আরাকান জনগোষ্ঠীর ইতিহাস অত্যন্ত সুপ্রাচীন।
প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার বছরের পুরনো জাতিরাষ্ট্র আছে তাদের। সে অর্থে বাঙালি বয়সে
তাঁদের থেকে যথেষ্টই ছোট।
আরাকানিরা ইন্দো-আরিয়ান জনগোষ্ঠী এবং মঙ্গোলিয়ানদের সম্মিলনে
গড়া মিশ্র জাতি। আরাকানের মানুষ কী করে রোহিঙ্গা হলো সে ইতিহাসও মজার। মুসলিমদের
বাণিজ্যের সুবাদে এ অঞ্চলে আসা এবং ইসলাম প্রচার আরাকানের সাথে মুসলমানদের পরিচয়
করিয়ে দেয়। মুসলিম ইতিহাসবিদগণ ‘জাজিরাতুর রহম’ বা
‘রহমতের দ্বীপ’ হিসেবে
অভিহিত করেছিল। ইবনে খুরদাদ্ববিহ এবং ইবনে মাসুদী এবং ইয়াকূত হামাবিও এর উল্লেখ
করেছেন। সেই রাহমা থেকে রাহান, রাহান থেকে রোহাং এবং তা
থেকেই ‘রোহিঙ্গা’। যেমন অন্য অনেক আরবি
ফারসি শব্দ, আরাকানের প্রধান শহর
আকিয়াব- এক পানি, কালাদান- বুদ্ধিজীবি, নাফ-
শিরা ইত্যাদি। এমনকি কক্সবাজারের ‘রামু’, ‘রাম’ থেকে
নয়- ‘রাহমা’ থেকেই
নামকরণ করা। ঐতিহাসিক এ অঞ্চল সর্বশেষ ব্রিটিশ সার্ভে অনুযায়ী আয়তনে ছিল ২০ হাজার
বর্গমাইলের মত। পাহাড়, বন, নদী
ও ফসলে বরাবরের সমৃদ্ধ এই অঞ্চল। ২৪৩ জন আরাকান রাজা ৫১০৮ বছর ধরে স্বাধীন আরাকান
শাসন করেছেন। সে সময়টা এখানে ৪ টি শিরোনামে ভাগ করা হলো।
ধান্যবতী
রাজা মারায়ু যুবক বয়সে খ্রিস্টপূর্ব ৩৩২৫
সালে আরাকানে রাজত্ব গড়ে তুলেন। ভিন্নমতে,
২৬৬৬
খ্রিস্ট পূর্বাব্দে ধান্যবতী গড়ে তোলা হয়। তিনি ছিলেন শাক্য বংশের প্রাচীন কোনও
শাখার। আশি বছর বেঁচে ছিলেন তিনি। আজকের রাখাইনের উত্তর প্রান্তে কালাদান নদীর
পূর্ব তীরে, গড়ে তুলেছিলেন নগর। তাঁর
নগরের নাম ছিল পালি শব্দে ‘ধান্যবতী’ অর্থাৎ
ধানে সমৃদ্ধ। ইংরেজিতে যা ‘Dhanyawadi’ হিসেবে
লেখা হয়। এ সময় এখানকার জনগোষ্ঠী হিন্দু ছিল। বৌদ্ধের জন্মের প্রায় অর্ধ সহস্র বছর
সেখানে রাজা চন্দ্র সূর্য খ্রিস্টিয় প্রথম শতকে বৌদ্ধ মূর্তি নির্মাণ করেন। এও বলা
হয়, বৌদ্ধ আরাকান ভ্রমণে গিয়েছিলেন। যেমন এও মত অনেকে বলেন, গৌতম
বুদ্ধ নবী ছিলেন।
ভেসালি
৭৮৮ খ্রিস্টাব্দে রাজা চন্দ্র ক্ষমতা গ্রহণ
করে ভেসালিতে নগর নির্মাণ করেন। ভেসালিতে সে সময়ের বিখ্যাত বন্দর ছিল। বাঙলা, পারস্য, আরব, চীন, ভারতে
যাতায়ত ছিল। বছরে ভেসালি বন্দরে কমপক্ষে ১ হাজার জাহাজ আসা-যাওয়া করত। চন্দ্রদের ৯
জন দেশ শাসন করেন। ভেসালির এক রাজা চট্টগ্রাম আক্রমণ করে বিজয়ী হয়ে সৌধও নির্মাণ
করেছিলেন। ৯৫৭ পর্যন্ত তাঁদের শাসন বিজয় ছিল। এই সময় আরব বাণিজ্য ও ধর্মপ্রচারকদের
দ্বারা আরাকানের মানুষ ইসলাম স্বমন্ধে জানতে শুরু করে। কেউ কেউ ইসলামও গ্রহণ করে।
মঙ্গলদের আক্রমণে তামাম ভেসেলি ধ্বংস হয়ে যায়। হিন্দু শাসনের পতন ঘটে আরাকানে।
একদল প্রসিদ্ধ ধর্মপ্রচারক পীর বদরসহ অনেকেই ইসলাম প্রচারের জন্য এ সময় আরাকান
এসেছিল।
লা ম্রু
লা ম্রু শব্দের অর্থ চার নগর। লা ম্রু নদীর তীরে কাছাকাছি জায়গাকে কেন্দ্র করে ৬০০ বছর
শাসিত হয় আরাকান রাজ্য। এ সময়টাতে বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী শক্তি হিসেবে এর
প্রভাব জন্মায়। লা ম্রু শাসনামলে কিং মুন হুতির ৯৬ বছরের শাসন সবচে’ উল্লেখ
যোগ্য। দীর্ঘ সময়কালে মঙ্গলরাও আরাকানিদের অংশ হয়ে উঠেছিল। যেভাবে ছিল বাঙলার
সুলতানরা। এ সময়েও আরাকানে হিন্দু,
মুসলিম, বৌদ্ধ
স্বাধীন জীবানাচার পালন করত। মুসলিমদের তখনও আরাকানে কোনও রাজ শক্তি ছিল না। তাঁরা
সংখ্যালঘু ছিল। সে সময় মগ বৌদ্ধরা মুসলিমদের সাথে সংঘতাতে জড়ায়। সংঘাতে রাজা
নরমেখলা নিজে মগ হলেও মগ বৌদ্ধদের অন্যায় পক্ষাবলম্বন থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন। এতে
মগ বৌদ্ধরা বিক্ষুব্ধ হয়। তাছাড়া বৌদ্ধ রাষ্ট্র কায়েম না হওয়ায় এ অঞ্চলের অনেক
বৌদ্ধই অসন্তুষ্ট ছিল। তারা প্রতিনিধি পাঠিয়ে বার্মাকে আরাকান হামলায় উৎসাহ দেয়।
তাঁরা তিনবার প্রতিনিধি প্রেরণ করে ও সর্বাত্মক সহযোগিতার কথা বলে। রাজা মিনখাউং
তার পুত্র মিন খাউ সা কে আরাকান দখলে পাঠায়। মগদের বিদ্রোহ ও বর্মিদের আক্রমণ
প্রতিরোধ ধ্বংসের নামান্তর ভেবে নরমেখলা বাঙলার সুলতান গিয়াস উদ্দিন আজম শাহর নিকট
ফিরোজাবাদে রাজনৈতিক আশ্রয় নেন। এটা অসাধারণ কূটনৈতিক সাফল্য ছিল। এই ঘটনাসমূহ ছিল
১৪০৪ সালের।
তিনি দীর্ঘ দুই যুগের বেশি সময় মহাত্মা
সুলতান গিয়াস উদ্দিন এবং জালাল উদ্দিন শাহের কাছাকাছি থেকেছেন। বাঙলার প্রখ্যাত
আলেম নূর কুতুব আলমের সংস্পর্শে থেকেছেন,
ইসলামি
শাসন দেখেছেন এবং গভীরভাবে বুঝেছেন এরপর তিনি ইসলাম গ্রহণ করেছেন। ইসলাম গ্রহণের
পর তাক্র নাম ছিল, ‘সুলায়মান শাহ’। আরাকানিরা সেটাকে ‘সুয়ামোয়ন’ বলে।
তিনি এ সময় যুদ্ধবিদ্যা, ইতিহাস, রাজনীতি
দর্শন এবং ইসলাম অধ্যয়ন করেছেন। উপযুক্ত সময় বুঝে জালালুদ্দিন মুহাম্মদ শাহ ৫০
হাজার সৈন্যসহ সেনাপতি ওয়ালি খানকে প্রেরণ করেছিলেন আরাকান পুনর্দ্ধারে। ওয়ালি খান
আরাকান বর্মিদের বিতাড়িত করেন ঠিকই তবে,
শোয়া
মাংজি নামক সুদি মহাজনের প্ররোচনায় পরে নিজেকেই আরাকানের শাসক ঘোষণা করেন।
সোলায়মান শাহ পুনরায় বাঙলার সুলতানের সহায়তা চান।
জেনারেল সান্দি খানের নেতৃত্বে সুলতান
বিদ্রোহী সেনাপতিকে গ্রেফতার এবং সোলায়মান শাহ্র নিকট ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য
প্রেরণ করেন। তাঁরা বিজয়ী হন এবং সুলায়মান শাহ ১৪৩০ এ সিংহাসনে আরোহণ করেন। ১৪৩৩
সালে তিনি রাজধানী মারুক-ইউ তে স্থানান্তর করেন।
মারুক-ইউ
মারুক ইউ থেকে ১৪৩০ হতে সুলায়মান শাহ থেকে
শুরু করে আলি শাহ যিনি পালিতে থাসাতা নামে পরিচিত ছিলেন ১৫৩১ পর্যন্ত এগারো জন
শাসক নিয়মতান্ত্রিক দেশ শাসন করেন। বাঙলার সাথে অবিভক্ত মুদ্রানীতি চালু ছিল।
সামরিক সহযোগিতা ছিল সর্বাত্মক। বাঙলা তাঁর সামগ্রিক ইতিহাসে সর্বাপেক্ষা ঘনিষ্ঠ
প্রতিবেশি বন্ধু পেয়েছে। ঐতিহাসিক Sir
A.P. Phayers দাবি
করেছেন এই সময় চট্টগ্রাম কিংবা রামু আরাকান দখলে নিয়েছিল- সে দাবি নির্জলা মিথ্যা।
১৫১৩ সালে সাময়িককালের জন্য চট্টগ্রাম ত্রিপুরার দখলে যাবার পূর্বপর্যন্ত
চট্টগ্রাম নিরঙ্কুশভাবে বাঙলার সুলতানদের শাসনে ছিল। ১৫১৪ সালেই সুলতান সৈন্য
প্রেরণ করেন এবং দ্রুতই ১৫১৫ সালে পুনর্দখলে নেন।
পুর্তগিজ ইয়তিহাসবিদ De Barros এর প্রমাণ উপস্থাপন করেছেন। হাটহাজারির মসজিদে পাওয়া ফলকেও
সে প্রমাণ আছে। পর্তুগিজরা ভিড় করে। এরপর যাবুক শাহর সময়ে বাঙলা-আরাকান সম্পর্ক
শীতল হয়। চট্টগ্রাম দখল করে তারা। পুনরায় শামসুদ্দিন মোহাম্মদ আবু জাফরের সুময় বাঙলা
ফের আরাকান বিজয় করে। মুঘলরা প্রবেশ করে এ অঞ্চলে। এইসব নানাবিধ পরিক্রমা চলতে
থাকে। মগ বৌদ্ধরা পুনরায় মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। সলিম ২য় এর মৃত্যুর পর মগের মুল্লুক
কায়েম হয়। ম্যাং সানি রাজা হন। কিন্তু রাণীর প্রেমিক একজন মগ বৌদ্ধ রাজাকে হত্যা
করে। নিজেকে ‘নরপতি’ ঘোষণা
করে সিংহাসনে বসে। মুসলমানরা শাসন ক্ষমতা হারায়। শেষ রাজার ভাই কামাল যিনি
চট্টগ্রামের গভর্নর ছিলেন- তিনি বিদ্রোহ করেন এবং পরাজিত হয়ে ৯ হাজার সঙ্গীসহ
মোগলদের রাজনৈতিক আশ্রয় নেন। মুগলরা ১৬৬৬ সালে চট্টগ্রাম বিজয় করে। আরাকানেও
অভিযান চলে। ১৬৬৬ থেকে ১৭১০ পর্যন্ত তুমুল রাজনৈতিক অস্থিরতা ছিল। আরাকান ছোট হয়ে
আসে। সান্দা ওয়াজিয়া নামে ১৭১০ থেকে ১৭৩১ পর্যন্ত ক্ষমতায় বসেন। তিনি বৌদ্ধ ছিলেন।
তাঁর খুন হয়। পুনরায় গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। মারুক-ইউ এর শেষ
দুই রাজা ছিলেন মুসলিম। মারুক ইউ থেকে ২৬ জন শাসক ১৭৮৪ এর বার্মা আগ্রাসন পর্যন্ত
আরাকান শাসন করে। শেষ পর্যন্ত ১৭৮৪ সালে বার্মা স্থল ও জলভাগে ক্ষমতা দখল করে এবং
পরাধীন হয় আরাকান।
পরাধীন আরাকানঃ
আরাকানের পরাধীনতা নিম্ন তালিকায় ভাগ করা
যেতে পারে।
১। বার্মিজ উপনিবেশ –( ১৭৮৪
থেকে ১৮২৫) বার্মিজরা ক্ষমতা দখল করলে ব্যাপক সহিংসতা এবং দমন শুরু করে। চল্লিশ
বছরের শাসনে ২ লাখ ৩০ হাজার লোককে হত্যা করে। যাদের অধিকাংশই ছিল মুসলিম। মুসলিম
নিধনে জাতিগত উচ্ছেদ চলে। মগ বৌদ্ধরাও রোহিঙ্গা মুসলিম হত্যায় যোগ দেয়। অনেকে
চট্টগ্রামে আশ্রয় নেয়। সেখান থেকে বিদ্রোহ ও সশস্ত্র প্রতিরোধ চলে। বার্মার
শাসকেরা ধরে নিয়েছিল এটা ব্রিটিশ মদদে হচ্ছে,
ব্রিটিশের
তরফে। ফলত একসময় আরাকানি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের বাষ্প ১৮২৬ এর ব্রিটিশ-বার্মা
যুদ্ধে পর্যবসিত হয়।
২। ব্রিটিশ উপনিবেশ-( ১৮২৬ থেকে ১৯৪২)
ব্রিটিশ-বার্মা যুদ্ধে রোহিঙ্গারাও যোগদান করে। অথচ আরাকানি বিদ্রোহীদের কোনও
গুরুত্বই ছিল না যুদ্ধপরবর্তী ভাগ-ভাটোয়ারায়। কলোনিয়াল ব্রিটিশরা আরাকানকে নতুন
উপনিবেশে পরিণত করে। এবার শুরু হয় ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ। ব্রিটিশরাও দমন
এবং চরম নিপীড়ন চালায়। ব্রিটিশরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, রোহিঙ্গারা
সহায়তা করলে স্বাধীনতা দেওয়া হবে। কিন্তু তারা বিশ্বাসঘাতকতা করে। ১৮২৭ সালে
যুবরাজ শিউই বান প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু করেন। তাঁকে গ্রেফতার করে ব্রিটিশরা। ১৮৩৪
সালে ঢাকার কারাগারে স্বাধীনতার দাবিতে আমরণ অনশন করতে গিয়ে মারা যান তিনি।
মৃত্যুর পূর্বের জেলখানায় নিজের রক্তে ‘রোহিংগা জাতির মুক্তির ইতিহাস’ লিখে
যান তিনি। ব্রিটিশের এই উপনিবেশকালে কমপক্ষে ১০ টি সশস্ত্র প্রতিরোধ যুদ্ধ করে
তারা।
৩। জাপান উপনিবেশ – (১৯৪২
থেকে ১৯৪৫ ) জাপানি সেনাবাহিনী যখন ব্রিটিশের ঘাড়ে পা দিয়ে, আরাকান
১৯৪২-৪৫ দখল করলো, তখন ব্রিটিশ সরকার সে
অঞ্চলের মুসলমানদের সাহায্য প্রার্থনা করলো- এ শর্তে আরাকানের মুসলমানরা সর্বাত্মক
প্রতিরোধ গড়ে তুললো যে, 'ব্রিটিশরা আরাকানে
মুসলিমদের স্বতন্ত্র বাসভূমি' প্রদান করবে। মিয়ানমারের
অধিকাংশ বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মত আরাকানের বৌদ্ধরাও ছিল জাপানিদের পক্ষে। পূর্ব থেকেই
ভয়াবহ বৌদ্ধ সন্ত্রাসের শিকার মুসলমানগণ তাই ব্রিটিশের প্রস্তাবে আস্থা রাখে।
বাঙালি ও পাকিস্তানি মুসলিম সেনারাও বীরত্বের সাথে ব্রিটিশের হয়ে লড়ে। পরবর্তীতে
পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ল্যাফট্যানেন্ট জেনারেল নিয়াজী সেসময় বীরত্বের জন্য
ব্রিটিশ সমর পদক পেয়েছিল। জাপানিরা পরাজিত হয়। কিন্তু এবারও ব্রিটিশরা বিশ্বাসঘাতকতা
করে।
৪। বার্মিজ উপনিবেশ-( ১৯৪৮ থেকে অব্যাহত)
১৯৪৮ এর জানুয়ারিতে মিয়ানমারের স্বাধীনতা প্রদানকালে ফিরিঙ্গি ব্রিটিশরা আরাকানি
মুসলমানদের দেওয়া তাদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে। আরাকানি মুসলিম নেতারা পাকিস্তানে
যোগ দেওয়ারও চেষ্টা করেছিলেন। জানা যায়,
জিন্নাহ
তাতে আগ্রহ দেখান নি। মুসলমানগণ স্বাধীন সদ্য স্বাধীন মিয়ানমারের বিরুদ্ধে
মুক্তিযুদ্ধ শুরু করে ১৯৪৮ এ।
মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে সমগ্র উত্তর আরাকান চলে
আসে মাত্র এক বছরে। দেশটির সেনাবাহিনী এবং বৌদ্ধরা প্রাণপণ লড়াই করতে শুরু করে।
সংখ্যায় কম, অস্ত্রহীন কোনও প্রকার বিদেশি
সাহায্য ছাড়া খুব বেশিদিন টিকে নি মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরোধ। মুক্তিযোদ্ধাদের সেনা
পতি ছিলেন কাসেম রাজা। যার পদ ঘোষিত হয়েছিল 'মেজর জেনারেল।'
তিন-চার বছর পর তিনি পূর্ব পাকিস্তানে আশ্রয়
নিতে বাধ্য হন। একবছর পর ১৯৫৪ সালে পাকিস্তান সরকার তাঁকে গ্রপ্তার করে। সহযোগিতার
বদলে এটাই ছিল 'মুসলিম বাসভূমি' পাকিস্তানের
উপহার। অবশ্য মিয়ানমার সরকার তাঁকে বিদ্রোহের অপরাধে ফেরত চাইলেও পাকিস্তান ফেরত
দেয় নি। কাসেম রাজার অধস্তন বংশধরেরা এখনো বাংলাদেশেই আছেন এমনটাই জ্ঞাত হওয়া যায়।
ভয়াবহ জাতিগত নিধনের শিকার এই জনগোষ্ঠী
একইসাথে উপনেবশিক মায়ানমারের সেনা এবং সন্ত্রাসী বৌদ্ধদের দ্বারা গণহত্যা, লুন্ঠন
, ধর্ষণের শিকার। প্রতিবেশি বাংলাদেশে ৫ লাখ, সৌদি
আরবে ৪ লাখ, পাকিস্তানে দুই লাখ
উদ্বাস্তু হিসেবে আশ্রয় নিয়েছে। নিজ দেশে বাস্তুচ্যুত বেহিসাবি আকারে।
চলমান উপনিবেশ শাসনের
বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা মুক্তিযোদ্ধাদের যে সর্বাত্মক সহযোগিতা দেওয়া উচিত ছিল তা
পাকিস্তান কিংবা বাংলাদেশ পরিপূর্ণভাবে কেউই দেয় নি। ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশে আশ্রয়
নেওয়া রোহিঙ্গাদের ফেরত ও নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠায় ঢাকা যুক্তরাষ্ট্র, চীন,
জাতিসংঘকে
কাজে লাগিয়ে যে ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল- পরবর্তীতে তা বাস্তবায়ন করাতে
যেমন ব্যর্থ হয়েছে, তেমনি সমূহ সম্ভাবনা
স্বত্বেও কূটনৈতিক বিজয় লাভ করতে পারে নি।
লেখক: আরজু আহমাদ
লেখক ও গবেষক।
সহায়ক সূত্রঃ
1. History of Arakan by Dr. Yunus
2. . Yegar, Moshe The Muslims of Burma: A study of a minority
group (Weisbaden: Otto Harassowitz, 1972).
3. . Yegar, Moshe (2002). Between integration and secession: The
Muslim communities of the Southern Philippines, Southern Thailand, and Western
Burma / Myanmar
4. . Harvey, G. E. (1925). History of Burma: From the Earliest
Times to 10 March 1824. London
5. Chan, Aye Burma's Western Border as Reported by the
Diplomatic Correspondence (1947 - 1975)
6. Mr. R.B. Smart, Burma Gazetteer,
7. Rohingya's Outcry and Demand by Shamsuddin Ahamed
8. Muslim Contribution to geography by Nafis Ahmed M.A. Ph.D.
(London)
9. Outline of Burmese History by G.E. Harvey
10. “Arakanese Nationalism
and the Struggle for National self- determination” by Khaing Aung Win