পাঠক! বাংলা ভাষায় সুবৃহৎ বিশুদ্ধ ইসলামী সাইটে আপনাকে স্বাগতম। সহীহ কুরআন, সুন্নাহনির্ভর রেফারেন্স ও গবেষণাধর্মী প্রায় ২০০এর অধিক বিষয়ের অনন্য সমাহার। আমাদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ও অনুদান দিয়ে সাহায্য করতে পড়ুন এখানে

আশুরার রোজার ফজিলত

আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রা.মাথেকে বর্ণিত,তিনি বলেন,
«مَا رَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَتَحَرَّى صِيَامَ يَوْمٍ فَضَّلَهُ عَلَى غَيْرِهِ إِلّا هَذَا الْيَوْمَ يَوْمَ عَاشُورَاءَ، وَهَذَا الشَّهْرَ يَعْنِي شَهْرَ رَمَضَانَ»
আমি নবী সা.কে রোজা রাখার জন্য এত অধিক আগ্রহী হতে দেখিনি,
যত দেখেছি এআশুরার দিন এবং এ মাস অর্থাৎ রমযান মাসের রোজার প্রতি।[১]

রাসূলুল্লাহ সা. বলেন,
«صيام يوم عاشوراء، إني أحتسب على الله أن يكفر السنة التي قبله»
আশুরার দিনের রোজার ব্যাপারে আমি আল্লাহর কাছে আশা করিতিনি পূর্ববর্তী এক বছরের পাপ ক্ষমা করে দিবেন।[২]
এটি আমাদের প্রতি মহান আল্লাহর অপার করুণা। তিনি একটি মাত্র দিনের রোজার মাধ্যমে পূর্ণ এক বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দেন। সত্যই মহান আল্লাহ পরম দাতা।

বছরের কোন দিনটি আশুরার দিন
আল্লামা নববী রহ. বলেনতাসুআশুরা দুটি মদ্দযুক্ত নাম। অভিধানের গ্রন্থাবলীতে এটিই প্রসিদ্ধ। আমাদের সাথীরা বলেছেনআশুরা হচ্ছে মুহররম মাসের দশম দিন। আর তাসুআ সে মাসের নবম দিন। জমহুর ওলামারাও তা-ই বলেছেন। হাদীসের আপাতরূপ ও শব্দের প্রায়োগিক ও ব্যবহারিক চাহিদাও তা-ই। ভাষাবিদদের নিকট এটিই প্রসিদ্ধ।[৩]
এটি একটি ইসলামী নামজাহেলি যুগে পরিচিত ছিল না।[৪]
ইবন কুদামাহ রহ. বলেন,আশুরা মুহররম মাসের দশম দিন। এটি সাঈদ ইবনুল মুসায়্যিব ও হাসান বসরি রহ.-এর মত। কারণ, আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহুমা আনহুমা বর্ণনা করেন,
«أمر رسول الله  صلى الله عليه وسلم - بصوم يوم عاشوراء العاشر من المحرم ».
রাসূলুল্লাহ সা. আশুরা-মুহররমের দশম দিনে রোজা রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।[৫]

আশুরার সাথে তাসুআর রোজা রাখাও মুস্তাহাব
আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রা.মা বর্ণনা করেন,
«حِينَ صَامَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمَ عَاشُورَاءَ وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنَّهُ يَوْمٌ تُعَظِّمُهُ الْيَهُودُ وَالنَّصَارَى، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: "فَإِذَا كَانَ الْعَامُ الْمُقْبِلُ إِنْ شَاءَ اللَّهُ صُمْنَا الْيَوْمَ التَّاسِعَ". قَالَ فَلَمْ يَأْتِ الْعَامُ الْمُقْبِلُ حَتَّى تُوُفِّيَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ».
যখন রাসূলুল্লাহ সা. আশুরার রোজা রাখলেন এবং (অন্যদেরকে) রোজা রাখার নির্দেশ দিলেন। লোকেরা বললহে আল্লাহর রাসূল! এটিতো এমন দিনযাকে ইয়াহূদী ও খ্রিষ্টানরা বড় জ্ঞান করেসম্মান জানায়। তখন রাসূলুল্লাহ সা. বললেনআগামী বছর এদিন আসলে আমরা নবম দিনও রোজা রাখব ইনশাআল্লাহ। বর্ণনাকারী বলছেনআগামী বছর আসার পূর্বেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ওফাত হয়ে গিয়েছে।[৬]

ইমাম শাফেঈ ও তার সাথীবৃন্দইমাম আহমাদইমাম ইসহাক প্রমুখ বলেছেনআশুরার রোজার ক্ষেত্রে দশম ও নবম উভয় দিনের রোজা-ই মুস্তাহাব। কেননা নবী সা. দশ তারিখ রোজা রেখেছেন এবং নয় তারিখ রোজা রাখার নিয়ত করেছেন।
এর-ই ওপর ভিত্তি করে বলা যায়আশুরার রোজার কয়েকটি স্তর রয়েছে: সর্ব নিম্ন হচ্ছে কেবল দশ তারিখের রোজা রাখা। এরচে উচ্চ পর্যায় হচ্ছে তার সাথে নয় তারিখের রোজা পালন করা এমনিভাবে মুহররম মাসে সিয়ামের সংখ্যা যত বেশি হবে মর্যাদা ও ফযীলতও ততই বাড়তে থাকবে।

আশুরার রোজা কোন ধরনের পাপের জন্য কাফ্ফারা?
ইমাম নববী রহ. বলেনআশুরার রোজা সকল সগীরা গুনাহের কাফ্ফারা। অর্থাৎ এ রোজার কারণে মহান আল্লাহ কবীরা নয় বরং (পূর্ববর্তী একবছরের) যাবতীয় সগীরা গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন।
এর পর তিনি বলেনআরাফার রোজা দুই বছরের (গুনাহের জন্য) কাফ্ফারাআশুরার রোজা এক বছরের জন্য কাফ্ফারাযার আমীন ফিরিশতাদের আমীনের সাথে মিলে যাবে তার পূর্ববর্তী গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে... হাদীসে বর্ণিত এসব গুনাহ মাফের অর্থ হচ্ছেব্যক্তির আমলনামায় যদি সগিরা গুনাহ থেকে থাকে তাহলে এসব আমল তার গুনাহের কাফ্ফারা হবে অর্থাৎ আল্লাহ তার সগীরা গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দিবেন। আর যদি সগীরা-কবীরা কোনো গুনাহই না থাকে তাহলে এসব আমলের কারণে তাকে সাওয়াব দান করা হবে,তার দরজাত বুলন্দ করা হবে। আর আমলনামায় যদি শুধু কবীরা গুনাহ থাকে সগীরা নয় তাহলে আমরা আশা করতে পারিএসব আমলের কারণে তার কবীরা গুনাহসমূহ হালকা করা হবে।[৭]
শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. বলেন,পবিত্রতা অর্জনসালাতরমযানআরাফা ও আশুরার রোজা ইত্যাদি কেবল সগীরা গুনাহসমূহের কাফ্ফারা অর্থাৎ এসব আমলের কারণে কেবল সগীরা গুনাহ ক্ষমা করা হয়।[৮]
প্রিয় পাঠক, আপনিও হতে পারেন দ্বীন প্রচারের একজন সহযোগী। আপনি যদি একজন সচ্ছল মুসলিম হয়ে থাকেন তাহলে আপনার কাছে আমাদের আবেদন পড়ুন
ছবিটি জুম করে দেখুন

লেখাটিতে ব্যবহৃত রেফারেন্সঃ

[১] সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৮৬৭
[২] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৯৭৬
[৩] আল-মজমূ
[৪] কাশ্শাফুল কান্না ২য় খণ্ড, সওমুল মুহাররম
[৫] তিরমিযী, তিনি বলেছেন, হাদীসটি হাসান সহীহ
[৬] সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৯১৪৬
[৭] আল-মাজমূ শারহুল মুহাযযাব, ষষ্ঠ খণ্ড,  সওমু ইমাওমি আরাফা
[৮] আল-ফাতাওয়াল কুবরা, ৫ম খণ্ড