পাঠক! বাংলা ভাষায় সুবৃহৎ বিশুদ্ধ ইসলামী সাইটে আপনাকে স্বাগতম। সহীহ কুরআন, সুন্নাহনির্ভর রেফারেন্স ও গবেষণাধর্মী প্রায় ২০০এর অধিক বিষয়ের অনন্য সমাহার। আমাদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ও অনুদান দিয়ে সাহায্য করতে পড়ুন এখানে

কুরআন ও হাদীসের আলোকে জান্নাত লাভের উপায়সমূহ

১. জান্নাতে প্রবেশের প্রথম উপায় হলো: শাহাদাত অর্থাৎ একথার সাক্ষ্য দেয়া যেআল্লাহ ছাড়া আর সত্য কোন ইলাহ নেইযিনি এককযার কোন শরীক নেই। আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর বান্দা
ও রাসূল। সুতরাং যে ব্যক্তি ইসলামের এ সাক্ষ্য প্রদান করবেএর যাবতীয় আরকান পালন করবেআর এক অদ্বিতীয় আল্লাহর ইবাদাত করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
উবাদাহ ইবন সামেত রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করে বলেন:
«من شهد أن لا إله إلا الله وحده لا شريك له وأن محمدا عبده ورسوله، وأن عيسى عبده ورسوله وكلمته ألقاها إلى مريم وروح منه ، والجنة حق والنار حق أدخله الله الجنة ما كان من العمل» (متفق عليه).
‘‘যে ব্যক্তি এ কথার সাক্ষ্য দিবে যে, এক অদ্বিতীয় আল্লাহ ছাড়া আর কোন প্রকৃত ইলাহ নেইতাঁর কোন শরীক নেইআর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর বান্দা ও রাসূলঈসা আলাইহিস সালাম তাঁর বান্দা ও রাসূল এবং আল্লাহর কালেমা যাকে তিনি মারিয়ামের নিকট প্রেরণ করেছেন এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে রূহআর জান্নাত সত্যজাহান্নাম সত্য আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেনতার আমল যাই হোক না কেন’’ [বুখারী ও মুসলিম]
আল্লাহ বলেন:
﴿ إِنَّ ٱلَّذِينَ قَالُواْ رَبُّنَا ٱللَّهُ ثُمَّ ٱسۡتَقَٰمُواْ فَلَا خَوۡفٌ عَلَيۡهِمۡ وَلَا هُمۡ يَحۡزَنُونَ ١٣ أُوْلَٰٓئِكَ أَصۡحَٰبُ ٱلۡجَنَّةِ خَٰلِدِينَ فِيهَا جَزَآءَۢ بِمَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ١٤ َ [الأحقاف: 13-14]
‘‘নিশ্চয়ই যারা বলেআমাদের রব আল্লাহঅতঃপর এ কথার উপর সুদৃঢ় থাকে। তাদের কোন ভয় ভীতি নেইতাদের কোন চিন্তা নেই। তারাই জান্নাতবাসীসেখানে তারা চিরকাল থাকবে। এ জান্নাত তারা তাদের কৃত কর্মের ফল স্বরূপ লাভ করবে। [সূরা আল আহক্বাফ: ১৩-১৪]
আয়াতে উল্লেখিত الاستقامة শব্দটির অর্থ হল: আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করা। আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিততিনি বলেননবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
«كل أمتي يدخلون الجنة إلا من أبى، فقالوا يا رسول الله ومن أبى؟ قال من أطاعني دخل الجنة ومن عصاني فقد أبى» (رواه البخاري).
‘‘জান্নাত পেতে আগ্রহী নয় এমন ব্যক্তি ছাড়া আমার সকল উম্মাতই জান্নাতে প্রবেশ করবে। সাহাবীগণ বললেনহে আল্লাহর রাসূল! কে এমন ব্যক্তি আছে যে জান্নাতে যেতে অস্বীকৃতি জানায়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনযে ব্যক্তি আমার আনুগত্য করবে সে জান্নাতে যাবেআর যে আমার নাফরমানী করবে ও অবাধ্য হবেসেই জান্নাতে যেতে অস্বীকার করে’’ [বুখারী ]

২. আল্লাহর সুন্দর সুন্দর নামসমূহ মুখস্থ করা এবং এ নামগুলো সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা জান্নাতে প্রবেশের একটি উপায়। আবু হুরায়রা রাদি আল্লাহ আনহু থেকে বর্ণিত যেনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
«إن لله تسعة وتسعين اسما، مائة إلا واحدا، مَن أحصاها دخل الجنة».
‘‘আল্লাহর নিরানববইটি নাম আছে। যে ব্যক্তি এ নামগুলো গণনা করবেসে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে’’ [বুখারী ও মুসলিম]

৩. আল কুরআনের অনুসারীগণযারা আল্লাহর আহল ও তাঁর খাস বান্দাকুরআন তাদের জান্নাতে প্রবেশের উপায় হবে। আবদুল্লাহ ইবন আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন যেনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
«يقال لصاحب القرآن: اقرأ وارتق، ورتل كما كنت ترتل في الدنيا، فإن منزلتك عند آخر آية تقرأ بها» (رواه الترمذي وأبو داود وابن ماجة وصححه الألباني).
‘‘আলকুরআনের সঙ্গীকে বলা হবে: কুরআন পাঠ করআর মর্যাদার উচ্চশিখরে আরোহণ কর। আর তেলাওয়াত করতে থাক। যেমন দুনিয়াতে তেলাওয়াত করছিলেকেননা তোমার মর্যাদা হলো কুরআনের শেষ আয়াত পর্যন্ত যা তুমি পাঠ করবে’’ [তিরমিযীআবু দাউদইবনে মাযাহ হাদীসটি বর্ণনা করেছেনআলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে আরো প্রমাণিত রয়েছে যেকতিপয় সূরা ও আয়াত জান্নাতে প্রবেশের মাধ্যম।
আবু উমামা থেকে বর্ণিত যেরাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
«من قرأ آية الكرسي في دبر كل صلاة مكتوبة لم يمنعه من دخول الجنة إلا أن يموت».
‘‘যে ব্যক্তি প্রতি ফরয সালাতের পর আয়াতুল কুরসী পাঠ করবেমৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে সে জান্নাতবাসী হবে’’ [নাসায়ীতাবারানীইবনে হিববান এটি বর্ণনা করেছেন ও আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন]
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিতরাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
«سورة من القرآن ما هي إلا ثلاثون آية خاصمت عن صاحبها حتى أدخلته الجنة وهي تبارك».
‘‘৩০ আয়াত বিশিষ্ট কুরআনের একটি সূরাএর পাঠকের জন্য জান্নাতে না নেয়া পর্যন্ত সুপারিশ করতেই থাকবে। সূরাটি হল তাবারাকা’’ (তথা সূরা মূলক)। [তাবারানী এটি বর্ণনা করেছেন এবং আলবানী বিশুদ্ধ বলেছেন]
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যেএক ব্যক্তি মাসজিদে কোবায় আনসার সাহাবীদের ইমামতি করতেন। তিনি প্রতি রাকাতেই قل هو الله أحد সূরাটি পাঠ করতেন। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে জিজ্ঞাসা করলেন: তুমি কোন কারণে প্রতি রাকাতে এ সূরাটি পাঠ করউত্তরে সে সাহাবী বললেনহে আল্লাহর রাসূল! আমি এ সূরাটি খুব পছন্দ করি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বললেনএ সূরাটি পছন্দ করার কারণেই তুমি জান্নাতে প্রবেশ করবে। [ইমাম বুখারী হাদীসটি সনদবিহীন বর্ণনা করেছেন। তিরমিযী ও আলবানী হাদীসটিকে উত্তম ও সহীহ বলেছেন]

৪. যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে ইলম অর্জন করেআল্লাহ তার জন্য জান্নাতের পথকে সহজ করে দেন।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিততিনি বলেনরাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
«من سلك طريقا يلتمس فيه علما سهل الله له به طريقا إلى الجنة» (مسلم).
‘‘যে ব্যক্তি ইলম হাসিলের উদ্দেশ্যে রাস্তায় বের হয়এর বিনিময়ে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের পথ সুগম করে দেন’’ [মুসলিম]

৫. আল্লাহ তালার যিক্‌র: আল্লাহর তাসবীহ (স্তুতি)তাহলীল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) এবং তাকবীরের ফযীলত সম্পর্কে আবদুল্লাহ ইবন মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছেতিনি বলেন যেআল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
«لقيتُ ليلة أسري بي إبراهيمَ، فقال يا محمد، أقرئ أمتك مني السلام وأخبرهم أن الجنة طيبة التربة، عذبة الماء، وأنها قيعان وأن غراسها سبحان الله والحمد لله ولا إله إلا الله والله أكبر».
‘‘মেরাজের রাতে ইবরাহীম আলাইহিস্ সালামের সাথে আমার সাক্ষাৎ হলে তিনি বললেনহে মুহাম্মাদ! তোমার উম্মাতকে আমার সালাম বলো এবং তাদেরকে এ সংবাদ দাও যেজান্নাতের মাটি সুন্দরপানি মিষ্টিআর জান্নাত সমতল এবং এর বৃক্ষরাজি সুবহানাল্লাহআলহামদুল্লিাহলা ইলাহা ইল্লাল্লাহআল্লাহু আকবার’’ [তিরমিযী এটি রেওয়ায়েত করেছেন এবং আলবানী তাকে উত্তম বলেছেন]

৬. জান্নাতে প্রবেশের উপায়সমূহের মধ্যে আরো একটি হল প্রতি সালাতের পর আল্লাহর যিক্‌র পাঠ: আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যেগরীব মুহাজিরগণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট এসে বললেন. ধনী ও বিত্তবান লোকেরা তো আল্লাহর নিকট সুউচ্চ মর্যাদা এবং নানাবিধ নেয়ামত লাভে ধন্য হয়ে গেল। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনকীভাবেতারা জবাব দিলেন যেআমরা যেমন সালাত আদায় করি তারাও সালাত আদায় করে। আমরা যেমন রোযা পালন করি তারাও রোযা পালন করে। কিন্তু তারা দান সদকা করে আমরা তা করতে পারি না। তারা গোলাম আযাদ করে আমরা তা করি না। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: আমি কি তোমাদেরকে এমন কিছু শিক্ষা দেবযার দ্বারা তোমরা তোমাদের অগ্রবর্তীদের সমকক্ষ হবেআর তোমাদের পরবর্তীদের চেয়ে অগ্রগামী হবেআর তোমাদের চেয়ে উত্তম কেউ হবে নাসে ব্যক্তি ছাড়া যে তোমাদের মতই এ কাজগুলো করবে। তারা বললেনহে আল্লাহর রাসূল! আমাদেরকে সে কাজ শিক্ষা দিন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনসালাতের পর ৩৩ বার সুবহানাল্লাহ৩৩ বার আল্লাহু আকবারআর ৩৩ বার আলহামদুলিল্লাহ পাঠ করবে’’ [মুসলিম]

৭. অনুরূপভাবে অযুর পর কালিমায়ে শাহাদাত পাঠও জান্নাতে যাওয়ার উপায়। উকবাহ ইবন আমের বলেন: আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনতোমাদের কেউ সুন্দর করে অযু করার পর যদি বলে:
«أشهد أن لا إله إلا الله وحده لا شريك له وأن محمدا عبده ورسوله».
তার জন্য জান্নাতের ৮টি দরজাই উন্মুক্ত করে দেয়া হবেসে যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা জান্নাতে প্রবেশ করবে। [মুসলিম]

৮. لا حول ولا قوة إلا بالله  এ দোআ হল জান্নাতের ভান্ডার: আবু মুসা থেকে বর্ণিততিনি বলেন: আল্লাহর রাসূল  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: আমি কি তোমাকে জান্নাতের ভান্ডার সমূহের একটি ভান্ডার সম্পর্কে অবহিত করবআমি বললাম: হ্যাঁহে আল্লাহর রাসূল! তিনি বলেনবলো:  لا حول ولا قوة إلا بالله অর্থ্যাৎ: ‘‘আল্লাহর আশ্রয় ও শক্তি ছাড়া আর কারো কোন ক্ষমতা নাই’’ [বুখারীমুসলিম]

৯. আল্লাহর নিকট জান্নাত চেয়ে দোআ করলে জান্নাত তখন আমীন আমীন বলে সমর্থন করে।
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনযে ব্যাক্তি ৩ বার আল্লাহর নিকট জান্নাত চায়জান্নাত তখন বলে: হে আল্লাহ্! ঐ ব্যাক্তিকে জান্নাতে প্রবেশ করাও। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি ৩ বার জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি চেয়ে দোআ করেজাহান্নাম বলে: হে আল্লাহ্ ঐ ব্যক্তিকে দোযখের আগুন থেকে মুক্তি দাও। [তিরমিযিনাসায়ীইবনু মাজাহ এটি বর্ণনা করেছেনআলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন]।

১০. আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাগফেরাত কামনার দোআকে সাইয়্যেদুল্ ইসস্তিগফার বা গুনাহ মাফ চাওয়ার প্রধান দোআ বলে অভিহিত করেছেন এবং জান্নাতে প্রবেশের কারণ বলে আখ্যায়িত করেছেন। সুতরাং প্রিয় পাঠক! দোআটি মুখস্থ করুন এবং সকাল সন্ধ্যা পাঠ করুন।
শাদ্দাদ ইবন আওস রাদিয়াল্লাহু আনহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ননা করেন তিনি বলেনইস্তেগফারের প্রধান দোআ হলো:
«اللهم أنت ربي لا إله إلا أنت خلقتني وأنا عبدك وأنا على عهدك ووعدك ما استطعت، أعوذ بك من شر ما صنعت، أبوء لك بنعمتك عليَّ وأبوء لك بذنبي فاغفر لي فإنه لا يغفر الذنوب إلا أنت».
‘‘হে আল্লাহ! তুমি আমার রব। তুমি ছাড়া আর কোন সত্য মাবুদ নাই। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছআমি তোমার বান্দা। আমি তোমার ওয়াদা ও অঙ্গিকারের উপর সাধ্যানুযায়ী প্রতিষ্ঠিত। আমি অনিষ্টকর যা কিছু করেছি তা থেকে তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমার উপর তোমার যে নেয়ামত আছে তার স্বীকৃতি দিচ্ছি। তোমার নিকট আমার গুনাহের স্বীকৃতি দিচ্ছি। সুতরাং তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাওকেননা তুমি ছাড়া আর কেউ গুনাহ ক্ষমা করতে পারে না’’
যে ব্যক্তি বিশ্বাসের সাথে দিনে এ দোআ পাঠ করেসন্ধ্যা হওয়ার পূর্বেই যদি তার মৃত্যু হয়তাহলে সে জান্নাতবাসী হবে। আর যে ব্যক্তি বিশ্বাসের সাথে রাতে পাঠ করে এবং সকাল হওয়ার পূর্বেই মারা যায়সে জান্নাতবাসী হয়’’ [বুখারী]

১১. সালাত হলো দ্বীনের খূঁটি। আল্লাহ আমাদের উপর দিন রাতে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছেন। আল্লাহর নিকট প্রিয় ইবাদাত হলো তাঁর ফরয কাজসমূহ। যে ব্যক্তি আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী ফরয কাজসমূহ আদায় করেসে জান্নাতে প্রবেশ করবে। ওবাদা ইবন সামেত রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিততিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনআল্লাহ বান্দাদের উপর পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করেছেন সুতরাং যে ব্যক্তি সালাতসমূহের হকে কোন প্রকার কমতি ও তাচ্ছিল্য না করে সঠিকভাবে সেগুলো আদায় করেতার জন্য আল্লাহর এ অঙ্গিকার যেতিনি তাকে জান্নাত দান করবেন। আর যে এগুলোর ব্যাপারে কমতি ও তাচ্ছিল্য করে তা আদায় করবেতার প্রতি আল্লাহর কোন অঙ্গিকার নেই। তিনি চাইলে তাকে শাস্তিও দিতে পারেনআবার ক্ষমাও করতে পারেন’’ [হাদীসটি মোয়াত্তায়ে মালিকমুসনাদে আহমাদসুনানে আবু দাউদনাসায়ী ও ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে। আর আলবানী একে সহীহ বলেছেন]।
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফজর ও আসরের দু ওয়াক্ত সালাতের পৃথক মর্যাদা দিয়ে এগুলোর নাম দিয়েছেন বারাদাইন অর্থাৎ দুটি শীতল ওয়াক্তের সালাত। আবু মূসা আশআরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিততিনি বলেনআল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
«من صلى البردين دخل الجنة»
অর্থাৎ ‘‘যে ব্যক্তি শীতল ওয়াক্তের দুই সালাত (ফজর -আসর) আদায় করবেসে জান্নাতে প্রবেশ করবে’’ [বুখারী ও মুসলিম]

১২. কতিপয় সুন্নাত ও নিয়মিত সালাত আছে যেগুলো দ্বারা ফরয সালাতগুলোর কমতি পূরণ করা হয় এবং এগুলোর পুরস্কার স্বরূপ আল্লাহ আপনার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করেন। সুতরাং সেগুলো আদায়ের ব্যাপারে যত্নবান হোনতাহলে আল্লাহ আপনাকে হেফাযত করবেন।
উম্মে হাবীবা রাদি আল্লাহ আনহা থেকে বর্ণিত যেতিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছেন: ‘‘যে মুসলিম ব্যক্তিই ফরযের অতিরিক্ত প্রতিদিন ১২ রাকাত সুন্নাত সালাত আল্লাহর জন্য আদায় করবেআল্লাহ তার জন্য জান্নাতের মধ্যে একটি ঘর নির্মাণ করবেন’’ [মুসলিম]
এ সুন্নাত সালাতগুলোর বর্ণনা এভাবে এসেছে: ‘‘যোহরের পূর্বে ৪ রাকাআতপরে ২ রাকাআতমাগরিবের পরে ২ রাকাআতইশার পর ২ রাকাআত এবং ফজরের পূর্বে ২ রাকাআত’’

১৩. কোন ব্যক্তি যখন অযু করেতখন তার জন্য ২ রাকাআত সালাত আদায় করা সুন্নাত। এ সালাত যখন সে নিষ্ঠার সাথে ও একাগ্রচিত্তে আল্লাহর উদ্দেশ্যে আদায় করেতখন তার জন্য জান্নাত অপরিহার্য হয়ে যায়।
উকবাহ ইবন আমের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যেরাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
«ما من أحد يتوضأ فيحسن الوضوء ويصلي ركعتين يقبل بقلبه ووجهه عليهما إلا وجبت له الجنة» (رواه مسلم).
‘‘ যে ব্যক্তিই সুন্দর করে অযু করে উপস্থিত মন নিয়ে ও একাগ্রচিত্তে দু রাকাআত সালাত আদায় করবে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যাবে’’ [মুসলিম]

১৪. দ্বীন ইসলামের উত্তম দিকগুলোর মধ্যে রয়েছে: সালামের প্রসার করাখাদ্য দান করা এবং আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা। আর সত্যবাদীদের গুণাবলীর মধ্যে রয়েছে তারা হল রাতের নফল সালাত আদায়কারী। তাদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,
﴿ كَانُواْ قَلِيلٗا مِّنَ ٱلَّيۡلِ مَا يَهۡجَعُونَ ١٧ وَبِٱلۡأَسۡحَارِ هُمۡ يَسۡتَغۡفِرُونَ ١٨ َ [الذاريات: 17-18]
‘‘তারা রাতের কম অংশই নিদ্রায় মগ্ন থাকে। আর শেষ রাতে তারা আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে’’ [সূরা আযযারিয়াত: ১৭-১৮]
যারা উপরোক্ত কাজগুলো করবেতারা জান্নাতে প্রবেশ করবে। আবদুল্লাহ ইবন সালাম থেকে বর্ণিততিনি বলেন: আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
«يا أيها الناس أفشوا السلام وأطعموا الطعام وصلوا الأرحام وصلوا بالليل والناس نيام تدخلوا الجنة بسلام».
‘‘ হে মানব সকল! সালামের প্রসার কর। খাদ্য দান কর। আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখ। লোকেরা ঘুমিয়ে গেলে রাতে নফল সালাত আদায় কর। তাহলে শান্তির সাথে জান্নাতে প্রবেশ করবে’’ [তিরমিযীইবনে মাজাহ ও আহমাদ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন]।

১৫. ফজরের সালাতসহ অন্যান্য সালাতের উদ্দেশ্যে মাসজিদে গমন করার কারণে আল্লাহ তালা আপনার জন্য জান্নাতে মেহমানদারীর ব্যবস্থা করবেন। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিতনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
«من غدا إلى المسجد أو راح أعد الله له في الجنة نزلا كلما غدا أو راح».
‘‘যে ব্যক্তি সকাল সন্ধ্যা মাসজিদে যায়তার জন্য আল্লাহ সকাল বিকাল যখনই সে গমন করে জান্নাতের মধ্যে মেহমানদারীর ব্যবস্থা করেন’’ [বুখারী ও মুসলিম]

১৬. সালাতের কাতারে মুসল্লীদের মাঝে যে ফাঁক দেখা যায় তা আপনি পূরণ করলে আপনার জন্য জান্নাতে একটি ঘর তৈরী করা হয়। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিততিনি বলেনআল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
«من سد فرجة في صف رفعه الله بها درجة وبنى له بيتًا في الجنة».
‘‘যে ব্যক্তি সালাতের কাতারের ফাঁকা জায়গা পূরণ করলোএর দরূন আল্লাহ তার মর্যাদা বাড়িয়ে দেবেন এবং তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ করবেন’’ [তাবারানী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং আলবানী একে সহীহ বলেছেন]

১৭. আপনি যদি মাসজিদ নির্মাণ করেন অথবা মাসজিদ নির্মাণে সহযোগিতা করেনতাহলে আল্লাহ আপনার জন্য জান্নাতের মধ্যে একটি ঘর নির্মাণ করবেন। উসমান ইবন আফফান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যেতিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছেন:
«من بنى مسجدا لله بنى الله له في الجنة مثله» (متفق عليه).
‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য মাসজিদ তৈরী করলোআল্লাহ তার জন্য জান্নাতে অনুরূপ ঘর তৈরী করবেন’’ [বুখারী ও মুসলিম]

১৮. দিনরাতে পাঁচবার মুয়াযযিনের আযানের জবাব দেয়া জান্নাতে প্রবেশের আরো একটি কারণ। উমার ইবন খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যেরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: ‘‘মুয়াযযিন যখন আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার (২বার) বলেতখন তার উত্তরে কেউ যদি অনুরূপ বলেঅতঃপর মুয়াযযিন (أشهد أن لا إله إلا الله) বললে সে তার মতো (أشهد أن لا إله إلا الله) বলে। মুয়াযযিন যখন (أشهد أن محمدا رسول الله) বলেসেও তাই বলে। তারপর (حي على الصلاة) বললে সে (لا حول ولا قوة إلا بالله) বলে এবং (حي على الفلاح) বললেও সে (لا حول ولا قوة إلا بالله) বলে। তারপর মুয়াযযিন আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার বললে সেও আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার বলে। এরপর মুয়াযযিন যখন বলে (لا إله إلا الله) তখন সেও (لا إله إلا الله) আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সাথে বললে জান্নাতে প্রবেশ করবে’’ [মুসলিম]

১৯. প্রিয় পাঠক! আপনি যদি আল্লাহর আদেশ পালন ও নিষেধের উপর প্রতিষ্ঠিত থেকে আল্লাহকে রবইসলামকে দ্বীন এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নবী হিসাবে মেনে নেনতাহলে আপনার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হবে। আবু সাইদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যেআল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: ‘‘ হে আবু সাইদ! যে ব্যক্তি আল্লাহকে রবইসলামকে দ্বীন এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নবী হিসাবে গ্রহণ করবেতার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হবে’’ [মুসলিম]

২০. রোযাদারদের জন্য জান্নাতে একটি দরজা আছে যার নাম রাইয়ানরোযাদার ছাড়া এ দরজা দিয়ে আর কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। সাহল ইবন সাদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যেনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: ‘‘জান্নাতের ভেতর রাইয়ান নামে একটি দরজা আছে। কিয়ামতের দিন এখান দিয়ে রোযাদারগণ ঢুকবে। তারা ছাড়া আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশাধিকার পাবে না। বলা হবে: কোথায় রোযাদারগণতখন তারা সেখান দিয়ে ঢুকবে। তারা ছাড়া সেখান দিয়ে আর কেউ ঢুকবে না। তারা প্রবেশ করার পর তা বন্ধ করে দেয়া হবে। তারপর আর কেউ ঢুকতে পারবে না’’ [বুখারী ও মুসলিম]

২১. ইসলামের পঞ্চম রুকন হল আল্লাহর ঘরের হজ্জ করা। এ হজ্জের প্রতিদান হলো জান্নাত। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যেরাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
«العمرة إلى العمرة كفارة لما بينهما، والحج المبرور ليس له جزاء إلا الجنة».
‘‘এক ওমরাহ থেকে আরেক ওমরাহ মধ্যবর্তী সকল গুনাহের জন্য কাফ্ফারা স্বরূপ। আর পূণ্যময় হজ্জের প্রতিদান জান্নাত ছাড়া আর কিছু নয়’’ [বুখারী ও মুসলিম]

২২. যার মাধ্যমে আল্লাহ তালা দ্বীন ইসলামকে বুলন্দ এবং সুউচ্চ করেছেন তা হলো আল্লাহর পথে জিহাদ। সুতরাং যে ব্যক্তি আল্লাহর বাণীকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে জিহাদ করেতার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আছে যেআল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: ‘‘আল্লাহ ঐ ব্যক্তিকে জান্নাতে প্রবেশ করানোর দায়িত্ব নিয়েছেন যে ব্যক্তি শুধুমাত্র আল্লাহর পথে জিহাদ করা এবং তাঁর কথাকে সত্য বলে প্রমাণিত করার উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বের হয়। অথবা তাকে জিহাদের সাওয়াব ও গণীমত লাভে ধন্য করে গাজী হিসাবে ঘরে ফিরিয়ে আনেন’’ [বুখারী ও মুসলিম]

২৩. আল্লাহ অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাঁর মুত্তাকী বান্দাদেরকে এ বলে আখ্যায়িত করেছেন যেতারা আল্লাহর পথে ব্যয় করে। হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেনরাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: ‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে দান খয়রাত করেএর দরূন তাকে জান্নাতে দেয়া হবে’’ [আহমাদ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন]

২৪. যে সকল মহান কাজ মানুষকে জান্নাতে প্রবেশ করায় তন্মধ্যে একটি হল: কোন ব্যক্তিকে অর্থ ঋণ দিয়ে তাকে তা স্বচ্ছলতার সাথে আদায় করার সুযোগ করে দেয়া। হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যেনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বর্ণনা করেছেন: ‘‘এক ব্যক্তি মৃত্যুমুখে পতিত হওয়ার পর জান্নাতে প্রবেশ করলো। তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো: তুমি কি আমল করেছউত্তরে লোকটি বললো: আমি মানুষের সাথে কেনাবেচা করতাম। বিপদগ্রস্ত দরিদ্রদেরকে ঋণ পরিশোধের সময় দিতাম এবং কিছু টাকা পয়সা মাফ করে দিতাম। ফলে আল্লাহ তাকেও মাফ করে দিয়েছেন’’ [মুসলিম]

যে সকল সহজ আমল জান্নাতে প্রবেশের কারণ ও উপায়তন্মধ্যে রয়েছে:
১. রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক কিছু সরিয়ে দেয়াজন্তু জানোয়ারের প্রতি করুণা করাউত্তম চরিত্রকথা ও কাজে সততাক্রোধ সংবরণ করা এবং রাগ না করারোগী দেখতে যাওয়া ও সেবা করামুসলিম ভাইদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ করাবেচাকেনার ক্ষেত্রে উদার হওয়া এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির মানদন্ডে কথা বলা।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিততিনি বলেন: আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি:
«لقد رأيت رجلا يتقلب في الجنة في شجرة قطعها من ظهر الطريق كانت تؤذي الناس».
‘‘আমি একজন লোককে জান্নাতে এপাশ ওপাশ করতে দেখেছি রাস্তার উপর থেকে একটি গাছ কেটে ফেলার কারণে যার দরূন মানুষের চলাফেরায় কষ্ট হতো’’ [মুসলিম]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যেনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বর্ণনা করেন:
«أن رجلا رأى كلبا يأكل الثرى من العطس، فأخذ الرجل خفه فجعل يغرف له به حتى أرواه، فشكر الله له فأدخله الجنة».
‘‘এক ব্যক্তি একটি কুকুরকে পিপাসায় মাটি চাটতে দেখে। অতঃপর লোকটি নিজের মোজার সাহায্যে কুকুরটিকে পানি পান করালো। ফলে আল্লাহ তাকে প্রতিদান দিলেন এবং জান্নাত দান করলেন’’ [বুখারী]
আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যেরাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: ‘‘আমি জান্নাতের আঙ্গিনায় এমন একটি ঘরের গ্যারান্টিদাতাযে ঘরটি ঐ ব্যক্তির জন্য হবেহকদার হওয়া সত্ত্বেও যে ঝগড়া করে না। অনুরূপভাবে আমি জান্নাতের মাঝে ঐ ঘরেরও গ্যারান্টিদাতাযে ঘরটি ঐ ব্যক্তির জন্যযে ঠাট্টা করেও মিথ্যা বলে না। তদুপরি জান্নাতের উপরিভাগের ঐ ঘরেরও আমি জামিনদারযে ঘরটি হবে উত্তম চরিত্রের অধিকারী ব্যক্তির জন্য’’ [আবু দাউদ এ হাদীস রেওয়ায়েত করেছেন এবং আলবানী একে সহীহ বলেছেন]
আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিততিনি বলেন: আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
«إن الصدق يهدي إلى البر وإن البر يهدي إلى الجنة، وإن الرجل ليصدق حتى يكون صديقا، وإن الكذب يهدي إلى الفجور، وإن الفجور يهدي إلى النار، وإن الرجل ليكذب حتى يكتب عند الله كذابا».
‘‘নিঃসন্দেহে সততা পূণ্যের দিকে পথ দেখায়। আর পূণ্য জান্নাতের দিশা দেয়। একজন ব্যক্তি সত্য বলতে বলতে সত্যবাদী হয়ে যায়। পক্ষান্তরে মিথ্যা কথা খারাপ ও গুনাহের দিকে ঠেলে দেয়। আর গুনাহ ও পাপ দোযখের দিকে নিয়ে যায়। একজন ব্যক্তি মিথ্যা বলতে থাকে। এভাবে সে আল্লাহর নিকট মিথ্যাবাদী বলে লিখিত হয়ে যায়’’ [বুখারী ও মুসলিম]
আবুদ দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যেএক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললেন:
«دُلَّنِي عَلَى عَمَلٍ يُدْخِلُنِي الْجَنَّةَ، قَالَ:"لا تَغْضَبْ، وَلَكَ الْجَنَّة»
‘‘আমাকে এমন একটি আমল শিক্ষা দিন যা আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেনক্রোধান্বিত হয়ো নাতাহলে জান্নাতে যাবে।’’ [তাবারানী এ হাদীস বর্ণনা করেছেন এবং আলবানী সহীহ বলেছেন]
সাওবান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিততিনি বলেনআল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
«مَنْ عَادَ مَرِيضًا لَمْ يَزَلْ فِى خُرْفَةِ الْجَنَّةِ حَتَّى يَرْجِعَ»
‘‘যে ব্যক্তি কোন রুগীকে দেখতে গেলসে ফিরে না আসা পর্যন্ত জান্নাতের ফল কুড়ানো অবস্থায় থাকে’’ [মুসলিম]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যেরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
«مَنْ عَادَ مَرِيضًا أَوْ زَارَ أَخًا فِي اللهِ ، نَادَى مُنَادٍ مِنَ السَّمَاءِ: طِبْتَ ، وَطَابَ مَمْشَاكَ ، وَتَبَوَّأْتَ مِنَ الْجَنَّةِ مَنْزِلاً»
‘‘যে ব্যক্তি কোন রুগীকে দেখতে গেল অথবা আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কোন ভাইকে দেখতে গেলতখন একজন আহবানকারী তাকে ডেকে বলে: তোমার ও তোমার চলার পথ কল্যাণময় হোকসুন্দর হোক। তুমি জান্নাতে তোমার বাসস্থান করে নিয়েছ’’ [ইবনে মাজাহতিরমিযী হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং আলবানী অন্যান্য হাদীসের সমর্থনে একে সহীহ বলেছেন]
উসমান ইবন আফফান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যেরাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
«أدخل الله عز و جل الجنة رجلا كان سهلا مشتريا وبائعا وقاضيا ومقتضيا»
‘‘আল্লাহ তালা এমন এক ব্যক্তিকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেনযে বেচাকেনায়বিচার ফয়সালা করায় এবং বিচার চাওয়ায় সরলতা অবলম্বন করেছে’’ [ইমাম আহমাদ ও নাসায়ী হাদীসটি রেওয়ায়েত করেছেন এবং আলবানী একে উত্তম বলেছেন। আর আহমাদ শাকির এর সনদকে সহীহ বলেছেন]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যেনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: ‘‘যে বান্দা আল্লাহর সন্তুষ্টির মানদন্ডে কথা বলেএ ব্যাপারে কোন ভ্রূক্ষেপ করে না। একথার দরূন আল্লাহ তার মান-মর্যাদা বৃদ্ধি করেন। অন্যদিকে যে ব্যক্তি আল্লাহর অসন্তুষ্টিমূলক কথা বলে অথচ এ ব্যাপারে ভ্রূক্ষেপও করে নাআল্লাহ তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করেন’’ [বুখারী]

২. জান্নাতের মধ্যে মুসলিম ব্যক্তির সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ও সুন্দর স্থান হলো যে ব্যক্তি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথী হবে। আর কন্যাদের সঠিক শিক্ষাদান ও লালন পালন করা এবং ইয়াতীমের দায়িত্ব গ্রহণ করা জান্নাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সান্নিধ্য পাওয়া ও তাঁর প্রতিবেশী হওয়ার সুনিশ্চিত কারণ।
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিতনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
«من عال جاريتين حتى تبلغا جاء يوم القيامة أنا وهو، وضم أصابعه».
‘‘ যে ব্যক্তি দু কন্যাকে সাবালিকা হওয়া পর্যন্ত লালন পালন করেকিয়ামতের দিন আমি ও সে একত্রে থাকব’’এই বলে তিনি তাঁর দু আঙ্গুলকে একত্র করে দেখালেন। [মুসলিম]
সহল ইবন সাদ থেকে বর্ণিত যেআল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
«أَنَا وَكَافِلُ الْيَتِيمِ فِي الْجَنَّةِ هَكَذَا وَأَشَارَ بِالسَّبَّابَةِ وَالْوُسْطَى وَفَرَّجَ بَيْنَهُمَا شَيْئًا»
‘‘আমি এবং ইয়াতিমের অভিভাবক জান্নাতে এভাবে থাকব’’ এ কথা বলে তিনি শাহাদাত ও মধ্যমা আঙ্গুল দু'টোকে একত্রে মিলিয়ে দু'টোর মাঝে একটু ফাঁক রাখলেন’’ [বুখারী]

৩. পিতামাতা উভয়ের প্রতি অথবা যে কোন একজনের প্রতি সদ্ব্যবহার করাও জান্নাতে যাওয়ার উপায়। আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিততিনি বলেনআমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি:
«رَغِمَ أَنْفُ ثُمَّ رَغِمَ أَنْفُ ثُمَّ رَغِمَ أَنْفُ . قِيلَ مَنْ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ  مَنْ أَدْرَكَ أَبَوَيْهِ عِنْدَ الْكِبَرِ أَحَدَهُمَا أَوْ كِلَيْهِمَا فَلَمْ يَدْخُلِ الْجَنَّةَ»
‘‘ঐ ব্যক্তির নাক ধুলো মলিন হোক (৩ বার) অর্থাৎ সে ধ্বংস হোক। প্রশ্ন করা হলো: হে আললাহর রাসূল! কোন ব্যক্তিরতিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জবাব দিলেন: ‘‘যে ব্যক্তি পিতামাতাকে অথবা তাদের যে কোন একজনকে বৃদ্ধ অবস্থায় পেলতারপরও জান্নাতে যেতে পারলো না’’ [মুসলিম]
আবুদ দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিততিনি বলেন: আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি: ‘‘পিতা হলো জান্নাতের মাঝের দরজা। তুমি চাইলে এ দরজার হেফাযত করতে পার অথবা হারাতে পার’’ [তিরমিযীইবনে মাজাহ ও আহমাদ এটি বর্ণনা করেছেন এবং আলবানী একে সহীহ বলেছেন]
জনৈক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট এসে যুদ্ধে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলো। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে তার মা আছে কিনা জিজ্ঞাসা করলো। লোকটি বললো: জীআমার মা আছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘‘তুমি সার্বক্ষণিক তার দেখাশুনা করকেননা তার পায়ের নিকটেই জান্নাত রয়েছে’’ [আহমাদনাসায়ী ও ইবনে মাজাহ এ হাদীস রেওয়ায়েত করেছেন এবং আলবানী একে উত্তম ও সহীহ বলেছেন]

৪. মানুষের সবচেয়ে বড় কাজ হল তার জিহবা ও লজ্জাস্থানের হেফাযত করা। সুতরাং যে ব্যক্তি এ দু'টো হেফাযতের দায়িত্ব নিবেনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার জান্নাতের ব্যাপারে দায়িত্ব নিবেন। সহল ইবন সাদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যেআল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
«من يضمن لي ما بين لحييه وما بين رجليه أضمن له الجنة».
‘‘যে ব্যক্তি তার দুই চোয়ালের মাঝের বস্তু (জিহবা) এবং দু পায়ের মধ্যখানের (লজ্জাস্থান) হেফাযতের গ্যারান্টি দিবেআমি তার জান্নাতের ব্যাপারে গ্যারান্টি দেব’’ [বুখারী]

৫. মানুষ পৃথিবীতে আল্লাহর পক্ষ থেকে সাক্ষীস্বরূপ। সুতরাং মানুষ যার পক্ষে ভাল সাক্ষ্য দেয়সে জান্নাতে প্রবেশ করে।
আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিততিনি বলেন: একদা একটি লাশের পাশ দিয়ে অতিক্রম করার সময় তার ভাল প্রশংসা করা হল। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: ‘‘ওয়াজিব হলোওয়াজিব হলোওয়াজিব হলো’’ অনুরূপভাবে আরো একটি লাশের পাশ দিয়ে অতিক্রম করা হল। এটি সম্পর্কে খারাপ বর্ণনা করা হলো। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তখন বললেন, ‘‘ওয়াজিব হলো’’ (৩ বার)। এরপর উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এর কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তরে বললেন: ‘‘তোমরা যার ভাল প্রশংসা করতার জন্য জান্নাত অপরিহার্য হয়ে যায়। আর তোমরা যার খারাপ বর্ণনা করতার জন্য জাহান্নাম অপরিহার্য হয়ে যায়। তোমরা পৃথিবীতে আল্লাহর সাক্ষী’’ (৩ বার বললেন)। [বুখারী ও মুসলিম]

৬. আল্লাহ তালা এরশাদ করেন:
﴿إِنَّمَا يُوَفَّى ٱلصَّٰبِرُونَ أَجۡرَهُم بِغَيۡرِ حِسَابٖ ١٠ [الزمر:10]
‘‘নিশ্চয় সবরকারীগণকে বেহিসাবী প্রতিদান দেয়া হয়’’ [সূরা আযযুমার: ১০]
তাই সবর হলো আল্লাহর প্রতি বান্দার ঈমান এবং তাঁর নৈকট্যের আলামতসমূহের একটি আলামত। সুতরাং যে ব্যক্তি তার প্রিয়জন যথা: সন্তানভাই-বেরাদার ইত্যাদির মৃত্যুতে ধৈর্য্য ধারণ করেসে জান্নাতী।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যেআল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
«يَقُولُ اللَّهُ تَعَالَى مَا لِعَبْدِي الْمُؤْمِنِ عِنْدِي جَزَاءٌ إِذَا قَبَضْتُ صَفِيَّهُ مِنْ أَهْلِ الدُّنْيَا ثُمَّ احْتَسَبَهُ إِلاَّ الْجَنَّة»
‘‘আল্লাহ তালা বলেনআমার মুমিন বান্দার নিকট থেকে যখন তার অতি প্রিয়জনের জান কবয করা হয়আর সে আল্লাহর নিকট সাওয়াবের আশা করে ধৈর্য্যধারণ করেতার প্রতিদান আমার নিকট জান্নাত ছাড়া আর কিছু নয়’’ [বুখারী]
 আবু মূসা আশআরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যেরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘‘যখন কোন বান্দার সন্তান মারা যায়তখন আল্লাহ তাঁর  ফেরেস্তাদের জিজ্ঞাসা করেন: তোমরা কি আমার বান্দার সন্তানের জান কবজ করেছোতারা বলেনহ্যাঁ। আল্লাহ বলেনতোমরা কি তার কলিজার টুকরার জান কবজ করেছোতারা বলেনহ্যাঁ। আল্লাহ আবার বলেনআমার বান্দা কি বললোফেরেস্তারা জবাব দেনসে আল্লাহর প্রশংসা করেছে এবং বলেছে: (إنا لله وإنا إليه راجعون) নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহরই জন্য এবং আল্লাহর দিকেই আমাদের প্রত্যাবর্তন করতে হবে আল্লাহ তখন বলেন: তোমরা আমার বান্দার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণ কর এবং এ ঘরটির নাম দাও বায়তুল হামদ বা প্রশংসার ঘর’’ [তিরমিযী এ হাদীস বর্ণনা করেছেন এবং আলবানী উত্তম বলেছেন]

৭. যে ব্যক্তি অন্ধ হয়েও ধৈর্য্যধারণ করে সে জান্নাতে যাবে। আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিততিনি বলেন: আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি: ‘‘আল্লাহ তালা বলেন, আমার বান্দাকে তার দুটি প্রিয় বস্তু (অর্থাৎ চোখ) কেড়ে নিয়ে পরীক্ষা করি। অতঃপর সে ধৈর্য্যধারণ করে। আমি এ দু'টোর পরিবর্তে তাকে জান্নাত দান করি’’ [বুখারী]

৮. যে মুসলিম নারী সৎ কাজে তার স্বামীর আনুগত্য করে এবং আল্লাহর হুকুম আহকাম পালন করেসে জান্নাতের যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশ করবে।
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যেআল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: ‘‘যদি কোন মহিলা পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করেরমযানের রোযা পালন করেলজ্জাস্থানের হেফাযত করে এবং স্বামীর আনুগত্য করেসে জান্নাতের যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা প্রবেশ করবে’’ [ইবনু হিববান এটি বর্ণনা করেছেন এবং আলবানী একে সহীহ বলেছেন]

৯. মুসলিম মহিলা প্রসবের সময় মারা গেলে তার সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার সাথে সাথে তার প্রসব বেদনা তাকে জান্নাতের দিকে নিয়ে যায়।
রাশেদ ইবন হুবাইশ থেকে বর্ণিত যেরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: ‘‘আল্লাহর পথে নিহত ব্যক্তি শহীদপ্লেগরোগে মারা যাওয়া ব্যক্তি শহীদডুবে মরে যাওয়া ব্যক্তি শহীদপেটের পীড়ায় মারা যাওয়া ব্যক্তি শহীদআগুনে পুড়ে মারা যাওয়া ব্যক্তি শহীদঅসুস্থ অবস্থায় মৃত ব্যক্তি শহীদ এবং সন্তান প্রসবের পর নেফাস অবস্থায় মৃত মহিলাতার সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার কারণে সে জান্নাতে চলে যায়’’ [আহমাদ হাদীসটি বর্ননা করেছেনআলবানী একে উত্তম বলেছেন]

১০. যে ভিক্ষাবৃত্তি থেকে বিরত থাকলো আল্লাহর রাসূল তাকে জান্নাতে নেয়ার জামিন হলো। সাওবান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিততিনি বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
«من تكفل لي أن لا يسأل الناس شيئا أتكفل له بالجنة».
‘‘যে ব্যক্তি মানুষের নিকট হাত না পাতার দায়িত্ব নিবেআমি তাকে জান্নাতে নেয়ার দায়িত্ব নেব’’ [আহমাদনাসায়ীইবনে মাজাহ ও আবু দাউদ হাদীসটি রেওয়ায়েত করেছেন এবং আলবানী একে সহীহ বলেছেন]

১১. যে ব্যক্তি নিজের সম্পত্তি রক্ষা করতে গিয়ে নিহত হয়সেও জান্নাতী। আবদুল্লাহ ইবন আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যেআল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
«من قتل دون ماله مظلوما فله الجنة».
‘‘যে ব্যক্তি সম্পদ রক্ষার নিমিত্তে নিপীড়িত হয়ে মারা যায়তার জন্য রয়েছে জান্নাত’’ [নাসায়ী এটি বর্ণনা করেছেন এবং আলবানী সহীহ বলেছেন]
১২. প্রিয় পাঠক! আপনার জন্য রয়েছে জান্নাতযদি আপনি সালাম প্রচার করেনঅন্যকে খাদ্য দান করেনআত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখেন এবং রাতের বেলা মানুষ ঘুমিয়ে গেলে সালাত আদায় করেন।
আবদুল্লাহ ইবন সালাম থেকে বর্ণিত যেরাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: ‘‘হে মানব সকল! তোমরা সালামের প্রসার করখাদ্য প্রদান করআত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখ এবং মানুষ ঘুমিয়ে গেলে রাতের সালাত আদায় কর। তাহলে নিরাপদে জান্নাতে যেতে পারবে’’ [তিরমিযীইবনে মাজাহআহমাদ ও হাকেম হাদীসটি রেওয়ায়েত করেছেন এবং আলবানী সহীহ বলেছেন]
শুরাইহ ইবন হানী তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন যেতিনি বলেছেন: ‘‘হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে এমন বিষয়ে অবহিত করুন যা আমার জান্নাতে যাওয়াকে নিশ্চিত করবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উত্তরে বললেন:তুমি সর্বদা উত্তম কথা বলবে এবং খাদ্য দান করবে’’ [বুখারী আদাবুল মুফরাদে এবং হাকেম হাদীসটি বর্ণনা  করেছেন এবং আলবানী সহীহ বলেছেন]

১৩. যে ব্যক্তি অহংকারঋণ ও যুদ্ধে লব্ধ গণীমতের মালের খেয়ানত থেকে মুক্ত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবেসে জান্নাতে যাবে। সাওবান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিততিনি বলেন: আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি অহংকারগণীমতের সম্পদে খেয়ানত করা এবং ঋণ থেকে মুক্ত অবস্থায় মারা গেলসে জান্নাতে প্রবেশ করলো’’ [তিরমিযীনাসায়ী ও ইবনে মাজাহ এটি রেওয়ায়েত করেছেন এবং আলবানী সহীহ বলেছেন]

১৪. আল্লাহর কিতাব ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাতকে অবলম্বন করে যারা মুসলিম জামায়াতকে মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরে থাকবেতারা জান্নাতের মধ্যবর্তী স্থানে প্রবেশ করবে। উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যেআল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: ‘‘তোমাদের জন্য ইসলামী জামায়াতকে আঁকড়ে ধরা অপরিহার্য। আর বিচ্ছিন্ন হওয়া থেকে বেঁচে থাক। কেননা একা একা থাকলে শয়তান তার সঙ্গী হয়। আর জামায়াতবদ্ধ দু ব্যক্তি থেকে শয়তান অনেক দূরে অবস্থান করে। যে ব্যক্তি জান্নাতের মধ্যবর্তী স্থান পাওয়ার আশা করেসে যেন অবশ্যই ইসলামী জামায়াতকে আঁকড়ে ধরে’’ [তিরমিযী এ হাদীস বর্ণনা করেছেন এবং আলবানী সহীহ বলেছেন]

১৫. ন্যায়পরায়ণ শাসককোমল হৃদয়ের অধিকারী দয়ালু ব্যক্তি এবং চরিত্রবান ও সুরুচিপূর্ণ পরিবার প্রধান জান্নাতবাসীদের অন্তর্গত। ইয়ায ইবন হিমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যেআল্লাহর রাসূল সাল্লাল্ল­াহু আলাইহি ওয়া সাল্ল­াম বলেছেন: ‘‘তিনশ্রেণীর লোকেরা জান্নাতবাসী হবে। এক: ন্যায়পরায়ণদাতা ও আল্লাহর তাওফীকপ্রাপ্ত শাসকদুই: দয়ালু ব্যক্তি যার অন্তর প্রতিটি আত্মীয় ও মুসলিমের জন্য কোমলএবং তিন: সুরুচিপূর্ণ চরিত্রবান পরিবার প্রধান’’ [মুসলিম]

১৬. যে বিচারক ন্যায় ও ইনসাফের সাথে মানুষের বিচার ফয়সালা করেসে জান্নাতী। বুরাইদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু নবী সাল্লাল্ল­াহু আলাইহি ওয়া সাল্ল­াম থেকে বর্ণনা করেন যেতিনি বলেন: ‘‘বিচারকগণ তিন প্রকার। দুই শ্রেণীর বিচারক হবে জাহান্নামী আর এক শ্রেণীর বিচারক হবে জান্নাতী। যে ব্যক্তি সত্য জেনে সে অনুযায়ী ফয়সালা করলোসে জান্নাতী। অন্য দিকে যে ব্যক্তি না জেনে মূর্খতাবশতঃ ফয়সালা দেয়সে জাহান্নামী। আর যে ব্যক্তি সত্য জানার পরও যুল্ম করলোসে জাহান্নামী’’ [আবু দাউদতিরমিযী,নাসায়ীইবনে মাজাহ ও হাকেম হাদীসটি রেওয়ায়েত করেছেন এবং আলবানী সহীহ বলেছেন]

১৭. সত্তর হাজার লোক বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করবেতারা হল যারা কারো নিকট ঝাড়ফুঁক চায়নিপাখি দ্বারা ভাগ্য নির্ণয় করেনি এবং কারো নিকট বিশেষ চিকিৎসা চায়নি।
ইমরান ইবন হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যেআল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: ‘‘আমার উম্মাতের মধ্যে ৭০ হাজার হিসাব ছাড়াই জান্নাতে প্রবেশ করবে। সাহাবাগণ জিজ্ঞাসা করলেনহে আল্লাহর রাসূল! তারা কারানবী সাল্ল­াল্ল­­াহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: তারা হলো যারা কারো নিকট ঝাড়ফুঁক চায়নাপাখির সাহায্যে ভাগ্য নির্ধারণ করে নাকারো নিকট বিশেষ চিকিৎসার জন্য যায় না। বস্তুতঃ তারা তাদের প্রতিপালকের উপর ভরসা করে’’ [বোখারী ও মুসলিম]
লক্ষ্যণীয় যেশরীয়তসম্মত ঝাড়ফুঁক এবং বিশেষ চিকিৎসা করা শরীয়তে নিষিদ্ধ নয়। কিন্তু আল্লাহর উপর পরিপূর্ণ ভরসা করা উত্তম।

১৮. কতগুলো গুণ ও বৈশিষ্ট্য কোন মুসলিম ব্যক্তির মধ্যে অর্জিত হলে এগুলোর কারণে সে জান্নাতবাসীদের অন্তর্ভূক্ত হবে।
উবাদাহ ইবন সামিত রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যেনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: ‘‘তোমরা তোমাদের নিজেদের মধ্যে ৬টি গুণ অর্জনের জামিন হওআমি তোমাদের জন্য জান্নাতের জামিন হবো। এক: কথা বলার সময় সত্য বলবেদুই: ওয়াদা করে তা পূরণ করবেতিন: তোমাদের নিকট আমানাত রাখা হলে সে আমানাত আদায় করবেচার: লজ্জাস্থানের হেফাযত করবেপাঁচ: দৃষ্টিকে সংযত রাখবেছয়: তোমদের হাতকে অন্যায় করা থেকে বিরত রাখবে’’ [আহমাদইবনু হিববান ও হাকিম হাদীসটি বর্ণনা করেছেন এবং আলবানী সহীহ বলেছেন]
আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিততিনি বলেন: আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: ‘‘তোমাদের মধ্যে আজ কে রোযা রেখেছোআবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেনআমি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: তোমাদের মধ্যে আজ কে জানাযার অনুসরণ করেছোআবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেনআমি। নবী সাল্লাল্ল­­াহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: তোমাদের কে আজ মিসকীনকে খাদ্য দান করেছোআবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেনআমি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পুনরায় বললেন: তোমাদের মধ্যে কে আজ রুগীর সেবা করেছোআবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেনআমি। অতঃপর রাসূল সাল্ল­ল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লা­ম বললেন: উপরোক্ত গুণাবলী যে ব্যক্তির মধ্যে একত্রিত হবে সে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে’’ [বুখারী ও মুসলিম]
প্রিয় পাঠক! পরিশেষে আপনাকে তাওবার কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। বস্তুতঃ গুনাহ থেকে তাওবাকারী নিষ্পাপযার কোন গুনাহ নেই। আল্লাহর নিকট খাঁটি তাওবাকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে। মহান আল্লাহ তালা বলেন:
﴿ يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ تُوبُوٓاْ إِلَى ٱللَّهِ تَوۡبَةٗ نَّصُوحًا عَسَىٰ رَبُّكُمۡ أَن يُكَفِّرَ عَنكُمۡ سَئَِّاتِكُمۡ وَيُدۡخِلَكُمۡ جَنَّٰتٖ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُ  [التحريم:8 ]
‘‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহর নিকট নিষ্ঠাপূর্ণ খাঁটি তাওবা কর। আশা করা যায় তোমাদের প্রতিপালক তোমদের সকল ত্রুটি বিচ্যুতি মিটিয়ে দেবেন এবং তোমাদেরকে এমন জান্নাতে প্রবেশ করাবেন যার তলদেশ দিয়ে নদী প্রবাহিত’’ [সূরা আত তাহরীম: ৮]

শেষকথা
পরিশেষে প্রিয় পাঠক! আপনি আপনার নিজের ভেতরে ঈমানে পরিপূর্ণ একটি মন আর আল্লাহর সন্তুষ্টি ও জান্নাতের আকাংখায় ভরপুর একটি আত্মার অধিকারী। আপনার সুখ ও আনন্দ হলো - নেয়ামতপূর্ণ জান্নাতে আপনি নবীসত্যবাদী শহীদ এবং সৎকর্মশীল ব্যক্তিগণের সঙ্গী হতে চানযাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন।
বস্তুতঃ জান্নাত প্রস্তুত ও নিকটবর্তী। দয়ালু ও করুণাময় আল্লাহই এর দিকে আহবান করছেন। আপনার প্রিয় নবী মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জান্নাতের দরজায় দাঁড়িয়ে আপনাকে ডাকছেন - হে মুমিন! আসজান্নাতবাসী হও
অতএব জান্নাত আপনার জন্য দুনিয়ার জীবনেমৃত্যুর সময় এবং হিসাব-নিকাশের সময় আল্লাহর পক্ষ থেকে সুসংবাদ। মহান আল্লাহ আপনাকে জান্নাতের ফল এবং এর অসংখ্য নেয়ামত দ্রুত অর্জনের জন্য আদেশ করছেন। আর আল্লাহ ওয়াদা ভঙ্গ করেন না।
মহান প্রতিপালক জান্নাতের অতি সুন্দর ও উত্তম বর্ণনা দিয়েছেন এবং একে মানুষের কল্পনাতীত বস্তু দিয়ে সুসজ্জিত করেছেন। যাতে আপনি সেখানে চিরস্থায়ী সুখ ও ভোগের  সাথে জীবন যাপন করতে পারেন।
সুতরাং আপনি জান্নাতে প্রবেশের জন্য অগ্রসর হোন। আপনার প্রতি আল্লাহ তালার ভালবাসা ও খুশীর বহিঃপ্রকাশ এটাই। এসব কিছুই প্রতিফলিত হবে স্বল্প আমল করার মাধ্যমেযে আমল করার জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসূল আপনাকে নির্দেশ দিয়েছেন। এ আমলগুলো করার পর আল্লাহর রহমত ও মাগফিরাত আপনার জন্য প্রশস্ত হবে। সুতরাং আসুন এবং এ দিকে অগ্রসর হোন। মহান আল্লাহর ঘোষণা:
﴿وَسَارِعُوٓاْ إِلَىٰ مَغۡفِرَةٖ مِّن رَّبِّكُمۡ وَجَنَّةٍ عَرۡضُهَا ٱلسَّمَٰوَٰتُ وَٱلۡأَرۡضُ أُعِدَّتۡ لِلۡمُتَّقِينَ ١٣٣   [آل عمران :133]
‘‘তোমার রবের মাগফিরাত এবং ঐ জান্নাতের দিকে ধাবিত হও যার  প্রশস্ততা আসমানসমূহ ও যমীনের সমানযা মুত্তাকীদের জন্য তৈরী করা হয়েছে’’ [সূরা আল ইমরান: ১৩৩]
বন্ধুগণ! মুত্তাকীরাই হলো আল্লাহর অলী ও বন্ধু। তারাই দুনিয়া ও আখিরাতের সুসংবাদের হকদার। তাদের আমলই গ্রহণযোগ্য। তারাই জান্নাতে আল্লাহর নিকট অধিক মর্যাদাসম্পন্ন।
আর মুত্তাকীগণ এ তত্ত্বগুলো ভাল করেই জানে। কেননা তারা আল্লাহ তালার একত্ববাদে বিশ্বাসী। তাঁর সাথে কোন কিছুকে তারা শরীক করেনি। তারা আল্লাহ সুবহানাহু ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কথার উপর অন্য কারো কথাকে প্রধান্য দেয় না। তারা সকল আমলকে কুরআন কারীম ও সহীহ হাদীস থেকে গ্রহণ করে। আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বাদ দিয়ে তারা কোন অলীশায়খ কিংবা আলেম উলামার কথাকে গুরুত্ব দেয় না। অহী থেকে প্রাপ্ত কুরআন ও সুন্নাহই হলো সত্য - এটা গ্রহণ করাই তাদের স্বভাব। এছাড়া অন্য কিছুকে তারা মানে না।
মুত্তাকীগণ আল্লাহর মর্যাদার হকদার। কেননা তারা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নিষ্ঠার সাথে সকল কাজ সম্পন্ন করে। এর দ্বারা মানুষের কোন প্রশংসাস্তুতি ও কৃতজ্ঞতা পাওয়ার আশা তারা করে না। বরং আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পরকালীন মুক্তিই তাদের লক্ষ্য।
মুত্তাকীরাই জান্নাতী। কেননা তারা সরল সঠিক মনের অধিকারী। তাদের পাকস্থলীতে হালাল খাদ্য রয়েছে। তাছাড়াও তারা সর্বদা তাদের মাওলা ও মনিবের নিকট তাদের আমলগুলো কবুল হওয়ার জন্য কাতরভাবে দোআ করে।
মুত্তাকীগণই তাদের রবের জান্নাততাঁর সন্তুষ্টিসম্মান ও মর্যাদা লাভে ধন্য হবে। তাদেরকেই ফেরেস্তাগণ জান্নাতের দিকে দলে দলে নিয়ে যাবে। ফেরেস্তাগণ তাদেরকে স্বাগতম জানাবেসালাম বলবে। তাদের প্রতিপালক তাদের আনন্দ ও স্বচ্ছন্দের জন্য তাদের উদ্দেশ্যে সাক্ষাৎ দেবেন।
বন্ধুগণ! এ হলো জান্নাত। উপরোক্ত আমলগুলো হলো জান্নাতীদের আমল। সুতরাং উক্ত আমলগুলো করুন এবং জান্নাতের খোশখবরী গ্রহণ করুন। আর নিরাশ হবেন না। কেননা আল্লাহর রহমত নেককারদের অতি নিকটে।
ওয়াস্ সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু