[সহিহ বুখারি : ৩৬৬২, ৪৩৫৮; সহিহ মুসলিম : ২৩৮৪]
১. একজন মানুষ তার জীবনে অনেককেই ভালোবাসে। ভালোবাসে সে নিজ
সত্তাকে, ভালোবাসে আল্লাহ এবং তার রাসুলকে, ভালোবাসে নিজ বাবা-মা’কে, ভালোবাসে শ্বশুর-শাশুড়িকে, ভালোবাসে
সন্তান-সন্ততিকে; বন্ধুদের জন্যও অন্তর থাকে ভালোবাসায়
পরিপূর্ণ। সবগুলো ভালোবাসার ধরন এক নয়। এ কারণে এ সকল ভালোবাসার মাঝে তুলনা চলে
না। মা যদি সন্তানকে জিজ্ঞেস করে, ‘তুই আমাকে বেশি ভালোবাসিস, না তোর স্ত্রীকে?’ তাহলে এ প্রশ্নটি হবে অবান্তর। কারণ, উভয় ভালোবাসার স্বরূপ এক নয়। হাঁ, এখানে ভালোবাসা শব্দের দ্বারা যদি উদ্দেশ্য হয়, 'দুজনার হক রক্ষার মধ্যে বিরোধ দেখা দিলে তুই কাকে প্রাধান্য
দিবি তাহলে ভিন্ন কথা।'
এ কারণে আরবি ভাষায় ভালোবাসা বোঝানোর জন্য অনেকগুলো শব্দও
রয়েছে;
যেগুলো পারস্পরিক ভিন্নতার প্রতি ইঙ্গিত করে।
ইবরাহিম আ. ছিলেন আল্লাহর খলিল; আমাদের রাসুল সা.
ছিলেন আল্লাহর হাবিব। বাংলায় উভয়টির অর্থই করা হয় : ‘প্রিয়’, ‘সুহৃদ’, ‘বন্ধু’। ইশক, উলফত, মহব্বত, মাওয়াদ্দাত থেকে শুরু করে আছে আরও অনেক শব্দ। ‘আশেকে রাসুল’ নামটি অধিক প্রচলিত হলেও শব্দটি একপ্রকার আপত্তিকর। কারণ, ইশক'র মধ্যে একধরনের কামনা-বাসনা রয়েছে। এটা
স্ত্রীর ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হলে ঠিক আছে। কিন্তু আল্লাহর রাসুলের প্রতি আমাদের অন্তরে থাকবে মহব্বত; কামনা-বাসনার প্রেম নয়। আরববিশ্বে এ নামের কাউকে পাওয়া যাওয়া মুশকিল।
যেহেতু ভালোবাসাগুলোর ধরনে ভিন্নতা রয়েছে তাই তো রাসুলের
উপরিউক্ত কথার ওপর এই আপত্তি করা যাবে না যে, ‘তবে কি বাবা-মা’র প্রতি রাসুল সা.’র ভালোবাসা কম ছিল?’ যেহেতু ভালোবাসার
ধরনগুলো ভিন্ন, তাই এগুলোর মধ্যে পারস্পরিক তুলনা চলে না।
হাঁ,
এরপরও বিশেষ কোনো বিবেচনায় কারও নাম
সবিশেষভাবে উল্লেখ করা যায়; তার স্বাতন্ত্র্য, স্বকীয়তা এবং সবিশেষ মর্যাদা বোঝানোর জন্য। আমাকেও যদি কেউ
জিজ্ঞেস করে, ‘তুমি কাকে সবচে বেশি ভালোবাসো?’ আমিও নির্দ্বিধ রাসুলুল্লাহ সা.’র মতো নিজের
স্ত্রীর নামই উল্লেখ করব। কিন্তু এর অর্থ এ নয় যে, ‘আল্লাহ এবং তার রাসুলের ভালোবাসার ওপর আমি এ
ভালোবাসাকে প্রাধান্য দিচ্ছি’ কিংবা ‘বাবা-মা’র ওপর স্ত্রীকে অগ্রাধিকার দিচ্ছি’। কারণ, বিষয়গুলো সম্পূর্ণ আপেক্ষিক।
২. স্ত্রীর প্রতি মানুষের ভালোবাসা স্বভাবজাত। আল্লাহ তা’আলাই এ ভালোবাসা সৃষ্টি করেছেন এবং তিনিই এ ভালোবাসার মাঝে ছাওয়াব রেখেছেন। এ ভালোবাসার প্রতি কেউ যদি অনীহা প্রকাশ করে এর থেকে বিমুখ হয়, তাহলে সে এক হতভাগা হিসেবেই বিবেচিত হয়। স্ত্রীর প্রতি অন্তরে লালিত ভালোবাসার কথা প্রকাশ করাও কোনো নিন্দনীয় বিষয় নয়; বরং তা-ই তো গৌরবের বিষয়।
বর্তমানে তো জাহেলি সমাজের অবস্থা এমন, মুরুব্বিদের সামনে স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসাপূর্ণ কোনো আচরণ
প্রকাশ করলে (যেমন : সোহাগভরে ডাকা, বা কোনো কিছু মুখে তুলে খাইয়ে দেয়া) অনেকেই একে নেতিবাচক দৃষ্টিতে দেখে।
কখনো-বা কটু কোনো মন্তব্যও করে বসে; সামনে না হলেও পেছনে। অথচ একই আচরণ যদি কোনো গাইরে মাহরাম নারীর সঙ্গে করা হয়
(যেমন : প্রকাশ্যে শালী বা ভাবীর সঙ্গে দুষ্টুমিপূর্ণ আচরণ) তাহলে একে ইতিবাচক
দৃষ্টিতে দেখা হয় এবং এর দ্বারা সকলে বুঝে নেয় যে, ছেলে মা-শা-আল্লাহ (!) সামাজিক।
৩. স্বামী-স্ত্রীর গোপন বিষয় বাইরে প্রকাশ করা কোনো অবস্থায়ই অনুমোদিত নয়; হোক তা বন্ধুদের মজলিসে কিংবা অন্য কারও কাছে। কিন্তু অন্তরে লালিত প্রাকৃতিক ভালোবাসার কথা প্রকাশ করতে দোষের কিছু নেই। বরং যদি এ সম্ভাবনা থাকে যে, এর দ্বারা শ্রোতা অনুপ্রাণিত হবে তাহলে এটা বরং উত্তম বিষয়। হাঁ, পরের সামনে বিশদভাবে নিজ স্ত্রীর রূপের বর্ণনা দেওয়া সংগত নয়। কারণ, তা ফিতনার দরজা খুলে দেয়। আর মানুষ তার রূপের দ্বারা বিবেচ্য নয়; বরং বিবেচ্য তার গুণের দ্বারা। তাই গুণের আলোচনাই প্রণিধানযোগ্য; যেন তা অন্যদের উৎসাহ-উদ্দীপনা, উদ্যম-অনুপ্রেরণা জাগাতে সহায়ক হয় এবং হয় অসংখ্য অপরিচিতা নারীর জন্য পথনির্দেশিকা।
৪. স্ত্রীর নাম পর্দার অন্তর্ভুক্ত নয়। অনেক দীনদার নারীও নামের ব্যাপারটিতে অধিক বাড়াবাড়ি করে থাকে। হাঁ, কেউ যদি লজ্জাশীলতার কারণে তা করে থাকে তাহলে তা নিন্দনীয় নয়। কিন্তু কাউকে তো দেখা যায়, একান্ত প্রয়োজনীয় স্থানেও নিজের/নিজ স্ত্রীর নাম প্রকাশ করার ব্যাপারে সীমাহীন কঠোরতার পরিচয় দিয়ে থাকে।
অথচ রাসুলুল্লাহ সা.’র পবিত্র স্ত্রীগণের নাম সাহাবিদের অজানা ছিল
না। উপরিউক্ত হাদীসে রাসুল সা. নিজেই তো
প্রিয়তমার নাম মুখে উচ্চারণ করছেন। যদি এই নাম গোপন করাই উত্তম হতো তাহলে নিশ্চয়ই
রাসুলুল্লাহ সা. এভাবে না বলে অন্য কোনোভাবে বলতেন।
কারণ, আল্লাহ তাআলা তো তাকে পাঠিয়েছেনই উম্মাহকে হাতে-কলমে সব শিখিয়ে যাওয়ার জন্য।
কারণ, আল্লাহ তাআলা তো তাকে পাঠিয়েছেনই উম্মাহকে হাতে-কলমে সব শিখিয়ে যাওয়ার জন্য।
আমাদের মুহতারাম উস্তাদ মাওলানা আবুল কালাম আজাদ (কুমিল্লার
হুজুর) হাফিজাহুল্লাহ’র সঙ্গে সম্পৃক্ত একটা ঘটনার কথা মনে পড়ে গেল। আমরা প্রথম দিকে মাদরাসার ফরমে
নিজের মা’র নামের জায়গায় উম্মে শব্দ যোগ করে লিখতাম; যেমন : ‘উম্মে উসামা’। এতে হুজুর খুব রাগ করতেন। তিনি বলতেন, এটা কি তোমার মা’র নাম? এই নামে সমাজে-এলাকায় তাকে কি অন্যরা চেনে? তাহলে কেন তুমি এটা লিখছ? এর দ্বারা কী উপকার হচ্ছে? তাহলে এরচে তো এই
জায়গাটা খালি রাখাই ভালো ছিল। কারণ, তোমার মা যে ‘উম্মে উসামা’ হবে এটা তুমি না লিখলেও তো মক্তবের বাচ্চাও বুঝবে। তাই অযথা
এর কী প্রয়োজন? এ জন্য হয়তো এই ঘর খালি রাখবে, নতুবা আসল নামই লিখবে। কারণ, এই গোপনীয়তার মাঝে কোনো বুজুর্গি নেই। আর এটা পর্দার অন্তর্ভুক্ত কোনো বিষয়ও
নয়।
লেখকঃ মাওলানা আলী হাসান উসামা
লেখকঃ মাওলানা আলী হাসান উসামা
আরো পড়ুনঃ স্ত্রীর কাছে পরাজিত হতে পারা!
আরো পড়ুনঃ বিয়েতে যা করণীয় (কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে)
একটি আবেদন
বাংলা ভাষায় একটি শক্তিশালী ও মানসম্মত রেডিও প্রতিষ্ঠার প্ল্যান নিয়ে সালাম মিডিয়া কাজ করছে। যার জন্য প্রায় তিনলক্ষ টাকা প্রাথমিক অবস্থায় প্রয়োজন। আপনি একা, জানি। আমরাও একা, নিজ নিজ জায়গা আমরা সবাই একা; কিন্তু সবাই মিলেও কী একা?
আমাদের রয়েছে পর্যাপ্ত দক্ষ জনবল, শুধু নেই প্রয়োজনীয় অর্থবল। তাই আপনি যদি একজন সচ্ছল মুসলিম হয়ে থাকেন তাহলে আপনার প্রতি আমাদের ছোট্ট আহ্বান। ০১৯২২৭৩০০০১ (তথ্য ও বিকাশ) বিস্তারিত পড়ুনঃ আমাদের কথা
ছবিটি জুম করে দেখুন |