«مَا رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَتَحَرَّى صِيَامَ يَوْمٍ فَضَّلَهُ عَلَى غَيْرِهِ إِلّا هَذَا الْيَوْمَ يَوْمَ عَاشُورَاءَ، وَهَذَا الشَّهْرَ يَعْنِي شَهْرَ رَمَضَانَ»
“আমি নবী সা.কে রোজা রাখার
জন্য এত অধিক আগ্রহী হতে দেখিনি,
যত দেখেছি এ‘আশুরার দিন এবং এ মাস অর্থাৎ রমযান মাসের রোজার প্রতি”।[১]
যত দেখেছি এ‘আশুরার দিন এবং এ মাস অর্থাৎ রমযান মাসের রোজার প্রতি”।[১]
রাসূলুল্লাহ সা. বলেন,
«صيام يوم عاشوراء، إني أحتسب على الله أن يكفر السنة التي قبله»
“আশুরার দিনের রোজার ব্যাপারে আমি আল্লাহর কাছে আশা করি, তিনি
পূর্ববর্তী এক বছরের পাপ ক্ষমা করে দিবেন”।[২]
এটি আমাদের প্রতি মহান আল্লাহর অপার করুণা। তিনি একটি মাত্র দিনের রোজার
মাধ্যমে পূর্ণ এক বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দেন। সত্যই মহান আল্লাহ পরম দাতা।
বছরের কোন
দিনটি আশুরার দিন
আল্লামা নববী রহ. বলেন, তাসু‘আ, আশুরা দু’টি মদ্দযুক্ত নাম। অভিধানের গ্রন্থাবলীতে এটিই প্রসিদ্ধ।
আমাদের সাথীরা বলেছেন, আশুরা হচ্ছে মুহররম মাসের দশম দিন। আর তাসু‘আ সে মাসের নবম দিন। জমহুর ওলামারাও
তা-ই বলেছেন। হাদীসের আপাতরূপ ও শব্দের প্রায়োগিক ও ব্যবহারিক চাহিদাও তা-ই।
ভাষাবিদদের নিকট এটিই প্রসিদ্ধ।[৩]
এটি একটি ইসলামী নাম, জাহেলি যুগে পরিচিত ছিল না।[৪]
ইবন কুদামাহ রহ. বলেন,‘আশুরা মুহররম মাসের দশম দিন। এটি সা‘ঈদ ইবনুল মুসায়্যিব ও হাসান বসরি
রহ.-এর মত। কারণ, আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহুমা আনহুমা বর্ণনা করেন,
«أمر رسول الله صلى الله عليه وسلم - بصوم يوم عاشوراء العاشر من المحرم ».
‘আশুরার সাথে তাসু‘আর রোজা রাখাও মুস্তাহাব
আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রা.মা বর্ণনা করেন,
«حِينَ صَامَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ عَاشُورَاءَ وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنَّهُ يَوْمٌ تُعَظِّمُهُ الْيَهُودُ وَالنَّصَارَى، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: "فَإِذَا كَانَ الْعَامُ الْمُقْبِلُ إِنْ شَاءَ اللَّهُ صُمْنَا الْيَوْمَ التَّاسِعَ". قَالَ فَلَمْ يَأْتِ الْعَامُ الْمُقْبِلُ حَتَّى تُوُفِّيَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ».
“যখন
রাসূলুল্লাহ সা. আশুরার রোজা রাখলেন এবং
(অন্যদেরকে) রোজা রাখার
নির্দেশ দিলেন। লোকেরা বলল, হে আল্লাহর
রাসূল! এটিতো এমন দিন, যাকে ইয়াহূদী
ও খ্রিষ্টানরা বড় জ্ঞান করে, সম্মান
জানায়। তখন রাসূলুল্লাহ সা. বললেন, আগামী বছর
এদিন আসলে আমরা নবম দিনও রোজা রাখব ইনশাআল্লাহ। বর্ণনাকারী বলছেন, আগামী বছর
আসার পূর্বেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাত হয়ে গিয়েছে”।[৬]
ইমাম শাফে‘ঈ ও তার
সাথীবৃন্দ, ইমাম আহমাদ, ইমাম ইসহাক
প্রমুখ বলেছেন, আশুরার রোজার ক্ষেত্রে দশম ও নবম উভয় দিনের রোজা-ই মুস্তাহাব। কেননা নবী সা. দশ
তারিখ রোজা রেখেছেন এবং
নয় তারিখ রোজা রাখার নিয়ত
করেছেন।
এর-ই ওপর
ভিত্তি করে বলা যায়, আশুরার
রোজার কয়েকটি স্তর রয়েছে: সর্ব নিম্ন হচ্ছে কেবল দশ তারিখের রোজা রাখা। এরচে
উচ্চ পর্যায় হচ্ছে তার সাথে নয় তারিখের রোজা পালন করা। এমনিভাবে মুহররম
মাসে সিয়ামের
সংখ্যা যত বেশি হবে মর্যাদা ও ফযীলতও ততই বাড়তে থাকবে।
ইমাম নববী রহ. বলেন, আশুরার রোজা সকল সগীরা গুনাহের কাফ্ফারা। অর্থাৎ এ রোজার কারণে মহান আল্লাহ কবীরা
নয় বরং (পূর্ববর্তী একবছরের) যাবতীয় সগীরা গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন।
এর পর তিনি বলেন, আরাফার রোজা দুই বছরের (গুনাহের
জন্য) কাফ্ফারা, আশুরার রোজা এক বছরের জন্য কাফ্ফারা, যার আমীন ফিরিশতাদের আমীনের সাথে মিলে
যাবে তার পূর্ববর্তী গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে... হাদীসে বর্ণিত এসব গুনাহ মাফের
অর্থ হচ্ছে, ব্যক্তির আমলনামায় যদি সগিরা গুনাহ থেকে থাকে তাহলে এসব
আমল তার গুনাহের কাফ্ফারা হবে অর্থাৎ আল্লাহ তার সগীরা গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দিবেন।
আর যদি সগীরা-কবীরা কোনো গুনাহই না থাকে তাহলে এসব আমলের কারণে তাকে সাওয়াব দান
করা হবে,তার দরজাত বুলন্দ করা হবে। আর আমলনামায় যদি শুধু কবীরা
গুনাহ থাকে সগীরা নয় তাহলে আমরা আশা করতে পারি, এসব আমলের কারণে তার কবীরা গুনাহসমূহ
হালকা করা হবে।[৭]
শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. বলেন,পবিত্রতা অর্জন, সালাত, রমযান, আরাফা ও আশুরার রোজা ইত্যাদি কেবল
সগীরা গুনাহসমূহের কাফ্ফারা অর্থাৎ এসব আমলের কারণে কেবল সগীরা গুনাহ ক্ষমা করা
হয়।[৮]
আরো পড়ুনঃ আশুরা বা দশই মুহাররমের পরিচয়আরো পড়ুনঃ আশুরা কী ও আশুরার রোজার ফজিলতআরো পড়ুনঃ আশুরা ও মুহাররম সম্পর্কে কিছু বানানো কথা-কাহিনীআরো পড়ুনঃ ইতিহাসে আশুরা বা দশই মুহাররমআরো পড়ুনঃ আশুরা ও মুহাররমের সঠিক ও পূর্ণাঙ্গ বিধান
প্রিয় পাঠক, আপনিও হতে পারেন দ্বীন প্রচারের একজন সহযোগী। আপনি যদি একজন সচ্ছল মুসলিম হয়ে থাকেন তাহলে আপনার কাছে আমাদের আবেদন পড়ুন
ছবিটি জুম করে দেখুন |
লেখাটিতে ব্যবহৃত রেফারেন্সঃ
[১] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৮৬৭
[২] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৯৭৬
[৫] তিরমিযী, তিনি বলেছেন, হাদীসটি হাসান সহীহ
[৭] আল-মাজমূ শারহুল মুহাযযাব, ষষ্ঠ খণ্ড, সওমু ইমাওমি আরাফা