পাঠক! বাংলা ভাষায় সুবৃহৎ বিশুদ্ধ ইসলামী সাইটে আপনাকে স্বাগতম। সহীহ কুরআন, সুন্নাহনির্ভর রেফারেন্স ও গবেষণাধর্মী প্রায় ২০০এর অধিক বিষয়ের অনন্য সমাহার। আমাদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ও অনুদান দিয়ে সাহায্য করতে পড়ুন এখানে

ওয়াজ মাহফিল ও মসজিদ মাদ্রাসার আদায়ের নামে দ্বীনকে ছোট করা বন্ধ হোক

আসছে শীতকাল। একদিক থেকে এটি ওয়াজ মাহফিলেরও মৌসুম। কয়েক বছর আগে একটা রিপোর্টে জেনেছিলাম, শীতকালে দিন-রাতে গোটা দেশে প্রায় পাঁচহাজার ওয়াজ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
শীতের প্রারম্ভে এখনই রেওয়াজ শুরু হয়ে গেছে দেশের অনেক জায়গায়।  বিকেলে একটু বেরিয়েছিলাম। রাস্তার মোড়ে একদল পাঞ্জাবী টুপিওয়ালাদের দেখে চোখ আটকে গেল। স্বজাতি বলেই কি না! থামানো গাড়িতে মাহফিলের জন্য দলবেঁধে আদায় করছে। দলের যিনি লিড দিচ্ছেন অন্য সবার চেয়ে বড়। হয়ত তত্ত্ববধায়ক বা হুজুর হবেন। পুরো ব্যাপারটাই বিব্রতকর লাগছিল। উপরন্তু নিজেকে মাদ্রাসাছাত্র ভেবে কিছুটা তো লজ্জাই পাচ্ছিলাম। মাহফিলের জন্য, মসজিদ মাদ্রাসার উন্নয়নের জন্য এমন চিত্র সারা দেশেই অভিন্ন। তাফসীরুল কোরআন মাহফিল, সে তো পৃথিবীর অন্যতম মোবারক জলসা। এখানে যারা এসে ভিড় করে তারা এতটাই সম্মানী যে খোদ আসমানে তাদের নিয়ে আলোচনা হয়। এখানে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ কালামের ব্যাখ্যা করা হয়। ফেরেশতারা পর্যন্ত বক্তা ও শ্রোতার জন্য মাগফিরাত কামনা করেন। কিন্তু এমন বৈশিষ্ট্যপূর্ণ অনুষ্ঠানের জন্য অমন জঘন্য উপস্থাপন একদম বেমানান। এমন ঘটনা কত যে প্রত্যক্ষ করেছি তার ইয়ত্তা নেই। একদম ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে বয়স্ক দ্বীনী জ্ঞানহীন মানুষ দ্বারাও এসব চলে। একবার চাঁদপুর যেতে বাসে ৯-১০ বছরের বাচ্চাকে কৃত্তিম সুরে আদায় করতে দেখেছি। দেখেছি ধুমপানরত অবস্থায় দাড়িহীন ব্যক্তিকে আল্লাহর ঘরের জন্য আদায় করতে।

তিক্ত হলেও সত্য যে, এসব ওয়াজ মাহফিল মসজিদ মাদ্রাসার আদায়ের পেছনে খুব ক্ষুদ্র ও হীন স্বার্থ কাজ করে। এসব দ্বারা দ্বীনের উপকার কামনা তো দূরের বিষয় ভিন্নদৃষ্টিতে দ্বীনের ক্ষতি করছে। আয়োজক ও বক্তা, সবারই উদ্দেশ্য অশুভ। এখন তো শুরু হয়েছে, শিশু বক্তা, এত ইঞ্চি এত ফুট, অন্ধ হাফেজ, নওমুসলিম কত কত তকমা লাগিয়ে মাহফির জমানোর চেষ্টা করা। এই যে এত পরিমাণ ওয়াজ মাহফিল, তাফসীরুল কোরআনের আয়োজন। দৈনিক যে পরিমাণ হচ্ছে ও হবে সে পরিমাণ মানুষ কি হেদায়াতপ্রাপ্ত হচ্ছে? পাঁচহাজার মাহফিল অনুষ্ঠিত হলেও পাঁচহাজার মানুষও কি দ্বীনের পথে আসছে? উত্তর না বাচক আসার সমূহ সম্ভাবনা আছে। কারণ এসব আয়োজনের মূুলেই মানুষের হেদায়েত কামনা থাকে না। থাকে ওয়াজের নামে প্রতি মৌসুমে বাড়তি আয়ের পথ সুগম করা। একবার আমার বাড়ির পাশে মাহফিল হয়েছিল। পরের বছর জানতে পারলাম হবে না। জিজ্ঞেস করলে জানলাম, গতবার কাঙ্খিত আদায় উঠে আসেনি বলে এবার হবে না! লস আইটেম!!
একজন শিশু আদায় করছে

মসজিদ মাদ্রাসা ও মাহফিল কর্তৃপক্ষ ও অন্য সবার প্রতি অনুরোধ থাকবে দয়া করে এসবের মাধ্যমে দ্বীনকে খাটো করবেন না। এসব করেই যদি দ্বীনের খেদমত করতে হয়, আপনাকে এসব করতে বলেছে কে? আল্লাহর দ্বীন এত সস্তা নয় যে, আপনাকে এসব করেই দ্বীন বাঁচাতে হবে। আল্লাহ তাঁর দ্বীনকে নিজেই হেফাজত করবেন। দুচার টাকার জন্য ধরনা দেয়া, দ্বীনের নামে মানুষের করুণার পাত্র হওয়া এসব কি দ্বীনের অবমাননা নয়।

আর সমাজের উচ্চবিত্ত ও টাকাওয়ালারা! দয়া করে নিজের প্রতি সদয় হোন। আল্লাহ আপনাকে যে সম্পদ দান করেছেন তাতে নিঃসন্দেহে আল্লাহর ও গরীব দুঃখীদের হক আছে। আর নয়তো কুক্ষিগত করে রাখা সম্পদের হিসেব দিতে প্রস্তুত হোন। তারচে সে সময় এসে যাবার আগেই সম্পদের আপদকে দূর করুন। সম্পদ ও নিজেনে পবিত্র করুন।

পুনশ্চঃ বিকেলের ঘটনায় বেশ আহত হয়েছিলাম। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে কিছু অগোছালো কথা বলার জন্য আফওয়ান। একজন মাদ্রাসা ছাত্র বা তলিবুল ইলম হিসেবে এসব কাণ্ড সহ্য করাটাও কষ্টসাধ্য। মাদ্রাসা মসজিদ ও ধর্মীয় ব্যাপারে যাদের ন্যূনতম সম্পৃক্ততা তারা এসব বন্ধে হিকমতের সাথে এগিয়ে আসতে পারি। আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন ও দ্বীনের বুঝ দিন।

ছবি সম্পর্কেঃ ছবিটি শ্রদ্ধেয় আলী হাসান তৈয়ব সাহেবের পোস্ট থেকে নেয়া। একবার তিনিও এমন ঘটনার প্রত্যক্ষী হয়ে একজন আলেম হয়েও বিষয়টার জোড়ালো প্রতিবাদ করেছিলেন। তা দেখে আরো অনেকেই সমর্থন জুগিয়েছিলেন। ছবিটি ও ঘটনাটি আমাদের জন্য শিক্ষা হতে পারে তাই রেখে দিলাম।
শায়খ আলী হাসাব তৈয়বের ঘটনাটা পড়ুন 
লিখেছেনঃ ফজলে রাববি

আরো লেখা পড়ুনঃ