প্রথমেই বুঝে নিতে হবে “ইসলাম অর্থ শান্তি” এটা কুর’আন বা হাদীস কোথাও বলা হয় নাই। কোন সাহাবা বা তাবেয়ীনদের কেউ বলেছে আজ পর্যন্ত আমরা শুনি নাই। ইসলাম মানে ‘সমর্পণ’, এক আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ, নিজের ইচ্ছাকে বাদ পরিত্যাগ করে মহান আল্লাহর ইচ্ছার কাছে নিজেকে সঁপে দেয়া হল ইসলাম।
শুধু নিজের ইচ্ছা নয়, সমাজের প্রচলিত জাহেলি যুগের বাপ দাদার সংস্কৃতি, মানুষের বানানো আইন, ফেরাউনের স্বেচ্ছাচারিতা, প্লেবয়-গ্যাংস্টারদের অন্ধ অনুকরণ -এই সব কিছু ছেড়ে ছুড়ে এক আল্লাহকে এই দুনিয়ার সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক হিসেবে মেনে নেয়া হল ইসলাম। কুর’আনে আল্লাহর আনুগত্যের কথাই বারবার বলা হয়েছে। পশ্চিমা গণতন্ত্র চালু করে ‘শান্তি’ অর্জনের কথা কুর’আনে বলা হয় নাই।
এখন কথা হল, “ইসলাম শান্তির ধর্ম” এই কথাটা কেন আসল ? এর কারণ ইসলামে জিহাদ বলে একটা ব্যাপার আছে, সেটা ইসলামের একটা শক্তিশালী এবং অবিচ্ছেদ্য অস্ত্র। এই অস্ত্রকে নির্বিষ করে মুসলিম জাতিকে যেন ইচ্ছেমত নিয়ন্ত্রণ করা যায় এই জন্য “ইসলাম শান্তির ধর্ম” টাইপের কথাগুলো আমদানি করা হয়েছে। এই কথাগুলো এমনভাবে হজম করানো হয়েছে যে এখন কোন মুসলিমের পক্ষে জিহাদের কথা বলাই সমস্যা হয়ে গেছে, বললেই জঙ্গি হিসেবে চালিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু ফাউলের দল আমেরিকান আর্মি কিংবা ছাত্রলীগকে জঙ্গি মনে করে না, এরা যতই খুনাখুনি ধর্ষণ করুক না কেন। এদিকে আবার একদল apoplectic ভীতু টাইপ মুসলিমের জন্ম হয়েছে এরা জিহাদের অর্থ বিকৃত করে ফেলছে। তারা বলে জিহাদ মানে শুধুই নফসের বিরুদ্ধে জিহাদ, অথবা জিহাদ শুধুই রক্ষণাত্মক।
মারামারি, কাটাকাটি, যুদ্ধ যাই বলেন না কেন, এগুলো হচ্ছে মানুষের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য বাস্তবতা। এইসব ঘটনা সবসময় হয়ে আসছে, avoid করা যায় না। কেউ অর্থের জন্য, কেউ ক্ষমতার জন্য, কেউ নারীর জন্য যুদ্ধ করে। আবার কেউ ‘গণতান্ত্রিক শান্তি’ প্রতিষ্ঠার নামে পুঁজিবাদী কোম্পানির deconstruction -reconstruction ব্যবসার জন্য যুদ্ধ করে। এই যুদ্ধ ব্যাপারটা সব সভ্যতাতেই হয়ে আসছে, হোক সেটা ড্রোন বিমানের আধুনিক যুগ কিংবা ঢাল-তলোয়াড়ের প্রস্তর যুগ। এমন কোন সভ্যতা নেই যে যুদ্ধ না করে টিকে ছিল।
যুদ্ধের বাস্তবতা কোনভাবেই অস্বীকার করার কোন উপায় নাই। তাই ইসলাম কখন, কিভাবে, কেন যুদ্ধ করতে হবে এই ব্যাপারে কিছু rules and regulations সেট করে দিয়েছে। এই নিয়মটা মহাজ্ঞানী আল্লাহ আমাদেরকে দিয়েছেন, এগুলো নিয়ে apologetic হওয়ার কিছু নেই। আপনার পাশের বাড়ির হিন্দু ছেলেটা কিংবা কোন মুক্তমনা নাস্তিক ছাগুর এই নিয়ম ভাল না লাগলেও কিছু করার নেই। এরা আল্লাহর দ্বীনকে পছন্দ না করলে আল্লাহর দ্বীনকে আমরা পরিবর্তন, পরিবর্ধন বা পরিমার্জন করার কোন ক্ষমতা রাখি না, এই কাজ ইহূদী, খ্রিস্টানরা করত।
তো যাই হোক, ইসলামে জিহাদ হচ্ছে আল্লাহর দ্বীনকে প্রতিষ্ঠার জন্য যুদ্ধ করা। আবু হানিফা, ইমাম শাফীঈদের বই খুলে দেখেন এই কথাই লেখা হচ্ছে। জিহাদ এর শাব্দিক অর্থ চেষ্টা করা-এটা নিয়ে কোন সন্দেহ নেই, কিন্তু জিহাদের শরীয়াগত অর্থ হচ্ছে আল্লাহর আইনকে সর্বোচ্চ করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা, যেটার সর্বোচ্চ form হচ্ছে ক্বিতাল-এটা নিয়েও কোন সন্দেহ নেই। এইখানে আবার অনেকে আছে শাব্দিক আর শরীয়াগত অর্থে মধ্যে প্যাচ লাগানোর চেষ্টা করে ওবামাকে খুশি করতে চায়,এটা খুবই বাজে অভ্যাস। সালাতের শাব্দিক অর্থ দু’আ করা, কিন্তু আল্লাহ সালাহ বলতে একটা স্পেসিফিক ritual বুঝিয়েছেন যেটা আমরা দিনে ৫ বার নির্দিষ্ট সময়ে আদায় করি। যাকাত এর শাব্দিক অর্থ পবিত্রতা কিন্তু শরীয়া অর্থ হচ্ছে নিসাব পরিমাণ সম্পদের অতিরিক্ত সম্পদের ২.৫% নির্দিষ্ট খাতে বছরান্তে ব্যয় করা।
আল্লাহ বলছেন,
“আর তোমরা তাদের সাথে লড়াই কর, যে পর্যন্ত না ফেতনার অবসান হয় এবং আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠিত হয়” [সূরা বাকারাঃ১৯১]
তোমরা যুদ্ধ কর আহলে-কিতাবের ঐ লোকদের সাথে, যারা আল্লাহ ও রোজ হাশরে ঈমান রাখে না, আল্লাহ ও তাঁর রসূল যা হারাম করে দিয়েছেন তা হারাম করে না এবং গ্রহণ করে না সত্য ধর্ম, যতক্ষণ না করজোড়ে তারা জিযিয়া প্রদান করে। [সূরা তওবাঃ২৯]
অর্থাৎ, অমুসলিমদেরকে প্রথমে ইসলামের দিকে আহবান করতে হবে, তাতে সাড়া না দিলে জিযিয়ার বিনিময়ে তাদের ধর্ম ব্যাক্তিগত পর্যায়ে পালন করতে দেয়া হবে এবং তাদেরকে নিরাপত্তা দেয়া হবে ইসলামিক রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে। সেটাতেও রাজি না হলে তাদের সাথে জিহাদ করতে হবে। অতীতে ইসলামিক খিলাফত রাষ্ট্রের বিস্তৃতি এভাবেই হয়েছে, তবে কোন অঞ্চলে অমুসলিমদের ইসলাম গ্রহণে জোরজবরদস্তি করা হয় নি, বরং তারা নিজেরা ইসলামের সত্যে convinced হয়ে স্বেচ্ছায় ইসলাম গ্রহণ করেছে।
আমাদের আবার এই জিনিষটা হজম হইতে চায় না। মানবতাবাদীরা প্যাটপ্যাট করে, “যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই”। আরে বেকুবের দল, ফেরাউন, বুশ, বাশার আল আসাদ এদের মত বদমাইশদের সাথে মিষ্টি করে মেয়েলী ভাষায় রিকোয়েস্ট করলে এরা শুনবে ? এদের সাথে যুদ্ধ না করলে শান্তি কি উড়ে উড়ে আসবে ?
ফেরাউন, নমরুদ এরা বেকুব টাইপ ছিল, তাই এরা সরাসরি মানুষকে oppress করত। কিন্তু সে তুলনায় স্ট্যালিন, বুশ, ওবামা অনেক চালাক। এরা সিস্টেমেটিক্যালি লোকজনকে oppress করে। আগে গণতন্ত্র আর freedom এর মদ খাইয়ে মাতাল করে, তারপর oppress করে। একুশ শতকের লোকজন খুবই বোকা টাইপ।
বাস্তবে আল্লাহর দ্বীন ছাড়া অন্য যেকোন মানবরিচত জীবনব্যবস্থা মানুষের innate nature এর প্রতি oppressive। কারণ আপনি যদি আল্লাহকে বাদ দেন, তাহলে এই দুনিয়ায় বেঁচে থাকার একমাত্র উদ্দেশ্য তখন হবে জাগতিক ভোগ। আর এই জাগতিক ভোগের জন্য যদি আপনি বেঁচে থাকেন তাহলে কখনই শান্তি আসবে না।কারণ মানুষজন যখন জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য হিসেবে দেখে আরাম করে বেঁচে থাকা, তখন এত ভাল সেজে লাভ কি ? শুরু হয় ব্যাক্তিগত প্রতিযোগিতা, শেষ হয় রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস war on terrorism এ গিয়ে।
মুসলিমরা জাগতিক স্বার্থের জন্য বেঁচে থাকে না, তারা বেঁচে থাকে আল্লাহর জন্য। অমুসলিম জাতি যখন জিহাদ করে সম্পদের লোভে, তখন মুসলিমরা জিহাদ করে আল্লাহর দেয়া ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য। মুসলিমরা শুধু নিজেদের রক্ষা করার জন্য জিহাদ করে না। তারা কেন জিহাদ করে সেটা সবচেয়ে সুন্দর করে বলেছিলেন রবিয়া ইবনে আমর (রাঃ)। পারস্যের সাথে যুদ্ধের সময় পারস্যের সেনাপতি টাইপ কেউ জিজ্ঞেস করেছিল, “তোমরা কেন যুদ্ধ করতে আসছ ? তোমাদের ধন দৌলত লাগলে নিয়ে যাও, আমরা দিব”। রবিয়া ইবনে আমর (রাঃ) উত্তর দিলেন,
“আমরা তো নিজ থেকে এখানে আসি নি। এই পৃথিবী যার তিনি আমাদেরকে পাঠিয়েছেন। আমরা এসেছি মানবতাকে আল্লাহর ইচ্ছায় মানুষের দাসত্ব থেকে আল্লাহর দাসত্বে ফিরিয়ে আনতে। আমরা এসেছি এই দুনিয়ার সংকীর্ণতা থেকে মানুষকে এই দুনিয়ার এবং আখিরাতের বিশালতার দিকে ফিরিয়ে আনতে”।
মুমিনগণ, আমি কি তোমাদেরকে এমন এক বানিজ্যের সন্ধান দিব, যা তোমাদেরকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি থেকে মুক্তি দেবে? তা এই যে, তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে এবং আল্লাহর পথে নিজেদের ধন-সম্পদ ও জীবনপণ করে জেহাদ করবে। এটাই তোমাদের জন্যে উত্তম; যদি তোমরা বোঝ। [সূরা সফঃ১০,১১]