পাঠক! বাংলা ভাষায় সুবৃহৎ বিশুদ্ধ ইসলামী সাইটে আপনাকে স্বাগতম। সহীহ কুরআন, সুন্নাহনির্ভর রেফারেন্স ও গবেষণাধর্মী প্রায় ২০০এর অধিক বিষয়ের অনন্য সমাহার। আমাদের সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ও অনুদান দিয়ে সাহায্য করতে পড়ুন এখানে

গণতন্ত্রঃ মানবতা বিনাশী এক জীবন ব্যবস্থা

গণতন্ত্রঃ
মানবতা যেখানে অনন্যপায়, ইলাহী আওয়াজ যেখানে স্তব্ধ, খোদায়ী বিধান যেখানে অবদমিত, কুরআন যেখানে উপেক্ষিত, অথচ তা উম্মতে মুহাম্মদীর মূলমন্ত্র। যদি আমরা গণতন্ত্রকে শিরকী তন্ত্র বা কুফুরি মন্ত্র বলে আখ্যা দিই তাহলেই মনে হয় তার যথার্থতা আদায় হবে, তা তো সত্যের মাঝে মিথ্যা, আলোর মাঝে এক ঘোর অন্ধকার, সর্বনাশা এ গণতন্ত্রের অনিবার্য ফল দাঁড়ায় আলো-আঁধারে একীভূত হওয়া।

পনের তম শতাব্দী, ইউরোপে সবেমাত্র জ্ঞান-সাধনার উন্মেষ হয়, শাসনযন্ত্রটি ছিলো তখন পাদ্রীদের হাতে, ধর্মের অসত্য দোহাই দিয়ে তারা চালাতো যাতন-যন্ত্র, নিপীড়নের হাতিয়ারটির নাম দিতো তারা ধর্ম, জ্ঞান সাধনার ফলে জ্ঞানী গবেষকদের নিকট ধর্মের এ অযথা দোহাই ভ্রান্ত বলে প্রমানিত হয়। এখান থেকেই হয় জনগন ও গীর্জা পাদ্রীদের মাঝে এক সংঘাত, দুই অসত্যের বাঁচা-মরার লড়াই।

অবশেষে মার্টিন লূথারের নেতৃত্বে একটি আপোষ হয়, যার সারকথা হল, ধর্ম ব্যক্তি জীবনে সীমাবদ্ধ, সামাজিক ও রাষ্ট্রী জীবন জনগনের মতামতের ভিত্তিতে পরিচালিত হবে, যেখানে ধর্মের কোন পছন্দ অপছন্দ থাকবে না, গীর্জার কোন হস্তক্ষেপ চলবে না, গীর্জা পতীদের কোন বাধা-বিপত্তি মানা হবে না।

গণতান্ত্রিক এ মতবাদ সরাসরি আল্লাহর অস্তিত্ব অস্বীকার করে না বটে, তবে তাদের মতে, দুনিয়ার জীবনে উন্নতি শান্তি ও প্রগতির জন্য আল্লাহ বা রাসূলের কোন প্রয়োজন নেই, প্রয়োজন নেই কুরআন-হাদীসের কোন দিক নির্দেশনা।

এ মহা জগত এবং তার সকল কিছুর স্রষ্টা যেহেতু মহান আল্লাহ তায়ালা তাহলে সেই মহান রবের বিধানকে বাস্তব জীবনে গ্রহণ করা যাবে না- এটা তো তাঁর সাথে কুফুরি করা ছাড়া ভিন্ন কিছু নয়। আল্লাহকে যদি পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রে মান্য করা না-ই যায় তাহলে কেবলমাত্র ব্যক্তি জীবনে তাঁর ইবাদত করা অর্থহীন হয়ে পড়ে।

একদিকে মহান রবের অবিনাশী বানী উচ্চারিত হয় : إِنِ الْحُكْمُ إِلَّا لِلَّهِ (বিধান প্রণয়নের ক্ষমতা কেবলমাত্র আল্লাহ তায়ালার জন্যই)।

অপরদিকে গণতন্ত্রের ফেরিওয়ালাদের আস্পর্ধামূলক কণ্ঠে বেজে ওঠে: ‘‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস
রাসূলে আরাবী আমাদেরকে যে সত্য শিখিয়েছেন এবং আমাদের জন্য যে দ্বীন পূর্নাঙ্গ করে গেছেন- সে দ্বীন তো বলে : ‘‘সার্বভৌমত্ব মহান আল্লাহর জন্যই

নষ্টযন্ত্র গণতন্ত্রের অন্ধ পৃষ্ঠপোষকদের গগন বিদারী স্লোগান : সার্বভৌমত্ব জনগণের জন্যই আমাদের শান্ত-সমাহিত পরিবেশকে অশান্ত করে তোলে, তোলপাড় তোলে জগতের পরতে পরতে, ধেয়ে আসা বিপদকে আরো কাছে নিয়ে আসে।
যারা মুসলমান হিসেবে থাকতে চায়, খোদায়ি বিধান পালন করতে চায় এবং নববী আদর্শ আঁকড়ে থাকতে চায় তাদেরকে আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রদত্ত ব্যবস্থা আন্তরিকতার সাথে পূর্ণরূপে মানতে হবে, কারণ মহান আল্লাহ মুসলমানদের জন্য ইসলামী জীবন-ব্যবস্থা ফরজ বা আবশ্যকীয় বিধানরূপে সাব্যস্ত করেছেন।
কালামে ইলাহী আল-কুরআনে উচ্চারিত হয়েছে:- إِنَّ الدِّينَ عِنْدَ اللَّهِ الْإِسْلَامُ (বিধান প্রণয়নের ক্ষমতা কেবলমাত্র আল্লাহ তায়ালার জন্যই)।

অন্যত্র ঘোষিত হয়েছে
الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا
আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্নাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের উপর আমার নেয়ামত পরিপূর্ণ করে দিলাম এবং তোমাদের জন্য দ্বীন হিসেবে ইসলামকে (চির দিনের জন্য) পছন্দ করে নিলাম।

আল্লাহর নিকট মনোনীত জীবন ব্যবস্থা হল একমাত্র ইসলাম…” অন্যত্র ঘোষিত হয়েছে:
وَمَنْ يَبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلَامِ دِينًا فَلَنْ يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الْآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ
যে ব্যক্তিই ইসলাম ছাড়া অন্য কোন দ্বীন পালন করতে চাবে, তার থেকে সে দ্বীনকে কবুল করা হবে না, আখিরাতে যারা মহা ক্ষতিগ্রস্ত সে তাদের অন্তর্ভূক্ত

উপরোক্ত আয়াতসমূহ থেকে প্রতীয়মান হয় যে আল্লাহ তায়ালা মুসলমানদের জন্য ইসলামী জীবন ব্যবস্থা ফরজ করেছেন, ইসলামকেই একমাত্র গ্রহণযোগ্য দ্বীন হিসেবে ঘোষনা দিয়েছেন, ইসলাম ছাড়া সকল মতবাদ এবং অন্য সকল জীবন ব্যবস্থা মুসলমানদের জন্য হারাম করেছেন,

অতঃপর মহান রব্ব সুবহানাহু তায়ালা মুসলমানদের মধ্যকার শাসন ব্যবস্থা সম্পর্কে ঘোষণা করে বলেন:-
فَاحْكُمْ بَيْنَهُمْ بِمَا أَنْزَلَ اللَّهُ وَلَا تَتَّبِعْ أَهْوَاءَهُمْ عَمَّا جَاءَكَ مِنَ الْحَقِّ
‘‘সুতরাং তাদের মাঝে সেই বিধান অনুসারে ফায়সালা কর যা আল্লাহ তায়ালা নাযিল করেছেন, এবং তোমার নিকট যে সত্য এসেছে তা ছেড়ে তাদের খেয়ালা-খুশীর অনুসরণ কর না…”

উপরোক্ত আয়াত থেকে প্রতীয়মান হয় যে, খোদায়ি বিধান এবং ইলাহী শাসনব্যবস্থা ভিন্ন অন্য কোন মন্ত্র বা তন্ত্র দ্বারা মুসলমানদের শাসন করা সম্পূর্ণ হারাম।

গণতন্ত্রের সাথে ইসলামী জীবন ব্যবস্থার শাখাগত কিছু বিষয় বাহ্যিকভাবে এক রকম মনে হলেও, বাস্তবে এ দুটি দ্বীন বা জীবন ব্যবস্থার মধ্যকার পার্থক্য হচ্ছে আকাশ-পাতাল, একটি মেনে নিলে অপরটি বাতিল হতে বাধ্য, কোন অবস্থাতেই উভয়টির সংমিশ্রন হতে পারে না, হয়তো ইসলাম অথবা গণতন্ত্র

মুসলমানদের জন্য সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে রাষ্ট্র ব্যবস্থা হিসেবে খিলাফত ব্যবস্থা ছাড়া অন্য কোন ব্যবস্থাকে গ্রহণ করার সুযোগ নেই।

এখানে আজ আমাকে মনে রাখতে হবে ‘‘খিলাফত’’ কায়েম করার নববী তরীকা আছে, আসমানী মানহাজ আছে, ইসলাম কোন দেউলিয়া নয় যে খিলাফত কায়েম করার জন্য কুফুরি মন্ত্র জপতে হবে অথবা শিরকী তন্ত্র গ্রহণ করতে হবে।

গণতন্ত্রের স্বাধীনতাঃ
পশ্চিমারা নিজেদের জীবন থেকে ধর্মকে মুছে ফেলার কারনে সবকিছুতে তারা শুধু লাভ-লোকসানই দেখে, ধর্মের জ্ঞান তোয়াক্কা নেই, নেই সত্যের সৌন্দর্য এবং একনিষ্ঠতার বাহারি, আল্লাহর সন্তুষ্টি বাদ দিয়ে মনুষত্য বর্জিত কিছু মানদন্ড তারা নির্ধারণ করল, সেগুলো হল :

ক. বিশ্বাসের স্বাধীনতা
খ. মত প্রকাশের স্বাধীনতা
গ. অবাধ ব্যক্তি মালিকানার স্বাধীনতা
ঘ. ব্যক্তিগত স্বাধীনতা

এই মুখরোচক শিরোনামগুলোর আড়ালে লুকায়িত পৈশাচিকতা আর বর্বরতা, আমাদের হৃদয়ের আলোড়িত মহান পুরুষ রাসূলে আরাবীও এই বর্বরতা থেকে রেহাই পাননি, কিন্তু হায়! আমরা তার যথাযথ পাল্টা জবাব দেয়ার সাহসও করি না, এভাবে মানুষ তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার ভোগ করে। শতধিক, এই অভিশপ্ত গণতন্ত্রের উপর।

গণতন্ত্রঃ যার অনিবার্য ফল হল শিকর।

ইসলামে আইন প্রণয়নের ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহ তায়ালার হাতে, এটি আল্লাহ তায়ালার সিফাতের একটি অংশ, ইসলামে আইন প্রণয়নের ক্ষমতা মানুষকে দেয়া হয়নি, কারণ মানুষের পক্ষে সার্বজনীন আইন প্রণয়ন করা সম্ভব নয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন :
إِنِ الْحُكْمُ إِلَّا لِلَّهِ
‘‘বিধান প্রণয়নের ক্ষমতা কেবলমাত্র আল্লাহ তায়ালার জন্যই।

ইসলামে আইন-কানুন কুরআন-হাদীস থেকে গ্রহণ করতে হবে এবং যে আইন-কানুন সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ নেই তা শরীআতের নীতি অনুযায়ী ইজতিহাদ করে বের করতে হবে। সুতরাং কেউ যদি নিজেই আইন প্রণয়ন করে, অথবা কোন সরকার এই তামাশার মহড়া দেয় তাহলে সে সরকার নিজেকে রব হিসেবে দাবী করল, কারণ আল কুরআনে মহান আল্লাহ তায়ালা ফেরাউনের ব্যাপারে বলেছেন যে, সে যমীনে নিজেকে রব বলে দাবী করেছে, অথচ সে কিন্তু নিজেকে আসমান, যমীনের স্রষ্টা বলে দাবী করত না। আল্লাহ তায়ালাকে নিজের রব বলে স্বীকার করত। আল্লাহ তায়ালার অস্তিত্বকে অস্বীকার করত না। তাহলে ফেরাউন নিজেকে রব দাবী করার অর্থ কী?

হ্যাঁ, সে নিজেকে রব দাবী করার অর্থ হল, সে যেকোন হুকুম জারি করা বা আইন প্রণয়নের অধিকার রাখত, তাই সে নিজেকে রব বলে দাবী করেছিলো। অর্থাৎ তার আইন দ্বারা সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালিত হত।

আজ আমাদেরকে যে বিষয়টি বেশী উপলব্ধি করতে হবে, যা থেকে আমরা অনেক দূরে অথচ সেটাই আমাদের মূল চালিকাশক্তি তা হল, নববী তরীকা বা মুহাম্মদী আদর্শ, আহমাদী গুলিস্তা যে ঝর্না থেকে সিঞ্জিত হয়, সে গুলিস্তা বা বাগানের কলিরা যেভাবে ফুটলো এবং মানবতাকে যে ঘ্রানে বিমোহিত করল, সে-ই ঝর্না হল আল কুরআন, ইলাহি প্রস্রবন।

মহান আল্লাহ তায়ালা ফেরাউনের কাহিনী আমাদের নিকট পেশ করেছেন। এর মূল কারণ যদি আমরা অনুসন্ধান করি তাহলে দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সকল আধার ঘুচিয়ে আমাদের সামনে ভেসে ওঠে, আমরা যেন এমন কোন বাদশা বা ব্যবস্থাকে না মানি, যারা সার্বভৌমত্বের দাবী করে, ফেরআউনের মত কোন শাসককে মেনে নিয়ে শিরকের মধ্যে লিপ্ত না হই, কারণ আল্লাহ তায়ালার পরিবর্তে অন্য কারো সার্বভৌমত্ব মেনে নেয়ার মানে হচ্ছে তাকে রব বলে স্বীকার করা।


গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনগণ হয়ে দাঁড়ায় সার্বভৌমত্বের প্রতীক এবং সকল ক্ষমতার উৎস, জনগনই সার্বভৌম ক্ষমতার মালিকানা দাবী করে, ফেরাউন সার্বভৌম ক্ষমতা দাবী করার ফলে সে আল্লাহর দৃষ্টিতে রব হয়েছে। আর গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনগণ ফেরাউনের স্থানেই অধিষ্টিত, ফেরাউনকে মানলে যদি শিরক হয় তাহলে গণতন্ত্র মানলে কেন শিরক হবে না?

লেখাটির ই-বুক ডাউনলোড করুন এখানে