পাঠক! বাংলা ভাষায় সুবৃহৎ বিশুদ্ধ ইসলামী সাইটে আপনাকে স্বাগতম। সহীহ কুরআন, সুন্নাহনির্ভর রেফারেন্স ও গবেষণাধর্মী প্রায় ২০০এর অধিক বিষয়ের অনন্য সমাহার। আমাদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ও অনুদান দিয়ে সাহায্য করতে পড়ুন এখানে

আশুরা কী ও আশুরার রোজার ফজিলত

প্রশ্ন: আমি জানতে চাই, আশুরা কী? শুনেছি আশুরার রোজা নাকি বিগত বছরের গুনাহ মোচন করে দেয়- এটা কি সঠিক? সব গুনাহই কি মোচন করে? এ দিনের এত বড় মর্যাদার কারণ কী?
 
উত্তরঃ  আরবী মাসের প্রথম মাস হলো মুহাররম। যদিও আমরা একজন বাঙ্গালী হিসেবে ইংরেজি থার্টি ফার্স্ট নাইট কিংবা পহেলা বৈশাখ বা নববর্ষের কথা খুব ভালো জানি। কিন্তু মুসলিম হিসেবে নববী বা শরীয়তের দৃষ্টিতে মহিমান্বিত মাস তথা আরবী প্রথম মাসটি সম্পর্কে অনেকটাই বেখবর। শরীয়তে এ মাসটির গুরুত্ব ব্যাপক। আর আরবী প্রথম মাস মুহাররমের দশ তারিখকে শরয়ী ভাষায় আশুরা বলা হয়। আরবী ‘আশরা’ শব্দের অর্থ দশ। সেখান থেকেই আশুরা। আশুরার রোজা বিগত বছরের পাপ মোচন করে। দলিল হচ্ছে নবী সা. এর বাণীঃ আমি আল্লাহর নিকট প্রতিদান প্রত্যাশা করছি আরাফার রোজা বিগত বছর ও আগত বছরের গুনাহ মার্জনা করবে। আরও প্রত্যাশা করছি আশুরার রোজা বিগত বছরের গুনাহ মার্জনা করবে।”  [সহিহ মুসলিম-১১৬২]
এটি আমাদের উপর আল্লাহ তাআলার অনুগ্রহ একদিনের রোজার মাধ্যমে বিগত বছরের সব গুনাহ মার্জনা হয়ে যাবে। নিশ্চয় আল্লাহ মহান অনুগ্রহকারী।
আশুরার রোজার মহান মর্যাদার কারণে নবী সা. এ রোজার ব্যাপারে খুব আগ্রহী থাকতেন। ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেনঃ
ফজিলতপূর্ণ দিন হিসেবে আশুরার রোজা ও এ মাসের রোজা অর্থাৎ রমজানের রোজার ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে যত বেশি আগ্রহী দেখেছি অন্য রোজার ব্যাপারে তদ্রূপ দেখিনি।[সহিহ বুখারি (১৮৬৭)]
হাদিসে يتحرى শব্দের অর্থ- সওয়াব প্রাপ্তি ও আগ্রহের কারণে তিনি এ রোজার প্রতীক্ষায় থাকতেন।

মুহারমের রোজার গুরুত্ব ও ফজিলত নিচের হাদীসটি থেকেই প্রতীয়মান হয়। ‘আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সা. বলেছেনঃ রমজানের সিয়াম পালনের পর সবচেয়ে উত্তম সিয়াম হলো, আল্লাহর মাস মুহাররমের সিয়াম।’ [মুসলিম-১৯৮২]
عن أبي هريرة رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «أفضل الصّيام بعد رمضان شهرُ الله المحرم» (رواه مسلم 1982)

দুই
নবী সা.কর্তৃক আশুরার রোজা রাখা ও এ ব্যাপারে সাহাবায়ে কেরামকে উদ্বুদ্ধ করার কারণ হচ্ছে বুখারির বর্ণিত হাদিস ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন- নবী সা. যখন মদিনায় এলেন তখন দেখলেন ইহুদিরা আশুরার দিন রোজা রাখে। তখন তিনি বললেন: কেন তোমরা রোজা রাখ? তারা বলল: এটি উত্তম দিন। এ দিনে আল্লাহ বনি ইসরাঈলকে তাদের শত্রুর হাত থেকে মুক্ত করেছেন; তাই মুসা আলাইহিস সালাম এ দিনে রোজা রাখতেন। তখন নবী সা.বললেন: তোমাদের চেয়ে আমি মুসার অধিক নিকটবর্তী। ফলে তিনি এ দিন রোজা রাখলেন এবং অন্যদেরকেও রোজা রাখার নির্দেশ দিলেন।[সহীহ বুখারী-১৮৬৫]
হাদিসের উদ্ধৃতি: এটি উত্তম দিন মুসলিম শরীফের বর্ণনায় এসেছে- এটি মহান দিন। এদিনে আল্লাহ মুসাকে ও তাঁর কওমকে মুক্ত করেছেন এবং ফেরাউন ও তার কওমকে ডুবিয়ে মেরেছেন।
হাদিসের উদ্ধৃতি: তাই মুসা আলাইহিস সালাম এদিনে রোজা রাখতেন সহিহ মুসলিমে আরেকটু বেশি আছে যে ...আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতাস্বরূপ; তাই আমরা এ দিনে রোজা রাখি
বুখারি শরীফের অন্য রেওয়ায়েতে এসেছে- এ দিনের মহান মর্যাদার কারণে আমরা রোজা রাখি
হাদিসের উদ্ধৃতি: অন্যদেরকেও রোজা রাখার নির্দেশ দিলেন বুখারির অন্য রেওয়ায়েতে এসেছে- তিনি তাঁর সাহাবীদেরকে বললেন: তোমরা তাদের চেয়ে মুসার অধিক নিকটবর্তী। সুতরাং তোমরা রোজা রাখ

তিন
আশুরার রোজা দ্বারা শুধু সগিরা গুনাহ মার্জনা হবে। কবিরা গুনাহ বিশেষ তওবা ছাড়া মোচন হয় না। ইমাম নববী রহ. বলেনঃ আশুরার রোজা সকল সগিরা গুনাহ মোচন করে। হাদিসের বাণীর মর্ম রূপ হচ্ছে- কবিরা গুনাহ ছাড়া সকল গুনাহ মোচন করে দেয়। এরপর তিনি আরও বলেন, আরাফার রোজা দুই বছরের গুনাহ মোচন করে। আর আশুরার রোজা এক বছরের গুনাহ মোচন করে। মুক্তাদির আমীন বলা যদি ফেরেশতাদের আমীন বলার সাথে মিলে যায় তাহলে পূর্বের সকল গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়... উল্লেখিত আমলগুলোর মাধ্যমে পাপ মোচন হয়। যদি বান্দার সগিরা গুনাহ থাকে তাহলে সগিরা গুনাহ মোচন করে। যদি সগিরা বা কবিরা কোন গুনাহ না থাকে তাহলে তার আমলনামায় সওয়াব লেখা হয় এবং তার মর্যাদা বৃদ্ধি করা হয়। ... যদি কবিরা গুনাহ থাকে, সগিরা গুনাহ না থাকে তাহলে কবিরা গুনাহকে কিছুটা হালকা করার আশা করতে পারি। [আল-মাজমু শারহুল মুহাযযাব, খণ্ড-৬]
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেনঃ পবিত্রতা অর্জন, নামায আদায়, রমজানের রোজা রাখা, আরাফার দিন রোজা রাখা, আশুরার দিন রোজা রাখা ইত্যাদির মাধ্যমে শুধু সগিরা গুনাহ মোচন হয়। [আল-ফাতাওয়া আল-কুবরা, খণ্ড-৫]

উল্লেখ্য যে, এদিন সম্পর্কে অনেক প্রচলিত ভুল কথা, বানোয়াট জাল কাহিনী এমনটি মুখরোচক মিথ্যা ফজিলতও লোকমুখে প্রচলিত আছে। ও কিছু ধর্মীয় বই পুস্তকেও এসব পাওয়া যায়। তন্মধ্যে গ্রামাঞ্চল এমনকি শহরে মা বোনদের কাছে বহুল প্রচারিত নিয়ামুল কোরআন, মোকছেদুল মোমেনীন প্রভৃতি বই বিশেষভাবে উল্ল্যেখযোগ্য। আল্লাহ হেফাজত করুন।
  
আশুরা সম্পর্কে আরো লেখা পড়ুনঃ