পাঠক! বাংলা ভাষায় সুবৃহৎ বিশুদ্ধ ইসলামী সাইটে আপনাকে স্বাগতম। সহীহ কুরআন, সুন্নাহনির্ভর রেফারেন্স ও গবেষণাধর্মী প্রায় ২০০এর অধিক বিষয়ের অনন্য সমাহার। আমাদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ও অনুদান দিয়ে সাহায্য করতে পড়ুন এখানে

মারাত্মক বদ অভ্যাস হস্তমৈথুন || কুফল ও ক্ষতিকর দিকসমূহ

ইসলামিক রেডিও
আমার আপনার পাশের সম্ভাবনাময়ী প্রিয় ভাইটি, কিংবা বোনটির কথা ভাবুন। কিংবা হে প্রিয় ভাই, তুমি কি গোপনপাপে অভ্যস্ত? যখন কেউ থাকে না, হাতে স্মার্টফোন কিংবা ল্যাপটপ কম্পিউটারে অন্ধকার জগতে হারিয়ে যাও। নীল ছবিতে ডুব দাও? অনেক চেষ্টা করেও ফিরে আসতে পারছো না? কিংবা আদৌ কি কখনো আন্তরিক চেষ্টা করেছো?
প্রিয় বন্ধু, একবার চোখটি বন্ধ করো তো, ভাবো তো, কেউ না দেখুক অন্তত একজন, মহামহিম ও পরম শক্তিমান রব ঠিকই তোমায় দেখছেন, তোমার সবকিছু অবলোকন করছেন।
সত্যি বললে বহু তরুণ আজ এই গোপন পাপকর্ম তথা হস্তমৈথুনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। এ কাজটি শরীয়ত কর্তৃক কঠোরভাবে নিষিদ্ধ এবং আল্লাহর নিকট খুবই অপছন্দনীয়। যা আল্লাহর ক্রোধের পাত্র বানিয়ে দেয়। এটি একটি স্পষ্ট কবিরা গুনাহ। রাসূল সা. হতে হস্তমৈথুনকারীর কঠোর শাস্তির কথা বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহ তাআলার দেয়া এ সুন্দর যৌবনকালটাকে ক্ষয় করার জন্য যে ব্যক্তি তার স্বীয় লিঙ্গের পিছনে লেগে যায় এবং নিজ হাত দিয়ে এটা চর্চা করায় অভ্যস্ত হয়ে পড়ে, তার এ হাত পরকালে সাক্ষী দেবে যে, সে এ পাপ কোথায় কতবার করেছে।
হস্তমৈথুন এমনই একটি কাজ যার অর্থ নিজেকে কলুষিত করা। এটা একটা জঘন্য কলুষ বা পাপ বোধযুক্ত কাজ। হস্তমৈথুন এমনই গোপনীয় পাপ যা মানুষ চোরের মত চুপিসারে করে এবং প্রকাশ করতে লজ্জাবোধ করে।
আল্লামা শামসুদ্দীন যাহবী রহ. বর্ণনা করেন, রাসূল সা. ইরশাদ করেছেন, সাত প্রকারের লোকের প্রতি আল্লাহ লানত প্রদান করেছেন। কিয়ামত দিবসে তিনি তাদের প্রতি রহমতের দৃষ্টিও নিবদ্ধ করবেন না এবং তিনি তাদেরকে বলবেন- তোমরা জাহান্নামে প্রবেশকারীদের সাথে জাহান্নামে প্রবেশ করো, যদি তারা তাওবাহ না করে মৃত্যুবরণ করে। সে সাত প্রকারের লোকদের মধ্যে একজন হলো হস্তমৈথুনকারী ব্যক্তি। [কিতাবুল কবায়ের,পৃ. ৬৩]
হাদীস শরীফে হস্তমৈথুনকারীকে মালঊন বলা হয়েছে এবং তার জন্য রয়েছে পরকালে জাহান্নামের বেদনাদায়ক শাস্তি। এ কাজে পরকালও তার নষ্ট হয়ে গেল এবং ইহকালেও তার জন্য রয়েছে প্রচুর ক্ষতি। এ স্বভাবগত অভ্যাস দ্বারা স্বাস্থ্যও ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। একবার সে কাজ করার পর পুনরায় তা আবার করতে ইচ্ছে হয়। আল্লাহ পানাহ! কয়েকবার সে কাজ করলে পুরুষাঙ্গে ফোলা চলে আসে এবং সে অঙ্গের নরম ও সূক্ষ্ম রগসমূহ ঘর্ষণে ঢিলে হয়ে যায় এবং পুরুষাঙ্গ নিস্তেজ হয়ে পড়ে। নানা যৌন সমস্যা তৈরি হয়। পুরুষের শৌর্য বীর্য কমিয়ে দেয়। অবশেষে অবস্থা এ পর্যায়ে গিয়ে দাঁড়ায় যে, কোনো নারীর প্রতি সামান্য কুদৃষ্টিপাত করলে, কিংবা নারীর কথা মনে কল্পনা করলে সাথে সাথে বীর্য বের হয়ে পড়ে। এমনকি কাপড়ের সাথে পুরুষাঙ্গ সংঘর্ষ হলেও বীর্য বের হয়ে পড়ে। বীর্য সে রক্ত থেকে সৃষ্টি হয়, যা সমস্ত শরীরে খাদ্য পৌঁছানোর পর অবশিষ্ট থাকে। যখন প্রচুর পরিমানে বীর্য নির্গত হতে থাকবে তখন রক্ত সমস্ত শরীরে কীভাবে খাদ্য পৌঁছবে? ফলশ্রুতিতে শরীরের যাবতীয় কার্যক্রম বিকল হয়ে পড়বে।
অনেক যুবক যৌবনের তাড়নায় এটি এ কারণে করে থাকে যে, তারা জানে না- এটি আল্লাহ তাআলা হারাম করেছেন। অথচ আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
وَالَّذِينَ هُمْ لِفُرُوجِهِمْ حَافِظُونَ * إِلَّا عَلَى أَزْوَاجِهِمْ أوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُمْ فَإِنَّهُمْ غَيْرُ مَلُومِينَ * فَمَنِ ابْتَغَى وَرَاءَ ذَلِكَ فَأُولَئِكَ هُمُ الْعَادُونَ
‘‘আর যারা তাদের নিজদের লজ্জাস্থানের হেফাযতকারী। তবে তাদের স্ত্রী ও তাদের ডান হাত যার মালিক হয়েছে তারা ছাড়া, নিশ্চয় এতে তারা নিন্দিত হবে না। অতঃপর যারা এদের ছাড়া অন্যকে কামনা করে তারাই সীমালঙ্ঘনকারী’’ [সূরা মুমীনুন ৫-৬]
উক্ত আয়াতের দৃষ্টিকোণে স্বীয় স্ত্রী বা দাসী নারী ছাড়া অন্য কোনো মাধ্যমে নিজের যৌন তাড়না নিবারণ করাকে সীমার অতিক্রম ও অতিরঞ্জন হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এই কুঅভ্যাসে লিপ্ত ব্যক্তি সম্ভবতঃ রাসূলুল্লাহ সা.-এর ওই বাণীটি শোনেনি- যেখানে তিনি বলেছেন-
مَنْ اسْتَطَاعَ الْبَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ فَإِنَّهُ أَغَضُّ لِلْبَصَرِ وَأَحْصَنُ لِلْفَرْجِ وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ فَإِنَّهُ لَهُ وِجَاءٌ
‘‘যে ব্যক্তির সামর্থ্য আছে, সে যেন বিয়ে করে নেয়। কেননা বিয়ে চোখকে অবনত রাখে এবং লজ্জাস্থানকে সংযত করে। আর যার সামর্থ্য নেই, সে যেন রোযা রাখে। রোযা তার প্রবৃত্তিকে দমন করে’’ [  সহীহ বুখারী : হাদীস নং ১৯০৫; সহীহ মুসলিম : হাদীস নং ১৪০০]
হাদীসে দেখতে পাই, নিজের চরিত্র হেফাজতের জন্য বিয়ের কথা বলা হয়েছে। কারো যদি সামর্থ থাকে তবে সে যেন কালক্ষেপণ না করে বিয়ে করে ফেলে। এটি তার জন্য চরিত্র হেফাজতে সহায়ক হবে। প্রকৃতপক্ষে, ইসলামে বিয়েকে সহজ করা হয়েছে।

হস্তমৈথুনের ক্ষতিকর দিকগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে-

১। মন দুর্বল হয়ে পড়ে।
২। পাকস্থলী, যকৃত ও হৃদপিণ্ড নষ্ট হয়ে যায়।
৩। দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পায়।
৪। কানে শোঁ শোঁ আওয়াজ অনুভূত হয়।
৫। সর্বদা খিটখিটে মেজাজ থাকে।
৬। সকালে ঘুম থেকে উঠলে শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ে।
৭। শরীরের জোড়ায় জোড়ায় ব্যথা অনুভব হয় এবং চোখে ঝাপসা দেখে।
৮। বীর্য পাতলা হয়ে যাওয়ার কারণে সব সময় সামান্য সামান্য বীর্য নির্গত হতে থাকে
পেশাবের নালীতে বীর্য জমে থাকে ও দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়। ফলে পেশাবের নালীতে ক্ষত হয়ে যায় এবং ক্ষতস্থান হতে পুঁজ বের হয়।
১০। হস্তমৈথুনের ফলে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে।
১১। মেরুদন্ড দূর্বল হয়ে পড়ে।
১২। বিবাহের যোগ্যতা হারিয়ে ফেলে। যদিও স্ত্রীর সাথে মিলন করার ক্ষেত্রে সফলও হয়, কিন্তু সন্তান সন্তুতি জন্ম নেয় না, ফলে নিঃসন্তান থেকে যায়।
১৩। মস্তিষ্ক বিকৃত হয়ে যায়।
এছাড়াও অসংখ্য অপকারিতা রয়েছে। সবগুলো যে একজনের একসাথে প্রকাশ পাবে তা নয়। আস্তে আস্তে এগুলোর অধিকাংশই হস্তমৈথুনকারীদের মাঝে পাওয়া যায় সর্বোপরি, স্বাভাবিক জীবন যাপনের ক্ষেত্রে হুমকি হয়ে দাঁড়ায়।

সুতরাং হে আমার ভাই! সাবধান! কখনো আপনি এমন ভুল কাজ করতে যাবেন না। এ শুধু আল্লাহ তাআলার নাফরমানিই নয়; বরং চরিত্র ও স্বাস্থ্যের জন্যেও এটি মারাত্মক ক্ষতিকর। এ অভ্যাস থাকলে এখনই ফিরে আসুন। দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হোন, কখনো এ পাপকর্মে লিপ্ত হবেন না। প্রয়োজনে বিয়ে করুন, ধৈর্য ধরুন, আল্লাহর সাহায্য কামনা করুন। নিশ্চয়, আল্লাহ সবরকারীকে ভালোবাসেন। তাআলা আমাদের সকল প্রকার পাপ বোজার এবং তা থেকে দূরে থাকার তাওফীক দিক।

এরকম আরো লেখা পড়ুন-

আরো পড়ুনঃ যৌন তাড়নার সমস্যা ও এর সমাধান


একটি আবেদন

‘শান্তি ও মানবতার পথে’ শ্লোগানকে সামনে রেখে বাংলা ভাষায় মিডিয়ায় গবেষণা, প্রচার, দাওয়াহ প্রভৃতি কাজের আঞ্জাম দেয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে সালাম মিডিয়া। সময়ের চাহিদায় একটি মানসম্মত অনলাইন রেডিও ও একটি স্টুডিও প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আপ্রাণ চেষ্টা করছি আমরা। যার জন্য শুধু প্রাথমিক অবস্থায় পাঁচ লক্ষাধিক টাকা প্রয়োজন। প্রথমত, আপনার দোয়া। দ্বিতীয়ত, আপনার সহযোগিতা আমাদের পথচলার পাথেয়। আপনি প্রবাসী হলে মাসে অন্তত দশ ডলার বা বাৎসরিক হিসেবে দশ হাজার করে নূন্যতম হারে হলেও আমাদের এই অগ্রযাত্রায় শরীক হতে পারেন। কিংবা একজন ব্যক্তিই সামর্থ অনুযায়ী আমাদের সহযোগিতা করতে পারেন। এরকম অন্তত পঞ্চাশজন ব্যক্তি এগিয়ে এলে আমাদের পথচলা অব্যাহত থাকবে ইনশাআল্লাহ। আমাদের সহযাত্রী হোন...


মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা সৎকর্ম ও খোদাভীতিতে একে অন্যের সহায়তা করো, পাপকাজ আর সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে তোমরা সহায়তা করো না।’ সূরা মায়িদা-২

আমাদের রয়েছে পর্যাপ্ত দক্ষ জনবলশুধু নেই প্রয়োজনীয় অর্থবল। আপনার প্রতি এই আমাদের ছোট্ট আহবান। ০১৯২২৭৩০০০১ (তথ্য ও বিকাশ) বিস্তারিত পড়ুনঃ  আমাদের কথা

ছবিটি জুম করে দেখুন

No comments: