স্বামী-স্ত্রী একে অন্যের অর্ধাঙ্গ।
মানুষ যেমন তার অর্ধেক অঙ্গ নিয়ে পূর্ণ জীবনের সাধ পেতে পারে না, তেমনই একজন লোক একজন ভালো স্বামী বা স্ত্রী ছাড়াও পূর্ণাঙ্গ
মানুষ হতে পারে না। একে অপরকে যতোটা বুঝতে পারবে তাদের জীবন ততটাই সুন্দর ও মধুময় হবে।
একজন পুরুষের জীবনে যেমন অন্যতম আশা থাকে ভালো একজন স্ত্রী পাওয়া, তেমনিভাবে একজন মেয়েরও জীবনে সবচেয়ে বড় চাওয়া-পাওয়া হলো ভালো
একজন স্বামী ভাগ্যে জোটা। কিন্তু ক’জনের ভাগ্যেই বা জোটে এমন জীবনসঙ্গী?
মন মতো জীবন সঙ্গী না হলে দেখা দেয় বিপত্তি। লেগে থাকে দ্বন্ধ-বিরোধ।
ঘটে যায় ঝগড়া-বিবাদ। এক সময় ভাঙ্গনের মুখে পড়ে দাম্পত্য জীবন।
এই বিরোধ-বিবাদ আর ঝগড়ার অনুঘটক হিসেবে
কাজ করে অনেক উপাদান। বৈষয়িক চাহিদার লেজেগোবরে অবস্থা, যৌনচাহিদার তারতম্য, মন মতো সন্তান না হওয়াসহ আরো অজস্র কারণে ঘটে এই বিরোধ-বিবাদ। বর্ণিত আছে, আরবে একজন শাসক ছিলেন। তার উপনাম ছিল আবু হামযাহ্। সে এক মহিলাকে বিবাহ করে। তার
মনোবাসনা ছিল যেন তার পুত্র সন্তান হয়। কিন্তু স্ত্রীর গর্ভে তার কন্যা সন্তান জন্ম
নেয়। জাহেলী যুগে প্রথা ছিল- তারা কন্যা সন্তান জন্ম নেয়াকে কটু দৃষ্টিতে দেখতো। এমনকি
কন্যা সন্তানকে জীবিত কবরস্থ করাকে তারা গৌরবের বিষয় মনে করতো। যাই হোক, আবু হামযাহর ঘরেও কন্যা সন্তান জন্ম নিলে সে ভীষণ ক্ষিপ্ত হয়ে
স্ত্রীকে ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে বললো। স্ত্রী চলে গেল। দূরে অন্য এক ঘরে সে অবস্থান করতে
থাকলো। এক বছর পর আবু হামযাহ্ সেই ঘরের পাশ দিয়ে কোথাও যাচ্ছিল। ইত্যবসরে শুনতে পেল, তার স্ত্রী তার কন্যার সাথে গুনগুনিয়ে নিম্নোক্ত কবিতা আবৃত্তি
করে যাচ্ছে-
‘আবু হামযাহর কী হলো! সে আমাদের কাছে আসছে না! অন্য ঘরে থাকছে। আমাদের ওপর সে অসন্তুষ্ট
এ জন্য যে আমরা কন্যা সন্তান জন্ম দিই। অথচ এটি তো আমাদের এখতিয়ারে নেই। আমরা তো কেবল
সেই নেয়ামত- যা আমাদেরকে দান করা হয়, তা নিয়ে থাকি। আমরা তো ক্ষেতের মতো। কৃষক সেখানে যে বীজ বুনে ক্ষেতে তো তা-ই উৎপন্ন
হবে।’
আবু হামযাহ্ এ বয়াতটি শুনলে তার ভেতর
পিতৃমমতার উদ্রেক হয়। স্ত্রীর সাথে উত্তম ব্যবহারের চিন্তা এসে ভর করলো। তৎক্ষণাত সে
ঘরে এসে স্ত্রী ও কন্যাকে চুমু দিয়ে ঘরে নিয়ে গেল।
সুতরাং বোঝা গেল, বহু সময় অতি সাধারণ কথাবার্তার মাধ্যমেও মনে ভীষণ দাগ কাটে।
স্বামী-স্ত্রীর দাম্পত্য জীবনে ভুল বুঝাবুঝির অবসান হয়ে প্রশান্তির প্রবাহ বইতে থাকে।
এমন সময়ে যদি কারো ক্ষেত্রে ঝগড়া-বিবাদের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, চুপ থেকে পরিস্থিতি সহজে সহ্য করা গেলে পরবর্তীতে স্বামী নিজ
ভুল বুঝতে পেরে স্ত্রীকে আগের চেয়ে বেশি আপন করে নেয়।
আদর্শ স্ত্রী তারা- যারা সু-সময় ও
সুন্দর পরিস্থিতিতে স্বামীর সংশোধনের পন্থা খোঁজে। আদর্শ স্ত্রী তারা- যারা প্রশস্ত
মনের অধিকারী। স্বামীর অশোভন ও আপত্তিকর কথাগুলো যে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখে। পরিস্থিতি
সহ্যসীমায় পৌঁছার আগ পর্যন্ত যে চুপ থাকে। আদর্শ স্ত্রী তারা- যারা জানে যে, স্বামী তাকে বিবাহ এ জন্যই করেছে যে সে তাকে ভালোবাসে। সে তার
প্রয়োজনেই শাদি করেছে। আদর্শ স্ত্রী তারা- যারা স্বামীর মনোরঞ্জনের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা
করতে থাকে। স্ত্রীর মনোপুতঃ নয়- এমন কথা বললেও স্বামীর প্রতি বিশ্বাস ও ভালোবাসায় সে
বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করে না। আদর্শ স্ত্রী তারা- যারা প্রত্যেক বিতর্ক ও ঝগড়ার সময়
নিজেকে কন্ট্রোল করে রাখে। নিজেকে নিজে প্রশ্ন করে, স্বামী কেন আমাকে এমন বললেন? আমার কী ত্রুটি হয়ে
গেল?
আমি কেন এমনটি করলাম? সে অন্যজন দোষগুলো সুধরে দেবার আগেই নিজেকে সংশোধন করে নেয়। নিজের ভুলের ওপর পড়ে
থাকা পর্দাগুলো সরিয়ে সে ভাবতে থাকে এবং উত্তোরণের পন্থা খুঁজতে থাকে। মনে মনে ভাবে
‘আমি সে সময় চুপ থাকলেই কি ভালো হতো
না?’ ‘আদর্শ স্ত্রী’রা এমনই হয়। সে স্বামীর সাথে এমন আচরণ করে, যাতে প্রতীয়মান থাকে যে, সে কিছুতেই স্বামীর থেকে অমুখোপেক্ষী নয়। সর্বদা সে স্বামীর অনুগত ও অধীন।
অনুরূপভাবে স্বামীও তার অবস্থান ঠিক
রাখতে হবে। মনীষীরা একটি ঘটনা বর্ণনা করেছেন যে, একবার হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রা. এর আদালতে এক মহিলা তার স্বামীর বিরুদ্ধে মোকাদ্দমা
দায়ের করলো। ফারুকী আদালতে উক্ত মহিলা স্বামীকে নিয়ে উপস্থিত হওয়ার সময় স্বামীর বেশভূশা
ভালো ছিল না। উষ্কো-খুশকো চুল, বিবর্ণ চেহারা, ময়লা জামা পরিহিত অবস্থায় তাকে খুব বিশ্রী দেখা যাচ্ছিল। মহিলা
বললো- হে আমীরুল মুমিনীন! আমি তার সাথে আর ঘর-সংসার করতে চাই না। আমি তার স্ত্রী নই, সেও আমার স্বামী নয়।
হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রা. মহিলার
কথা শুনে অনুমান করে ফেললেন যে, সে তার স্বামীর বাহ্যিক
বেশভূশায় খুবই বিতৃষ্ণ ও বিরক্ত। তিনি মহিলার স্বামীকে নির্দেশ দিলেন- যাও! খুবই পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন
হয়ে,
পরিপাটি ও সেজেগুজে এসো। নির্দেশ পেয়ে স্বামী চলে গেল। সে ঘরে
এসে মাথার চুল পরিপাটি করলো। নখ কাটলো। চেহারাকে আকর্ষণীয় করার যথাসাধ্য চেষ্টা করলো।
পরে হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রা. এর খেদমতে উপস্থিত হলে তিনি তাকে স্ত্রীর কাছে যেতে
বললেন। তাকে দেখে স্ত্রী অপরিচিত কেউ মনে করে মুখ ফিরিয়ে নিল। তার থেকে সরে যেতে চেষ্টা
করলো। পরে যখন দেখল যে, এই লোক অপরিচিত কেউ
নয়,
স্বয়ং তার স্বামী। তৎক্ষণাত তাকে সাদরে গ্রহণ করে নিল এবং স্বীয়
মোকাদ্দমা ফিরিয়ে নিল। হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রা. বললেন- ‘তোমরাও তোমাদের স্ত্রীদের জন্য সাজগোজ করবে। পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন
থাকবে। কেননা আল্লাহর কসম! যেভাবে তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের কাছে সাজগোজ ও পরিপাটি থাকা
পছন্দ করো, তারাও তোমাদেরকে ঠিক সেভাবেই দেখতে
চায়।’ জানা গেল- সাজগোজ ও পরিপাটি থাকা স্বামী-স্ত্রী উভয়ের জন্যই আবশ্যক।
আপনার স্ত্রী বাড়িতে সন্তান সন্ততি
লালন পালন, সাংসারিক কাজ ইত্যাদি ঝামেলায় সব সময়
ব্যস্ত থাকেন। ফলে অনেক সময় আপনাকে সময় দিতে পারেন না। তাতে আপনি তার উপর রাগ না করে
আপনার ছোট খাট কাজ আপনি নিজেই সেরে ফেলতে পারেন। রাসূল সা. এটাই করতেন। এক লোক আয়েশা
রা.কে জিজ্ঞেস করলো, রাসূলুল্লাহ সা.
ঘরে কি কাজ করতেন? উত্তরে আয়েশা রা.
বলেন,
“হ্যাঁ, রাসূল সা. নিজের কাপড় নিজে সেলাই করতেন, জুতা মেরামত করতেন এবং পুরুষরা ঘরে যা করে তিনি তা করতেন।” (মুসনাদে আহমাদ : হাদীস নং ২৪৭৪৯)
আপনার পরিবারের সব ছোট বড় সিদ্ধান্তে
আপনার স্ত্রীর মতামত গ্রহণ করুন। তাকে সম্মান দেখান, দেখবেন সেও আপনাকে অনেক সম্মান করবে। কেননা নবী সা. উম্মতের নানা সমস্যা তাঁর স্ত্রীদের
কাছে জানাতেন। তাঁরা রাসূল সা. কে পরামর্শ দিতেন। যেমন- হুদাইবিয়ার সন্ধির সময় রাসূল
সা. কাফিরদের সাথে চুক্তি শেষ করে সাহাবাদেরকে কুরবানীর পশু যবাই করতে নির্দেশ দেন।
কিন্তু তাঁরা রাসূলের হিকমত বুঝতে না পেরে যবাই করতে বিলম্ব করেন, এতে রাসূল সা. রাগান্বিত হয়ে উম্মে সালামাহ্ রা. এর নিকট প্রবেশ
ঘটনা জানান। তিনি এ সমস্যা সমাধানে সুন্দর মতামত দেন।
রাসূল সা. তার স্ত্রী ও পরিবার পরিজনের
সাথে সুন্দর আচরণকারী ছিলেন, তাদের সাথে কোমল
ভাষায় কথা বলতেন, মাঝে মাঝে হাসি ঠাট্টা
করতেন,
তাদের সাথে ভালোবাসা ও বদান্যতার সাথে আচরণ করতেন। আয়েশা রা.
বলেন,
রাসূল সা. বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ ঈমানদার সেই ব্যক্তি যে উত্তম চরিত্রের
ও তার পরিবারের সাথে সদব্যবহার করে।” (তিরমিযী)
প্রত্যেক জ্ঞানী মানুষ- হোক সে নারী
বা পুরুষ,
এটাই প্রত্যাশা করে যে, তার চরিত্রে পরিপূর্ণতা ও সততা অর্জিত হোক। ইসলাম তো এ জন্যই এসেছে- মানুষ কী করে
আত্মিক,
শারীরিক, চারিত্রিক তথা সার্বিকভাবে
সর্বোচ্চ মানবিক অনুপম গুণাবলি ধারণ করে আদর্শ মানব হিসেবে পরিগণিত হতে পারে। এ জন্য
আপনারও প্রয়োজন এমন বস্তুর সন্ধান করা, যার মাধ্যমে আপনি সর্বোচ্চ মানবিক গুণের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হতে পারেন। এটি অবশ্যই
আল্লাহর নির্দেশিত সীমায় থেকেই অর্জন করতে হবে। যেমন- মেহেদী দেয়া, সুরমা দেয়া, স্বর্ণ-রূপার অলংকার ইত্যাদি পরা, উত্তম পোশাক পরিধান করা ইত্যাদি। এগুলোর ব্যবহারে আল্লাহর পক্ষ হতে অনুমতি রয়েছে।
সুতরাং আদর্শ স্ত্রী তিনি- যিনি আপন স্বামীকে দর্শনমাত্রই তাকে চাহনির মোহময়তায় আকৃষ্ট
করে মনে প্রফুল্ল জাগ্রত করে।
চিন্তা করুন! পুরুষেরা জাগতিক কাজে-কর্মে
ঘরের বাইরে যায়। স্বীয় শরীর ও মনকে নানাবিধ কষ্ট ও ক্লেশে নিপতিত করে। এর ধারাবাহিকতায়
তাকে বিভিন্ন প্রকারের পেরেশানি ও দুশ্চিন্তায় ভুগতে হয়। এমন দুশ্চিন্তা ও দুর্দশায়
সে কল্পনা করে, কখন ঘরে ফিরে একটু প্রশান্তির নিঃশ্বাস
ফেলা যাবে! খানিক আরাম করা যাবে! পরে এতো সব ঝক্কি-ঝামেলা আর চিন্তা-টেনশনের পাহাড়
মাথায় নিয়ে যখন সে ঘরে ফিরে এসে স্ত্রীর পক্ষ হতে আনন্দদায়ক কোনো কথা বা নিদর্শন না
দেখে- তখন এটাই প্রতীয়মান হয় যে, সে দাম্পত্য সম্পর্কের
প্রথম ধাপেই অকৃতকার্য হয়েছেন।
এখন মনে এই প্রশ্ন আসতে পারে যে, এই অকৃতকার্যের কারণ কী? আসল কথা হচ্ছে, স্বামী অধিকাংশ সময়
পেরেশানির শিকার হয়। সে তার কথা বা কাজে কোনো না কোনো পন্থায় ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে
চায়। কিন্তু যখন সে ঘরে ফিরে এসে স্ত্রীর পক্ষ হতে এমন কোনো কথা শোনে, যাতে তার মনে প্রফুল্লের উদয় হয় এবং মনে শান্তি আসে, তখন সে অতি দ্রুত তার মানসিক দুশ্চিন্তা এবং শারীরিক অবসাদগ্রস্ততার
কথা ভুলে যায়।
সুতরায় বোঝা গেল যে, স্বামীর মনে স্ত্রীর ভালোবাসার শক্তিশালী উপায় হচ্ছে- স্বামীর
মুখোমুখি হওয়া মাত্রই স্ত্রী তাকে সু-স্বাগতম, সাদর সম্ভাষণ ও খুশির অভ্যর্থনা জানাবে। প্রিয়তমাকে সুন্দর উপস্থাপনা ও আকর্ষনীয়
ভঙ্গিতে দেখলে স্বামীর মনে গভীর ভালোবাসা রেখাপাত করে। সুতরাং মুসলমান স্ত্রীদের করণীয়
হচ্ছে- এমন বিষয়ের প্রতি খুব গভীরভাবে লক্ষ্য রাখবে, যেন স্বামীর দৃষ্টিতে অপছন্দনীয় কোনো কাজ বা দৃশ্য প্রকাশ না পায়। এ ব্যাপারে মনীষীদের
আমল আমাদেরকে পথ দেখাতে পারে। হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, ‘আমি আমার স্ত্রীর জন্য এমন সাজসজ্জা অবলম্বন করি, যেভাবে সে আমার জন্য সেজেগুজে থাকে। আমি এটা পছন্দ করি না যে, আমার সমুদয় অধিকার স্ত্রীর কাছ থেকে আদায় করে ছাড়বো। কেননা তখন
সেও আমার পক্ষ থেকে এমন দাবি করার অধিকার রাখে। এজন্য আল্লাহ্ তা’আলা বলেন- ‘নারীদের জন্যও অধিকার রয়েছে যেমন (শরয়ী) আইন অনুযায়ী অধিকার
রয়েছে তাদের স্বামীদের জন্য।’ (সূরা বাকারাহ্ : আয়াত ২২৮)। হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস রা. এর উদ্দ্যেশ্য এমন সাজসজ্জা যা গুনাহমুক্ত ও
পবিত্র।’ (তাফসীরে কুরতুবী : ৩/৮২)
স্বামী ঘরে আসার পূর্বে নিজের পরিধেয়
বস্ত্র দেখে নিন। নিজেকে নিজে প্রশ্ন করুন, আমার স্বামী আমাকে এ অবস্থায় দেখে খুশি হবেন তো? এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, সব মহিলাই এ ব্যাপারে
নিশ্চিতভাবেই জেনে থাকবে। প্রত্যেক সুন্দর বস্তুর ভালোলাগা প্রত্যেক পুরুষের প্রকৃতিতে
বিদ্যমান। সুন্দর তাদের ভালো লাগে। সুন্দরকে তারা ভালোবাসে। হ্যাঁ, যার রুচি ও প্রকৃতি পরিবর্তন হয়ে গেছে, সে হয়তো কদাকার বিশ্রী বস্তুকে ভালোবাসতেও পারে। তাদের কথা ভিন্ন।
স্বামী ঘরে প্রবেশ করে সোহাগী স্ত্রীকে
মোহনীয় ও হৃদয়গ্রাহী আকৃতিতে দেখতে পেলে তার অন্তরে স্ত্রীর ভালোবাসা ও মিলনের স্বাধ
জাগ্রত হয়। সে তার মনোবাসনা পুরন করতে আগ্রহী হয়ে উঠে। কিছু কিছু মহিলা এই অবস্থায়
ঘরোয়া কাজ-কর্মের বাহানা দিতে থাকে। খাবার রান্না হয়নি। কাপড় ধোয়া হয়নি। ইত্যকার নানান
কাজের ছুঁতোয় বলে থাকে- আমি কী করে স্বামীকে অভ্যর্থনা ও সু-স্বাগত জানাবো? এমন মহিলাদের উচিৎ
ঘরোয়া যাবতীয় কাজ-কর্ম স্বামী আসার পূর্বে সেরে নেয়া। এর জন্য যদিও কিছুটা বাড়তি কষ্ট
সহ্য করতে হয়। কেননা এর যে সুফল অর্জিত হবে, তা এই বাড়তি কষ্টের চেয়ে অনেক দামী। এখানে যুক্তি উপস্থাপনের কোনো অবকাশ নেই। পক্ষান্তরে
স্বামী ঘরে এসে যদি এমন কোনো কথা বা কাজ দেখতে পায়, যা দ্বারা মনে পেরেশানির উদ্রেক হয়, তখন শয়তান ও নফসের প্ররোচনা তারে ঘিরে ফেলে। অনতিকালবিলম্বে তার চোখ চলে যায় ভিন্ন
নারীর দিকে। অন্যত্র সে সৌন্দর্যের পিয়াসী হয়। তখন নিজের স্ত্রী তার আর ভালো লাগে না।
সুতরাং বিষয়টি সর্বাধিক প্রণিধানযোগ্য।
আল্লাহ্ তা’আলা বলেন- ‘ভালো কাজের বদলা ভালোই হয়।’ (সূরা রাহমান
: আয়াত ৬০)। হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আমর রা. হতে
বর্ণিত,
আল্লাহ্ তা’আলা এমন মহিলাদের প্রতি দয়ার দৃষ্টি দেন না, যারা স্বামীর প্রতি অকৃতজ্ঞ। অথচ সে স্বামীর মুখোপেক্ষী।’ (সুনানে নাসায়ী : ২৪৯, মুসতাদরাকে
হাকিম : ২/১৯০)
জানা গেল, আদর্শ স্ত্রী তারা- যারা স্বামীর অবদানকে কৃতজ্ঞচিত্তে দেখে।
তার কারণেই সে আপন সম্ভ্রম শালীনতা বজায় রাখতে পেরেছে এবং তার কারণেই সন্তানের মতো
নিয়ামতপ্রাপ্ত হয়ে মা হওয়ার সৌভাগ্য নসীব হয়েছে।
এ ব্যাপারে ইবনুল কারইয়াহ্ রহ. বলেন, ‘‘মুসলিম স্ত্রীরা শালীন, সুন্দর, কোমল ও অনুগত হয়ে থাকেন। তার স্বামী
যদি তার কাছে কোনো কিছু আমানত হিসেবে গচ্ছিত রাখে, তাকে আমানতদার হিসেবে পায়। যদি অভাব-অনটনে পতিত হয়, তবে কানা’আত তথা অল্পেতুষ্ট থাকে। বাইরে কোথাও গেলে সে তার রক্ষণাবেক্ষণকারী
হয়। স্বীয় পত্নীকে সর্বদা খুশি ও উৎফুল্ল রাখে। তার পার্শ্ববর্তীরা নিরাপদে থাকে। চাকর-বাকরেরা
নিরাপদ থাকে। তার সন্তান-সন্ততিরা পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন হয়। তার ধৈর্যশক্তি তার অজ্ঞতাকে
ঢেকে রাখে। তার ধর্ম তার জ্ঞানে পরিপক্কতা আনে। তখন সে ঐ ফুলের ন্যায় হতে পারে, যাকে ছেঁড়া হতে মানুষ দূরে থাকে। সে ঐ হীরার মতো হয়, যা দিয়ে কিছু কাটা হয়নি। সে সুসময়ে শোকর আদায় করে। দুঃসময়ে ধৈর্যধারণ
করে। আল্লাহ্ তা’আলা যাকে এমন স্ত্রী দান করেন, সে জগতের সব কল্যাণ প্রাপ্ত হয়।’’ (আলমুহাসিন ওয়াল
আযদাদ : ১৪৩)
প্রকৃত আদর্শ স্ত্রীরা স্বামীর প্রতি
কৃতজ্ঞ থাকে। স্বামীর সব কাজ সে খুশি মনে পালন করে। কখনো বিরক্তিভাব প্রকাশ করে না।
আদর্শ স্ত্রীরা স্বামীর বিপদ ও দুর্দশায় পাশে থেকে সাহস যোগায়। কথা-কাজে তার প্রতি
অনুগত থেকে কৃতজ্ঞতা জানাতে ভোলে না।
আনাস বিন মলেক রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সা. আরো বলেন- “কোন ধরণের রমণী জান্নাতী- আমি কি তোমাদেরকে বলে দিব না? তাঁরা বললেন, হ্যাঁ হে আল্লাহর রাসূল! তিনি বললেন, তোমাদের জান্নাতী রমণীগণ হচ্ছে, স্বামীর প্রতি প্রেম নিবেদনকারীনী এবং অধিক সন্তান প্রসবকারীনী। তার আনুগত্যের
প্রকাশ হচ্ছে, সে রাগান্বিতা হলে বা তার সাথে খারাপ
আচরণ করা হলে বা স্বামী তার প্রতি রাগান্বিত হলে, স্বামীর কাছে গিয়ে বলে, এই আমার হাত আপনার
হাতে সপে দিলাম, আপনি সন্তুষ্ট না হওয়া পর্যন্ত আমি
চোখের পলক ফেলব না। অর্থাৎ আমি কোন আরাম নিব না কোন আনন্দ বিনোদন করব না যতক্ষণ আপনি
আমার প্রতি খুশি না হন।” (তবরানী, সিলসিলা ছহীহা : হাদীস নং ২৮৭)
এটাই হচ্ছে দাম্পত্য জীবনের ইসলামী
রূপরেখা। এমন দয়া, মায়া, হৃদ্যতা ও ভালোবাসা না থাকলে সেখানে তো বিরোধ-বিবাদ বাসা বাধবেই।
সুতরাং ইসলামী জীবনাচার মেনে আদর্শ সুখী দাম্পত্য জীবন গঠনের প্রয়াস পাবো- এটাই থাক
সকলের ঐকান্তিক কামনা।
এরকম আরো লেখা পড়তে পারেন-
আরো পড়ুনঃ ইসলামে বিয়েকে সহজ করা হয়েছে
একটি আবেদন
বাংলা ভাষায় একটি শক্তিশালী ও মানসম্মত অনলাইন রেডিও প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে সালাম মিডিয়া কাজ করছে। যার জন্য শুধু প্রাথমিক অবস্থায় তিন লক্ষাধিক টাকা প্রয়োজন। এছাড়াও গবেষণা, প্রচার, দাওয়াহ ও অন্যান্য খাতে সাধ্যাতীত খরচ হচ্ছে। আপনি প্রবাসী হলে মাসে অন্তত দশ ডলার বা বাৎসরিক হিসেবে দশ হাজার করে নূন্যতম হারে হলেও আমাদের এই অগ্রযাত্রায় শরীক হতে পারেন। কিংবা একজন ব্যক্তিই সামর্থ অনুযায়ী আমাদের সহযোগিতা করতে পারেন।
আমাদের রয়েছে পর্যাপ্ত দক্ষ জনবল, শুধু নেই প্রয়োজনীয় অর্থবল। আপনার প্রতি এই আমাদের ছোট্ট আহ্বান। ০১৯২২৭৩০০০১ (তথ্য ও বিকাশ) বিস্তারিত পড়ুনঃ আমাদের কথা
ছবিটি জুম করে দেখুন |