পাঠক! বাংলা ভাষায় সুবৃহৎ বিশুদ্ধ ইসলামী সাইটে আপনাকে স্বাগতম। সহীহ কুরআন, সুন্নাহনির্ভর রেফারেন্স ও গবেষণাধর্মী প্রায় ২০০এর অধিক বিষয়ের অনন্য সমাহার। আমাদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ও অনুদান দিয়ে সাহায্য করতে পড়ুন এখানে

মৃত্যুর কথা একটু ভাবুন!

ইসলামিক রেডিও
আপনি কি জানেন দুনিয়ার এই জীবন যতোই দীর্ঘ হোক না কেনো, এটা খুবই সংক্ষিপ্ত সময়। আমাকে আপনাকে নির্দিষ্ট সময়েই এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হবে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
كُلُّ نَفْسٍ ذَائِقَةُ الْمَوْتِ وَإِنَّمَا تُوَفَّوْنَ أُجُورَكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَمَنْ زُحْزِحَ عَنِ النَّارِ وَأُدْخِلَ الْجَنَّةَ فَقَدْ فَازَ وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلَّا مَتَاعُ الْغُرُورِ
প্রত্যেক প্রাণীকে আস্বাদন করতে হবে মৃত্যু। আর তোমরা কিয়ামতের দিন পরিপূর্ণ বদলাপ্রাপ্ত হবে।
তারপর যাকে দোজখ থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, তার কার্যসিদ্ধি ঘটবে। আর পার্থিব জীবন ধোঁকা ছাড়া অন্য কোনো সম্পদ নয়।
অতীত জীবনে অনেক মানুষ সম্পদশালী, ক্ষমতাশালী ছিল- তারা আজ কবরবাসী। অতীত জীবনে আমরা ছোট ছিলাম, বর্তমানে আমরা বৃদ্ধ, ভবিষ্যতে আমাদেরকেও কবর জগতের বাসিন্দা হতে হবে। এরপর রয়েছে অনন্তকালের এক মহাজীবন। কবর জীবন ও আখিরাতের জীবন সম্পর্কে ভাবনা-চিন্তা যার মাথায় সর্বদা বিরাজমান থাকে সে সফলকাম হতে পারবে। আর যদি মরীচিকাময় এই পৃথিবীর পেছনে পড়ে মৃত্যু ও আখিরাতের জীবনের কথা ভুলে বসে থাকে, তাহলে তার জীবন হবে দুর্ভাগ্যে ভরা। এই মৃত্যু ও আখিরাতের স্মরণই পারে মানুষকে প্রকৃত মানুষ বানাতে এবং পশু ও তার মধ্যকার ব্যবধান ফুটিয়ে তুলতে। রাসূল (সা.) বলেছেন-
وَعَن ابى هريرة رضي الله عنه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ : أكْثِرُوا ذِكْرَ هَاذِمِ اللَّذَّاتِ» يَعْنِي: المَوْتَ
হযরত আবু হোরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন- আনন্দনাশক বস্তু অর্থাৎ মৃত্যুকে বেশি বেশি স্মরণ করো। 
একদিন কলেজের একটি শ্রেণিকক্ষে আমি আলোচনা করছিলাম। আমি তাদের বললাম- ভাইয়েরা! একটু চিন্তা করুন তো! এই শ্রেণিকক্ষে আপনারা সর্বসাকুল্যে চল্লিশজন ছাত্র। পাশের শ্রেণিকক্ষে রয়েছে সমপরিমাণ ছাত্র। অপর ক্লাশেও প্রায় এ পরিমাণ শিক্ষার্থী রয়েছে। আচ্ছা, বলতে পারবেন কি যে, এই বছর এদের মধ্যে কোনো তরুণ মারা যাবে না?... সুবহানাল্লাহ! যে ছাত্রদের সামনে রেখে আমি মৃত্যুর আলোচনা করছিলাম, আনুমানিক এক সপ্তাহ পর সংবাদ এলো, ওই শ্রেণির এক ছাত্র সুইমিংপুলে সাতরাতে গিয়ে পানিতে ডুবে মারা গেছে। কবির ভাষায় বলতে হয়-
لكل أناس مقبر بفنائهم ... فهم ينقصون والقبور تزيد
وما أن ترى دارا لحي قد أقفرت ... وقبر لميتة بالفناء جديد
فهم جيرة الأحياء أما محلهم ... فدان وأما الملتقى فبعيد
 প্রত্যেক মানুষের মৃত্যুর পর কবরের স্থান নির্ধারিত। মানুষ ধীরে ধীরে কমে যায় আর কবরের সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। কতো ঘর আপনি পাবেন, যেখানে জীবনের জয়গান গাওয়া হচ্ছিলো। কিন্তু আজ তা বিরাণভূমিতে পরিণত। কিন্তু মৃত্যুর পর তাদের জন্য কবরের আকৃতিতে নতুন ঘর বানানো হচ্ছে। সে তো প্রকৃতপক্ষে জীবিতদের সমবয়সী এবং তার ঘরও কাছে। কিন্তু তাদের সাথে সাক্ষাত করা যে আর কিছুতেই সম্ভব নয়!
মৃত্যুর স্মরণ এমন একটি বিষয়- যা অন্তর থেকে দুনিয়ার ভোগ-বিলাসিতার চিন্তা দূর করে, আত্মীয়-স্বজন, সন্তান-সন্ততি ও ধন-সম্পদের অযাচিত আসক্তি নষ্ট করে দেয়। সুস্থ বিবেক-বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ মাত্রই মৃত্যুর চিন্তায় বিভোর থাকে। যারা মৃত্যুর চিন্তা করে না, দুনিয়া নিয়ে পড়ে থাকে, তাদের বুদ্ধিকে সুস্থ বলা যায় কিভাবে? বন্ধু-বান্ধব, স্ত্রী-সন্তান কেউই কবরে সওয়াল-জওয়াবের সময় পাশে থাকবে না।
কবির ভাষায়-
إِنَّا لَنَفْرَحُ بِالأَيَّامِ نَقْعَطُهَا *   وَكُلُّ يَوْمٍ مَضَى يُدْنِي مِنَ الأَجَلِ
আনন্দ-উৎসব করে করে আমরা প্রতিটি দিন কাটাই। অথচ গত হওয়া প্রতিটি দিন আমাদেরকে মৃত্যুর কাছাকাছি নিয়ে যাচ্ছে।
আরেক কবি বলেন-
نموتُ ونحيا كلَّ يومٍ وليلةٍ*    ولابدّ يوماً أن نموتَ ولا نَحيا
আমরা প্রতিদিন রাতে মারা যাই ও জীবিত হই। কিন্তু একদিন অবশ্যই এমন দিন আসবে- যে দিন মৃত্যুবরণ করবো অথচ আর জীবিত হবো না।
আরেক আরব কবির  ভাষ্য-
وَإِنَّا لَفِي الدُّنْيَـا كَـرَكْـبِ سَفِينَـةٍ * نَظُـنُّ وُقُـوفًا وَالزَّمَانُ بِنَا يجري
 এই দুনিয়াতে আমরা চলন্ত জাহাজের মতো আছি। নিজেদেরকে আমরা এক স্থানে স্থির মনে করি। অথচ কাল-মহাকাল আমাদেরকে বয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
যে বান্দা মৃত্যুকে স্মরণে রেখে এই আকীদা পোষণ করে যে, মৃত্যুর পর আল্লাহ ছাড়া কোনো সাহায্যকারী ও বন্ধু থাকবে না। সে দুনিয়ায় অর্থসম্পদ, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনকে অস্থায়ী সঙ্গীই মনে করে থাকে।
আপনি যদি কাউকে বলেন- আপনি কোথা থেকে এসেছেন তা জানেন না আর কোথায় যাবেন তাও জানেন না, তা হলে যে লোক এ কথা শুনছেন তার অবাক হওয়ার কোনো শেষ থাকবে না। আমরা জন্মের আগে কোথায় ছিলাম আর মৃত্যুর পরে কোথায় যাব? সেই প্রশ্নের উত্তর কিছুক্ষণ পূর্বে আমরা আমাদের পবিত্র গ্রন্থ কুরআন মাজীদ থেকে জানতে পেরেছি-
نَفْسٍ ذَائِقَةُ الْمَوْتِ وَنَبْلُوكُمْ بِالشَّرِّ وَالْخَيْرِ فِتْنَةً وَإِلَيْنَا تُرْجَعُونَ
প্রত্যেককে মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে। আমি তোমাদেরকে মন্দ ও ভালো দ্বারা পরীক্ষা করে থাকি এবং আমারই কাছে তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে।
কুরআন শরীফের এই উদ্বৃতি থেকে মৃত্যু ছাড়া আরেকটা বিষয় চলে আসছে। আমরা আল্লাহর কাছ থেকে এসেছি আর আমরা তার কাছেই ফিরে যাব। আমাদের পিতা মাতা কে হবে আর গোত্র, বর্ণ কী হবে, তা আল্লাহ তায়ালা আমাদের জন্য নির্ধারণ করে দেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন-
هُوَ الَّذِي يُصَوِّرُكُمْ فِي الْأَرْحَامِ كَيْفَ يَشَاءُ
 আল্লাহ তাঁর ইচ্ছা মতো আমাদের আকার দিয়ে মায়ের গর্ভে স্থাপন করেন।
আমি জানি, আমি একদিন থাকবো না এই পৃথিবীতে। বেঁচে থাকতে চেয়েছিলাম কতো বৎসর। তবে মৃত্যু অবধারিত। শেষ গন্তব্য তো মাটি। যে আত্মা নিতে আসবে জানি না কেমন লাগবে দেখে! কালো কাপড় পড়া বিরাট কুৎসিত কোন কেউ? তাকে দেখে হয়তো ভয়ে ছটফট করবো, হাত-পা ভারী হয়ে যাবে, কথা আটকে যাবে, কপাল বেয়ে ঘাম ঝরবে, হয়তো আরও ৭০ গুণ ভয়ানক কিছু হতে পারে, আমার ভয়ার্ত চিৎকার কারো কানে পৌঁছবে না তখন। এভাবে যন্ত্রণা সহ্য করতে করতে আমার মৃত্যু হবে।
গোসল করানোর পর সাদা কাফনে জড়িয়ে যেতে হবে, হয়তো নাকে তুলো গোজা থাকবে। কবরস্থানের দিকে নিয়ে যেতে থাকবে, জানাজা হবে, কবর আগেই খোঁড়া থাকবে সাড়ে ৩ হাত। শুইয়ে দেবে কবরে, তারপর আমার ওপরে বাঁশের কয়েকটি ফলা বিছিয়ে দেয়া হবে, তার ওপর কলাপাতা আর মুঠোয় মুঠোয় মাটি পড়তে থাকবে কাফনের কাপড় বেয়ে আমার শরীরে। মাটি দেয়া শেষে সবাই চলে যাবে, হয়তো ২-১ দিন এসে কাঁদবে কবরের পাশে। তারপর কেউ দেখতে আসবে না। আমি একদম একা, নিঃসঙ্গ। দিন, মাস, বছর পেরিয়ে কবরে ঘাস গজাবে, একদিন আমার ওপরেই হয়তো দেয়া হবে নতুন আরেকটি কবর, নতুন লাশ... এভাবেই মিলিয়ে যাবে সব কিছু। কিন্তু আমি কিয়ামতের আগ পর্যন্ত শুয়ে থাকবো সেই দরজা-জানালাবিহীন বদ্ধ সেই কবরে।
মৃত্যু- চেষ্টা সাধনার সময় শেষ হওয়ার সর্বশেষ ঘোষণা। আর পরকাল- নিজের চেষ্টাসমূহের ফলাফল লাভের শেষ জায়গা। মৃত্যুর পর দ্বিতীয়বার চেষ্টা-সাধনার না কোনো সুযোগ রয়েছে, না রয়েছে পরকালীন জীবন শেষ হয়ার কোনো সম্ভাবনা। কতই না কঠিন এ বাস্তবতা। যদি মানুষ মৃত্যুর পূর্বে এ ব্যাপারে সজাগ হতো! কারণ, মৃত্যুর পরে এ ব্যাপারটি বুঝে আসলে তখন আর কিছুই করার থাকবে না। মৃত্যুর পর সতর্ক হওয়ার অর্থ তো শুধু এই যে, মানুষ কেবল এই বলে আফসোস করে করে সময় কাটাবে যে, সে অতীতে কতো বড়ো ভুলই না করেছে। এমন এক ভুল যা শুধরানোর সামন্যতম সুযোগ তার সামনে নেই। আমীরুল মুমিনীন হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রা. বলেন-
حاسبوا أنفسكم قبل أن تحاسبوا، وزنوا أعمالكم قبل أن توزنوا، وتزينوا للعرض الأكبر، يوم لا تخفى عليكم خافية.
তোমাদের কাছে হিসাব চাওয়ার আগে নিজেরাই নিজেদের হিসাব সম্পন্ন করে নাও, তোমাদের আমল ওজন করার আগে নিজেরাই নিজেদের আমলসমূহ ওজন করে নাও, কিয়ামত দিবসে পেশ হওয়ার জন্য নিজেদের প্রস্তুত করো। সুসজ্জিত হও সেদিনের জন্য, যেদিন তোমাদের সামনে কোনো কিছু অস্পষ্ট থাকবে না।
মায়মূন ইবন মিহরান থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
لاَ يَكُونُ العَبْدُ تَقِيًّا حَتَّى يُحَاسِبَ نَفْسَهُ كَمَا يُحَاسِبُ شَرِيكَهُ مِنْ أَيْنَ مَطْعَمُهُ وَمَلْبَسُهُ
ততোক্ষণ পর্যন্ত কোনো ব্যক্তি মুত্তাকী বা আল্লাহভীরু হতে পারবে না যতোক্ষণ পর্যন্ত সে নিজেই নিজের হিসেব নেয় বা মুহাসাবা করে। যেভাবে সে তার সঙ্গীর সঙ্গে হিসেব করে কোথায় তার আহার আর কোথায় তার পোশাক।

এরকম আরো লেখা পড়ুন-

আরো পড়ুনঃ তাওহীদের পরিচয়
আরো পড়ুনঃ আল্লাহর পরিচয়

একটি আবেদন

‘শান্তি ও মানবতার পথে’ শ্লোগানকে সামনে রেখে বাংলা ভাষায় অনলাইন রেডিও প্রতিষ্ঠাসহ মিডিয়ায় গবেষণা, প্রচার, দাওয়াহ প্রভৃতি কাজের আঞ্জাম দেয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে সালাম মিডিয়া। যেজন্য বাৎসরিক প্রায় পাঁচলক্ষাধিক টাকার প্রয়োজন। আপনাদের সহযোগিতা আমাদের পথচলার পাথেয়। আপনি প্রবাসী হলে মাসে অন্তত দশ ডলার বা বাৎসরিক হিসেবে দশ হাজার করে নূন্যতম হারে হলেও আমাদের এই অগ্রযাত্রায় শরীক হতে পারেন। কিংবা একজন ব্যক্তিই সামর্থ অনুযায়ী আমাদের সহযোগিতা করতে পারেন। এরকম অন্তত পঞ্চাশজন ব্যক্তি এগিয়ে এলে আমাদের পথচলা অব্যাহত থাকবে ইনশাআল্লাহ। আমাদের সহযাত্রী হোন...

মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা সৎকর্ম ও খোদাভীতিতে একে অন্যের সহায়তা করো, পাপকাজ আর সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে তোমরা সহায়তা করো না।’ সূরা মায়িদা-২
আমাদের রয়েছে পর্যাপ্ত দক্ষ জনবলশুধু নেই প্রয়োজনীয় অর্থবল। আপনার প্রতি এই আমাদের ছোট্ট আহবান। ০১৯২২৭৩০০০১ (তথ্য ও বিকাশ) বিস্তারিত পড়ুনঃ  আমাদের কথা
ছবিটি জুম করে দেখুন

No comments: