ইবনে উসাইমীন র. কে জিজ্ঞাসা করা হলো, এক লোক মসজিদে ১০ রাকাআত তারাবীহ পড়ে বসে থাকে। ইমাম বাকি ১০ রাকাআত পূর্ণ করার পরে একসঙ্গে বিতর আদায় করে। এ ব্যাপারে আপনার বক্তব্য কী?
শাইখ র. বললেন, বড় আফসোসের সঙ্গে বলতে হয় উম্মাহর ভেতরে এখন এমন এক দল লোকের আবির্ভাব ঘটেছে যারা বৈধ মতভেদপূর্ণ বিষয়কে কেন্দ্র করে উম্মাহর ভেতরে দলাদলি ও বিভেদ সৃষ্টি করছে। অথচ সাহাবীদের যুগেও এরকম মতভেদ ছিল; কিন্তু বিভেদ ছিল না। এজন্য সকলের বিশেষত যুবকদের উচিত, উম্মাহর ঐক্য ধরে রাখতে চেষ্টা করা। এবং প্রকৃত দুশমনের বিরুদ্ধে সচেতন থাকা (আশ-শারহুল মুমতি’)
শাইখ র. বললেন, বড় আফসোসের সঙ্গে বলতে হয় উম্মাহর ভেতরে এখন এমন এক দল লোকের আবির্ভাব ঘটেছে যারা বৈধ মতভেদপূর্ণ বিষয়কে কেন্দ্র করে উম্মাহর ভেতরে দলাদলি ও বিভেদ সৃষ্টি করছে। অথচ সাহাবীদের যুগেও এরকম মতভেদ ছিল; কিন্তু বিভেদ ছিল না। এজন্য সকলের বিশেষত যুবকদের উচিত, উম্মাহর ঐক্য ধরে রাখতে চেষ্টা করা। এবং প্রকৃত দুশমনের বিরুদ্ধে সচেতন থাকা (আশ-শারহুল মুমতি’)
তারাবীহ কত রাকাআত?
ইমাম সারাখসী (হানাফী) র. বলেন, আমাদের নিকট তারাবীহ ২০ রাকাআত; বিতর ছাড়া (মাবসূত)। ইমাম ইবনে কুদামা (হাম্বলী) বলেন, বিশুদ্ধ বর্ণনামতে ইমাম আহমদ র. এর নিকট তারাবীহ ২০ রাকাআত। এটাই শাফেয়ী, সাওরী ও আবু হানীফা র. এর মত। ইমাম মালেকের মত হলো ৩৬ রাকাআত (মুগনী)। ইমাম নববী (শাফেয়ী) বলেন, আমাদের মতে তারাবীহ নামাজ ২০ রাকাআত। ১০ সালামে। ইবনে তাইমিয়া র. লিখেছেন, যদি কেউ আবু হানীফা, শাফেয়ী ও আহমদ র. এর রায় অনুসারে ২০ রাকাআত তারাবীহ পড়ে অথবা মালেকের রায় অনুসারে ৩৬ রাকাআত পড়ে। কিংবা ১৩ বা ১১ রাকাআত পড়ে- সবগুলোই সঠিক। শাইখ বিন বায লিখেছেন, তারাবীহ নামাজ ১১ বা ১৩ রাকাআত। তবে ২০ রাকাআতও সঠিক। কারণ সাহাবীরা পড়েছেন ২০ রাকাআত। আর তারা রাসূলের সুন্নাহ সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি জ্ঞাত’। মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাব র. বলেছেন, ইমাম আহমদ র. এর নিকট তারাবীহ নামাজ ২০ রাকাআত। ইবনে জিবরীন র. লিখেছেন, তারাবীহ নামাজ আহমদ র. এর নিকট ২০ রাকাআত (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা)
তাহলে দেখা গেলো সকল মাযহাব মতেই তারাবীর নামাজ ৮ রাকাআতের ঊর্ধ্বে। এবং তিন মাযহাবে তারাবীহ নামাজ ২০ রাকাআত। এর দ্বারা বোঝা গেলো তারাবীহ ২০ রাকআত সুন্নাহ সমর্থিত ও তিন মাযহাবের ইজমা দ্বারা প্রমাণিত। তাহলে আপনি এটার বিরোধিতা সমাজে চালু করতে চাচ্ছেন কেন?
তারাবীহ যেমন ২০ রাকাআত পড়া বিশুদ্ধ; তেমনি ৮ রাকাআত পড়াও বিশুদ্ধ। এটা সকল উলামায়ে কিরামের বক্তব্য। কিন্তু এটার অর্থ কী? এটার অর্থ হচ্ছে বিষয়টি সহজসাধ্য। আপনি এমন একটা স্থানে গেলেন যেখানে ৮ রাকাআত তারাবীহ হয়, উদাহরণত রিয়াদ, সেখানে ৮ রাকাআতই পড়ুন। আমি ৮ রাকাআতই পড়ি। যদি আফ্রিকা যান, যেখানে ৩৬ রাকাআত হয়, তবে ৩৬ রাকাআতই পড়ুন। যদি বাংলাদেশে যান, যেখানে ২০ রাকাআত হয়, সেখানে ২০ রাকাআতই পড়ুন।
যেদেশের মসজিদগুলোতে ২০ রাকাআত তারাবীহ চালু আছে এবং এটা সুন্নাহ সমর্থিত, তাহলে সেসব মসজিদের পাশে কিছু মসজিদ তৈরি করে যদি আপনি ৮ রাকাআত তারাবীহ চালু করেন সেখানে জটিলতা তৈরি হবে না? অবশ্যই হবে। আপনি ইখলাসের খাজানার মালিক হলেও জটিলতা তৈরি হবে। কারণ সমাজের বাকি সব মানুষ আপনার মতো ইলম ও ইখলাসের অধিকারী না। তারা আলেমদের ভুল বুঝবে। কানাঘুষা হবে। সমাজে বিভেদ সৃষ্টি হবে।
একটা উদাহরণ দিই। জর্ডানের অধিকাংশ মসজিদগুলোতে তারাবীহর নামাজ মানুষ ৮ রাকাআত পড়ে আসছিলেন দীর্ঘ দিন ধরে। হঠাৎ সরকার এ বছর তারাবীহ নামাজ ২০ রাকাআত পড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গোটা জর্ডান তর্ক-বিতর্কে গরম হয়ে গেছে। এক মসজিদে দেখা গেছে ইমাম সাহেব একাকী নামাজ পড়ছেন। কারণ ২০ রাকাআত পড়ে সব মুসল্লী চলে গিয়েছিল! কী দরকার ছিল? ৮ রাকাআত তো ভুল ছিল না। মানুষ অভ্যস্ত ছিল। ২০ রাকাআত বানানোর কী দরকার?
একই কথা বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। মানুষ ২০ রাকাআতে অভ্যস্ত। এটা সুন্নাহ-সমর্থিত। তাহলে পাশে অন্যটা শুরু করবেন না। আপনি বিতর্ক না চাইলেও বিতর্ক হবে। আপনার ধারণা আপনি একটা সুন্নাহর ওপর আমল করছেন কী সমস্যা। হ্যা ওটা সমস্যা। কারণ আপনি মনে না করলেও মানুষ মনে করবে অন্যদেরটা সুন্নাত না। যত বলুন আপনার কথা মানুষ শুনবে না। আপনার কাজ দেখবে। কারণ সবাই বলবে, তাদের ২০ রাকাআত যদি সুন্নাহ-ই হয়, তাহলে আপনি কেন ২০ রাকাআত পড়ছেন না? তাহলে বোঝা গেলো আপনি মুখে একটা বললেও অন্তরে আরেকটা লালন করেন।
এটাই মূলত হানাফী-সালাফী দ্বন্দ্বের ভেতরের কথা। এখন যা করার দরকার সেটা সালাফী ভাইদের করতে হবে। যদি তারা নিজেদের ইগো নিয়ে থাকেন, তবে তাদের বিরুদ্ধে হানাফীরা কঠোরতা করলে আমাদের কিছু বলার নেই। এমন চললে জটিলতা বাড়বে। মসজিদ বন্ধ হবে। তাই উম্মাহকে সুন্নাহর ওপর ছেড়ে দেয়া উচিত। নিজেদেরও ২০ রাকাআত পড়া উচিত। দাওয়াত দেয়া ছাড়া ঘরে বা বিশেষ কোনো জায়গাতে ৮ রাকাআত পড়তে পারেন। কিন্তু পরিচিত লোকজন নিয়ে এবং সবাইকে এটা বুঝিয়ে যে ২০ রাকাতও সম্পূর্ণ সঠিক। কিন্তু আমার ধারণা এমন হওয়া সহজ নয়। কারণ একটা পূর্ণাঙ্গ মানহাজ থ্রো করতে হলে বিরোধী পক্ষের সবখানেই বিরোধিতা করা জরুরি। আর এখানে তাই হচ্ছে।
আরেকটি কথা, উম্মাহর সংখ্যাগরিষ্ঠ হক্কানী উলামায়ে কিরামের পক্ষে থাকলে কিন্তু লাভ ছাড়া ক্ষতি নেই।
ফতোয়া বিভাগ
সালাম মিডিয়া কর্পোরেশন।
ভালো লাগলে শেয়ার করুন।
আরো পড়ুনঃ নামাজ : দাসের মহিমা
আরো পড়ুনঃ নফল নামাজের ফজিলত ও বিধান
আরো পড়ুনঃ স্ত্রীর কাছে পরাজিত হতে পারা!
আরো পড়ুনঃ বিয়েতে যা করণীয় (কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে)
একটি আবেদন
বাংলা ভাষায় একটি শক্তিশালী ও মানসম্মত রেডিও প্রতিষ্ঠার প্ল্যান নিয়ে সালাম মিডিয়া কাজ করছে। যার জন্য প্রায় তিনলক্ষ টাকা প্রাথমিক অবস্থায় প্রয়োজন। আপনি একা, জানি। আমরাও একা, নিজ নিজ জায়গা আমরা সবাই একা; কিন্তু সবাই মিলেও কী একা?
আমাদের রয়েছে পর্যাপ্ত দক্ষ জনবল, শুধু নেই প্রয়োজনীয় অর্থবল। তাই আপনি যদি একজন সচ্ছল মুসলিম হয়ে থাকেন তাহলে আপনার প্রতি আমাদের ছোট্ট আহ্বান। ০১৯২২৭৩০০০১ (তথ্য ও বিকাশ) বিস্তারিত পড়ুনঃ আমাদের কথা
ছবিটি জুম করে দেখুন |