পাঠক! বাংলা ভাষায় সুবৃহৎ বিশুদ্ধ ইসলামী সাইটে আপনাকে স্বাগতম। সহীহ কুরআন, সুন্নাহনির্ভর রেফারেন্স ও গবেষণাধর্মী প্রায় ২০০এর অধিক বিষয়ের অনন্য সমাহার। আমাদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ও অনুদান দিয়ে সাহায্য করতে পড়ুন এখানে

টেস্ট টিউব বেবি সম্পর্কে ইসলামের হুকুম

একজন প্রশ্ন করেছেন:
টেস্টটিউব বেবি সম্পর্কে ইসলামের হুকুম কি? আমরা কি টেস্টটিউব বেবি নিতে পারি?
জবাব:
আমরা এখানে টেস্টটিউব বেবি সম্পর্কে ইসলামের হুকুম আলোচনা করছি। এর পর আপনি টেস্টটিউব বেবি নিবেন কি না সে সিদ্ধান্ত আপনি নিজে নিবেন।
সন্তান নারী পুরুষের যৌন মিলনের ফসল। আর এই যৌন মিলনের একমাত্র বৈধ পথ হলো বিয়ে। ইসলাম নসব বা সন্তানের পিতৃ পরিচয়ের ব্যাপারটিকে অত্যন্ত গুরত্ব দেয়। এ কারণেই ইসলাম নারী-পুরষের জন্য বিয়ে শরীয়ত সম্মত করেছে। আর বিয়েবিহীন যৌন মিলনকে অত্যন্ত ঘৃণার চোখে দেখে। তাই যারা বিয়েবিহীন যৌন মিলনে লিপ্ত হয় তাদের জন্য ইসলাম কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করেছে। মানুষকে বিয়ে বিহীন যৌন মিলন থেকে বিরত থাকার আদেশ দিতে গিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন, ﴿ وَلَا تَقۡرَبُواْ ٱلزِّنَىٰٓۖ إِنَّهُۥ كَانَ فَٰحِشَةٗ وَسَآءَ سَبِيلٗا ٣٢ [الاسراء: ٣٢] আর তোমরা ব্যভিচারের কাছে যেয়ো না, নিশ্চয় তা অশ্লীল কাজ ও মন্দ পথ[সূরা আল ইসরা:৩২]
ইসলামের দৃষ্টিতে সন্তান বৈধ হবার জন্য শর্ত হলো বৈধ বিবাহের মাধ্যমে যৌনমিলন থেকে সন্তানের জন্ম গ্রহণ। এ প্রসঙ্গে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,সন্তান তারই যার সাথে (বৈবাহিক সম্পর্কের ভিত্তিতে) ফিরাশ বা শয্যাযাপন হয়। আর ব্যভিচারকারীর জন্য রয়েছে পাথর[বুখারী,খ-৩,পৃ-৭০ হা:২০৫৩; মুসলিম,খ-৪,পৃ-১৭১,হা:৩৬৮৬]
এ হাদীস থেকে সন্তানের পিতৃ পরিচয়ের একটি মূলনীতি বেরিয়ে এসেছে, আর তা হলোসন্তান তার পিতৃ পরিচয় লাভের জন্য অবশ্যই তার মা-বাবার মধ্যে বৈধ বিয়ে সংঘটিত হতে হবে। এই বৈধ বিবাহের ভিত্তিতে যে যৌন মিলন তাদের মধ্যে সংঘটিত হবে তার ফসল হিসেবে যে সন্তান জন্ম নিবে তা হবে সে পুরুষের সন্তান। কারণ যৌন মিলনের মাধ্যমে সাধরনত: পুরুষের বীর্য স্ত্রীর জরায়ূতে প্রবিষ্ট হয়। আর তা থেকেই জন্ম নেয় সন্তান। এটাই ছিল প্রাচীন কাল থেতে সন্তান জন্ম দানের রীতি। আধুনিক কালে অবশ্য যৌন মিলন ছাড়াও স্বামীর বীর্য স্ত্রীর জরায়ুতে পৌছাবার কিত্রিম ব্যবস্থা মানুষ অবিষ্কার করেছে। বর্তমান যুগে এ কারণে যৌন মিলন ছাড়াও সন্তান জন্ম নিচ্ছে। কিত্রিম গর্ভ সঞ্চারের নব আবিষ্কৃত এ পদ্ধতির নাম টেস্টটিউব। আমরা এখানে টেস্টটিউব সন্তান সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি পাঠকদের সামনে পেশ করছি।

টেস্টটিউবে গর্ভ সঞ্চার করে তা মানব জরায়ুতে স্থাপন করা ইসলাম অবৈধ মনে করে না। তবে ইসলাম এ ক্ষেত্রে সে সন্তান কে বৈধ সন্তান বলে স্বীকৃতি দানের জন্য নিন্মোক্ত শর্তসমূহ আরোপ করে।
১. বীর্য ও ডিম্বানু অবশ্যই স্বামী এবং স্ত্রীর কাছ থেকে সংগ্রহ করতে হবে, অন্য কোনো পুরুষ ও নারীর কাছ থেকে বীর্য ও ডিম্বানু সংগ্রহ করে তা দ্বারা গর্ভ সঞ্চার করা যাবে না।
২. টেস্টটিউবে সঞ্চারিত ভ্রুণ অবশ্যই স্ত্রীর জরায়ুতে স্থাপন করতে হবে, অপর কোনো মহিলার জরায়ুতে তা স্থাপন করা যাবে না।
৩. স্বামীর বীর্য এবং স্ত্রীর ডিম্বানু নিয়ে টেস্টটিউবে গর্ভ সঞ্চারের বিষয়টি অবশ্যই স্বামীর জীবদ্দশায় হতে হবে। স্বামীর মৃত্যুর পর বীর্য ব্যাংকে রক্ষিত তার বীর্য দ্বারা কিছুতেই গর্ভ সঞ্চার করা যাবে না।
এ প্রসঙ্গে জর্দানের রাজদানী ওমানে ও আই সি এর ফিকাহ একাডেমীর বিগত ৮-১৩ সফর১৪০৭ হি: মুতাবিক ১১-১৬ অক্টোবর ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে অনুষ্টিত অধিবেশনে গৃহিত সিদ্ধান্তে বলা হয়:
কৃত্রিম গর্ভ সঞ্চার (টেস্টটিউব) প্রসঙ্গে পঠিত প্রবন্ধ এবং এ বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ও ডাক্তারদের বক্তব্য শোনা, এবং সামগ্রিক ভাবে এ বিষয়ে জানার পর সংসদের কাছে প্রতীয়মাণ হয়েছে যে, বর্তমান যুগে কৃত্রিম গর্ভ সঞ্চারের সাতটি পদ্ধতি রয়েছে। সংসদ এ প্রসঙ্গে নিন্মোক্ত সিদ্ধান্ত সমূহ গ্রহণ করছে:
প্রথমত: নিন্মোক্ত পাঁচটি পদ্ধতি শরীয়তের দৃষ্টিতে হারাম এবং সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। কারণ এর ফলে পিতৃপরিচয় ও মাতৃপরিচয় উভয়টি ক্ষতিগ্রস্ত হবার মত শরীয়ত বিরোধী বিষয় রয়েছে।
এক.) স্বামীর কাছ থেকে সংগ্রহিত বীর্য ও পরস্ত্রীর কাছ থেকে সংগ্রহিত ডিম্বানুর মাধ্যমে ভ্রুন সৃষ্টি করে পরে তা স্ত্রীর জরায়ূতে স্থাপন করা।
দুই.) কোনো পর পুরষের বীর্য এবং স্ত্রীর ডিম্বানু নিয়ে ভ্রুন সৃষ্টি করে পরে তা স্ত্রীর জরায়ূতে স্থাপন করা।
তিন.) স্বামীর বীর্য ও স্ত্রীর ডিম্বানু নিয়ে ভ্রুন সৃষ্টি করে পরে তা অন্য কোনো নারীর জরায়ূতে স্থাপন করা।
চার.) পর পুরষের বীর্য ও পর স্ত্রীর ডিম্বানু নিয়ে বাইরে (টেস্টটিউবে) ভ্রুন সৃষ্টি করে পরে তা স্ত্রীর জরায়ূতে স্থাপন করা।
পাঁচ.) স্বামীর বীর্য ও স্ত্রীর ডিম্বানু নিয়ে তা দ্বারা বাইরে (টেস্টটিউবে) ভ্রুন সৃষ্টি করে পরে তা স্বামীর অপর স্ত্রীর জরায়ূতে স্থাপন করা।
(
এ পদ্ধতির গর্ভ সঞ্চারকে ও আই সি-র ফিকাহ একাডেমী হারাম পদ্ধতি বললেও ড. আব্দুল্লাহ ফকীহ এ পদ্ধতিকে হারাম বলতে রাজী নন। তিনি এ পদ্ধতিকে সন্দেহজনক পদ্ধতি বলে অবহিত করেছেন। এ প্রসঙ্গে তার বক্তব্য নিন্ম রূপ। আর যদি লোকটির দুটি স্ত্রী থাকে তাদের একজন গর্ভধারনে অপারগ হয়, এমতাবস্থায় তার থেকে ডিম্বানু সংগ্রহ করা হয় অতঃপর তার বীর্য দ্বারা গর্ভ সঞ্চার করা হয়, অতঃপর তা তার অপর স্ত্রীর জরায়ূতে প্রতিস্থাপন করা হয়, তবে এ পদ্ধতিটি সন্দেহ জনক। ভাবনা চিন্তা করে দেখার মত বিষয়[আল ফাতাওয়া আল মুআসিরা ফিল হায়াতিয যাওজিয়া,(১/৩০৪) ফাতাওয়া নং-৪৩৮০]
দ্বিতীয়ত: ষষ্ট ও সপ্তম পদ্ধতি এ দুটি পদ্ধতি প্রয়োজনে আবলম্বন করা যেতে পারে, অবশ্য এ পদ্ধতি দ্বয় অবলম্বন করার সময় সমস্ত সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। (পদ্ধতি দুটি হল:)
ছয়.) স্বামীর বীর্য ও স্ত্রীর ডিম্বানু সংগ্রহ করে বাইরে টেস্টটিউবে তা দ্বারা গর্ভ সঞ্চার করে অতঃপর তা স্ত্রীর জরায়ূতে স্থাপন করা।
সাত.) স্বামীর বীর্য সংগ্রহ করে তা ইঞ্জেক্সন দ্বারা তার স্ত্রীর জারায়ূ বা ডিম্ববাহী নালীতে প্রবিষ্ট করে জরায়ূর অভ্যন্তরে গর্ভ সঞ্চার করা।
আল্লাহ তাআলাই ভাল জানেন। [মুজাল্লাতুল মাজমা,সংখ্য-৩, খ-১,পৃ-৪২৩, সিদ্ধান্ত নং- ১৬-(৩/৪)]




ভালো লাগলে শেয়ার করুন।

একটি আবেদন

বাংলা ভাষায় একটি শক্তিশালী ও মানসম্মত রেডিও প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা নিয়ে সালাম মিডিয়া কাজ করছে। যার জন্য প্রায় তিনলক্ষ টাকা প্রাথমিক অবস্থায় প্রয়োজন। আপনি একাজানি। আমরাও একানিজ নিজ জায়গা আমরা সবাই একা; কিন্তু সবাই মিলেও কী একা?
আমাদের রয়েছে পর্যাপ্ত দক্ষ জনবলশুধু নেই প্রয়োজনীয় অর্থবল। তাই আপনি যদি একজন সচ্ছল মুসলিম হয়ে থাকেন তাহলে আপনার প্রতি আমাদের ছোট্ট আহ্বান। ০১৯২২৭৩০০০১ (তথ্য ও বিকাশ) বিস্তারিত পড়ুনঃ  আমাদের কথা

ছবিটি জুম করে দেখুন