশনাল ১৪. সুইডিস ফ্রি মিশন ১৫.কনসার্ণ ১৬.এডরা ১৭.অষ্ট্রেলিয়ান ব্যাপটিষ্ট সোসাইটি ১৭. ফ্যামেলিজ ফর চিলড্রেন ১৮. ফুড ফর হাংরী ইন্টারন্যাশনাল। এই সব সংস্থার বাজেটের শতকরা ৯০ ভাগ অর্থ খ্রিষ্টানদের বা খ্রিষ্টধর্মে দীক্ষিত হবার সম্ভাবনাময় ব্যক্তিদের স্বার্থে, নির্বাহী কর্মকর্তা ও বিদেশী কনসালটেন্টের পেছনে ব্যয়িত হয়।
চার্চ অব বাংলাদেশ নামে একটি খ্রিষ্টান মৌলবাদী এন, জি, ও সংস্থা ১৯৬৫ সালে কক্সবাজারের মালুমঘাটে খ্রিষ্টান মেমোরিয়াল হাসপাতাল স্থাপন করে। স্থানীয় জনসাধারণের দরিদ্রতা, অভাব ও নিরক্ষরতার সুযোগ নিয়ে হাসপাতালের পরিচালক ডা. ভিগা বি অলসন বিগত ৩৮ বছর যাবত খ্রিষ্ট ধর্ম প্রচারে তৎপর রয়েছেন। ১৯৬৪ খ্রিষ্টাব্দে অত্র এলাকায় যেখানে এক জন খ্রিষ্টানও ছিলনা সেখানে বর্তমানে দশ হাজার বয়স্ক নাগরিক খ্রিষ্টান হয়েছে এবং তাদের পরিবার সহ এই সংখ্যা বর্তমানে ৪০ হাজারে উন্নীত হয়েছে। মালুমঘাটের আশে পাশের জমি চড়া দামে উক্ত এনজিও কিনে নিচ্ছে ধর্মান্তরিতদের পুর্নবাসনের উদ্দেশ্যে। ইতোমধ্যে হায়দারের নাসি গ্রামের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তে বিশাল গীর্জা গড়ে উঠেছে এবং অত্র এলাকায় ভিন দেশী সংস্কৃতির বিকাশ চোখে পড়ার মতো। কয়েক বছর আগে মালুমঘাট হাসপাতালের ডা. অলসন ১৩টি মুসলিম পরিবারের ২৫ জন গরীব মুসলমানকে ফুসলিয়ে খ্রিষ্ট ধর্মে দীক্ষিত করার অভিযোগে সংক্ষুব্ধ শত শত স্থানীয় মানুষ হাসপাতাল আক্রমন করে এবং যেসব ঘরে ধর্মান্তর করা হতো তা জালিয়ে দেয়। বিক্ষুব্ধ জনতাকে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করলে ২০ জন পুলিশ সহ ১০০ ব্যক্তি আহত হয় (দৈনিক সংগ্রাম, ২৪অক্টোবর, ১৯৯২)।
ফস্টার প্যারেন্টস ইন্টারন্যাশনাল নামক একটি এনজিও সংস্থা বাংলাদেশের ৯৬ হাজার পরিবারের একটি শিশুকে পোষ্য সন্তান হিসেবে গ্রহণ করে খ্রিষ্টান বানানোর এক জঘন্য পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। ইতঃপূর্বে ধর্মান্তরিতকরণের অভিযোগে উক্ত সংস্থাকে জাকার্তা, বালি ও সুদান থেকে বহিষ্কার করা হয়। সেভেনথ ডে এডভানচারিষ্ট চার্চ নামক একটি খ্রিষ্টান এনজিও ৮৫টি স্কুল পরিচালনা করে এবং মাধ্যমিক পর্যায়ের স্কুল বা এতিমখানায় কোন মুসলমান ছেলেকে ভর্তি করা হয় না। ভারতেও বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এই সংস্থাটির প্রতিষ্ঠান রয়েছে। উচ্চ শিক্ষা ও প্রশিক্ষনের জন্য খ্রিষ্টান কর্মচারী ও খ্রিষ্টান ছাত্রদেরকে সেখানে পাঠিয়ে থাকে। এই সংস্থাটি সেবার নামে বাংলাদেশের মানুষকে খ্রিষ্টান বানানোর জন্য ১৯৯০-৯১ এবং ১৯৯১-৯২ আর্থিক বছরে ২৩০ মিলিয়ন টাকা খরচ করেছে। হিড বাংলাদেশ নামের এনজিও মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে, ঢাকাস্থ বিহারী রিফিউজি ক্যাম্পে এবং সুন্দরবনে সেবার আড়ালে খ্রিষ্ট সংস্কৃতির প্রচার ও খ্রিষ্টান জনগনের উন্নয়নের জন্য বছরে ৬ লাখ মার্কিন ডলার ব্যয় করে। খ্রিষ্টান কমিশন ফর ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদেশ (CCDB) জেনেভা ভিত্তিক একটি খ্রিষ্টান মিশনারী প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশের পরিবার প্রথা, সামাজিক ব্যবস্থা, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও ধর্মীয় মূল্যবোধ ভেঙ্গে ইউরোপীয় আদলে নতুন সমাজ গড়ার কর্মসূচী বাস্তবায়নে লিপ্ত। সিসিডিবির বার্ষিক ৩.৫ মিলিয়ন মার্র্কিন ডলার বাজেট খেকে খ্রিষ্টান জনগণ এবং ভবিষ্যতে যারা খ্রিষ্টান হবে তারাই উপকৃত হয়। সিসিডিব’র বর্তমান মূল লক্ষ্য হচ্ছে উপজাতি ও আদিবাসীদের সকল জনগোষ্ঠীর ক্ষমতায়ন স্থিতিশীল ও অংশীদারিত্ব ভিত্তিক উন্নয়ন কর্মকান্ডে নারীদের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চত করার জন্য তাদের ছোট ছোট উদ্যোগকে সমর্থন দান, সকল পর্যায়ে লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণ ইত্যাদি। ইউরোপের কয়েকটি দেশ,অস্ট্রেলিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ বিশ্বের অন্যান্য দেশের দাতা সংস্থা ও খ্রিষ্টান মিশনারী সংগঠন বিশেষতঃ জেনেভার ওয়ার্ল্ড কাউন্সিল অব চার্চেস, ব্রাড ফর দি ওয়ার্ল্ড, ইংল্যান্ডের খ্রিষ্টান এইড, নিউজিল্যান্ডের চার্চ ওয়ার্ল্ড সার্ভিস এবং হল্যান্ডের ইন্টারন্যাশনাল চার্চ এইড ঢাকা সিসিডিবিকে অর্থ যোগান দেয়। ওয়ার্ল্ড কাউন্সিল অব চার্চেস বছরে একবার সিসিডিবি’র একটি গোল টেবিল বৈঠকের আয়োজন করে। (বাংলাপিডিয়া,১০ খন্ড,পৃ.১৯৮-৯)। লুথারান ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অব বাংলাদেশের কর্তৃত্বাধীনে পরিচালিত একটি শক্তিশালী এনজিও সংস্থার নাম রংপুর-দিনাজপুর রুরাল সার্ভিস (RDRS)। বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে থাকা ৬ লাখ লুথারেন বিশ্বাসী এই সংস্থার সাথে জড়িত। নরওয়ে, সুইডেন, ডেনমার্ক ও ফিনল্যান্ডের লুথারেন চার্চ এই সংস্থাকে অর্থের যোগান দেয়। মি. টরবেন ভি পিটারসনের নেতৃত্বে ১৯৮৬ সাল হতে এই সংস্থা নিরব-কৌশলে প্রায় ২১৮ কোটি ৬৯ লাখ ৯৮ হাজার ৪৭৬ টাকা ব্যয়ে বৃহত্তর দিনাজপুর ও রংপুর জেলার সীমান্ত অঞ্চলের আদিবাসী ও সাঁওতাল অধ্যুষিত এলাকায় ধর্ম প্রচারের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। সীমান্ত এলাকার বদলে দেশের অভ্যন্তরে প্রকল্প এলাকা সম্প্রসারণে সংস্থা অনাগ্রহী। ১৯৮১ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী একমাত্র দিনাজপুরেই ৩৫ হাজার সাঁওতাল খ্রিষ্টান হয়ে গেছে। (মুহাম্মদ নূরুজ্জামান, বাংলাদেশ-এনজিও উপনিবেশবাদের দূর্ভেদ্য জালে, ঢাকা, ১৯৯৬, পৃ.৬১-৭৩; দৈনিক ইত্তেফাক, ৬ ডিসেম্বর, ১৯৮১)
জনাব রেজাউল হক হেলাল সম্প্রতি খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার সাজেক ইউনিয়নে দশ হাজার উপজাতির সাংস্কৃতিক পরিবর্তন ও ধর্মান্তরের এক চাঞ্চল্যকর সংবাদ দিয়েছেন। সাজেক ইউনিয়নটি সীমান্তবর্তী দূর্গম পাহাড়ী অঞ্চলে অবস্থিত যা আয়তনে বাংলাদেশের একটি জেলার সমান। নৈসর্গিক সৌন্দর্য লালিত এই উপত্যকায় পৌঁছতে খাগড়াছড়ি বা রাঙ্গামাটি শহর থেকে দু’দিন সময় লাগে। এই ইউনিয়নের বিশটি গ্রামে খেয়াং, রম, পাংখু, লুসাই উপজাতির বাস। সাজেক উপত্যকাটি ভারতীয় সীমান্ত রাজ্য মিজোরাম সংলগ্ন। বিশ বছর আগেও এখানে খ্রিষ্ট ধর্মের কোন নাম গন্ধ ছিল না। উপজাতীয়দের ভাষা, সংস্কৃতি সবই ছিল, আজ কিছুই নেই। শুধু ইংরেজীতে কথা বলাই নয়; সেখানকার অধিবাসীরা গীটার বাজিয়ে ইংরাজী গান গায়; মেয়েরা পরে প্যান্ট-শার্ট-স্কার্ট; এদের দেখে মনে হয় যেন বাংলার বুকে এক খন্ড ইউরোপ। জাতিতে তারা প্রায় সবাই খ্রিস্টান। দীর্ঘ দিন ধরে এই দুর্গম পার্বত্য এলাকায় খ্রিষ্টান মিশনারীরা অনেক কৌশল ও টাকা ব্যয়ের মাধ্যমে উপজাতীয়দের ধর্মান্তরিত করে চলেছে। ইতোমধ্যে পাংখু উপজাতি পুরোপুরি খ্রিষ্টান হয়ে গেছে; বদলে গেছে তাদের ভাষা; এমন কি তাদের ভাষার হরফও ইংরাজী বর্ণমালায় রূপান্তর করা হয়েছে। এন জিও নাম ধারন করে কয়েকটি খ্রিষ্টান মিশনারী এই দুর্গম এলাকায় হাসপাতাল, বিনোদন কেন্দ্র, চার্চ ইত্যাদি গড়ে তুলেছে। নিজস্ব উপজাতীয় আদি ভাষা ও সংস্কৃতি এরা হারিয়ে ফেলেছে (ইনকিলাব, ২০ মে ২০০৩)।
বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল, পূর্বাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পার্বত্য এলাকায় গড়ে উঠেছে ক্রশ চিহ্নিত সুদৃশ্য গীর্জা। প্রাথমিক ভাবে মিশনারীদের টার্গেট ছিল হিন্দু ও পাহাড়ী আদিবাসী জনগোষ্ঠী এবং পরবর্তীতে মুসলমান। বান্দরবান, খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি ও ময়মনসিংহের গহীন অরন্যে বসবাসরত আধুনিক সভ্যতার আলোকধারা থেকে বঞ্চিত মানুষ বিশেষত: চাকমা, মারমা, তনছইঙ্গা, চাক, খ্যাং, খূমি, বোম, মো, মুরুং, টিপরা, খাসিয়া, মনিপুরী, খেয়াং, পাংখু, লুসাই, মগ, গারো উপজাতির মধ্যে খ্রিষ্ট সংস্কৃতি ও ধর্মের বিকাশ এবং অনুশীলন তাদের জীবন ধারায় এনেছে ব্যাপকতর বৈচিত্র্য ও আমুল পরিবর্তন। প্রতিটি মানুষের জন্য একটি বাইবেল এবং প্রত্যেক জনগোষ্ঠীর জন্য একটি গীর্জা (Every man a Bible and every People a Church) এ কর্মসূচীকে সামনে রেখে মিশনারীরা যে তৎপরতা বাংলাদেশে শুরু করেছিল তার লক্ষ্য পানে ছুটে চলেছে নিরন্তরভাবে। ১৯৩৯ সালে যেখানে বাংলাদেশে খ্রিষ্টানের সংখ্যা ছিল ৫০ হাজার, সেখানে ১৯৯২ সালে খ্রিষ্টান জনগোষ্ঠীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫০ লাখে; ২০১২ সালে এই সংখ্যা দাঁড়াবে এক কোটিতে। কট্টর মৌলবাদী এনজিও ওয়ার্ল্ড ভিশনের অব্যাহত প্রচেষ্টার ফলে ১৯৯১ সালে একমাত্র গারো পাহাড় এলাকায় ১৬ হাজার ভোটার তালিকাভূক্ত হয় এবং খ্রিষ্টান জন শক্তি দাড়াঁয় ৫০ হাজারে।
বর্তমানে হবিগঞ্জ, মৌলভিবাজার, সুনামগঞ্জ ও সিলেটে ৩০ হাজার খাসিয়া জনগণ বাস করে। পার্বত্য খাসিয়াদের বাসভূমি পশ্চিমে গারো পাহাড় পর্যন্ত বিস্তৃত। দেড় শতাধিক বছর পূর্বে খ্রিষ্টান মিশনারীরা খাসিয়াদের মধ্যে ধর্মপ্রচার শুরু করেছিল। বর্তমানে ৮০%-৯০% খাসিয়া খ্রিষ্টান, প্রায় প্রতিটি পুঞ্জিতে (গ্রাম) গির্জা আছে। প্রতি রোববারে খ্রিষ্টান খাসিয়ারা গির্জায় প্রার্থনা এবং পুঞ্জির বিষয়াদি নিয়ে কিছুক্ষণ আলোচনা করে। খ্রিষ্টান যাজকগণ অনেক সময় পুঞ্জির বিচার- আচারেরও দায়িত্ব পালন করেন। খ্রিষ্টান কৃষ্টি ও ধর্মে দীক্ষার ফলে খাসিয়াদের আর্থ-সামাজিক কাঠামোই বদলে গেছে। খ্রিষ্টান খাসিয়ারা প্রোটেস্ট্যান্ট এদের মধ্যে ক্যাথলিক আদপেই নেই। খাসিয়া ভাষা অস্ট্রো-এশিয়াটিক ভাষার অন্তর্ভূক্ত। বর্তমানে খাসিয়া ভাষা সীমান্তের ওপারে রোমান হরফে লেখা হচ্ছে। ইদানিং কালে খ্রিষ্টান মিশনারীদের প্রচেষ্টায় সাঁওতাল লিপির বর্ণমালাও রোমান হরফে পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে (বাংলাপিডিয়া,-২খন্ড, পৃ.১০,১২; ৩খন্ড, ৭৯-৮৯)।
সাংবাদিক ষ্টালিন সরকার লিখেছেন যে, উত্তরাঞ্চলের ধর্মান্তরের ঘটনা আশংকাজনক হারে বেড়ে গেছে। মুসলমান, হিন্দু আর সাওঁতালদের মধ্যে ধর্ম ত্যাগ করে খ্রিষ্টান হওয়ার ঘটনা ঘটছে অহরহ। বৃহত্তর রংপুর ও বৃহত্তর দিনাজপুরের আটটি জেলায় ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে খ্রিষ্টান মিশনারী। ওই সব চার্চে গত পাঁচ বছরে ১০ থেকে ১২ হাজার ধর্মান্তরিত হয়ে খ্রিষ্টান ধর্ম গ্রহণ করেছে। বেকারত্ব আর দারিদ্র্যকে পুঁজি করে মিশনারীর লোকজন ধর্মান্তরের টোপ দিচ্ছে মানুষকে। শুধু যুবক-যুবতী আর অভাবী মানুষকে নয়, কোমলমতি শিশুদেরও খ্রিষ্টান করার অপতৎপরতা চালাচ্ছেন পাদ্রীরা। তাঁরা আটটি জেলায় কমপক্ষে ৩০/৪০চি নার্সারী স্কুল খুলেছেন। এসব স্কুলের ক্লাসরুমে যিশুর প্রতিকৃতি সহ খ্রিষ্টিয় সংস্কৃতির বিভিন্ন ছবি ও অনুষঙ্গ টাঙ্গিয়ে রাখা হয়। পাঠ্য বই পড়ার পাশাপাশি ওই সব ছবি দেখিয়ে কোমলমতি শিশুদের খ্রিষ্টান ধর্ম ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জ্ঞান দেয়া হয়। পাদ্রীদের ধর্মান্তরের এই মিশন চলতে থাকলে আগামী ১০/১২ বছরে উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে লক্ষাধিক দরিদ্র ও বেকার যুবক খ্রিষ্টান ধর্মে দীক্ষিত হতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে (পূর্ণিমা,১৬ জুন,২০০৪/১৭বর্ষ ৪০ সংখ্যা, পৃ.৩৯)।
বাংলাদেশে খ্রিষ্টান মিশনারীদের এ সাফল্য নিঃসন্দেহে এ দেশের মুসলমানদের ব্যর্থতার দলিল। সাত সমুদ্র তের নদীর ওপার থেকে মিশনারীরা এসে যদি আদিবাসীদের মধ্যে খ্রিষ্টান র্ধম ও ইঊরোপীয় সংস্কৃতি প্রচার করতে পারে তা হলে এত কাছের হয়েও আমরা মুসলমানরা কেন ইসলাম ধর্ম ও সংস্কৃতি প্রচারে হাত-পা গুটিয়ে বসে রইলাম। সাহায্যের হাত, সহানুভূতির হাত, সেবার হাত পার্বত্য ভাইদের প্রতি আমরা কেন সম্প্রসারন করতে পারলামনা। এ দায়িত্ব অবহেলার মাশুল একদিন এই দেশের মুসলমানদের দিতেই হবে। প্রায় বিশ বছর আগে পটিয়া আল- জামিআ আল- ইসলামিয়ার প্রাক্তন প্রধান পরিচালক হযরত আলহাজ মাওলানা মুহাম্মদ ইউনুছ (রহ.) কাপ্তাই এর অদূরে সূখবিলাস ও বান্দরবান সদরে দু’টি দশ শয্যা বিশিষ্ট আধুনিক দাতব্য হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করে পার্বত্য জনগোষ্ঠীকে চিকিৎসা সুবিধে প্রদানের যে মহৎ কাজ সূচনা করেছিলেন তা যথেষ্ট ইতিবাচক ফল দিয়েছে কিন্তু দুঃখের বিষয় হযরত হাজী সাহেবের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে এ ক্ষেত্রে আর কেউ এগিয়ে আসেননি।
আমাদের সীমান্তের ওপারে সেভেন সিস্টার নামে খ্যাত মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, হিমাচল, অরুনাচল প্রভৃতি পাহাড়ী অঞ্চলের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী এখন র্ধমান্তরিত খ্রিষ্টান। ঐ সব পাহাড়ী অঞ্চল সংলগ্ন বাংলাদেশের র্পাবত্য এলাকায়ও ইতোমধ্যে উল্লেখযোগ্য হারে খ্রীষ্টানের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। গড়ে উঠেছে পাহাড়ের কোল ঘেঁষে সুদৃশ্য গীর্জা ও মিশনারী স্কুল। সাম্প্রতিক আঞ্চলিক, জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক ঘটনাপ্রবাহ এ কথার ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, একদিন চট্টগ্রামের র্পাবত্য অঞ্চল দক্ষিণ সুদান ও ইন্দোনেশিয়ার পূর্ব তিমূরের মত জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে স্বাধীনতা লাভ করবে। গড়ে উঠবে বাংলাদেশের বুকে আরেকটি স্বাধীনদেশ। খ্রিষ্টান অধ্যুষিত ইউরোপীয় দাতাগোষ্ঠী ও এনজিও চক্র পার্বত্য চট্টগ্রামকে টার্গেট করে সামনে এগুচ্ছে। প্রায় দু’বছর স্থগিত থাকার পর জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচী (UNDP) এই বছর রাঙামাটি, বিলাইছড়ি, বান্দরবান ও থানচিতে ২০ লাখ মার্কিন ডলারের ‘কমিউনিটি উন্নয়ন কর্মসূচী’ নামক প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে। ২০০১ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামে তিন বিদেশী নাগরিককে (ব্রিটিশ ও ডেনিশ) অপহরণের পর বিদেশী সংস্থাগুলো তাদের তৎপরতা সাময়িক ভাবে স্থগিত রাখে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা উন্নয়নের নামে দেদার বৈদেশিক অর্থের দ্বারা নব দীক্ষিত খ্রিষ্টান জনগোষ্ঠীকে পুনর্বাসনের কাজে লিপ্ত রয়েছে। কমিউনিটি ডেভেলপমেন্টের প্ল্যানের অধীনে তারা ধর্মান্তরিত খ্রিষ্টান যুবকদের উচ্চ শিক্ষার জন্য যুক্তরাজ্য, যুক্তরাস্ট্র, অষ্ট্রেলিয়া, কানাডা প্রভৃতি দেশে প্রেরণ করে।
পরিস্থিতি এই ভাবে অব্যাহত থাকলে গোটা পার্বত্য অঞ্চলে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে সচ্ছল এবং রাজনৈতিক দিয়ে বিপজ্জনক খ্রিষ্টান জনগোষ্ঠী গড়ে উঠবে। এই পাড়ের পাহাড়ীয় খ্রিষ্টানগণ সীমান্তবর্তী ওই পাড়ের পার্বত্যাঞ্চলে বসবাসরত নব দীক্ষিত খ্রিষ্টানদের সাথে মিলে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন পরিচালনা করতে পারে। এই আশংকা অমূলক নয়। NGO তথা বেসরকারী সংস্থা গুলো কোন দেশের কোন সরকারের বন্ধু নয়। এনজিও’রা তাদের খ্রিষ্টান দাতাগোষ্ঠীর গোপন পরিকল্পনাই বাস্তবায়ন করে থাকে মাত্র। বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী ভারতীয় ছয়টি রাজ্যের পাহাড়ী এলাকায় বহুদিন যাবত এনজিও এবং খ্রিষ্টান মিশনারীরা আদিবাসীদের ধর্মান্তরের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে সুকৌশলে। সম্প্রতি ওইসব সংস্থার সঙ্গে এতদঞ্চলের উগ্রপন্থি সংগঠনের সর্ম্পক থাকার খবর পাবার পর সিবিআই ও অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থা তদন্ত শুরু করেছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে ৮২০ টি এনজিও সংস্থাকে ভারতীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কালো তালিকাভুক্ত করে ওই সব রাজ্যসমূহের জেলা প্রশাসকদের সর্তক থাকার নির্দেশ দিয়েছে। ভারতের উত্তর-র্পূবাঞ্চলের ছয়টি রাষ্ট্রের কালো তালিকাভুক্ত এনজিওদের মধ্যে রয়েছে ত্রিপুরায় ৬৯, মনিপূরের ১৯৭, আসামের ১৫১, নাগাল্যান্ডের ৭৮, সিকিমের ২,
মেঘালয়ের ৩২৩ টি।
কোলকাতার আনন্দ বাজার পত্রিকা নয়াদিল্লীর সূত্র উল্লেখ করে জানিয়েছে: কালো তালিকাভুক্ত স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলোর বেশির ভাগই আর্থ-সামাজিক, শিক্ষাবিস্তার এবং রোগ প্রতিরোধ সচেতনতার কাজ করে বলে সরকারি খাতায় পরিচিতি রয়েছে। এসব কাজ করতে গিয়ে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলোর সরকারের কাছ থেকে নানা তথ্য ও পরিসংখ্যান নিয়ে থাকে। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা মনে করছে এসব তথ্য জঙ্গিরা তাদের অন্তর্ঘাতমূলক কাজে ব্যবহার করতে পারে। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের কাছে আরো খবর রয়েছে, বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা জঙ্গীদের রিক্রুটিং ‘এজেন্সি’ হিসেবে কাজ করে।
খ্রিষ্টান অধ্যুষিত দক্ষিণ সুদানও স্বীকৃতি পেয়েছে পূর্ব তিমুরের পথ ধরে কারণ জাতিসংঘ সহ আন্তর্জাতিক ফোরামে রয়েছে খ্রিষ্টান মিশনারীদের ষ্ট্রং লবি। ২০০২ সালের মে মাসে আন্তর্জাতিক মুরব্বিদের সহায়তায় ইন্দোনেশিয়ার ২৭তম প্রদেশ পূর্ব তিমুর ইন্দোনেশিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে স্বাধীনতা লাভ করল। কাশ্মীর, মিন্দানাও, আরাকান, আচেহ, চেচনিয়া, দাগিস্তান, ফিলিস্তিন ও জিংজিয়াং অঞ্চলের মুক্তিপাগল জনতা আদৌ বর্তমান জাতিসংঘের অধীনে স্বাধীনতা পাবে কিনা যথেষ্ট সন্দেহ আছে। কারণ এই সব এলাকার সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী মুসলমান।
খ্রিষ্টান মিশনারীদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে আমাদের মধ্যে কোন রূপ দ্বিধা থাকা উচিৎ নয়। ১৮৫৭ খিষ্টাব্দে East India Company এর Board of Directors এর সভায় গৃহীত প্রস্তাবে যে বক্তব্য রাখা হয়েছে তা মিশনারীদের উদ্দেশ্য বুঝতে একান্ত সহায়ক ‘প্রকৃতি ভারতীয় উপমহাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলটি এই জন্য ব্রিটেনের কাছে সোপর্দ করেন, যাতে এতদঞ্চলের এক প্রান্ত হতে অপর প্রান্ত পর্যন্ত মিশনারীদের বিজয় পতাকা উড্ডীন হয়। এতদঞ্চলকে খ্রিষ্টান রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য প্রত্যেকের আপ্রাণ চেষ্টা করা উচিৎ’ (তারীখে পাকিস্তান ও সিন্ধু সেকেন্ডারী স্কুল পরীক্ষা-১৯৬২ ইং, পৃঃ ৫০৪; দৈনিক আজাদ, ঢাকা, উর্দু পত্রিকার মতামত শীর্ষক নিবন্ধ,৩০ জৈষ্ঠ, ১৩৭৪ বাংলা)।
মুসলিম রাষ্ট্র সমুহে মিশনারী প্রেরক সমিতির সভাপতি মি.কিস জুয়াইমর মিশনারীদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে যে মন্তব্য করেন তা অত্যন্ত খোলামেলা এবং রীতিমত উদ্বেগজনক। তিনি বলেন: ‘আমাদের খ্রিষ্টান মিশনারীদের বড় উদ্দেশ্য এই যে, যেসব ছাত্র আমাদের স্কুল-কলেজ হতে শিক্ষা সমাপন করে বের হচ্ছে তারা নিশ্চিত রূপে ইসলাম থেকে বের হয়ে গেছে, যদিও বের হওয়াটা আনুষ্ঠানিক নয়। অর্থাৎ নাম ও পরিচিতিতে খ্রিষ্টান না হলেও মন-মেজায, ধ্যান-ধারনা ও চিন্তা-চেতনা ইত্যাদিতে সে ইসলাম বিমুখ হয়েছে। শুধু এতটুকু নয়, বরং সে সম্পূর্ণ অজ্ঞাতে আমাদের মিশনের এক জন বড় পৃষ্ঠপোষক। তার পক্ষ হতে আমাদের অনিষ্টের কোন প্রকার আশংকা নেই। সে আমাদের ও আমাদের মিশনের বিরুদ্ধে টু শব্দটিও করতে পারে না। এটা আমাদের সে সফলতা দুনিয়ায় যার নজীর নেই’ (মাসিক বাইয়েনাত, করাচী, শা’বান-১৩৮৬ হিজরী)।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন ঐতিহ্যগত ভাবে খ্রিষ্টান মিশনারীদের বড় পৃষ্ঠপোষক। এই দু’রাষ্ট্র ষড়যন্ত্র ও আগ্রাসন চালিয়ে পৃথিবীর যে দেশ দখল করে সেখানেই রাষ্ট্রীয় ছত্রছায়ায় যাজকগণকে খ্রিষ্টধর্ম ও সংস্কৃতি প্রচারের ব্যাপক সুযোগ অবারিত করে দেয়। যুদ্ধ বিধ্বস্ত ইরাকের আর্থ-রাজনৈতিক পুনর্গঠনের আড়ালে খ্রিষ্টান ধর্ম বিকাশে বাইবেল প্রচারকদের অগ্রণী ভূমিকা সেই একই চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ। সম্প্রতি কানাডার বৃহত্তম সংবাদপত্র Toronto Star ‘মার্কিন বাইবেল প্রচারকরা ইরাকের জন্য সুবৃহৎ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছ’ এই শিরোনামে এক চাঞ্চল্যকর প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে বলা হয় সাদার্ন ব্যাপটিষ্ট কনভেনশনের প্রেসিডেন্ট মি. চার্লস স্ট্যানলি যুদ্ধ বিধ্বস্ত ও স্বজন হারা ইরাকী জনগণকে তাদের অসহায়ত্বের সুযোগে রিলিফ সরবরাহের পাশাপাশি খ্রিষ্ট-ধর্মে দীক্ষিত করার এক মহা পরিকল্পনায় হাত দিয়েছেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন ঐতিহ্যগত ভাবে খ্রিষ্টান মিশনারীদের বড় পৃষ্ঠপোষক। এই দু’রাষ্ট্র ষড়যন্ত্র ও আগ্রাসন চালিয়ে পৃথিবীর যে দেশ দখল করে সেখানেই রাষ্ট্রীয় ছত্রছায়ায় যাজকগণকে খ্রিষ্টধর্ম ও সংস্কৃতি প্রচারের ব্যাপক সুযোগ অবারিত করে দেয়। যুদ্ধ বিধ্বস্ত ইরাকের আর্থ-রাজনৈতিক পুনর্গঠনের আড়ালে খ্রিষ্টান ধর্ম বিকাশে বাইবেল প্রচারকদের অগ্রণী ভূমিকা সেই একই চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ। সম্প্রতি কানাডার বৃহত্তম সংবাদপত্র Toronto Star ‘মার্কিন বাইবেল প্রচারকরা ইরাকের জন্য সুবৃহৎ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছ’ এই শিরোনামে এক চাঞ্চল্যকর প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে বলা হয় সাদার্ন ব্যাপটিষ্ট কনভেনশনের প্রেসিডেন্ট মি. চার্লস স্ট্যানলি যুদ্ধ বিধ্বস্ত ও স্বজন হারা ইরাকী জনগণকে তাদের অসহায়ত্বের সুযোগে রিলিফ সরবরাহের পাশাপাশি খ্রিষ্ট-ধর্মে দীক্ষিত করার এক মহা পরিকল্পনায় হাত দিয়েছেন।
মি. চার্লস স্ট্যানলি প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জুনিয়র বুশের ইরাক আক্রমণের অন্যতম দোসর। চার্লস স্ট্যানলি আটলান্টার First Baptist Church এর প্রধান পুরোহিত। বিশ্বের বৃহত্তম টি ভি চ্যানেল ক্যাবল নিউজ নেটওয়ার্ক (CNN) যা মার্কিন প্রশাসনের বশংবদ বলে কুখ্যাত, সেই চ্যানেলটির প্রধান দফতর ও আটলান্টায় অবস্থিত। গীর্জার প্রধান পুরোহিতের দায়িত্ব পালন ছাড়াও চার্লস স্টানলি ইনটাচ মিনিস্ট্রি নামে একটি ধর্ম প্রচারণা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন সেখান থেকে ১৪টি ভাষায় স্ট্যানলির ধর্মীয় ভাষণ বিশ্বব্যাপী প্রচারিত হয়ে থাকে। বুশ ইরাক আক্রমণের পূর্বে ফেব্রুয়ারী হতে চার্লস স্টানলি তাঁর বিশ্বব্যাপী প্রচারণায় এই বক্তব্যটি প্রচার করতে থাকে “ঈশ্বর মার্কিন সরকারকে নির্দেশ দিয়েছেন ভালকে সম্প্রসারণ ও মন্দকে প্রতিহত করার জন্য। অতএব এই সরকার বাইবেল প্রদত্ত নৈতিক ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে মার্কিন জাতিকে রক্ষা এবং বিশ্বে যারা দাসত্বে আবদ্ধ রয়েছে তাদের মুক্ত করতে যুদ্ধে যাচ্ছে।” তাঁর এই ভাষণ আরবীতে অনুবাদ করে উপগ্রহ টিভি ও রেডিওর মাধ্যমে সারা আরব জাহান বিশেষত মধ্যপ্রাচ্যে বারংবার প্রচার করা হয়। স্ট্যানলির প্রতিষ্ঠান ছাড়া মার্কিনী ডানপন্থী খ্রিষ্টানদের আরো বহু মিশনারী সংগঠন ইরাকে খ্রিষ্টধর্ম প্রচার কর্মকান্ড বিস্তার করতে প্রয়াসী হয়েছে। (মাঈনুল আলম, পূর্বকোন, ২৭ মে ২০০৩ পৃ.০৪) এমনিতে গোটা ইরাক জুড়ে আগে থেকে খ্রিষ্টান জনগোষ্ঠী আছে প্রায় ১০ লাখ। মার্কিনীদের ছত্রছায়ায় এনজিও ও মিশিনারীদের অব্যাহত প্রয়াসের ফলে খ্রিষ্টানের সংখ্যা বাড়তে থাকবে ক্রমশ তারাই পাবে যুদ্ধোত্তর ইরাকে রাষ্টীয় পৃষ্ঠপোষকতা ও অর্থানুকুল্য। ফলশ্রুতিতে এক সময় লেবাননের মতো ইরাকে ও দেখা দিতে পারে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি।
এন জি ও এবং খ্রিষ্টান মিশনারীগণ ৯০ ভাগ মুসলমানদের এ দেশে সাংস্কৃতিক পরিমন্ডল পরিবর্তনের মতো সংঘাতমুখী যে পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে যাচ্ছে তাতে নীরব বসে থাকা যায় না। একটি স্বাধীন দেশের জন্য এমন পরিস্থিতি সন্দেহাতীতভাবে ভয়াবহ ও ধ্বংসাত্মক। বাংলাদেশের অর্ধশতাধিক অনিবন্ধিত এন জি ও ২০০১ সালে অবৈধভাবে বিদেশ থেকে ৫৫ কোটি টাকা এনেছে এবং আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে যে, দেশী-বিদেশী ব্যাংকের মাধ্যমে পুরো অর্থ তারা ছাড় করে নিয়ে গেছে। আমরা এন জি ও দের দেশীয় সংস্কৃতি ও আদর্শ বহির্ভূত সকল কর্মকান্ড ও ধৃষ্টতাপূর্ণ দৌরাত্ম নিষিদ্ধ করার দাবী জানাই। নব্য ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী এন জি ও এবং মিশনারীদের কর্মকান্ড ঘনিষ্টভাবে মনিটরিং করা সময়ের অপরিহার্য দাবী।
ভয়াবহ পরিস্থিতির এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের মুসলমানদের দাওয়াতী ও সেবার ইতিবাচক মানসিকতা নিয়ে বাস্তব কর্মসূচী হাতে নিতে হবে যাতে খ্রিষ্টান মিশনারীদের কবল থেকে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, উত্তরাধিকার ঐতিহ্য ও লালিত কৃষ্টি রক্ষা করা যায়। রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবি, আলিম সহ সর্বস্তরের মুসলমানদের এই বিষয়ে সুচিন্তিত কর্মপন্থা নির্ধারণ করতে হবে। ভারতীয় উপমহাদেশে ইংরেজ রাজত্বে খ্রিষ্টান মিশনারীদের অপতৎপরতার বিরুদ্ধে মাওলানা রহমতুল্লাহ কিরানবী (রহ.), হাজী ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী (রহ.), আল্লামা কাছেম নানুতুভী (রহ.), মাওলানা শরফুল হক সিদ্দিকী (রহ.), মাওলানা মুহাম্মদ আলী মুংগেরী (রহ.), মুন্সী মেহেরুল্লাহ (রহ.) ও পন্ডিত রিয়াজুদ্দীন মাশহাদী (রহ.) যেভাবে বক্তৃতা, লেখনী ও কর্মকৌশলের মাধ্যমে প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তুলে ছিলেন তা এখনো আমাদের জন্য প্রেরণার উৎস।
এই চমৎকার লেখাটির পিডিএফ বা ই-বুক ডাউনলোড করুন এখানে
সতর্ক করার উদ্দেশে লেখা ও বইটি অবশ্যই অন্যদের মাঝে শেয়ার করুন।