পাঠক! বাংলা ভাষায় সুবৃহৎ বিশুদ্ধ ইসলামী সাইটে আপনাকে স্বাগতম। সহীহ কুরআন, সুন্নাহনির্ভর রেফারেন্স ও গবেষণাধর্মী প্রায় ২০০এর অধিক বিষয়ের অনন্য সমাহার। আমাদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ও অনুদান দিয়ে সাহায্য করতে পড়ুন এখানে

আল্লাহ সুব. অস্তিত্বের একটি বুদ্ধিবৃত্তিক প্রমাণ

আমাদের চারপাশে এই যে মহাবিশ্ব,সূর্য্য চন্দ্র আমি আপনি এই সব কিছু নিয়েই কিন্তু আমাদের প্রকৃতি বা Nature. মানুষ হচ্ছে এই প্রকৃতির মাঝে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ জীব। আচ্ছা মানুষ কি নিজে নিজে বলতে পারে?
না মানুষকে খাদ্য গ্রহণ করতে হয়এই খাদ্য কিন্তু মানুষের শরীর থেকে উৎপন্ন হয় না। মানুষ এই খাদ্য উদ্ভিদ প্রাণীকূল থেকে সংগ্রহ করে। তাই বলা যায় মানুষ একটা পরাধীন সত্ত্বা।
প্রকৃতির মাঝে এমন কোন প্রাণী নেই যেটা নিজে নিজে বাঁচতে পারে। প্রত্যেকটা প্রাণীই বেঁচে থাকার জন্য একজন আরেকজনের উপর নির্ভরশীল। আবার মানুষ চাইলেই সব কিছু করতে পারে না। মানুষ কিন্তু কোন মৌলিক পদার্থ সৃষ্টি করতে পারে না। মানুষ এই মহাবিশ্বের মাঝে সবচেয়ে বুদ্ধিমান প্রাণী, কিন্তু মানুষের পক্ষে সম্ভব নয় কোন মৌলিক পদার্থ সৃষ্টি করা তাই আমরা ধরে নিতে পারি যে, প্রকৃতির মাঝে আর কারো পক্ষেই সম্ভব নয় কোন মৌলিক পদার্থ একদম নতুন ভাবে সৃষ্টি করা। আবার মানুষ আকার আয়তনে সীমিত। সে চাইলেও তার থেকে খুব ভারী কোন জিনিস উত্তোলন করতে পারে না। আবার মানুষ চাইলেও মৃত্যুকে ঠেকাতে পারবে না,তাই আমরা বলতে পারি মানুষ হল একটা সীমাবদ্ধ ও পরাধীন সত্ত্বা।
শুধু মানুষ নয় আমাদের প্রকৃতির মাঝে আপনি এমন কোন সত্ত্বা খুজে পাবেন না যেটা Unlimited, infinite  independent. Nature বা প্রকৃতির প্রত্যেকটা সত্ত্বাই Limited, Finite এবং একজন আরেকজনের প্রতি Dependent. এবং এই Nature বা প্রকৃতির কোন সত্ত্বাই মৌলিক কোন পদার্থ তৈরী করতে পারে না। সূর্য্য, চন্দ্র, গ্রহ নক্ষত্র এগুলিও কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম কানুন মেনে চলে। এই মহাজাগতিক উপাদান গুলিও অসীম নয়। আকার আয়তনে সসীম। বলা হয় যে এই মহাবিশ্ব প্রতিনিয়ত প্রসারিত হচ্ছে। কিন্তু মহাবিশ্বের এই প্রসারণটাও কিন্তু একটি সীমার মধ্য থেকেই হচ্ছে। মহাবিশ্ব যদি অসীমই হত তাইলে তো আর সে প্রসারিত হত না। তাছাড়া এই মহাবিশ্ব আবার সংকুচিত হয়ে তার পূর্বের সত্ত্বায় ফিরে আসবে। তাই এই মহাবিশ্বকে আমরা অনন্ত অসীম বলতে পারি না।
এখন প্রকৃতি বলতে আমরা কি বুঝি? প্রকৃতি এই মহাবিশ্ব, এই সকল প্রাণীজগত এই সবের সমষ্টি। অনেক গুলি সীমাবদ্ধ বস্তুর সমষ্টি কিন্তু সীমাবদ্ধই হবে। ১,, এরকম আপনি যত সংখ্যাই যোগ করুন না কেন এগুলির সমষ্টি কিন্তু একটি নির্দিষ্ট সংখ্যাই হবে। কখনই অসীম কোন সংখ্যা হবে না। যেহেতু প্রকৃতি বা Nature সব Dependent, finite এবং limited সত্ত্বার সমষ্টি তাই প্রকৃতিও একটা Dependent, finite এবং Limited সত্ত্বা। এখন প্রকৃতি যেহেতু নিজেই একটি সীমাবদ্ধ স্বত্বা এবং প্রকৃতির কোন সত্ত্বারই এই ক্ষমতা নেই যে নিজে থেকে কোন মৌলিক পদার্থ সৃষ্টি করা তাই সম্মিলিত প্রকৃতিরও এই ক্ষমতা নেই যে এই মহাবিশ্বকে নিজে থেকে সৃষ্টি করা। তাই প্রকৃতি যদি নিজে নিজেকে সৃষ্টি না করতে পারে তাইলে এই প্রকৃতি এই মহাবিশ্ব কে কে সৃষ্টি করেছেন?
আমরা যদি এখন Rational Method বা স্বাভাবিক বিচার বুদ্ধি প্রয়োগ করি তাহলে দেখব প্রকৃতি যেহেতু নিজেই নিজেকে সৃষ্টি করতে পারে না তাহলে এই প্রকৃতির অবশ্যই একজন সৃষ্টিকর্তা আছে। সেই সৃষ্টিকর্তা কে অবশ্যই একটি স্বাধীন এবং অনন্ত অসীম সত্ত্বা হতে হবে। এবং এই সৃষ্টিকর্তা অবশ্যই কারো প্রতি নির্ভরশীল হবেন না। এই সৃষ্টিকর্তার নামই হল আল্লাহ সুব.
এখন প্রশ্ন হল এই আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালাকে কে সৃষ্টি করেছেন ? এর ৩ টা উত্তর আছে। হয় আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালাকে কেউ তৈরী করেছেন বা আল্লাহ সুবহানাতায়ালা নিজে নিজেকে তৈরী করেছেন অথবা আল্লাহ সুবহানাতায়ালা হচ্ছেন একটি অনন্ত অসীম আজালী সত্ত্বা। আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালাকে যদি কেউ তৈরী করে তাহলে তো আর তিনি আল্লাহই হলেন না। এখন ২য় শর্তে যদি যাই তাইলে দেখব যে আল্লাহ সুবহানাতায়ালা নিজে নিজেকে তৈরি করেছেন। এটাও গ্রহণযোগ্য নয় কারণ এটা করতে হলে আগে আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালাকে নিজের অস্তিত্ত্বে আসতে হবে এরপর নিজে নিজেকে তৈরী করতে হবে। আল্লাহ সুবহানাতায়ালা যদি আগেই অস্তিত্ত্বেই এসেই পড়েন তাহলে আর নিজেকে সৃষ্টি করার কি দরকার ?
তাহলে ৩য় শর্তটাই ঠিক। আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালাকে হচ্ছেন একটি আজালী বা অনন্ত অসীম সত্ত্বা। যখন কেউ ছিল না তখনও আল্লাহ সুবহানাতায়ালা ছিলেন এবং যখন কেউ থাকবে না তখনও আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালাকে  থাকবেন।  আল-কোরআনের সূরা ইখলাসে আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালাকে নিজের সম্পর্কে যা বলেছেন এটাই আমাদের মানতে হবে যে ওনাকে কেঊ সৃষ্টি করেননি আর উনিও কাউকে জন্ম দেননি উনি হলেন একটি আজালী বা অনন্ত অসীম সত্ত্বা। কিন্তু মানুষ হচ্ছে একটি সসীম সত্ত্বা। একটি সসীম সত্ত্বা কখনই একটি অনন্ত অসীম আজালী সত্ত্বাকে বুঝতে পারবে না। একটা পাখি যেমন কোনদিন মানুষের মস্তিস্ককে বুঝতে পারবে না,বিড়াল যেমন কখনো ল্যাপটপ কীভাবে চালনা করে তা জানতে পারবে না ঠিক তেমনি আমরা মানুষেরাও কখনোই দুনিয়ার জীবনে পুরাপুরিভাবে আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালাকে বুঝতে পারবো না। আল-কোরআনে এবং সহীহ হাদীসে আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালাকে নিজের সম্পর্কে যতটুকু বলেছেন ততটুকুর উপরই আমাদের কে সন্তুষ্ট থাকতে হবে। কারণ মানুষ হচ্ছে একটা সসীম সত্ত্বা আর আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালাকে হচ্ছেন একটা অনন্ত অসীম আজালী সত্ত্বা। আল্লাহর সত্ত্বা সম্পর্কে এর বেশী চিন্তা করলে আমাদের কে পাগল হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে হবে।

লেখাটির পিডিএফ বা ই-বুক ডাউনলোড করুন মাত্র এক এমবি এখানে

[তথ্যসূত্রঃ এই নোটটি লেখার ক্ষেত্রে মুসলিম বিশ্বের প্রবাদ পুরুষ ফিলিস্তিনের শায়খ তাকিউদ্দিন আন নাবাহানীর লেখা নিজামুল ইসলাম/The System of islam/ইসলামী জীবন ব্যবস্থা এই বইয়ের সাহায্য নিয়েছি।]