পাঠক! বাংলা ভাষায় সুবৃহৎ বিশুদ্ধ ইসলামী সাইটে আপনাকে স্বাগতম। সহীহ কুরআন, সুন্নাহনির্ভর রেফারেন্স ও গবেষণাধর্মী প্রায় ২০০এর অধিক বিষয়ের অনন্য সমাহার। আমাদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ও অনুদান দিয়ে সাহায্য করতে পড়ুন এখানে

যৌন তাড়নার সমস্যা ও এর সমাধান

ইসলামিক রেডিও ব্লগ
যৌবনের মৌবনে। কথাটির সাথে কি কখনো শুনেছেন? তরুণদের অধিকাংশ চঞ্চলতা ও অধিকহারে বিপথগামী করার পেছনে সবচেয়ে বড়ো ভূমিকা পালন করে যৌন তাড়না। এই যৌন চাহিদা সর্বপ্রথম আহ্বান করে চোখকে। যেমন- গাইরে মাহরাম নারী ও ছোটো ছেলেদের দিকে কামভাব নিয়ে তাকানো, ছবি ও ফিল্ম দেখা, গল্প-উপন্যাস ও অন্যান্য অশ্লীল সাতিহ্য পড়া।
প্রথম দৃষ্টি মানুষকে প্রেমের দিকে আহ্বান করে। কেননা, এ জাতীয় ছবি ও কল্পনা সহজেই তার মনে গভীর রেখাপাত করে যায়। মানুষের মন-মস্তিষ্ক ও ইচ্ছা-অভিরুচিতের ভেতর যখন এই জল্পনা-কল্পনা প্রভাব বিস্তার করে, তখন সে আল্লাহ থেকে গাফিল হয়ে পড়ে। প্রবৃত্তির ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে মানুষ কখনো কখনো শিরকে নিমজ্জিত হয়। যেমন আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَتَّخِذُ مِنْ دُونِ اللَّهِ أَنْدَادًا يُحِبُّونَهُمْ كَحُبِّ اللَّهِ وَالَّذِينَ آَمَنُوا أَشَدُّ حُبًّا لِلَّهِ وَلَوْ يَرَى الَّذِينَ ظَلَمُوا إِذْ يَرَوْنَ الْعَذَابَ أَنَّ الْقُوَّةَ لِلَّهِ جَمِيعًا وَأَنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعَذَابِ
 আর মানুষের মধ্যে এমনও আছে, যারা আল্লাহ ছাড়া অন্যকে আল্লাহর সমকক্ষরূপে গ্রহণ করে, তাদেরকে আল্লাহকে ভালোবাসার মতো ভালোবাসে। আর যারা ঈমান এনেছে, তারা আল্লাহর জন্য ভালোবাসায় দৃঢ়তর। আর যদি যালিমগণ দেখে- যখন তারা আযাব দেখবে যে, নিশ্চয় সকল শক্তি আল্লাহর জন্য এবং নিশ্চয় আল্লাহ আযাব দানে কঠোর।
গাইরুল্লাহর প্রতি এতো টান ও ভালোবাসা থেকে আল্লাহ আমাদের রক্ষা করুন। জনৈক কবির বর্ণনায়-
لا تدعني الا يا عبدها  *  فانه اشرف اسمائى
 আমাকে আমার প্রিয়ার পূজারী বলে ডাকো, কেননা আমার সমুদয় নামের মধ্যে এ নামটি অধিক সম্মানিত।
এ জাতীয় আরও বহু শিরকী কবিতা রয়েছে। আমাদের সমাজে বেগানা যুবক-যুবতীর প্রেম-ভালবাসার নামে যে পাশ্চাত্য সংস্কৃতি উত্তাল সাগরের উর্মিমালার মতে বহমান রয়েছে তা যে সম্পূর্ণ রূপে অবৈধ ও হারাম- এতে কি কোনো সন্ধেহ আছে? বিবাহের পূর্বে এরূপ প্রেম-ভালোবাসা শরীয়তের দৃষ্টিতে বৈধ নয়, অবৈধ। ইসলামের বিধি-বিধান অনুযায়ী কোন যুবতী কোনো অবস্থায় কোনো যুবকের সান্নিধ্যে থাকতে পারে না। উমর রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সা. বলেছেন- কোনো পুরুষ যখন কোনো নারীর সাথে একান্তে থাকে, তখন তাদের মাঝে তৃতীয়জন হিসেবে উপস্থিত হয় স্বয়ং শয়তান তাদের মাঝে ভাবাবেগকে উৎসাহিত করে এবং উভয়ের মাঝে খারাপ কুমন্ত্রণা দিতে থাকে এবং সর্বশেষে লজ্জাকর পরিস্থিতির উদ্ভব ঘটায়। এতে তারা নিজেরা যেমনি কঠিন গোনাগার হবে, তেমনি তাদেরকে এই মেলামেশার সুযোগ দেয়ার কারণে তাদের পিতা-মাতা ও অভিভাকদেরকে হাদীস শরীফে দাইয়ূস বলা হয়েছে। আরো বলা হয়েছে যে, দাইয়ূস জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।
তাই এইসব ব্যাপারে সকলের কঠোরভাবে সাবধান হওয়া জরুরি এবং তা ঈমানের দাবী। আর এই অবৈধ ভালোবাসার প্রতিরোধের জন্যই আল্লাহ নর-নারীকে দিয়েছেন পর্দার বিধান। এই বিধান নারী-পুরুষ উভয়ে পরিপূর্ণ রূপে পালন করলে সমাজে ওই রকম অবৈধ ভালোবাসার কোনো অবকাশই থাকবে না। তবে হ্যাঁ, যে কেউ তার মনের মতো জীবন সঙ্গীনী পছন্দ করে রাখতে পারে বটে। কিন্তু তাই বলে তার সাথে বিবাহের পূর্বে কোনো রকম প্রেম-প্রেম খেলা শুরু করতে পারবে না। কেননা বিবাহের ইচ্ছা থাকলেও বিবাহ না করা পর্যন্ত এভাবে প্রেম-ভালোবাসা করা গুনাহে কবিরা ও হারাম। এমন কি বিবাহের কথা পাকাপাকি হয়ে গেলেও আকদ হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত কোনো প্রেম-ভালোবাসা জায়িজ নয়। বিবাহের মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রী হওয়ার পরই কেবল প্রেম ভালোবাসা করতে পারে এবং তা পবিত্র ও সাওয়াবের কাজ।
অবৈধ প্রেম-ভালোবাসায় জড়িত হয়ে অনেক তরুণ-তরুণীর জীবন অকালে ঝড়ে পড়ছে। তাদের লেখা-পড়ার ক্ষতি হচ্ছে। সময়ের অপচয় হচ্ছে। স্বাস্থ্য নষ্ট হচ্ছে। সাজানো সংসার ভেঙ্গে চুরমান হচ্ছে। সবচেয়ে বড়ো কথা হলো- ঈমানের জ্যোতি নিভে যাচ্ছে। দীনদারিত্ব নষ্ট হচ্ছে। আসলে ভালোবাসা বলতে যা বুঝায়- বর্তমান যুবক-যুবতীর এই ভালোবাসা সেই ভালোবাসা নয়।

প্রিয় ভাই ও বোন!

অনেক সময় দেখা যায়- তাদের এই ভালোবাসায় অভিভাবকদের সম্মতি থাকে না বিধায় তাদের মুখে চুনকালি দিয়ে পালিয়ে যায়। আবার কিছু দিন পরে যখন প্রেমের আবেগ-নেশা টুটে যায়, তখন কালো মেঘের ছায়ার মতো নেমে আসে নানাবিধ অস্বস্তি ও যন্ত্রণা। তখন তড়িৎ গতিতে বিচ্ছেদ ঘটে যায়। তারা সর্বনাশা প্রেমে একুল-অকুল সবই হারায়।
তারা কি জানে না! প্রেম কি? ভালবাসা কি? তার প্রতিফল কি? কেনো জানবে না? হ্যাঁ তারা জানে, প্রেম এক মরণাত্মক যন্ত্রণার নাম। একটি হৃদয়বিদারক সংক্রামক রোগ- যা অত্যন্ত ছোঁয়াচে। বড়োই মারাত্মক এ প্রেম। যে একবার এ পথে পা বাড়িয়েছে সে কখনও সুখের ছায়া দেখেনি। কেননা তাতে রয়েছে আল্লাহ ও রাসূল সা.-এর নারাজী। প্রেমের প্রধান উৎস হচ্ছে আবেগ আর প্রচন্ড এই আবেগই হচ্ছে প্রেমের চালিকাশক্তি। কিন্তু গভীর এই আবেগকৃত প্রেমের গভীরতা যখন থেমে যায়, তখন প্রেমের বদলে জন্ম নেয় মোহ। কচুপাতার পানির মতো এক সময় এই মোহও ঝড়ে পড়ে। তখন স্বপ্ন সাধ, আশা, ভালোবাসা সবই হয়ে যায় চূর্ণ। কেউ কেউ আবার প্রেমে ব্যর্থ হয়ে প্রতিক্রিয়া দেখায়। কেউ প্রতিশোধ নেয় (এসিড, খুন বা যুবতীর বিবাহ ভঙ্গন) কেউ চিরকুমার থেকে যায়, কেউ করে আত্মহত্যা।
ভালোবাসার নামে দেশের ভবিষ্যত সম্ভাবনাময় যুব সমাজকে ধ্বংস ও নিঃশেষ এর দিকে টেলে দিচ্ছে। যার ফলে পরিবার, সমাজ সবই হচ্ছে কলংকিত, অধঃপতিত। যার জ্বলন্ত প্রমাণ প্রতিদিনই পত্রিকার পাতায় চোখ বোলালেই দেখতে পাই। তারপরও কি আমরা সে পথ থেকে ফিরে আসতে পারি না? সময় থাকতে তা থেকে শিক্ষা নিতে পারি না? হ্যাঁ ভালোবাসা বড়ো মহৎ একটি গুণ। এর দ্বারাই মা সন্তানদেরকে ভালোবাসে, স্বামী-স্ত্রীকে ভালোবাসে, আত্মীয় স্বজন একে অপরকে ভালোবাসে।
অবৈধ প্রেমে আক্রান্ত ব্যক্তিদের অন্তর আল্লাহর ভয় থেকে খালি হয়ে যায়। তার চেহারায় চমকায় না কালিমা তাইয়েবার আলো। আক্রান্ত ব্যক্তি কুরআন তিলাওয়াতে তৃপ্তি পায় না। আল্লাহ তাআলার বর্ণনা মতে- তাদের চেহারায় রাতের অন্ধকার ছেয়ে থাকে। দুনিয়ার এই অন্ধকার আখিরাতের অন্ধকারের নিদর্শন। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন-
وَالَّذِينَ كَسَبُوا السَّيِّئَاتِ جَزَاءُ سَيِّئَةٍ بِمِثْلِهَا وَتَرْهَقُهُمْ ذِلَّةٌ مَا لَهُمْ مِنَ اللَّهِ مِنْ عَاصِمٍ كَأَنَّمَا أُغْشِيَتْ وُجُوهُهُمْ قِطَعًا مِنَ اللَّيْلِ مُظْلِمًا أُولَئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ
 আর যারা মন্দ উপার্জন করবে, প্রতিটি মন্দের প্রতিদান হবে তারই অনুরূপ; আর লাঞ্ছনা তাদেরকে আচ্ছন্ন করবে। আল্লাহর পাকড়াও থেকে তাদের কোনো রক্ষাকারী নেই। যেন অন্ধকার রাতের এক অংশ দিয়ে তাদের চেহারাগুলো ঢেকে দেয়া হয়েছে। তারাই আগুনের অধিবাসী, তারা তাতে স্থায়ী হবে।
অন্যত্র আল্লাহ তাআলা ইরশা করেন-
وُجُوهٌ يَوْمَئِذٍ مُسْفِرَةٌ * ضَاحِكَةٌ مُسْتَبْشِرَةٌ * وَوُجُوهٌ يَوْمَئِذٍ عَلَيْهَا غَبَرَةٌ * تَرْهَقُهَا قَتَرَةٌ
 সেদিন কিছু কিছু চেহারা উজ্জ্বল হবে। সহাস্য, প্রফুল¬। আর কিছু কিছু চেহারার ওপর সেদিন থাকবে মলিনতা। কালিমা সেগুলোকে আচ্ছন্ন করবে।

প্রিয় তরুণ ভাইয়েরা!

এতো ভয়ক্ষর রাস্তার নামই কি ভালোবাসা! তারপরও বুঝে আসে না, কি করে যে বিনা বিবেচনায় আজকের তরুণ-তরুণীরা তা বরণ করে নেয়। যারা অবৈধ প্রেমের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করে তাদেরকে বলছি- এ হারাম পথে কেনো নিজের জীবন উৎসর্গ করতে চান? আল্লাহর পথে জীবন পরিচালিত হয়ে নিজের জীবন উৎসর্গ করুন। যেখানে থাকবে না কোনো অশান্তি, কোনো কষ্ট, শুধু থাকবে সুখ আর সুখ, শান্তি আর শান্তি। বর্তমান আধুনিক বিশ্বে ভালোবাসা বলতে যা পরিলক্ষিত হচ্ছে, তা নিঃসন্দেহে ইসলামবিরোধী। কিন্তু শত আফসোস হলেও সত্য যে, বর্তমান বিশ্বে অধিকাংশ কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী, যুবক-যুবতী বিশেষ করে আধুনিক শিক্ষিত ও সচেতন স্কুল, কলেজ ও ভার্সিটির ছাত্র-ছাত্রীরা এই ভালোবাসা নামক মরণব্যাধিতে আক্রান্ত। যার ফলে অকালে ঝড়ে যাচ্ছে হাজারো জীবন। প্রতিনিয়ত এসিডে দগ্ধ হচ্ছে হাজারো নারী। আধুনিক বিশ্বে আধুনিক প্রেমের বেলায় এটি নির্মমম বাস্তবতা। তাই বলতে হয় এটা ভালোবাসা নয় এটা মরণ নেশামাত্র।
এই অবৈধ প্রেম-ভালোবাসা ইহকাল-পরকালের অসংখ্য বিপদ ও দুর্দশা ডেকে আনে। যেমন- আল্লাহ তাআলার ভালোবাসা ও তাঁর স্মরণ থেকে বিমুখ হয়ে তাঁর কোনো সৃষ্টির ভালোবাসা ও তার স্মরণে নিমগ্ন হওয়া। কারণ, উভয়টি একত্রে সমভাবে কারোর হৃদয়ে অবস্থান করতে পারে না। তার অন্তর আল্লাহ তাআলা ছাড়া অন্যকে ভালোবাসার দরুন নিদারুণ কষ্ট ও শাস্তির সম্মুখীন হয়। কারণ, প্রেমিক কখনো চিন্তামুক্ত হতে পারে না। বরং তাকে সর্বদা চিন্তাযুক্তই থাকতে হয়। প্রিয় বা প্রিয়াকে না পেয়ে থাকলে তাকে পাওয়ার চিন্তা এবং পেয়ে থাকলে তাকে আবার কখনো হারানোর চিন্তা।
প্রেমিকের অন্তর সর্বদা প্রিয় বা প্রিয়ার হাতেই থাকে। সে তাকে যেভাবেই চালাতে চায় সে সেভাবেই চলতে বাধ্য। তখন তার মধ্যে কোনো নিজস্ব ইচ্ছা অবশিষ্ট থাকে না। এর চাইতে আর বড়ো কোনো লাঞ্ছনা আছে কি? দীন-দুনিয়ার সকল কল্যাণ থেকে সে বঞ্চিত হয়। কারণ, ধর্মীয় কল্যাণের জন্য তো আল্লাহ তাআলার প্রতি অন্তরের উন্মুখতা একান্ত প্রয়োজনীয়। আর তা প্রেমিকের পক্ষে একেবারেই অসম্ভব। অন্য দিকে দুনিয়াবী কল্যাণ তো দীনি কল্যাণেরই অধীন। দীনি কল্যাণ যার হাত ছাড়া হয় দুনিয়ার কল্যাণ সুস্থভাবে কখনো তার হস্তগত হতে পারে না।
দীন-দুনিয়ার সকল বিপদ তার প্রতি দ্রুত ধাবিত হয়। কারণ, মানুষ যখন আল্লাহ তাআলা ছাড়া অন্য কারোর প্রেমে পড়ে যায় তখন তার অন্তর আল্লাহবিমুখ হয়ে পড়ে। আর কারোর অন্তর আল্লাহবিমুখ হলে শয়তান তার অন্তরে হাঁটু গেড়ে বসে। তখনই সকল বিপদাপদ তার দিকে দ্রুত ধাবমান হয়। কারণ, শয়তান তো মানুষের আজন্ম শত্রু। আর কারোর কঠিন শত্রু যখন তার ওপর কাবু করতে পারে তখন কি সে তার যথাসাধ্য ক্ষতি না করে এমনিতেই বসে থাকবে? শয়তান যখন প্রেমিকের অন্তরে অবস্থান নিয়ে নেয় তখন সে উহাকে বিক্ষিপ্ত করে ছাড়ে এবং তাতে প্রচুর কুমন্ত্রণা ঢেলে দেয়।
কখনো কখনো এমন হয় যে, সে একান্ত বদ্ধ পাগলে পরিণত হয়। এমনকি প্রেমিক কখনো কখনো প্রেমের দরুন প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে নিজের সকল অথবা কিছু বাহ্যেন্দ্রিয় হারিয়ে বসে। প্রত্যক্ষ তো এভাবে যে, প্রেমে পড়ে তো অনেকে নিজ শরীরই হারিয়ে বসে। ধীরে ধীরে তার শরীর অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়ে। তখন তার কোনো ইন্দ্রিয়ই আর সুস্থভাবে বাহ্যিক কোনো কাজ সমাধা করতে পারে না। পরোক্ষ বাহ্যেন্দ্রিয় লোপ তো এ ভাবেই যে, প্রেমের দরুন তার অন্তর যখন বিনষ্ট হয়ে যায় তখন তার বাহ্যেন্দ্রিয়গুলোও আর সঠিক কাজ করে না। তখন তার চোখ আর তার প্রিয়ের কোনো দোষ দেখে না। কান আর প্রিয়কে নিয়ে কোনো গান শুনতে বিরক্তি বোধ করে না। মুখ আর প্রিয়ের অযথা প্রশংসা করতে লজ্জা পায় না।
এই অবৈধ প্রেম-ভালোবাসা এক পর্যায়ে তার প্রিয় পাত্রই তার চিন্তা-চেতনার একান্ত কেন্দ্রবিন্দুতে রূপান্তরিত হয়। তখন তার সকল শারীরিক ও মানসিক শক্তিসমূহ অচল হয়ে পড়ে। তখন সে এমন রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হয় যার চিকিৎসা একেবারেই দুষ্কর।
এ ছাড়াও প্রেমের আরো অনেক ক্ষতিকর দিক রয়েছে। যেমন, কোনো প্রেমিক যখন লোক সমাজে তার প্রেমের কথা প্রকাশ করে দেয় তখন তার প্রিয়ের ওপর সর্ব প্রথম বিশেষভাবে যুলুম করা হয়। কারণ, মানুষ তখন অনর্থকভাবে তাকে এ ব্যাপারে দোষারোপ করতে থাকে। এমনকি তার ব্যাপারে কোনো মানুষ কোনো কথা বানিয়ে বললেও অন্যরা তা বিশ্বাস করতে একটুও দেরি করে না। এমন কি শুধু প্রিয়ের ওপরই যুলুম সীমাবদ্ধ থাকে না; বরং তা তার সমস্ত পরিবারবর্গের ওপরও বর্তায়। কারণ, এতে করে তাদেরও প্রচুর মানহানী হয়। অন্যদেরকেও মিথ্যারোপের গুনাহে নিমজ্জিত করা হয়।
আর যদি প্রিয় বা প্রিয়াকে পাওয়ার জন্য অন্যের সহযোগিতা নেওয়া হয় তখন তারাও গুনাহগার হয়। এ পথে যারা বাধা সৃষ্টি করে তাদের অনেককে কখনো কখনো হত্যাও করা হয়। কতো কতো গভীর সম্পর্ক যে এ কারণে বিচ্ছিন্ন করা হয় তার কোনো ইয়ত্তা নেই। কতো প্রতিবেশী বা আত্মীয়ের অধিকার যে এ ক্ষেত্রে বিনষ্ট হয় তার কোনো হিসেব নেই। আর যদি এ ক্ষেত্রে যাদুর সহযোগিতা নেওয়া হয় তা হলে একে তো শিরক আবার এর ওপর কুফুরী।
এদিকে যদি প্রিয় বা প্রিয়া মিলেই যায় তখন একে অপরকে নিজ স্বার্থ হাসিলের জন্য অন্যের ওপর যুলুম করতে সহযোগিতা করে এবং একে অপরের সন্তুষ্টির জন্য কতো মানুষের কতো মাল যে হরণ করে তার কোনো হিসেব নেই। আর যদি প্রিয় বা প্রিয়া অত্যন্ত চতুর হয়ে থাকে তখন সে প্রেমিককে আশা দিয়ে দিয়ে তার সকল সম্পদ বিনষ্ট করে দেয়। কখনো সে এমন কান্ড একই সঙ্গে অনেকের সাথেই করে বেড়ায়। তখন প্রেমিক রাগ করে কখনো তাকে হত্যা বা মারাত্মকভাবে আহত করে। সুতরাং কোনো বুদ্ধিমান এতো কিছু জানার পরও এ জাতীয় প্রেমে কখনো আবদ্ধ হতে পারে কি?

প্রিয় ভাই ও বন্ধু! 

এসো, প্রভাতের স্নিগ্ধ সমীরণের জান্নাতি পরশ গায়ে মাখো। এসো মুক্ত প্রাঙ্গনে। প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নাও। বিস্তৃত প্রাঙ্গনে তাকিয়ে দেখো। পাখির মিষ্টি কলতান তোমার কানে বাজে কি? কিচির মিচির শব্দের আড়ালে কী গাইছে তারা? আল্লাহ নামের নাম! কিংবা মহান রবের উচ্ছসিত প্রশংসা!
চোখ মেলে তাকাও, হৃদয়ের সবকটি বদ্ধদার খুলে দাও। নিজেকে সঁপে দাও মহান রবের কাছে। অতীতের সব পাপ পঙ্কিলতা থেকে ফিরে আসার দৃঢ়প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হও। কারণ, শেষ ভরসা যে শুধুই তিনি। এবং শুধুই তিনি।
বিশ্বাস করো, তুমি হারবে না বন্ধু! তিনিই তোমার সহায়।
সমাপ্ত


একটি আবেদন


‘শান্তি ও মানবতার পথে’ শ্লোগানকে সামনে রেখে বাংলা ভাষায় মিডিয়ায় গবেষণা, প্রচার, দাওয়াহ প্রভৃতি কাজের আঞ্জাম দেয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে সালাম মিডিয়া। সময়ের চাহিদায় একটি মানসম্মত অনলাইন রেডিও ও একটি স্টুডিও প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আপ্রাণ চেষ্টা করছি আমরা। যার জন্য শুধু প্রাথমিক অবস্থায় পাঁচ লক্ষাধিক টাকা প্রয়োজন। প্রথমত, আপনার দোয়া। দ্বিতীয়ত, আপনার সহযোগিতা আমাদের পথচলার পাথেয়। আপনি প্রবাসী হলে মাসে অন্তত দশ ডলার বা বাৎসরিক হিসেবে দশ হাজার করে নূন্যতম হারে হলেও আমাদের এই অগ্রযাত্রায় শরীক হতে পারেন। কিংবা একজন ব্যক্তিই সামর্থ অনুযায়ী আমাদের সহযোগিতা করতে পারেন। এরকম অন্তত পঞ্চাশজন ব্যক্তি এগিয়ে এলে আমাদের পথচলা অব্যাহত থাকবে ইনশাআল্লাহ। আমাদের সহযাত্রী হোন...
মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা সৎকর্ম ও খোদাভীতিতে একে অন্যের সহায়তা করো, পাপকাজ আর সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে তোমরা সহায়তা করো না।’ সূরা মায়িদা-২

আমাদের রয়েছে পর্যাপ্ত দক্ষ জনবলশুধু নেই প্রয়োজনীয় অর্থবল। আপনার প্রতি এই আমাদের ছোট্ট আহ্বান। ০১৯২২৭৩০০০১ (তথ্য ও বিকাশ) বিস্তারিত পড়ুনঃ  আমাদের কথা
জুম করে দেখুন

No comments: