পাঠক! বাংলা ভাষায় সুবৃহৎ বিশুদ্ধ ইসলামী সাইটে আপনাকে স্বাগতম। সহীহ কুরআন, সুন্নাহনির্ভর রেফারেন্স ও গবেষণাধর্মী প্রায় ২০০এর অধিক বিষয়ের অনন্য সমাহার। আমাদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ও অনুদান দিয়ে সাহায্য করতে পড়ুন এখানে

নবী সা. এর দাম্পত্য জীবন ও ভালোবাসার গল্পগুলো

ভালোবাসার গল্প
ভালোবাসা। এর আবার কত্ত রকমফের। ছোট একটি শব্দ, অথচ কতই না আপেক্ষিক। আমাদের চারপাশে রতরকম ভালোবাসা দেখি আমরা। বাবা মার প্রতি ভালোবাসা, স্বামী স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা, সন্তানের প্রতি ভালোবাসা, পরিচিত স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদের প্রতি ভালোবাসা অথবা অদেখা অচেনা কারো প্রতিও ভালো কিছু থেকে জন্মাতে পারে ভালোবাসা। মোটকথা, ভালো কিছু থেকেই জন্মায় ভালোবাসা। এটি মানুষের স্বভাবজাত প্রক্রিয়া।
যদি ভালোবাসতেই হয় তাহলে যেন সে ভালোবাসা হয় ভালোর জন্য, এগিয়ে যাবার, সুকুমারবৃত্তিতে মোড়ানো। স্বামী-স্ত্রীর মাঝে যে ভালোবাসা, সুবহানাল্লাহ! কতটা উচ্চাঙ্গের আর গভীর। অন্য সবার থেকে আলাদা। এখানে একটা বিষয় লক্ষ্যণীয়, ভালোবাসার যেমন রকমফের আছে, তেমনি এর ধাপগুলোতেও পার্থক্য আছে। যেমন স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসা আর বাবা মার ভালোবাসা। এখন যদি কেউ প্রশ্ন করে, তুমি কাকে বেশি ভালোবাসো? বাবা মাকে নাকি স্ত্রীকে? প্রশ্নটা খুবই অনর্থক টাইপের। কারণ, বাবা মার ভালোবাসার স্তরটা ভিন্ন আবার স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসার স্তর ভিন্ন। দুটো দুই মেরুর। দুটোকে এক মানদণ্ডে মাপা খুবই অমূলক।
আজ আমরা স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক বা ভালোবাসা নিয়েই জানবো। তাও যুগের শ্রেষ্ঠ মানব রাসূলের (সা.) জীবনী থেকে। তাদের মতই, তাদের সম্পর্ক ও দাম্পত্য জীবন ছিল সম্পূর্ণ আলাদা। সুখী দাম্পত্য জীবন। অনন্য একটা বন্ধন। প্রবাদতুল্য স্বাপ্নিক একটা সম্পর্ক। তাই, পৃথিবীর সকল দম্পতির উচিত, সেভাবেই জীবনকে গড়ে তোলা। সকল ভালোবাসা যেন আল্লাহর জন্য হয়। এ সম্পর্কে চমৎকার একটা হাদীস আমরা দেখতে পাই, ‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্যই কাউকে ভালোবাসবে এবং আল্লাহর জন্যই কাউকে ঘৃণা করতে তার ঈমান পূর্ণতা লাভ করবে।’’ [বুখারী]
একটু দৃষ্টি ফেরাই প্রিয় রাসূলের সা. ভালোবাসার দিকে। খাদিজা রা. ও তাঁর মাঝে, আয়েশা রা. ও তাঁর মাঝে কী চমৎকার অনুকরণীয় ভালোবাসাই না ছিল! একদিন আব্দুল্লাহ ইবনু আমর রা. জিজ্ঞেস করলেন রাসূলকে, হে আল্লাহর রাসূল, কোন মানুষটি আপনার কাছে সর্বাপেক্ষা প্রিয়? (কাকে আপনি সবচে বেশি ভালোবাসেন) রাসূল্লাহ সা. জবাব দিলেন, আয়িশা। অর্থাৎ প্রিয়তমা আয়িশাকে আমি সবচে বেশি ভালোবাসি। [বুখারী]
আয়েশা রা. এর কথা যখন এসেই গেল তার আরেকটা মজার গল্প শোনা যাক। একদিন সাহস করে তিনি জিজ্ঞেস করে ফেললেন প্রিয় স্বামীকে, হে আল্লাহ রাসূল! সত্যি করে বলুন তো, আপনি আমাকে কতটা ভালোবাসেন? রাসূল সা. একটু চিন্তা করে বললেন, তোমার এবং আমার ভালোবাসার বন্ধনটা এমন শক্ত, যেমন একটা রশির মধ্যে সুতাগুলো শক্তভাবে জড়িয়ে থাকে, একই বাঁধনে আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা থাকে। রাসূলের জবাব শুনে আয়েশা রা. খুশি হলেন। এরপর থেকে প্রায়ই তিনি রাসূলকে জিজ্ঞেস করতেন, হে আল্লাহ রাসূল! আপনার ভালোবাসার বন্ধনের কী অবস্থা? আগের মতই আছে, নাকি ঢিলা হয়ে গেছে? রাসূল আয়েশার দুষ্টুমির জবাবে বলতেন, ভালোবাসার সে বাঁধন আগের মতোই দৃঢ় আছে। বাঁধনে কোনো দূর্বলতা আসেনি।
কী চমৎকার এক বন্ধনের জানান দিচ্ছে এই ঘটনাটি। কেমন শক্তিশালী বন্ধনে তাঁদের সবটুকু ভালোবাসা আবদ্ধ ছিল! কী অনুকরণীয় আর চমকপ্রদ। সুবহানাল্লাহ।
রাসূল সা. এর প্রথম স্ত্রী খাদিজা রা. এর কথাই ধরা যাক। তাদের বিয়ে হয়ে বছর পনের হলো। কিন্তু ভালোবাসায় এক চিলতে ভাটাও পড়েনি। বরং যেন ভালোবাসাগুলো আরো দৃঢ় হয়েছে। ঘটনাটি রাসূল সা. এর নবুয়তের শুরুর দিকটার। ওহী অবতীর্ণ হবার ব্যাপারটা ছিল কঠিন ও কষ্টকর। প্রথমবার ওহী অবতীর্ণ হওয়ায় রাসূল সা. প্রচ- ঘাবড়ে গিয়েছিলেন। খানিকটা ভীত হয়ে ছুটে আসলেন তাঁর প্রিয় আশ্রয়স্থলের কাছে, প্রিয়তমার কাছে। খাদিজা রা.কে ব্যাপারটি খুলে বললেন। শঙ্কিত হয়ে বললেন, খাদিজা, আমার আশঙ্কা হচ্ছে আমি ধ্বংস হয়ে যাবো। খাদিজা রা. কী চমৎকারভাবে তাকে সান্ত¦না দিয়েছিলেন। ইতিহাসে আজও স্মরণীয় আছে ঘটনাটি। তিনি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, এটা কখনো হতে পারে না। আপনি তো আমানত রক্ষা করেন। অন্যের হক্ব আদায় করেন। আপনি এয়াতিম অসহায় দুঃস্থদের পাশে দাঁড়ান। আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করেন। আল্লাহ আপনাকে কক্ষণো লাঞ্চিত করবেন না। কথাগুলো শুনে রাসূল সা. অনেকটা সান্ত্বনা পেলেন। আর ইসলামের প্রচার প্রসারে যে দুজন মানুষের সবচেয়ে বেশি অবদান তাদের একজন হলেন খাদিজা রা.। ইতিহাসের অনন্য মহীয়সী নারী
এসব এখন শুধুই ইতিহাস। কিন্তু, সবার ভালোবাসা এভাবেই আঁকা উচিত। স্বামী স্ত্রী সাধ্যের মধ্যে সবটুকু সুখ ও ভালোবাসা উজাড় করে পরস্পর বিলাবার। নবী সা. ও তার সহধর্মীনিদের মতন অনুকরণীয় ও সকল ভালোবাসা হবে আল্লাহর জন্য। একে অপরের হাত ধরে সামনে এগিয়ে চলার। শত প্রতিকূলতা ডিঙ্গিয়ে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছার। এই ভালোবাসা যেন শুধু পৃথিবীর বুকেই সীমাবদ্ধ না থাকে বরং তা হবে চিরজীবনের জন্য জান্নাতেও। চিরস্থায়ী এক অমলিন ভালোবাসা। এর স্থায়িত্ব হবে ঐপারের জন্যেও। পৃথিবীর কদিনের যাপন শেষে সেখানেও একসাথে থাকার। সারাজীবন হাতে হাত রেখে সামনে এগিয়ে যাবার।

এরকম আরো লেখা পড়তে পারেন-

একটি আবেদন


বাংলা ভাষায় একটি শক্তিশালী ও মানসম্মত অনলাইন রেডিও প্রতিষ্ঠা সালাম মিডিয়ার লক্ষ্য। এছাড়াও একটি স্টুডিও প্রতিষ্ঠা, গবেষণা, প্রচার, দাওয়াহ প্রভৃতি কাজের আঞ্জাম দেয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। যার জন্য শুধু প্রাথমিক অবস্থায় পাঁচ লক্ষাধিক টাকা প্রয়োজন প্রায়। প্রথমত, আপনার দোয়া। দ্বিতীয়ত, আপনার সহযোগিতা আমাদের পথচলার পাথেয়। আপনি প্রবাসী হলে মাসে অন্তত দশ ডলার বা বাৎসরিক হিসেবে দশ হাজার করে নূন্যতম হারে হলেও আমাদের এই অগ্রযাত্রায় শরীক হতে পারেন। কিংবা একজন ব্যক্তিই সামর্থ অনুযায়ী আমাদের সহযোগিতা করতে পারেন।


আমাদের রয়েছে পর্যাপ্ত দক্ষ জনবলশুধু নেই প্রয়োজনীয় অর্থবল। আপনার প্রতি এই আমাদের ছোট্ট আহ্বান। ০১৯২২৭৩০০০১ (তথ্য ও বিকাশ) বিস্তারিত পড়ুনঃ  আমাদের কথা
সালাম মিডিয়া কর্পোরেশন