আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
“নবী সা.
মদিনায় আগমন করে দেখতে পেলেন ইয়াহূদীরা আশুরার দিন সিয়াম
পালন করছে। নবী সা. বললেন, এটি
কী? তারা বলল, এটি একটি ভালো দিন। এ দিনে আল্লাহ তা‘আলা বনী ইসরাঈলকে
তাদের দুশমনের কবল থেকে বাঁচিয়েছেন।
তাই মূসা আলাইহিস সালাম সিয়াম
পালন করেছেন। রাসূলুল্লাহ সা. বললেন, মূসা আলাইহিস সালামকে অনুসরণের
ব্যাপারে আমি তোমাদের চেয়ে অধিক হকদার। অতঃপর তিনি সিয়াম
রেখেছেন এবং সিয়াম রাখার নির্দেশ দিয়েছেন”।[1]
হাদীসের মূল টেক্সট-
«قدم النبي صلى الله عليه وسلم المدينة فرأى اليهود تصوم يوم عاشوراء فقال: مَا هَذَا قَالُوا هَذَا يَوْمٌ صَالِحٌ، هَذَا يَوْمٌ نَجَّى اللَّهُ بَنِي إِسْرَائِيلَ مِنْ عَدُوِّهِمْ فَصَامَهُ مُوسَى، قال: فَأَنَا أَحَقُّ بِمُوسَى مِنْكُمْ فَصَامَهُ وَأَمَرَ بِصِيَامِهِ».
বুখারীর বর্ণনা, هَذَا
يَوْمٌ
صَالِحٌ
এটি একটি ভালো দিন।
মুসলিমের বর্ণনায় আছে, هذا
يوم
عظيم
أنجى
الله
فيه
موسى
وقومه
وغرّق
فرعون
وقومه “এটি একটি
মহান দিন, আল্লাহ তা‘আলা তাতে
মূসা আলাইহিস সালাম ও তাঁর কওমকে রক্ষা করেছেন আর ফির‘আউন ও তার
সম্প্রদায়কে পানিতে ডুবিয়ে মেরেছেন।”
বুখারির বর্ণনা,فصامه
موسى
“মূসা
আলাইহিস সালাম সিয়াম পালন করেছেন।”
ইমাম মুসলিম তার বর্ণনায় সামান্য বাড়িয়ে বর্ণনা করেছেন, شكراً
لله
تعالى
فنحن
نصومه“(তিনি
সিয়াম পালন করেছেন) আল্লাহ তা‘আলার শুকরিয়া
আদায়স্বরূপ, তাই আমরাও সিয়াম পালন করি।”
বুখারীর অন্য বর্ণনায় আছে,ونحن
نصومه
تعظيماً
له“আর আমরা সিয়াম
পালন করি তার সম্মানার্থে।”
ইমাম আহমাদ সামান্য বর্ধিতাকারে বর্ণনা করেছেন,
«وهو اليوم الذي استوت فيه السفينة على الجودي فصامه نوح شكراً»
“এটি সেই দিন যাতে নূহ আলাইহিস সালাম-এর কিশতি জুদি পর্বতে স্থির হয়েছিল, তাই নূহ আলাইহিস সালাম আল্লাহর শুকরিয়া আদায়ার্থে সেদিন সিয়াম
রেখেছিলেন”।[2]
বুখারীর বর্ণনা وأمر
بصيامه “এবং সিয়াম রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।”
বুখারীর অন্য বর্ণনায় এসেছে, فقال
لأصحابه:
أنتم
أحق
بموسى
منهم
فصوموا “তিনি তাঁর
সাহাবীগণকে বললেন,মূসা আলাইহিস
সালামকে অনুসরণের ক্ষেত্রে তোমরা তাদের চেয়ে অধিক হকদার। সুতরাং তোমরা সিয়াম
পালন কর।”
আশুরার সিয়াম
পূর্ব হতেই প্রসিদ্ধ ছিল এমনকি রাসূলুল্লাহর নবুওয়াত প্রাপ্তির পূর্বে
জাহেলি যুগেও আরব সমাজে তার প্রচলন ছিল।
আয়েশা রাদি.থেকে বর্ণিত হয়েছে,তিনি বলেন,
«إن
أهل
الجاهلية
كانوا
يصومونه..»
“জাহেলি যুগের
লোকেরা আশুরাতে সিয়াম পালন করত।”..
ইমাম কুরতুবী রহ. বলেন,
কুরাইশরা আশুরার
সিয়াম প্রসঙ্গে সম্ভবত বিগত শরী‘আত যেমন
ইবরাহীম আলাইহিস সালাম-এর ওপর নির্ভর করত। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সা. মদিনায় হিজরাত করার পূর্বেই মক্কাতে
আশুরার সিয়াম পালন করতেন। হিজরতের পর দেখতে পেলেন মদিনার
ইয়াহূদীরা এদিনকে উদযাপন করছে। তিনি কারণ সম্বন্ধে তাদের জিজ্ঞেস করলে তারা
উল্লিখিত উত্তর দিল। তখন নবীসা. সাহাবীগণকে ঈদ-উৎসব উদযাপন প্রসঙ্গে ইয়াহূদীদের
বিরোধিতা করার নির্দেশ দিলেন। যেমন, আবু মূসা
রা. কর্তৃক বর্ণিত, তিনি বলেন, كَانَ يَوْمُ عَاشُورَاءَ تَعُدُّهُ الْيَهُودُ عِيدًا “আশুরার দিনকে ইয়াহূদীরা ঈদ হিসেবে গ্রহণ করেছিল”।
মুসলিমের বর্ণনায় এসেছে,كان
يوم
عاشوراء
تعظمه
اليهود
تتخذه
عيدا “আশুরার
দিনকে ইয়াহূদীরা বড় করে দেখত (সম্মান করত),একে তারা ঈদ হিসাবে গ্রহণ করেছিল।”
মুসলিমের অন্য বর্ণনায় এসেছে, كان
أهل
خيبر
( اليهود
) يتخذونه
عيدا،
ويلبسون
نساءهم
فيه
حليهم
وشارتهم “খায়বর
অধিবাসীরা (ইয়াহূদীরা) ‘আশুরার দিনকে ঈদ হিসাবে গ্রহণ করেছিল। তারা এদিন নিজ
স্ত্রীদেরকে নিজস্ব অলঙ্কারাদি ও ব্যাজ পরিধান করাত।” তখন নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লাম বললেন, فَصُومُوهُ
أَنْتُمْ “তাহলে
তোমরা সিয়াম পালন কর”।[3]
রাসূলুল্লাহ সা. সাহাবীগণকে এদিনে সিয়াম পালন করার
নির্দেশ দানের আপাত কারণ হচ্ছে,ইয়াহূদীদের
বিরোধিতা করা। যেদিন তারা ঈদ উদযাপন করে ইফতার করবে সেদিন মুসলিমগণ সিয়াম রাখবে।
কারণ ঈদের দিন সিয়াম রাখা হয় না।[4]
আরো পড়ুনঃ আশুরা কী ও আশুরার রোজার ফজিলত
[1]সহীহ বুখারী, হাদীস নং১৮৬৫
[2]মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং ৮৭১৭, তবে এর সনদ
দুর্বল।
[3]সহীহ বুখারী
[4]সার-সংক্ষেপ, ফাতহুল
বারি শারহুল বুখারী, আল্লামা ইবন হাজার আসকালানী