পাঠক! বাংলা ভাষায় সুবৃহৎ বিশুদ্ধ ইসলামী সাইটে আপনাকে স্বাগতম। সহীহ কুরআন, সুন্নাহনির্ভর রেফারেন্স ও গবেষণাধর্মী প্রায় ২০০এর অধিক বিষয়ের অনন্য সমাহার। আমাদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ও অনুদান দিয়ে সাহায্য করতে পড়ুন এখানে

আল্লাহর নিরানব্বইটি নামের অর্থ, ফজিলত ও তাৎপর্য

আমরা জানি ও বিশ্বাস করি আল্লাহ তাআলার অনেক সুন্দর সুন্দর নাম ও অনেক সুমহান সিফাত আছে। এ গুলোর সাহায্যে আমরা তাঁকে ডেকে থাকি।
وَلِلَّهِ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَى فَادْعُوهُ بِهَا وَذَرُوا الَّذِينَ يُلْحِدُونَ فِي أَسْمَائِهِ سَيُجْزَوْنَ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ (سورة الأعراف : 180)
`আর আল্লাহর জন্যই রয়েছে সুন্দরতম নামসমূহ। সুতরাং তোমরা তাঁকে সেসব নামেই ডাক। আর তাদেরকে বর্জন কর যার তাঁর নামে বিকৃতি ঘটায়। তারা যা করত অচিরেই তাদেরকে তার প্রতিফল দেয়া হবে। 

২। হাদীসের বাণী-
وعن أبى هريرة رضي الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال : إن لله تسعة وتسعين اسما مائة إلا واحدا من أحصاها دخل الجنة. متفق عليه  
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা. বর্ণনা করেন,। নিশ্চয় আল্লাহ তাআলার নিরানব্বই -এক কম একশত- নাম আছে। যে ব্যক্তি এগুলো সংরক্ষ করবে (অর্থাৎ এগুলো সম্পর্কে জানবে, বুঝবে, বিশ্বাস করবে এবং এর চাহিদানুযায়ী আমল করবে) সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।'' (বুখারী ও মুসলিম)


আসমাউল হুসনার বিবরণ

আল্লাহ তাআলার নামসমূহ তাঁর গুণাবলির উৎকর্ষতার প্রমাণ বহন করে। এগুলো সিফাত থেকে উৎকলিত। সুতরাং এগুলো একদিকে নাম আবার সিফাতও। আর এভাবেই হয়েছে সুন্দরতম। আল্লাহ তাআলার নাম ও গুণাবলি বিষয়ক জ্ঞানই সর্বাপেক্ষা মর্যাদাসম্পন্ন ও জরুরী জ্ঞান।
আল্লাহ তাআলার অনেক নাম, যার সঠিক সংখ্যা একমাত্র আল্লাহ তাআলাই জানেন। তার মধ্য হতে কুরআন ও হাদীসে বর্ণিত কিছু নাম আমরা এখানে উল্লেখ করার প্রয়াস পাব-

الله (আল্লাহ): আর তিনি হচ্ছেন মাবূদ-উপাস্য, সমস্ত মাখলুকাত যাকে মাবূদ হিসেবে গ্রহণ করেছে। সকলেই যাকে মহব্বত করে, সম্মান ও শ্রদ্ধা করে, অনুগত হয়, নিজেদের নানা প্রয়োজনে তাঁর শরণাপন্ন হয়।

الرحمن الرحيم (রহমান, রাহীম): যার রহমত ও অনুগ্রহ সবকিছুকে পরিবেষ্টন করে আছে। الملك (মালিক): যিনি কুলমাখলূকাতের মালিক- বাদশাহ। المالك (মালেক) যিনি রাজা-প্রজাসহ পূর্ণ রাজত্বের মালিক। المليك (মালীক) স্বীয় রাজত্বে নিজ নির্দেশ বাস্তবায়নকারী। তাঁর হাতেই রাজত্ব। যাকে ইচ্ছা¡ দান করেন। আবার যার থেকে ইচ্ছা ছিনিয়ে নেন।

القدوس (কুদ্দুস): দোষ-ত্রুটি থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত ও পবিত্র। পূর্ণতার গুণে গুণান্বিত।

الســلام (সালাম): যিনি সকল প্রকার দোষ-ত্রুটি ও বিপদাপদ থেকে সম্পূর্ণ নিরাপদ ও মুক্ত।

المؤمن (মুমিন): যিনি সৃষ্টিকুলের উপর অন্যায়-অবিচার করবেন না মর্মে সৃষ্টিকুল নিরাপত্তা বোধ করে। শান্তি ও নিরাপত্তা সৃষ্টি করেছেন এবং স্বীয় বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা এর মাধ্যমে অনুগ্রহ করেন।

المهيمن (মুহাইমিন/ তত্ত্বাবধায়ক): স্বীয় সৃষ্টিকুল কর্তৃক সংঘটিত সকল বিষয় প্রত্যক্ষকারী। কোন কিছুই তাঁর কাছে লুকায়িত থাকে না।

العزيز (আযীয/ প্রবল পরাক্রান্ত) এমন সত্ত্বা যে, সকল প্রভাব, শক্তি ও মর্যাদা তাঁরই। এমন পরাক্রমশালী যিনি কখনো পরাভূত হন না, এমন শক্তিশালী যে, সকল সৃষ্টি তাঁর অনুগত্য মেনে নিয়েছে।

الجبار (জাব্বার/ প্রতাপশালী): স্বীয় সৃষ্টির উপর প্রাধান্য বিস্তারকারী। নিজ ইচ্ছা বাস্তবায়নে তাদের পরাস্ত-পরাভূতকারী। মহা প্রতাপশালী, মর্যাদা ও বড়ত্বের অধিকারী, যিনি সর্বাবস্থায় নিজ বান্দাদের পর্যবেক্ষন করেন এবং তাদের অবস্থা ও অবস্থানকে সংশোধন ও উন্নত করেন।

المتكبر (মুতাকাব্বির/ পরম মহিমান্বিত): যিনি সৃষ্টির গুণাবলির উর্দ্ধে। মহান-কোন কিছুই তাঁর মত নয়। যিনি সকল প্রকার অন্যায়-অবিচার মুক্ত।

الكبير (কাবীর/ বড়ত্বের অধিকারী-মহান): যিনি ব্যতীত সকল কিছু ছোট। নভোমণ্ডল ও ভূ-মণ্ডলে বড়ত্ব ও মহিমা একমাত্র তারই। গর্ব-অহঙ্কার করা একমাত্র তাঁকেই মানায়।

الخالق (খালেক/ সৃষ্টিকর্তা): পূর্ব দৃষ্টান্ত ব্যতীত যিনি সকল সৃষ্টির সৃষ্টিকর্তা।

الخلاق  (খাল্লাক) যিনি সৃষ্টি করেছেন, এবং আপন ক্ষমতায় সবকিছু সৃষ্টি করেন।

البارئ (বারী/ উদ্ভাবক): যিনি সৃষ্টিকুল- সৃষ্টি করেছেন। নিজ ক্ষমতায় তাদের অস্তিত্বে এনেছেন। এক সৃষ্টি থেকে অপর সৃষ্টিকে স্বাতন্ত্র দিয়েছেন। এবং প্রত্যেককে অপর থেকে আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত করেছেন।

المصور (মুসাওবির/ রূপদাতা): যিনি নিজ সৃষ্টিকে ছোট-বড়, দীর্ঘ-খর্বসহ বিভিন্ন আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন।

الوهاب (ওয়াহ্হাব/ মহানদাতা): যিনি সার্বক্ষনিকভাবে বিভিন্ন নিয়ামত ও দান-দক্ষিনা চালিয়ে যান।

الرزاق (রায্যাক/ রিযিকদাতা): যার প্রদত্ত রিযিক কুল মাখলুকাতকে পরিবেষ্টন করে আছে।

الرازق (রাযিক/ জীবনোপকরণ ব্যবস্থাকারী): যিনি জীবনোপকরণ সৃষ্টি করেছেন এবং নিজ সৃষ্টি পর্যন্ত তা পৌঁছিয়ে থাকেন।

الغفور الغفار (গাফুর গাফ্ফার/ মহা ক্ষমাশীল): যিনি ক্ষমা, মার্জনা ও মাফ করায় প্রসিদ্ধ।

الغافر (গাফের/ পাপ গোপনকারী): নিজ বান্দার পাপারাজী গোপনকারী।

القاهر (কাহের/ পরাক্রমশালী): মহান, স্বীয় বান্দাদের উপর প্রবল-পরাক্রান্ত। সকল মাথা যার সামনে অবনত, সকল প্রভাবশালী যেখানে হীন-অপদস্থ।

القهار (কাহহার/ প্রবল পরাক্রান্ত): নিজ ইচ্ছার কাছে যিনি সকল মাখলূককে বশীভূত করে আছেন। তিনি পরাক্রান্ত আর তিনি ব্যতীত সবকিছু পরাভূত।

الفتاح (ফাত্তাহ/ কল্যাণের দ্বার উন্মুক্তকারী): যিনি স্বীয় বান্দাদের মাঝে হক ও ইনসাফপূর্ণ বিচার করেন। তাদের নিমিত্তে রহমত ও জীবনোপকরণের দ্বারসমূহ উন্মুক্ত করেন। মুমিন বান্দাদের সাহায্যকারী। গায়েব ও অদৃশ্যের (চাবি কাঠির) জ্ঞানের ক্ষেত্রে যিনি এক ও অদ্বিতীয়।

العليم (আলীম/ মহাজ্ঞানী-সর্বজ্ঞাত): যার নিকট কোন কিছুই অস্পষ্ট বা লুকায়িত নয়। যিনি গোপন, অস্পষ্ট, বাহির, ভিতর, কথা, কাজ, দৃশ্য-অদৃশ্য সবকিছু সম্পর্কে জ্ঞাত। গায়েব সম্পর্কে একমাত্র ও সর্বাধিক পরিজ্ঞাত।

المجيد (মাজিদ/ মহামহিম): স্বীয় কর্মে যিনি মহিমান্বিত হয়েছেন। তাঁর সৃষ্টিকুল তাঁকে তাঁর বড়ত্ব ও মর্যাদার কারণে মহিমান্বিত করেছে। সুতরাং তিনি আপন মর্যাদা, বড়ত্ব ও অনুগ্রহের কারণে প্রশংসিত।

الرب (রব/প্রতিপালক): একচ্ছত্র অধিপতি, কর্তৃত্বকারী, অভিভাবকদের প্রতিপালক, সৃষ্টিকুলের অধিপতি, যিনি নিজ সৃষ্টিকে প্রতিপালন করেন। দুনিয়া ও আখিরাতে তাদের যাবতীয় প্রয়োজন পূর্ণ করেন, তিনি ভিন্ন সত্যিকার উপাস্য নেই এবং তিনি ব্যতীত প্রকৃত অর্থে কোন প্রতিপালক নেই।

العظيم (আজীম/ মহামহিম-মর্যাদাশীল): স্বীয় রাজত্ব ও ক্ষমতায় বড়ত্ব ও মর্যাদার অধিকারী।

الواسع (ওয়াসে / সর্বব্যাপী): যার রহমত- অনুগ্রহ সবকিছুকে পরিবেষ্টন করে আছে, এবং তাঁর রিযিক সকল সৃষ্টিকুল পর্যন্ত পরিব্যাপ্ত। সীমাহীন দীর্ঘপরিধি বিশিষ্ট, বিস্তৃত রাজত্ব- কর্তৃত্ব ও মর্যাদার অধিকারী। ব্যাপক অনুগ্রহ-ইহসানের মালিক।

الكريم (কারীম/ দয়াময়- পরমদাতা): মহা মর্যাদার অধিকারী, অবিরাম- নিরবচ্ছিন্ন অধিক কল্যাণময়। যাবতীয় দোষ-ত্রুটি মুক্ত।

الأكرم (আল-আকরাম): যার দান ও অনুগ্রহ সকলকে শামিল করে আছে।

الودود (আল ওয়াদুদু/পরম স্নেহ পরায়ণ): যিনি ভালবাসেন যারা তাঁর আনুগত্য করে এবং তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তন করে। তাদের প্রশংসা করেন। তাদের ও অন্যদের প্রতি অনুগ্রহ করেন।

المقيت (আল্ মুক্বীত/ মহান খাদ্যদাতা): সকল বস্তু সংরক্ষণকারী, সকল বস্তু পর্যবেক্ষনকারী, সৃষ্টি কুলের খাদ্য-খোরাক দানকারী।

الشكور (শাকূর) যিনি নেক কাজ বহু গুনে বৃদ্ধি করে দেন, আর বদ কাজ মিটিয়ে দেন।

الشاكر (শাকের): যিনি সামান্য ইবাদতেই সন্তুষ্ট হয়ে যান। নেক কাজের পুরস্কার অনেক বড় করে দান করেন। বেশি বেশি নেয়ামত দান করেন এবং সামান্য শুকরগোযারিতেই খুশী হয়ে যান।

اللطيف (লতীফ/ সুক্ষ্ম দর্শী-দয়ালু): যার নিকট কোন কিছুই গোপন থাকে না। নিজ বান্দাদের প্রতি অধিক দানশীল-দয়ালু। এমনভাবে অনুগ্রহ করেন যে, তারা নিজেরাও জানে না। এমন সুক্ষ্ম, যাকে কোন চক্ষু নাগাল পায় না।

الحليم (হালীম/ মহা ধৈর্যশীল-অতি সহিষ্ণু): যিনি স্বীয় বান্দাদের গুনাহর কারণে খুব তাড়াহুড়া করে শাস্তি প্রয়োগ করেন না। বরং সুযোগ দান করেন যাতে তারা তাওবা করে সংশোধন হয়ে যেতে পারে।

الخبير (খাবীর/ মহাবিজ্ঞ, সর্বজ্ঞ): যার নিকট স্বীয় সৃষ্টিকুলের ছোট-বড়, দৃশ্য-অদৃশ্য, স্থীর-চলমান, সবাক-নির্বাক সবকিছুই পরিস্কার কোন কিছুই গোপন ও অস্পষ্ট নয়।

الحفيظ (হাফীয/ মহা সংরক্ষণকারী): যিনি আপন সৃষ্টিকৃত সবকিছুকে সংরক্ষণ করেন। যার জ্ঞান সবকিছুকে পরিবেষ্টন করে আছে।

الحافظ (হাফিয/ হিফাযত কারী) যিনি বান্দাদের আমল সংরক্ষণ করেন এবং নিজ ওলীদের পাপ-পঙ্কিলতায় পতিত হওয়া থেকে রক্ষা করেন।

الرقيب (রাক্বীব): মহা পর্যবেক্ষনকারী যিনি নিজ বান্দাদের সর্বাবস্থা পর্যবেক্ষন করেন।   এবং সংরক্ষণকারী, যা সংরক্ষণ করেন তা থেকে অদৃশ্য হন না।

السميع (সামী/ সর্বশ্রোতা): যিনি সব আওয়াজ শুনেন। যার শ্রবন সকল আওয়াজকে পরিবেষ্টন করে আছে। ভাষা, স্বর, আঙ্গিক, ধরণ ইত্যাদির বিভিন্নতা সত্ত্বেও তাঁর শ্রবনে হেরফের হয় না এবং বিরতও করা যায় না। তাঁর নিকট গোপন- প্রকাশ্য, দূর-নিকটবর্তী সবই বরাবর। নিকট থেকে যে রূপ শুনেন দূর থেকেও সেরূপই শুনে।

البصير (বাসীর/ সর্বদ্রষ্টা): যিনি সব কিছু দেখেন। বান্দার প্রয়োজন ও কর্ম, কে হেদায়াত পাওয়ার উপযুক্ত আর কে গোমরাহীর উপযুক্ত সব কিছু সম্পর্কে সম্যকজ্ঞাত। কোন কিছুই তার অগোচরে নয়। কোন কিছুই তাঁর দৃষ্টি ও ধারণার বাইরে যেতে পারে না।

العلي الأعلى المتعال (আল আলিয়ুল আলা আল মুতাআল/ সর্বোচ্চ, মহত্তম, মহিয়ান): উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন, মহত্তের অধিকারী। জল, স্থল, আকাশ-যমীন বরং সমগ্র পৃথিবীর যাবতীয় বস্তু তাঁর কর্তৃত্ব ও রাজত্বের অধীন। তিনি মহান, তাঁর চেয়ে বড় কেউ নেই। উচ্চতর, তাঁর উপরে কেউ নেই। অতিমর্যাদা সম্পন্ন, তাঁর চেয়ে মর্যাদাবান আর কেউ নেই।

الحكيم (হাকীম/ প্রজ্ঞাময়, মহাজ্ঞানী): যিনি প্রতিটি জিনিস প্রজ্ঞা ও ইনসাফের সাথে যথাস্থানে প্রয়োগ করেন। নিজ কর্ম-কথায় প্রজ্ঞাবান-বিচক্ষণ।

الحكم الحاكم (আল-হাকাম আল হাকিম/ শাসন কর্তা): ন্যায় ভিত্তিক শাসন কর্তা- যার নিকট ন্যায় পরায়ণতা নিরাপদ। সুতরাং তিনি অন্যায়- অবিচার করেন না। কারো প্রতি যুলুম করেন না।

القيــوم (আল কায়ূম/ অবিনশ্বর সত্তা): স্বয়ংসম্পূর্ণ, কারো মুখাপেক্ষী নন। অপরকে প্রতিষ্ঠা ও অস্তিত্বে আনয়নকারী, সকল সৃষ্টিকুলের পরিচালনা, পর্যবেক্ষন ও ব্যবস্থাপনায় অবিরত। তাঁকে নিদ্রা ও তন্দ্রা আচ্ছন্ন স্পর্শ করতে পারে না।

الواحد الأحد (আল ওয়াহেদ আল আহাদ/ একক সত্ত্বা): যিনি সার্বিক উৎকর্ষ ও পরিপূর্ণতায় এক ও অদ্বিতীয়, এতে তাঁর কোন শরীক নেই।

الحي (আল হাই/ চিরঞ্জীব): অবিনশ্বর-চিরঞ্জীব, ক্ষয়-বিনাশ-মৃত্যু যাকে স্পর্শ ও অতিক্রম করতে পারে না।

الحاسب الحسيب (হাসেব, হাসীব/ পরম পর্যাপ্ত): নিজ বান্দাদের জন্যে যথেষ্ট, উপযুক্ত। তিনি ব্যতীত তাদের উপায়-অবলম্বন নেই। বান্দাদের তত্ত্বাবধায়ক।

الشهيد (শাহীদ/ সর্বত্র উপস্থিত, মহাসাক্ষী): যাবতীয় বিষয় সম্পর্কে অবগত। যাঁর জ্ঞান সবকিছুকে পরিবেষ্টন করে আছে। যিনি বান্দাদের কর্মানুযায়ী পক্ষে-বিপক্ষে সাক্ষ্য দেবেন।

القوي المتين (আল কাভিয়্যূ আল মাতীন/ সর্বশক্তিমান): পরিপূর্ণ শক্তিধর, যাকে অনেক শক্তিশালী বিজয়ীও পরাজিত করতে পারে না। পলায়নকারী তাঁকে এড়িয়ে যেতে পারে না। মহা শক্তিমান, যার শক্তি বিচ্ছিন্ন ও নিঃশেষ হয় না।

الولي (আল-ওয়ালী/ সর্বময় কর্তা): পরিচালনাকারী।

المولى (আল-মাওলা/ মহা প্রভু): মুমিন বান্দাদের মুহাব্বতকারী, সাহায্য-সহায়তা দানকারী।

الحميد (আল-হামীদ/ প্রশংসিত): যিনি প্রশংসা পাওয়ার যোগ্যতা রাখেন, এবং যিনি নিজ নাম, সিফাত, কর্ম, কথা, অনুগ্রহ, সিদ্ধান্ত, শরীয়ত প্রবর্তন ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রশংসিত।

الصمد (সামাদ/ অমুখাপেক্ষী) যিনি বড়ত্ব, নেতৃত্ব-কর্তৃত্ব ও বদান্যতায় উৎকর্ষে পৌঁছে আছেন এবং যাবতীয় প্রয়োজনে যার আশ্রয় নেয়া হয়।

القدير القادر المقتدر (আল ক্বাদীর, কাদের, মুক্বতাদির/ মহাশক্তিধর ও সর্বশক্তিমান): পরিপূর্ণ শক্তির অধিকারী, যাকে কেউ পরাভূত করতে পারে না, এবং যাকে কোন কিছু এড়িয়ে যেতে পারে না এবং যার শক্তি ও ক্ষমতা পরিপূর্ণ চিরন্তন ও সর্বব্যাপী।

الوكيل (ওয়াকীল/ দায়িত্বশীল): সমগ্র সৃষ্টিকুলের সার্বিক বিষয়াবলীর পরিচালনা ও পর্যবেক্ষনকারী-কার্য নির্বাহী।

الكفيل (আল কাফীল/ জিম্মাদার- অভিভাবক): সকল বস্তুর সংরক্ষণকারী, প্রত্যেক ব্যক্তির রক্ষনাবেক্ষণ ও পর্যবেক্ষণকারী, সমস্ত সৃষ্টি কুলের রিযিক ও তাদের সার্থ রক্ষার জিম্মাদার।

الغني (আল গনী/ বেনিয়ায, অমুখাপেক্ষী): যিনি সৃষ্টিকুল থেকে সম্পূর্ণরূপে অমুখাপেক্ষী, কারো নিকট কোনভাবেই তার কোন প্রয়োজন হয় না।

الحق المبين (আল হক্ব আল মুবীন/ সত্য-সুস্পষ্টকারী): যার অস্তিত্ব ও বিদ্যমানতায় বিন্দু পরিমান সন্দেহ-সংশয় নেই। যিনি সৃষ্টিকুলের নিকট অস্পষ্ট নন।

المبين যিনি সৃষ্টিকুলের নিকট দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জগতে মুক্তি ও পরিত্রাণের পথ পরিস্কার করে দিয়েছেন।

النور (আল-নূর/ আলো): যিনি আকাশ-যমীন আলোকিত করেছেন এবং মুমিনদের অন্তরাত্মা স্বীয় মারেফাত ও ঈমান দ্বারা আলোকোজ্জল করেছেন।

ذوالجلال والإكرام (যুল জালালি ওয়াল ইকরাম/ সম্মান ও মহত্বের অধিকারী): যিনি এ অধিকার রাখেন যে, তাঁকে ভক্তি-শ্রদ্ধা ও ভয় করা হবে এবং এককভাবে তাঁরই প্রশংসা করা হবে। বড়ত্ব ও সম্মানের অধিকারী, দয়া ও অনুগ্রহশীল।

البر (আল-বারর/ ন্যায়পরায়ণ- দানশীল): নিজ বান্দাদের প্রতি দয়া ও সহানুভূতিশীল। তাদের অকাতরে দয়া-দক্ষিণা করেন।

التواب (আততাওয়াবু/ তওবা কবুলকারী-ক্ষমাশীল): যিনি তওবাকারীদের তওবা কবুল করেন। পাপীদের গুনাহ মার্জনা করেন, যিনি তাওবা সৃষ্টি করেছেন এবং নিজ বান্দাদের থেকে তা কবুলও করেছেন।

العفو (আল-আফুভু/ মার্জনাকারী): যার ক্ষমা ও মার্জনা বান্দা কর্তৃক সংঘটিত যাবতীয় গুনাহকে পরিবেষ্টন করে। বিশেষ করে বান্দা যদি তওবা ও ইস্তিগফার করে।

الرؤوف (আল-রউফ/ অতীব দয়ালু- অনুগ্রহশীল): অনুগ্রহ ও করুনাশীল, সর্বোচ্চ পর্যায়ের রহমত ও দয়াশীলকে রউফ বলা হয়।

الأول (আল-আউয়ালু/ আদি): অনাদি যার পূর্বে কিছু নেই। الآخر (আল-আখের) অনন্ত যার পরে কিছু নেই। الظاهر (আল-যাহের) যার উপর কিছু নেই। الباطن (আল-বাতেন) যাকে বাদ দিয়ে কিছু নেই।
الوارث (আল-ওয়ারেছ) : সৃষ্টিকুল ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে যাওয়ার পরও যিনি অবশিষ্ট থাকবেন। প্রত্যেক বস্তুর গন্তব্য ও প্রত্যাবর্তনস্থল তিনিই। চিরঞ্জীব যার মৃত্যু নেই।

المحيط (আল-মুহীতু/ পূর্নাঙ্গরূপে অবহিত-নিয়ন্ত্রণকারী) যার শক্তি-সামর্থ সমগ্র সৃষ্টিকুলকে পরিবেষ্টন করে আছে। তাঁকে এড়িয়ে চলা বা তাঁর থেকে ভেগে যাওয়ার শক্তি বা সুযোগ কারো নেই। তিনি জ্ঞানের দিক থেকে সবকিছু পরিবেষ্টন করে আছেন। এবং গুনে গুনে সবকিছু সংরক্ষণ করেছেন।

القريب (আল কারীব/ অতি নিকটবর্তী): যিনি সকলের নিকটবর্তী। নিকটবর্তী তাঁকে আহবান কারীর এবং সকল প্রকার ইবাদত-আনুগত্যের মাধ্যমে তাঁর নৈকট্য প্রত্যাশীর।

الهادي (আল-হাদী/ পথ প্রদর্শক): যিনি সৃষ্টিকুলকে তাদের কল্যাণের দিকে পথ প্রদর্শন করেন। স্বীয় বান্দাদের হেদায়াত (সঠিক পথ প্রদর্শন): কারী। তাদের জন্যে বাতিল- অসত্য থেকে হক্ব ও সত্যের পথ সুস্পষ্টকারী।

البديع (আল-বাদী/ নব আবিস্কর্তা- প্রবর্তক): যার কোন সদৃশ ও সমকক্ষ নেই, যিনি সকল সৃষ্টি পূর্ব দৃষ্টান্ত ব্যতীতই সৃজন করেছেন।

الفاطر (আল-ফাতির/ মহান সৃষ্টিকর্তা): যিনি সমগ্র সৃষ্টিকুল সৃজন করেছেন। নভোমণ্ডল ও ভূ-মণ্ডলকে অস্তিত্বহীন থেকে অস্তিত্বে এনেছেন। এদেরকে সৃষ্টি করেছেন।

الكافي (আল-কাফী/ যথেষ্ট ও প্রয়োজনমুক্ত): যিনি বান্দাদের সকল প্রয়োজন যথেষ্ট করে দিয়েছেন। সকল প্রয়োজন পর্যাপ্ত পরিমাণে মিটিয়ে দিয়েছেন।

الغالب (আল-গালিব/ মহা প্রভাবশালী-বিজয়ী): চিরন্তন অপ্রতিরোধ্য-পরাক্রমশালী। প্রত্যেক তালিবের ক্ষেত্রে বিজয়ী- প্রাধান্য বিস্তারকারী। তাঁর সিদ্ধান্ত রদ করার ক্ষমতা কারো নেই। তিনি যা কার্যকর করেছেন তা বাধা দেয়ার কেউ নেই। তাঁর ফয়সালা ও সিদ্ধান্ত খণ্ডনকারী কেউ নেই। এবং তাঁর বিচার অগ্রাহ্যকারী কেউ নেই।

الناصر النصير (আল-নাসের আল নাসীর/ সাহয্য কারী, মহারক্ষক): যিনি নিজ রাসূলবৃন্দ ও তাদের অনুসারীদেরকে শত্রুর বিরুদ্ধে সাহায্য করেন। সাহায্য-সহায়তা একমাত্র তাঁর হাতেই। এতে তাঁর কোন শরীক নেই।

المستعان (আল-মুসতাআন/ সাহায্য প্রার্থনাস্থল): যিনি কখনো কারো নিকট সাহায্য-সহযোগিতা চান না। বরং তাঁর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করা হয়। তাঁর নিকট শত্রু-মিত্র উভয়ই প্রার্থনা করে-সাহায্য চায়। এরা-ওরা সকলেই হাত বাড়ায়।

ذوالمعارج (যুলমাআরিজ/ সমুন্নত মর্তবার অধিকারী): যার দিকে রূহুল আমীন- জিবরাঈলসহ সকল ফেরেশতা উর্ধ্বগামী হয়। এবং যার দিকে উৎকৃষ্ট কথা ও নেক কর্মসমূহ উঠে।

ذوالطول (যুত তাওল/ মহা অনুগ্রহশীল, অতীব দানবীর): যিনি অনুগ্রহ, নিয়ামত, দান- দক্ষিণা স্বীয় সৃষ্টিকুলের নিমিত্তে ছড়িয়ে দেন। এগুলোর দার উন্মুক্ত কর দেন।

ذوالفضل (যুল ফাদলি/ সুউচ্চ মর্যাদার অধিকারী): যিনি সকল কিছুর মালিক ও কর্তৃত্বশীল, নানাবিধ নিয়ামাতরাজী দ্বারা বান্দাদের অনুগ্রহ করেন।

الرفيق (রাফীক/ সহানুভূতিশীল বন্ধু): যিনি দয়া, সহানুভূতি এবং সহানুভূতিশীলদের পছন্দ করেন, ভালবাসেন। বান্দাদের প্রতি অতি দয়ালু, অতিশয় মেহেরবান।

الجميل (আল-জামীল/ খুব সুন্দর): তিনি স্বীয় সত্তা, নাম, গুণাবলি ও কর্ম- সর্বক্ষেত্রে খুব সুন্দর এবং চমৎকার।

الطيب (আত্-তাইয়্যিবু/ ভাল-উৎকৃষ্ট): যাবতীয় দোষ-ত্রুটি হতে মুক্ত পবিত্র।

الشافي (আশ-শাফী/ আরোগ্য ও পরিত্রাণ দানকারী): সকল বিপদ-মুসীবত, রোগ-ব্যাধি হতে তিনিই আরোগ্য দান কারী, এতে তাঁর কোন শরীক নেই।

السبوح (আস-সুব্বুহ/ মহিমাময়): যিনি সকল প্রকার দোষ-ত্রুটি মুক্ত। সাত আকাশ, সাত যমীন ও এতদ্ভোয়ের মধ্যে যা কিছু আছে সকলেই তাঁর গুণ-কীর্তন এবং মহিমা বর্ণনা করে। প্রত্যেক বস্তু তাঁর পবিত্রতা বর্ণনা করে তাঁর প্রশংসা করে।

الوتر (আল-ভিতরু/ বেজোড়-একক): যার কোন শরীক, সমকক্ষ ও প্রতিপক্ষ নেই। তিনি বেজোড়। বেজোড় সংখ্যক আমল ও ইবাদত পছন্দ করেন।

الديان (আদ্-দাইয়ান/ মহা বিচারক): যিনি বান্দাদের হিসাব নিয়ে প্রতিদান প্রদান করেন। কিয়ামতের দিন যিনি বান্দাদের মাঝে বিচার-পরিচালনা করবেন।

المقدم والمؤخر (আল-মুকাদ্দিম-আল-মুআখখির/ অগ্রসর ও পিছনে আনয়নকারী) : যাকে ইচ্ছা অগ্রসর করেন আবার যাকে ইচ্ছা পিছিয়ে দেন। যাকে ইচ্ছা উঠিয়ে দেন (সম্মানিত করেন) আবার যাকে ইচ্ছা নিচে নামিয়ে দেন। (অপমানিত করেন)

الحنان (আল-হান্নান/ অধিক দয়ালু): বান্দাদের প্রতি অতি দয়ালু, মহাঅনুগ্রহশীল। সৎকর্মশীলদের সম্মানিত করেন। পাপীদের ক্ষমা করেন।

المنان (আল-মান্নান/ অধিক উপকারী, পরম করুনাময়) : প্রার্থনা করার পূর্বেই যিনি অনুগ্রহ শুরু করে দেন। অধিক দাতা- যার দানের সীমা-পরিসীমা নেই। নিজ বান্দাদের সকল প্রকার দান ও অনুগ্রহ করেন। নানাবিধ নিয়ামত ও রিযিক প্রদান করার মাধ্যমে করুনা করেন।

القابض (আল-ক্বাবেয/ কবজাকারী): যিনি স্বীয় ইহসান-অনুগ্রহ, দান-দয়া কারো কারো কাছ থেকে ইচ্ছানুযায়ী গুটিয়ে নেন।

الباسط (আল-বাসেত/ বিস্তৃতকারী): যিনি স্বীয় অনুগ্রহ ছড়িয়ে দেন। নিজ বান্দাদের মাঝে যাকে ইচ্ছা প্রদত্ব রিযিক আরোও বিস্তৃত করে দেন। অর্থাৎ বাড়িয়ে দেন।

الحيي الستير (আল হায়িয়্যূ-আল সিত্তীরু/ পরম লজ্জাশীল-বান্দার দোষ গোপনকারী):
যিনি বান্দাদের মধ্যে লজ্জাবান ও পরদোষ গোপনকারীদের পছন্দ করেন-ভালবাসেন। তাদের দোষ-ত্রুটি ও অন্যায়-অপরাধ গোপন করে রাখেন।

الســيد (আস-সাইয়্যিদ/ মহান নেতা): যিনি নেতৃত্ব, কর্তৃত্ব, মর্যাদা, শক্তি-সামর্থ, বরং সকল গুণাবলিতে উৎকর্ষ সাধন করেছেন। সর্বোচ্চ পর্যায়ে আরোহন করেছেন।


المحــسن (আল-মুহসিন/ মহান দাতা): যিনি সমগ্র সৃষ্টিকে দয়া-অনুগ্রহ ও দানের মাঝে ডুবিয়ে রেখেছেন।


আরো পড়ুনঃ তাওহীদের পরিচয়
আরো পড়ুনঃ আল্লাহর পরিচয়

একটি আবেদন

বাংলা ভাষায় একটি শক্তিশালী ও মানসম্মত রেডিও প্রতিষ্ঠার প্ল্যান নিয়ে সালাম মিডিয়া কাজ করছে। আপনি একাজানি। আমরাও একানিজ নিজ জায়গা আমরা সবাই একা; কিন্তু সবাই মিলেও কী একা?
আমাদের রয়েছে পর্যাপ্ত দক্ষ জনবলশুধু নেই প্রয়োজনীয় অর্থবল। তাই আপনি যদি একজন সচ্ছল মুসলিম হয়ে থাকেন তাহলে আপনার প্রতি আমাদের ছোট্ট আহ্বান। বিস্তারিত পড়ুনঃ  আমাদের কথা

ছবিটি জুম করে দেখুন