পাঠক! বাংলা ভাষায় সুবৃহৎ বিশুদ্ধ ইসলামী সাইটে আপনাকে স্বাগতম। সহীহ কুরআন, সুন্নাহনির্ভর রেফারেন্স ও গবেষণাধর্মী প্রায় ২০০এর অধিক বিষয়ের অনন্য সমাহার। আমাদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ও অনুদান দিয়ে সাহায্য করতে পড়ুন এখানে

সোনালী যুগের শাসনব্যবস্থার বিস্ময়কয় কাহিনী ( ওমর রা. )

হযরত উমাইর রা.-কে খলীফা ওমর রা. হিমসের ওয়ালী (গভর্ণর) হিসেবে পাঠালেন। এক বছরের মধ্যে তাঁর কোনো খবর পেলেন না। অবশেষে তিনি কাতিবকে (সেক্রেটারি) বললেনতুমি তাঁকে লেখআমার এ-পত্র পৌঁছা এবং পাঠমাত্র মুসলমানদের নিকট থেকে খাজনাযাকাত যা কিছু আদায় করেছো তা নিয়ে মদীনায় চলে আসবে।
চিঠি হাতে পেলেন হযরত উমাইর ইবনে সাআদ রা.। হিমসের গভর্নর তৈরি হচ্ছেন অর্ধজাহানের খলীফার দরবারে হাজিরি দেবার উদ্দেশ্যে। দীর্ঘপথ চলতে হবে। রাহ খরচ চাই। তাই প্রয়োজনীয় কিছু পাথেয় একটি পুটলিতে বেঁধে কাঁধে নিলেন। হাতে একটি ছড়ি তুলে নিলেন। এরপর পাড়ি জমালেন মদীনার পথে। কিভাবে আর যাবেন। ঘোড়া কিংবা দামি সাওয়ারী তো আর নেই। তাই পদব্রজেই রওনা হলেন।
বিশাল মরুভূমির পথ পার হয়ে এসে পৌঁছলেন মদীনার নবীজির শহরে। গায়ে ধুলো বালি লেগে আছে। ধূসরিত মুখ। মলিন বালিপড়া পরিধেয়। উস্কো খুস্কো চুল। বিবর্ণ দেহ। হিমসের ক্ষমতাসীন গভর্নরের এ অবস্থা দেখে তাজ্জব বোধ করলেন হযরত উমর রা.। চোখ একদম কপালে। জিজ্ঞেস করলেনতোমার এ অবস্থার উমাইর! হযরত উমাইর ইবনে সাআদ রা. জবাব দিলেন খলীফার প্রশ্নের। এক কঠিন জবাব। তিনি বললেনআমীরুল মুমিনীনআমি তো খুব সুস্থ আছি। তবে আমার সাথে একটি বিশাল দুনিয়া আছে। যে-দুনিয়াটাকে আমি বহন করে চলছি।
তাজ্জব বেড়ে গেল হযরত উমরের। তাই আবার জিজ্ঞেস করলেনউমাইরতোমার সাথে এমন কি আছে বলতো! হযরত উমাইর রা. আরজ করলেন আমীরুল মুমিনীন! এটা আমার বেগ। এর মধ্যে আমার পথ চলার পাথেয় সামান্য সামান-পত্তর আছে। এতে আরো আছে একটি পেয়ালা। ওতেই আমি খানা খাইপানি পান করিমাথা ধৌত করিকাপড় কাচি। একটি পানির মশকও আছে এর ভেতর। ওযু ও পান করার পানি রাখি এর ভেতরে। সাথে একটি লাঠিও আছে। ওতে ভর করে চলিপ্রয়োজনে শত্রুর মোকাবেলা করি। তবে যাই হোকএইগুলোকেই তো দুনিয়া বলে। আর এই অভিশপ্ত দুনিয়াকেই বহন করে চলছি আমি।
হযরত উমর রা. জিজ্ঞেস করলেনতুমি কি পায়ে হেটে এসেছো?
জীহ্যাঁসবিনয়ে জবাব দিলেন হযরত উমাইর।
তোমাকে একটি সওয়ারী দেয়ার মতো লোকও কি ওখানে ছিল নাআবার জিজ্ঞেস করলেন হযরত উমর।
আমি কাউকে বলিনিতারাও ব্যবস্থা করেনি। জবাব দিলেন হযরত উমাইর ইবনে সাআদ রা.।
হযরত উমর রা. পুনরায় জিজ্ঞেস করলেনউমাইর! তুমি কি জানআমি তোমাকে কোথায় পাঠিয়েছিলাম এবং কেন পাঠিয়েছিলাম?হযরত উমাইর ইবনে সাআদ রা. জবাব দিলেনহ্যাঁ জানি। আপনি আমাকে যেখানে পাঠিয়েছিলেন আমি সেখানকার ভালো মানুষগুলোকে সমবেত করেছি। তাদেরকে তহসীল আদায়ের দায়িত্ব নিয়োজিত করেছি এবং যেসব অর্থ আমার কাছে জমা হয়েছেআমি সে অর্থ মুসলমানদের প্রয়োজনে খরচ করেছি। তিনি আরো বলেনযদি আপনি সে পয়সা খাওয়ার উপযুক্ত হতেনতাহলে সেখান থেকে কিছু অর্থ আপনার জন্যেও নিয়ে আসতাম।
সারল্যমণ্ডিত বক্তব্য! ভণিতা নেই। সত্য প্রকাশে এইটুকু দ্বন্ধ নেই! জনগণের সম্পদ তাদের স্বার্থেই খরচ হবে। খলীফা চাইলেও রাষ্ট্রপ্রধানের শত ইচ্ছে থাকলেও তিনি সেই অর্থের উপযুক্ত নন। তিনি তা থেকে একটি কানাকড়িও যে পেতে পারেন না সে কথাই বললেনবিশাল রাজ্যের অধিপতিমহান খলীফা হযরত উমরের সামনে দাঁড়িয়ে।
শাসকের সততা প্রজার জীবনে সমৃদ্ধি ও সুখ বয়ে আনতে পারেএকথা হযরত উমর রা. ভালো করেই জানতেন। তিনি আরও জানতেনবিরাট ধনভাণ্ডারের রক্ষক হয়ে যাদের জীবনে এ ধনের ছোঁয়া লাগে নাঅজস্র সম্পদ নিজের হাতে বণ্টন করলেও যার সফরসঙ্গী হয় দুটুকরো কাপড়একটি পানির বাটিএকটি পানি রাখার চামড়ার মশক আর একটি কাঠের লাঠি। অধিকন্তু এই ক্ষুদ্র সম্পদে যিনি মনে করেন অভিশপ্ত দুনিয়াজনগণের শাসক হবার উপযুক্ত যে একমাত্র তিনিই! তাঁর হাতেই যে মানুষের জান মাল ইজ্জত-আবরুর হেফাজত হতে পারে! পৃথিবীর অসহায় বঞ্চিত মানবতা এদেরকে যে খুঁজে বেড়ায় সর্বত্র। তাই খলীফা হযরত উমর রা. তাকে তার দায়িত্বে নতুন মেয়াদের জন্য নবায়ন করতে নির্দেশ দেন।
কিন্তু হযরত উমাইর রা. খুবই বিনয়ের সাথে বললেনআমীরুল মুমিনীন! এটা তো এমন দিনযা গত হয়ে গেছে। এ দায়িত্ব আমি আপনার দিকে তাকিয়ে পালন করেছি। আপনি ছাড়া অন্য কারও জন্য নয়।
প্রিয় পাঠক! এ দৃশ্য কোনো বানোয়াট কল্পকাহিনী নয়! যে-বাক্যগুলো আমরা উপরে উল্লেখ করে এলাম। এমন কথোপকথনও নয়যাতে আমরা কোনো প্রকার অত্যুক্তি করেছি। বরং এটা হচ্ছে এক ঐতিহাসিক ঘটনা। যা ইতিহাসের পাতায় সোনার অক্ষরে চিরদিন অঙ্কিত থাকবে।
আল্লাহু আকবার! কেমন মনমনন আর মহত্বের অধিকারী ছিলেন তারা!

এরকম আরো লেখা পড়ুন-

একটি আবেদন


‘শান্তি ও মানবতার পথে’ শ্লোগানকে সামনে রেখে বাংলা ভাষায় একটি শক্তিশালী ও মানসম্মত অনলাইন রেডিও প্রতিষ্ঠা সালাম মিডিয়ার লক্ষ্য। এছাড়াও একটি স্টুডিও প্রতিষ্ঠা, গবেষণা, প্রচার, দাওয়াহ প্রভৃতি কাজের আঞ্জাম দেয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে সালাম মিডিয়া। যার জন্য শুধু প্রাথমিক অবস্থায় পাঁচ লক্ষাধিক টাকা প্রয়োজন। প্রথমত, আপনার দোয়া। দ্বিতীয়ত, আপনার সহযোগিতা আমাদের পথচলার পাথেয়। আপনি প্রবাসী হলে মাসে অন্তত দশ ডলার বা বাৎসরিক হিসেবে দশ হাজার করে নূন্যতম হারে হলেও আমাদের এই অগ্রযাত্রায় শরীক হতে পারেন। কিংবা একজন ব্যক্তিই সামর্থ অনুযায়ী আমাদের সহযোগিতা করতে পারেন। এরকম অন্তত পঞ্চাশজন ব্যক্তি এগিয়ে এলে আমাদের পথচলা অব্যাহত থাকবে ইনশাআল্লাহ। আমাদের সহযাত্রী হোন...

আমাদের রয়েছে পর্যাপ্ত দক্ষ জনবলশুধু নেই প্রয়োজনীয় অর্থবল। আপনার প্রতি এই আমাদের ছোট্ট আহ্বান। ০১৯২২৭৩০০০১ (তথ্য ও বিকাশ) বিস্তারিত পড়ুনঃ  আমাদের কথা
ছবিটি জুম করে দেখুন

No comments: