পাঠক! বাংলা ভাষায় সুবৃহৎ বিশুদ্ধ ইসলামী সাইটে আপনাকে স্বাগতম। সহীহ কুরআন, সুন্নাহনির্ভর রেফারেন্স ও গবেষণাধর্মী প্রায় ২০০এর অধিক বিষয়ের অনন্য সমাহার। আমাদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ও অনুদান দিয়ে সাহায্য করতে পড়ুন এখানে

সর্বকালের শ্রেষ্ঠ মানব নবীজী সা.কে অবমাননার শাস্তি ও ভয়ংকর পরিণতি

মানব জাতির হেদায়েতের জন্য আল্লাহ্ যুগে যুগে অসংখ্য নবী এই পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন। তাঁরা মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে নিয়ে আসার জন্য যথা সাধ্য চেষ্টা করেছেন নবীগণ ছিলেন মানুষ হিসেবে শ্রেষ্ট মানুষ। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য এই যেপ্রত্যেক নবীই তাঁর স্বজাতির পক্ষ থেকে বিভিন্ন রকমের বাধা বিপত্তিঅবমাননার শিকার হয়েছেন।


আল্লাহ তাআলা বলেন,
﴿وَكَذَٰلِكَ جَعَلۡنَا لِكُلِّ نَبِيٍّ عَدُوّٗا شَيَٰطِينَ ٱلۡإِنسِ وَٱلۡجِنِّ يُوحِي بَعۡضُهُمۡ إِلَىٰ بَعۡضٖ زُخۡرُفَ ٱلۡقَوۡلِ غُرُورٗاۚ وَلَوۡ شَآءَ رَبُّكَ مَا فَعَلُوهُۖ فَذَرۡهُمۡ وَمَا يَفۡتَرُونَ ١١٢  [الانعام١١٢]
আর এমনিভাবেই আমরা প্রত্যেক নবীর জন্যে বহু শয়তানকে শত্রুরূপে সৃষ্টি করেছিতাদের কতক শয়তান মানুষের মধ্যে এবং কতক শয়তান জ্বিনদের মধ্য থেকে হয়ে থাকেএরা একে অপরকে কতগুলো মনোমুগ্ধকরধোঁকাপূর্ণ ও প্রতারণাময় কথা দ্বারা প্ররোচিত করে থাকেআর আপনার রবের ইচ্ছা হলে তারা এমন কাজ করতে পারত না, সুতরাং আপনি তাদেরকে এবং তাদের মিথ্যা রচনাগুলোকে বর্জন করে চলুন। [সূরা আল-আনআম-১১২]

অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন,
﴿ وَكَذَٰلِكَ جَعَلۡنَا لِكُلِّ نَبِيٍّ عَدُوّٗا مِّنَ ٱلۡمُجۡرِمِينَۗ وَكَفَىٰ بِرَبِّكَ هَادِيٗا وَنَصِيرٗا ٣١  [الفرقان٣٠
আর এভাবেই আমরা প্রত্যেক নবীর জন্য অপরাধীদের থেকে শত্রু করে দিয়েছি। আর আপনার রবই তো হিদায়াতকারী ও সাহায্যকারী হিসেবে যথেষ্ট। [সূরা আল-ফুরকান: ৩০]
আর এই ধারাবাহিকতা থেকে আমাদের প্রিয়নবী মোহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)ও মুক্ত ছিলেন না। তাঁর উপরও নবুওয়তী জীবনের শুরু থেকে বিভিন্ন রকমের কটুক্তিঅবমাননা এমনকি তাঁর পরিবারের উপরও অপবাদ দেয়া হয়েছে।
মূলত ইসলাম এবং নবীর প্রতি হিংসার কারণেই অমুসলিমরা একাজ করে থাকে।

আল্লাহ্‌ তাআলা বলেন,
﴿إِن فِي صُدُورِهِمۡ إِلَّا كِبۡرٞ مَّا هُم بِبَٰلِغِيهِۚ  [غافر٥٦
তাদের অন্তরে আছে শুধু অহংকারযা সফল হবার নয়। [সূরা গাফির-৫৬]
বাস্তবে হিংসা তাদেরকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে মেরেছেইসলাম এবং নবীর কোনো ক্ষতিই তারা করতে পারে নি।
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
«ألا ترون كيف يصرف الله عني شتم قريش ولعنَهم، يشتمـــون مُذمَّماً، ويلعنون مُذمَّماً، وأنا محمد»
তোমরা কি লক্ষ্য কর না যেকীভাবে আল্লাহ আমাকে কোরাইশদের অবমাননাকর গালিঅভিসম্পাত থেকে পবিত্র রাখেনতারা আমাকে মুযাম্মামকে (নিন্দিতকে) গালি দেয়মুযাম্মামকে অভিসম্পাত করে[1]আর আমি মোহাম্মদ (প্রশংসিত)[2]
তারা নবীকে নিয়ে যতই কটুক্তি এবং অবমাননা করেছে আল্লাহ ততই তাঁর মর্যাদা বৃদ্ধি করেছেন।
আল্লাহ্ বলেন,
﴿ وَرَفَعۡنَا لَكَ ذِكۡرَكَ ٤  [الشرح٤  
আর আমরা আপনার খ্যাতিকে উচ্চমর্যাদা দান করেছি। [সূরা আশ-শারহ্-৪)।
প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের আযানে বিশ্বব্যাপী মসজিদে মসজিদে তাঁর নাম উচ্চারিত হচ্ছে। মুয়ায্যিন বলছে,
«أشهدُ أن محمداً رسول الله»
(আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ্) আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল।
একজন অমুসলিম মনিষি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর প্রশংসায় বলেনঃ
محمد هو النبي الوحيد الذي وُلد تحت ضوء الشمس
অর্থঃ মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একমাত্র নবী যার জীবনচরিত সূর্যের আলোর ন্যায় স্পষ্ট।
তাঁর অবমাননাকারীদের অবমাননা থেকে তাঁকে রক্ষার জন্য আল্লাই যথেষ্ট।
আল্লাহ্ বলেন,
﴿ إِنَّا كَفَيۡنَٰكَ ٱلۡمُسۡتَهۡزِءِينَ ٩٥  [الحجر٩٥
অবমাননাকারীদের জন্য আমরাই আপনার পক্ষ থেকে যথেষ্ট। [সূরা আল-হিজর-৯৫]
অন্য আয়াতে আল্লাহ্ তাআলা ঘোষণা করেন,
﴿ أَلَيۡسَ ٱللَّهُ بِكَافٍ عَبۡدَهُۥۖ [الزمر٣٦
আল্লাহ্ কি তাঁর বান্দার জন্য কী যথেষ্ট নন? [সূরা আয-যুমার: ৩৬]
এই আয়াতের তাফসীরে সুদ্দী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ যে কেউই রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং তাঁর আনিত বিধান নিয়ে বিদ্রূপ বা অবমাননা করেছে আল্লাহ্ তাকে ধ্বংস করেছেন এবং নির্মম শাস্তি দিয়েছেন।
 যুগে যুগে যারা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে অবমাননা করেছে তাদের কেউ রক্ষা পায়নিআল্লাহ তাদেরকে উপযুক্ত শাস্তি দিয়েছেন। ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রাহিমাহুল্লাহ্) বলেননিশ্চয়ই যারা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে কষ্ট দেয়তাঁকে অবমাননা করেআল্লাহ তাদেরকে উপযুক্ত শাস্তি দিবেনতিনি তাঁর দ্বীনকে বিজয় করবেনআর মিথ্যুকদের মিথ্যা রটনাকে মিথ্যায় পরিণত করবেনযদিও মুসলিমরা তাদেরকে শাস্তি দিতে না পারে।[3]

পরিণতিঃ
রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে অবমাননা করার পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ। কখনও কখনও সেটা দুনিয়ার জীবনেও অবমাননাকারীর উপর নেমে আসেআবার কখনও কখনও সেটা আখেরাতের জন্য বরাদ্দ থাকে।
আল্লাহ্ তাআলা বলেন,
﴿ إِنَّ ٱلَّذِينَ يُؤۡذُونَ ٱللَّهَ وَرَسُولَهُۥ لَعَنَهُمُ ٱللَّهُ فِي ٱلدُّنۡيَا وَٱلۡأٓخِرَةِ وَأَعَدَّ لَهُمۡ عَذَابٗا مُّهِينٗا ٥٧  [الاحزاب٥٧
নিশ্চয় যারা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলকে কষ্ট দেয়আল্লাহ্ তাদের প্রতি দুনিয়া ও আখেরাতে অভিসম্পাত করেন এবং তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন অবমাননাকর শাস্তি। [সূরা আল-আহযাব: ৫৭]
আর রাসূলকে অবমাননা এবং তাঁকে বিদ্রূপ করার মাধ্যমে তাঁকে সবচেয়ে বেশি কষ্ট দেয়া হয়।

আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিততিনি বলেনঃ এক ব্যক্তি নাসারা ছিল সে ইসলাম গ্রহণ করল এবং সূরা আল-বাকারা ও আল ইমরান শিখল। সে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট কেরাণীর কাজ করত। সে পুনরায় নাসারা হয়ে গেল এবং বলতে লাগল মোহাম্মদ আমি যা লিখি তাই বলে এর বাহিরে সে আর কিছুই জানে না। এরপর সে মারা গেলতখন তার সাথীরা তাকে দাফন করলসকালে উঠে দেখল তার লাশ বাইরে পড়ে আছেতখন নাসারারা বলতে লাগল মোহাম্মদের সাথীরা এই কাজ করেছে কেননা সে তাদের ধর্ম ত্যাগ করেছিল। তখন তারা আরো গভীর করে কবর খনন করে তাকে আবার দাফন করলআবার সকালে উঠে দেখল তার লাশ বাইরে পড়ে আছে। তখন তারা বলল এটা মোহাম্মদ এবং তার সাথীদের কাজকেননা সে তাদের ধর্ম ত্যাগ করে এসেছিল। তখন তারা আবার আরো গভীর করে কবর খনন করল এবং তাকে দাফন করলআবার সকালে উঠে দেখল তার লাশ আবার বাইরে পড়ে আছেতখন তারা বুঝল এটা কোনো মানুষের কাজ নয়তখন তারা তারা লাশ বাইরেই পড়ে থাকতে দিল।[4] (বোখারী ও মুসলিম)

পরিশেষে প্রিয় পাঠক! হতে পারে আজকের এই শ্যাম বাসিল ইয়াহূদী তার আত্ম তৃপ্তির জন্য বা কোনো পক্ষের প্ররোচনায় একাজ করেছেকিন্তু তাকে নির্মম পরিণতির শিকার অবশ্যই হতে হবেএ যেন নিজের পায়ে নিজে কুঠার মারা। মুসলিম হিসেবে এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ আমাদের অবশ্যই করতে হবেকিন্তু তা যেন কোনোভাবেই আক্রমনাত্মক না হয়প্রত্যেকে তার সাধ্য অনুযায়ী লিখনীর মাধ্যমেবক্তব্যের মাধ্যমেঅন্যথায় মনে মনে এই কাজকে ঘৃণা করার মাধ্যমে।
কিন্তু কোনোভাবেই সীমালঙ্ঘন করে নয়। মুসলিমরা যেন নতুন করে অমুসলিমদের কোনো ষড়যন্ত্র বা ফাঁদে পা না দেয়তাদেরকে আক্রমন করা বা ক্ষতি করার কোনো সুযোগ কাফেরদের জন্য তৈরী করা সমীচীন হবে না।
আল্লাহ তাআলার কাছে আমাদের আহ্বান থাকবেতিনি যেন তাঁর দ্বীননবী ও মুসলিমদেরকে হেফাযত করেন। 

বই ডাউনলোডঃ নবী অবমাননা নিয়ে মাত্র এক এমবির গুরুত্বপূর্ণ বই ডাউনলোড করুন এখানে
_____________
[1] অর্থাৎ তারা যখন রাসূলকে গালি বা অভিসম্পাত দিত, তখন রাসূলের নাম মুহাম্মাদ ঘৃণাভরে উচ্চারণ করত না। কারণ, মুহাম্মাদ অর্থই প্রশংসিত। প্রশংসিতের নিন্দা করা বিপরীতমুখী কথা, তাই তারা মুহাম্মাদকে মুযাম্মাম বা নিন্দিত শব্দ দ্বারা পরিবর্তন করে রাসূলের বদনামী করত। তখন রাসূল বললেন, দেখ, কিভাবে তারা আমার বদনামী করতে গিয়ে আমাকে বদনামী করতে পারল না, বরং তারা মুযাম্মামের বদনামী করল, মুহাম্মাদের নয়, আর আমি তো মুহাম্মাদ। [সম্পাদক]
[2] বুখারী, হাদীস নং ৩৫৩৩।
[3] আস-সারেমুল মাসলূল, ২/৫৩৯।
[4] বুখারী, হাদীস নং ৩৬১৭; মুসলিম, হাদীস নং ২৭৮১।